নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখ যদি না থাকে মনে হাসাবো কেমনে

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫০

লিখতে হবে একটি মেগা সিরিয়্যাল হাসির নাটক। কম করে হলেও তা আশি পর্বের। এবাবদ ডিরেক্টর বিনোদ মিত্রর কাছ থেকে অগ্রিম বিশ হাজার টাকা নেয়া হয়ে গেছে। কথা ছিল এক সপ্তাহর মধ্যে তাকে গুছিয়ে দিতে হবে দশ পর্বের স্ক্রিপ। সেটি পড়ে তিনি চরিত্র অনুযায়ী কলাকুশলি সিলেকশন করবেন। তারপর গাজিপুরের পুবাইলের কোন না কোন শুটিং স্পটে শুরু হবে লাইট……ক্যামেরা……এ্যাকশান।



বিনোদ মিত্র মানে বিনু’দার অস্থিরতা ইদানিং বাড়ছে । রাত নেই, দিন নেই, যখনই তার মনে পড়ছে, মোবাইল করে বসছেন । রিং করেই সবসময় তার প্রথম আকুতি থাকে , “হাসু ভাই, আমারে বিপদে ফেলেন না। আপনার স্ক্রিপ লেখা কতদূর?” সাথে সাথে আমিও বলে ফেলি, “দাদা, লেখা চলছে। কথা বাড়িয়ে মনোসংযোগ নষ্ট করিয়েন না। রাখিলাম।” তিনিও আর কথা না বাড়িয়ে ওপাশ থেকে বলেন, “খোদা হাফেজ ভাই, খোদা হাফেজ।”



বিনু’দা হিন্দু ধর্মাম্বলীর হলেও “খোদা হাফেজ” শব্দটা রপ্ত করে ফেলেছেন বেশ। আমিও কখনও কখনও তার কোন ভাল খবর শুনে বলে থাকি ” সবই গুরুদেবের আর্শীবাদ।” আসলে নাট্য জগতে আমরা নানা ধর্মের মানুষ একসাথে কাজ করতে করতে “বহুধর্মী মানব” হয়ে পড়েছি। কিন্তু সব ধর্মে যে কথা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, তা হলো “সদা সত্য কখা বলিবে।” অথচ আমরা তা মেনে চলার নুন্যূতম চেষ্টা করিনা । যেন সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে কথা বলা খুব স্বাভাবিক একটা নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। এই যেমন, এখনও পর্যন্ত তার নাটকের স্ক্রিপ লেখা শুরু করতে পারিনি। অথচ হরহামেশায় বলে যাচ্ছি মিথ্যে কথা। এটিতো অস্বিকার করা যাই না যে, কম করে হলেও দশ পর্বের স্ক্রিপ হাতে না পেলে তিনি কোন প্লান করতে পারছেন না। অথচ একটি টিভি চ্যানেলের কাছ থেকে তিনি অগ্রিম কিছু টাকা নিয়েছেন । ওই চ্যানেল থেকে পর্ব প্রতি এক লাখ করে টাকা পাওয়ার মৌখিক চুক্তিও হয়ে আছে। কাজটা শুরু করতে না পারলে গরমিল হয়ে যাবে সব হিসাব। কেননা তাকে দশ থেকে পনেরো পর্বর টেপ জমা না দেয়া পর্যন্ত ২য় দফা টাকা পাওয়ার কোন চান্স নেই। টিভি চ্যানেলতো আর ফাউ ফাউ টাকা দেবে না। তাদেরও ব্যবসা করতে হবে। টেপ হাতে পেয়ে স্পন্সর নিশ্চিত করেই পরবর্তি পেমেন্ট ছাড়বে। যদিও বিনু’দা আমাকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল স্ক্রিপ রাইটার হিসেবে মনে করেন। আমার লেখা একটি আধ্যাতিক গল্প নাটকে রুপ দিয়ে তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। সমস্যা হচ্ছে মিডিয়া জগতে চলে আসা কিছু টাকাওয়ালা লোকজনের “ফাফুইয়া” পুত্রদের নিয়ে। বাপের কাড়িকাড়ি টাকা ঢেলে তারা ইদানিং নাটক সিনেমার ডিরেক্ট হওয়া শুরু করেছে। এতে করে বিনু’দার মত পেশাদার ডিরেক্টর ও প্রোডিউসররা টাকার কাছে নত স্বিকার করছেন। পর্দার আড়ালে থেকে তাদের হয়ে বানিয়ে দিচ্ছেন নাটক বা টেলিফিল্ম।



আমার এই হাসির নাটকে “ফাফুইয়া” পোলাপানের নানা কার্যক্রম তুলে ধরার ইচ্ছে আছে । “ফাফুইয়া” শব্দটা এসেছে “ফাস্টফুড” এবং “ইয়াবা” শব্দের মিশ্রণে। আমাদের দেশের একশ্রেনীর ধনীর পুত্র, যাদের বাবা-মা সন্তানকে প্রচুর পরিমানে ফাস্টফুড খাইয়ে মোটা-ঢেপসা বানিয়েছেন। তারাই ই্উনিভার্সিটিতে ভর্তির পর, অথবা আগে থেকেই “ইয়াবা” নেশায় আসক্ত হয়ে নিজেদের শরীর স্লিম বানাচ্ছে। তাই তারা “ফাফুইয়া।”



আমি অবশ্য ফাফুইয়া নই। আমার গোটা ছাত্রজীবন কেটেছে মফস্বলে । তখন মফস্বল শহরগুলোতে ফাস্টফুডের চলন শুরু হয়নি। বেশি দিনও নয়, বছর তেরো- চৌদ্দ আগের কথা। দু টাকার কেক, টোস্ট বা লাড্ডু খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো আমাদের বিকেলের নাস্তা। তাছাড়া আমার বাবা ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের একজন টিচার। হিসেব করেই তাকে চলতে হতো । আমি অবশ্য বাবার মত অত হিসেবি না। তাই হয়তো বাবার চেয়ে ঢের বেশি রোজগার করেও চালাতে পারছিনা সংসার। অবশ্য গঙ্গাবুড়ির আলো ঝলমল শহরে যে টিকে আছি, এটিই অনেক।



বিনু’দার কাছ থেকে টাকাগুলো পেয়ে আমার বেশ উপকারে এসেছে । চলতি মাসসহ দুমাসের বাড়ি ভাড়া বকেয়া ছিল । একমাসের দশ হাজার শোধ করতে পেরেছি। দু একদিনের মধ্যে চলতি মাসের ভাড়া দিয়ে দিতে হবে। সে টাকা কোথা থেকে আসবে জানা নেই। সংসার চালানোর জন্য বউ এর হাতে তুলে দিয়েছিলাম পাঁচ হাজার। বাকি টাকার দুই হাজার নষ্ট করলাম মদের আসরে। এরপর যা ছিল, তা কখন, কিভাবে মানিব্যাগ থেকে বেরিয়ে গেছে, মনে করাও দু:স্কর।



হাসির নাটক লিখতে হলে আগে চাই মনের গহীনে সুখের তীব্রতা। আর্থিক কষ্ট বা সংসারের নান টানাপোড়ন মাথায় নিয়ে অন্যকে আনন্দ দেয়া কঠিন। বরং দু:খ বা বেদনার নাটক লেখা সহজ । আমাকে ক্ষমা করেন বিনু’দা । টিভি দর্শকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমি কাতুকুতু দিয়ে হাসাতে পারবো না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৯

বোকামন বলেছেন: আর্থিক কষ্ট বা সংসারের নান টানাপোড়ন মাথায় নিয়ে অন্যকে আনন্দ দেয়া কঠিন ...........

সম্পূর্ন সহমত ...

আপনার দুখ:গুলোর আমাদের অনেকের জীবনেই ঘটে চলছে ...........

আমার এই পোস্টটি পড়তে পারেন....

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮

শামীম সুজায়েত বলেছেন: Thanks Bokamon.

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৫

shfikul বলেছেন: গল্পের মতো লেখাটি খুব ভালো লেগে গেল।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শফিকুল। গল্পের মত করেই লিখে যাওয়া।
ভাল থেকেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.