নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক নিষ্ঠুর নগরী

০৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৩৬



আমি তখন ৭ম তলায়। চারপাশে বেশ অন্ধকার। হোটেলের করিডোর থেকে স্পষ্ট দেখতে পারছি সিটি সেন্টার ও বক চত্বরের পাশে গুচ্ছগুচ্ছ ভাবে অবস্থান করে রয়েছে হেফাজতের লোকজন। তারা নানা রকম শ্লোগান দিচ্ছে। বাঁশি বাজাচ্ছে। কেউ কেউ ইট সংগ্রহ করে একত্রিত করছে ঠিক পূর্বাণী হোটেলের সামনে। ঘড়ি দেখলাম। রাত দুইটা ত্রিশ ছাড়িয়েছে। কানে ভেসে আসছিল জিকিরের শব্দ। বুঝা যাচ্ছিলো, শাপলা চত্বরের কাছে করা মঞ্চ ঘিরে থাকা মানুষগুলো জিকির করছে।



রুমে ফিরে এলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘুম আসছিল না। সারা দিনে মতিঝিলের নানা চিত্র মনে হতে থাকলো। তখন একটি বিষয় খুব পিঢ়া দিচ্ছিল আমার। আমি বাসায় ফিরতে পারিনি। অথচ মতিঝিল থেকে অল্প একটু পথ গেলেই পল্টনে আমার বাসা। যেতে পারিনি।সন্ধ্যা থেকেই পুড়ছে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, বিজয়নগরসহ মতিঝিলের আশেপাশের এলাকা। বাড়ি ফেরার চেষ্টা কয়েক দফা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষে আশ্রয় নিতে হলো বিমান অফিসের পাশের হোটেলে। এই প্রথম পুত্র ও স্ত্রীকে ছেড়ে ঢাকা শহরে অন্যত্র রাত কাটালাম আমি।



মিনিট পাচক পর বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম । গেলাম পশ্চিমের জানালায়। সোফায় বসে পর্দা সামান্য ফাসা করে দেখলাম লাল ভবনের সামনে অসংখ্য পুলিশ ও বর্ডার গার্ডের সদস্যরা। দেখলাম কয়েকটা গাড়ি।

চারপাশে অন্ধকার। জানালা দিয়ে অনেকক্ষুণ চেয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দ হতে থাকলো। একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা। দেখলাম লাল ভবনের সামনে অর্থাৎ গোলচত্বরের কাছে থাকা ট্যাঙ্ক জাতিয়ও সাজোয়াযানটি বক চত্বরের দিকে এগোচ্ছে। ঘড়িতে সময় তখন রাত দুইটা পঞ্চাশ। রুমের দরজাটা খুলে চলে এলাম করিডোরে। দেখতে পেলাম সিটি সেন্টারের সামনে থেকে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড, রবার বুলেট বা বুলেট ও টিয়ার সেল মারতে মারতে এগিয়ে যাচ্ছে শাপলা চত্বরের দিকে। তখন বক চত্বরের কাছে অবস্থান নিয়ে থাকা হেফাজতের লোকজন দিকবিদিক ছুটছে। অপরদিকে মঞ্চর মাইক থেকে চিৎকার করে বলা হচ্ছে "আল্লাহ ওয়াকবার।"



মোবাইলে সময় দেখলাম। দুইটা অষ্টান্ন। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দিকবিদিক গুলি ছুড়ছে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম মাইকে কোন শব্দ নেই। হৈ চৈ নেই। নিরস্ত্র হেফাজতকর্মীদের আর্তনাদ চাপা পড়ে গেছে সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে।



আমি বিছানায় ফিরে এলাম। থেকে থেকে গ্রেনেডের শব্দ। থেকে থেকে শ্মশানের নীরবতা।



ওই সময় ঠিক কতজন হেফাজতকর্মী ছিল শাপলা চত্বরে। জানিনা। তবে অনুমান করে বলতে পারি হাজার তিনেক হবে। এদের অধিকাংশজন এ্যালিকোর সামনে দিয়ে ইত্তেফাক মোড়ের দিকে ছুটে যেতে পেরেছে জীবন বাচাঁতে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন ভবনে। অনেকে পদদালিত হয়েছে ছুটতে গিয়ে।বুলেটবিদ্ধ হয়ে ছটফট করেছে মাদ্রাসায় পড়ুয়া অল্প বয়সী নিরীহ ছেলেরা। রক্তাক্ত হয়েছে দাড়িটুপি পড়া মধ্যবয়সী লোক।





আমি বৃষ্টিস্নাত আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম।

ঢাকা শহরকে এক নিষ্ঠুর নগরী মনে হলো আমার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.