নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিনতি লতা (পর্ব - ০৮)

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১৬





পর্ব - ০৭, আপলোড ২৭/০৯/২০১৩

--------------------------------------------------------------------

পর্ব - ০৮

ইদানিং মোবাইলে খুব মিসকল আসছে । আমিও কলব্যাক দিচ্ছি। কিন্তু অধিকাংশ সময় ওপাশ থেকে বলা হচ্ছে "পেপারে নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দেখে ফোন দিলাম ভাই।ওই মহিলার আপনি কি হন?"

আমার কোন উত্তর দিতে ইচ্ছে করেনা তখন। লাইন কেটে দেই। দুনিয়াতে কিছু মানুষ আছে যারা জীবনে প্রথম মোবাইল কেনার পর শুধু খোঁচাতে থাকে। এদিক সেদিক মিস কল দেয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। আবার এমনও কিছু মানুষ আছে যাদের সবকিছুতেই কিউরিসিটি। এরা আন্দাজে ডায়াল করে দেখে ওই পাশ থেকে কোন নারী মোবাইল রিসিভ করে কিনা। কন্ঠ বুঝে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে। এরপর কত কিছু যে ঘটে যেতে পারে, তার কোন ঠিক নেই। এ কারণেই লতাকে কোন মোবাইল কিনে দেইনি। আসলে ঘরের বৌদের মোবাইল ব্যবহার করা ঠিকনা । বাইরের মানুষ ভেতরে ঢোকার সুযোগ পেয়ে যায়। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ দানাবাঁধতে শুরু করে। দাম্পত্য কলহ থেকে এক পর্যায় তা বিচ্ছেদে রুপ নেয়। কেনো বাবা এত ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে যেতে হবে। কথা বলার দরকার হয় তুমি আমার মোবাইল দিয়ে বলো । পাক্কা গৃহিনী যারা, তারা মোবাইল দিয়ে কি করবে?

অবশ্য এ নিয়ে লতার ভেতরে কখনও কোন দু:খ বোধ আমি দেখিনি। তার আব্দারের তালিকাটাও খুব ছোট। বিশ-ত্রিশ টাকা দামের এক ডজন কাচের চুড়ি, পাঁচ টাকার ক্লিপ, রঙ-বেরঙের টিপ আর কখনও শখ করে হয়তো ছ'মাসে একবার মুখ ফুটে বলে ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনে দেয়ার কথা। সাজসজ্বার দিকে তার খুব একটা ঝোঁক আছে বলে মনে হয়নি কখনও। এমনিতেই ও অনেক সুন্দর। নেচারাল ফেসে ভাল লাগে আরও বেশি।



লতা নিখোঁজ হওয়ার সপ্তাহ দুই পরে স্থানীয় একটি কাগজে হারানো বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। দিন কয়েক আগে ঢাকা থেকে প্রকাশিত স্বনামধন্য দুটি পত্রিকায় লতার ছবিসহ নিখোঁজ বিজ্ঞাপন আবারও দিলাম। যোগাযোগের ঠিকানা বলতে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল কেবল আমার মোবাইল নম্বরটি। ব্যাস, তারপর থেকে শুরু হয়ে গেলো অপরিচিত নম্বর থেকে কল ও মিসকল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ বললো না, হারানো বিজ্ঞপ্তির ওই ছবির মত একজনকে দেখেছি, অমুক স্থানে আছে। বরং আজাইরা প্রশ্ন করে মেজাজ খারাপ করে দেয়।

এসব ভাবতে ভাবতে দেখি মোবাইলটা বাজতে শুরু করেছে।একটি আননুন নম্বর থেকে কল। রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে রাগ দেখিয়ে একজন বলে উঠলো, " ফোন ধরেন না কেন ভাই। কখন থেকে কল দিচ্ছি।"

এর আগে কয়েকবার দিয়েছে কিনা খেয়াল করতে পারিনি। রিসিভ করে তাই বললাম, কে বলছেন?

ওপাশ থেকে উত্তর আসলো হাসপাতাল থেকে বলছি। আপনার পেশেন্টের অবস্থা ভাল না।

আমার পে শে ন্ট !

হ্যা । আপনি বুঝতে পারছেন না।

না ভাই, সত্যি কিছু বুঝতাছিনা ।

আমি ভুল নম্বরে কল দিলাম নাকি ! একথা বলে কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর লোকটি প্রশ্ন করে, এটা কোন জায়গা?

নীলফামারি।

ঠিকই তো আছে। দু দিন আগে হাসপাতাল থেকে আপনার কাছে ফোন দেয়া হয়েছিল না?

কই না তো। হাসপাতাল থেকে কোন ফোন আসেনি।

দু'দিন ধরে যে আপনার পেশেন্টের চিকিৎসা হচ্ছে না, তা কেউ আপনাকে জানায়নি।

না ভাই, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে । আমার কোন পেশেন্ট হাসপাতালে ভর্তি নেই।

তখন স্যরি বলে লোকটা লাইন কেটে দিলো।

আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না।

কে সে, কোথা থেকে ফোন দিলো, কার কথা বলছে, সবকিছু যেন কেমন অস্বাভাবিক ঠেকলো। পরক্ষণে মনে হলো লোকটা কি তাহলে লতার কথা বললো?

আমার লতা কি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে?

মনের ভেতরে এসব প্রশ্ন উঁকি দিতেই এক ধরণের চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে গেলো বুকের বাম পাশ বরাবর। গাল ও গলা দ্রুত শুকিয়ে যেতে লাগলো। প্রচন্ড জল তৃষ্টা পাচ্ছে। টেবিলের ওপর থেকে জগটা তুললাম। গ্লাসে ঢালতে গিয়ে হাত কেঁপে কিছুটা জল পরে গেলো নিচে।

কয়েক ঢোকে গ্লাসের পুরো জল শেষ করে মোবাইল হাতে নিলাম। ওই নম্বরে কলব্যাক দিলাম, কিন্তু কেউ ধরছেনা। আবার রিং দিলাম। কিছুক্ষণ পর শোনা গেলো একটি নারী কন্ঠ, আসসালামুআলাইকুম! ওম্যানস মেডিকেল কলেজ হসপিটাল........

এটুক বলেই থেমে গেলো। আর কোন কথা বলছেনা।

আমি বললাম, একটু আগে এই নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন এসেছিল।

ওপাশ থেকে মেয়েটি বললো, জ্বি স্যার, বলুন।

এটা কোথায়।

খুলনা স্যার। আপনাকে কি জন্য ফোন দেয়া হয়েছিল বলবেন?

সেটা জানলেতো আপনাকে এখন কলব্যাক দিতাম না।

স্যরি স্যার।

শুনুন, আমাকে বলা হয়েছিল দুদিন ধরে পেশেন্টের চিকিৎসা হচ্ছে না। কিন্তু আমারতো কোন পেশেন্ট নেই।

জ্বি স্যার, আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি। আপনাকে আমাদের ৪ নম্বর বেডের পেশেন্ট মিনতি লতার বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিল।

মিনতি লতা?

জ্বি স্যার, মিনতি লতা।

ছ্যাক করে উঠলো আমার বুকের ভেতর। কি বলছে মেয়ে?

মেয়েটি আবার বলতে থাকলো, এ মুহূর্তে তার সিটি স্ক্যান করতে হবে, আরও অনেক গুলো টেস্ট আছে, সম্ভাবত তার ওষুধও শেষ হয়ে গেছে।



আমি আর দেরি করতে পারলাম না। বললাম, আমি লতার হাসবেন্ড দু:খবন্ধু বলছি।

স্যার, আপনার পেশেন্টের অবস্থা সুবিধাজনক নয়।

কি হয়েছে ওর, আমি ওর সাথে কথা বলবো ।

আমার আকুতি শুনে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলো মেয়েটি। তারপর বললো, তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

আমার সমস্ত শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। কি বলবো, সে কি বলছে, কোন কিছু ঠিকমত বুঝতে পারছি না। কেমন একটা বো বো শব্দ হচ্ছে কানের ভেতর। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। মাথাটাও ঘুরে উঠতে লাগলো। এরপর আরও কি সব বলছিল মেয়েটি খেয়াল করতে পারলাম না। মনে হচ্ছে দু চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কানেও ঠিকমত কিছু শোনা যাচ্ছেনা। এমন হচ্ছে কেনো?

এত নার্ভাস কি আগে কখনও ছিলাম আমি?

শুনতে পাচ্ছি, মেয়েটি ওপাশ থেকে বলছে, স্যার এই নম্বর বেশিক্ষণ এনগেজড রাখা যাবে না। আমাদের ম্যানেজারের নম্বরটা আপনাকে একটু পরে এসএমএস করে দিচ্ছি। আপনি সেখানে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নেবেন।



কথাটা যেন শেষ করেই লাইন কেটে দিলো মেয়েটি। আমি আবারও ওই নম্বরে কল দিলাম। শুনতে পেলাম এনগেজড টোন ।



বুঝে উঠতে পারছি না যে মেয়েটি কে? সত্যি সত্যি কোন হাসপাতাল থেকে সে ফোন দিলো, নাকি কেউ জেনে বুঝে মশকরা করছে, জানিনা। মেয়েটি অবশ্য বলছিল সে খুলনা থেকে ফোন করেছে। কি যেন নাম বললো হাসপাতালটার। ও.. মনে পড়েছে, খুলনা ওম্যান্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এই নামে কি কোন হসপিটাল আছে দেশে? থাকতেও পারে।

লতা কি তাহলে ওই হাসপাতালে ভর্তি আছে?

তার চিকিৎসা হচ্ছে না। সাথে কোন লোক নেই, ওষুধ নেই। ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। সিটি স্ক্যান করতে হবে। এসব কি বললো মেয়েটি।

আর লতা খুলনায় বা চলে গেলো কিভাবে?

এর মধ্যে বিপ বিপ শব্দ করে মোবাইলে মেসেজ আসলো। ওপেন করলাম। ইংরেজিতে লেখা contact plz. এরপর একটি মোবাইল নম্বর। শেষে লেখা আল আমিন, ম্যানেজার।



কি করা উচিৎ এখন। বন্ধু মুহিতের নম্বরে ডায়াল করলাম। কোন সাড়া শব্দ নেই। রিং ঢুকছেনা। সম্ভাবত নম্বর বন্ধ রেখেছে অথবা সে নেটওয়ার্কের বাইরে।আবারও ট্রাই করলাম। না, রিং ঢুকছে না। তাহলে কি মুহিত দেশের বাইরে ?

এভাবে কেটে গেলো আরও কিছুটা সময়। এর মধ্যে দেখি একটা মিস কল উঠে আছে স্কিনে। ওই নম্বরটা। একটু আগে ওই নম্বরে একজন নারীর সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি কি কলব্যাক দেবো? কেমন জানি নার্ভাস লাগছে। কিন্তু নার্ভাস কেনো হচ্ছি। আরও তো খুশি হওয়ার কথা আমার। দীর্ঘ পাঁচ মাস এক সপ্তাহ পর লতার সন্ধান মিললো। সে যে বেঁচে আছে এই তো অনেক বড় পাওয়া। এখন সময় নষ্ট করা যাবেনা। কেনো অহেতুক কালক্ষেপন করছি। একটু অবহেলায় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে লতার।



এসব ভাবতে ভাবতে যেন চঞ্চল হয়ে উঠলো মন। এক ধরণের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো দেহ মনে। দেরি না করে আল আমিন নামে ওই ম্যানেজারের নম্বরে চাপ দিলাম।

ওপাশ থেকে কানে ভেসে এলো ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গান, মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কী/ মানুষ পেতে পারে না/ ও বন্ধু।

ওয়েলকাম টিউন হিসাবে ভাল একটা গান পছন্দ করেছেন ওই ম্যানেজার। রুচি আছে বলতে হবে। কিন্তু প্রথম কলে তিনি রিসিভ করলেন না। আবার রিং দিতেই "হ্যালো" শব্দ উচ্চারণ করে ম্যানেজার বললেন, একটু ধরবেন প্লিজ।

আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।

শুনতে পেলাম লোকটা কাকে যেন কি বলছে। আশেপাশে বেশ লোকজন আছে বলে মনে হলো। অন্যান্য মানুষের কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হলো মোবাইলের ওপাশের ব্যক্তি কোন হাসপাতাল থেকেই কথা বলছেন। আমি অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ লাইনে রয়েছি। সম্ভাবত প্রায় মিনিটখানেক পর তিনি বললেন, স্যরি, এবার বলুন কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? আপনার কি কোন পেশেন্ট আছে এখানে।

তার কথা বলার স্ট্যাইল অনেকটা মোবাইল কোম্পানীর কল সেন্টারের ছেলে-মেয়েদের মত। কন্ঠ স্বরে বুঝা যাচ্ছে আমার মতই চল্লিশের কোঠায় তার বয়স। আমি তার প্রশ্নের উত্তরে বললাম, আছে। আপনাদের চার নম্বর বেডে যে রোগী ভর্তি আছে, আমি তার হাসবেন্ড।

ও আচ্ছা, আচ্ছা। আপনি মিস্টার দু:খ বন্ধু ।

হ্যা, মিনতি লতা আমার বৌ।

এরপর তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার নাম আল আমিন। আমি খুলনা ওমেন্স হসপিটালের ম্যানেজার। তো ভাই, স্ত্রীর খোঁজ না রেখে আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?

আমি বললাম, আজই জানতে পারি আমার স্ত্রী আপনাদের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সে তো নীলফামারি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল পাঁচ মাস আগে। কিন্তু আমার মোবাইল নম্বর আপনারা কোথায় পেলেন?

আপনার স্ত্রী কেবল ওটুকু বলতে পেরেছেন।

আমাকে বলবেন ও কিভাবে আপনাদের হাসপাতালে ভর্তি হলো?

প্রশ্নটা শুনে তিনি থমকে গেলেন বোধ হয়। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো, সেসব কথা আপনি খুলনায় এসে জানতে পারবেন। সময় নষ্ট না করে খুলনার পথে রওনা হয়ে যান। আপনার স্ত্রী মাথা ও বুকের ইনজুরি নিয়ে আমরা দু:শ্চিন্তায় আছি। আপনি যত তাড়াতাড়ি আসবেন, ততই মঙ্গল। এবং এর চেয়েও জরুরি হচ্ছে এখানে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা।



কিন্তু একটি বিষয় বুঝতে পারছিনা, সে খুলনায় চলে যাবে কেনো?



এ প্রশ্ন শুনে কোন উত্তর দিলো না আল আমিন। প্রশ্নটা আবারও করলে তিনি জানান এক সপ্তাহ আগে একজন বয়স্ক লোক লতাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে চলে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কয়দিন তার চিকিৎসা চালিয়েছে। কিন্তু কোন প্রাইভেট হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা হয় না। তারা বাধ্য হয়ে এখন লতাকে খুলনা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেবে অথবা রাস্তায় রেখে আসতে পারে বলেও মোবাইলে আভাস দিলেন তিনি। শুনে খুব রাগ হলো। ক্ষেপে উঠে বললাম, খবরদার, তাকে রাস্তায় রেখে আসবেন মানে।

তিনি কোন কথা বললেন না। আমি এবার একটু বিনয়ের সুরে বললাম, প্লিজ ওর দিকে খেয়াল রাখেন। আমি রাতের ট্রেনে চলে আসছি।

তখন ম্যানেজার আল আমিন বললেন, হাসপাতালের নিচের ওষুধের দোকানে অনেক টাকা বাকি পড়ে গেছে। ওরা কেউ আপনার রোগীর ওষুধ বাকি দিতে চায়ছেনা। তাছাড়া হাসপাতালের বিল পুরোটাই বাকি আছে।ডাক্তার সিটি স্ক্যানসহ অনেক গুলো টেস্ট দিয়েছে। তার শরীরে রক্ত দেয়া প্রয়োজন।

গলার স্বর অনেকখানি নামিয়ে বললাম, আজ দিনটা চালিয়ে নিয়ে যান। প্লিজ কোন অবহেলা করবেন না।

না দাদা। রোগীর অবস্থা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাড়াবে তা বলা মুশকিল।

তিনি যত সহজে কথাগুলো বলছিল, আমার কাছে শুনতে তা সহজে সহনীয় হচ্ছিল না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। আমি কতক্ষণ চুপ করে থেকেছি বলতে পারবো না। গোটা শরীর ঘামাতে লাগলো। কেমন জানি কাহিল কাহিল লাগছে। বেশ আগে থেকেই আমার প্রেসারের সমস্য আছে। তাও আবার হাই প্রেসার। সম্ভাবত এ মুহূর্তে প্রেসারটা বেড়ে গেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে এখন কি করতে হবে?

সাথে সাথেই তিনি উত্তর দিলেন, আপনি দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

কত টাকা?

কম করে হলেও বিশ হাজার।

বিশ হাজার! এত কেনো?

তাহলে অন্তত পনেরো হাজার পাঠান।

কি ভাবে পাঠাবো?

বিক্যাশ করে পাঠাতে পারেন। অথবা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস বা এস এ পরিবহনে দিতে পারেন। আমরা সাথে সাথেই পেয়ে যাবো। দেরি করবেন না। যদি বিক্যাশে পাঠান তো ভাল হয় বেশি। আমাদের হাসপাতালের বিক্যাশ একাউন্ট নম্বর আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি।

আমি আবারও অনুরোধ করে বললাম, বরং যেখানে যা খরচ করা লাগে করুণ। কাল সকালে এসে সব টাকা পরিশোধ করছি। তাছাড়া এতগুলো টাকা এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই।

ঠিক আছে। তাহলে আপাতোত দশ হাজার পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

তাও হবেনা। ধার করতে হবে। তাতে কিছু সময়ও ব্যয় হবে। বিশ্বাস করুণ খুলনায় এসে সব টাকা দিয়ে দেবো।

সেই পর্যন্ত আপনার স্ত্রী বেচেঁ থাকলেই ভাল। কিছু মনে করবেন না, আপনি মানুষটা ভাল না।আপনার হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীর জীবন মরণ অবস্থা, অথচ আপনি টাকা পয়শা নিয়ে কিপটামি করছেন।

তার কথা যেন হঠাৎ করেই আমার গায়ে লেগে গেলো। বললাম, একাউন্ট নম্বর দেন। আমি এখনই পাঁচ হাজার টাকা পাঠাচ্ছি।





এরপর কি ভাবে যে চলে গেলো সময়, টের পেলাম না। বেলা দুইট থেকে বিকেল পাঁচটা, টানা তিন ঘন্টা যেন পার হলো বিদুৎ গতিতে। নীলফামারির বেশ কয়েকটি ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের খোঁজ পেলাম, যারা বিক্যাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আমি অবশ্য বেছে নিলাম এস এ পরিবহন । তবে এভাবে কোথাও টাকা পাঠানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। দেখলাম খুব সহজ পদ্ধতি। যার কাছে টাকা পাঠানো হচ্ছে, তার মোবাইল নম্বর লিখে টাকা বুক করে দিলেই হয়। টাকা গ্রহনের সময় উল্লেখ করে দেয়া ওই নম্বরের মোবাইল ফোনটি নিয়ে যেতে হবে এসএ পরিবহনের কাউন্টারে। ওরা তখন ওই নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয়। এক্ষেত্রে আর কোন প্রমানের প্রয়োজন পড়েনা। তারমানে খুলনার ওই হাসপাতালের ম্যানেজার আল আমিনের কাছে সহজেই টাকা পৌছে গেলো। যাক একটা কাজ শেষ হয়েছে। এখন আরও কিছু টাকা জোগাড় করে ছুটতে হবে সৈয়দপুর। সেখান থেকে রাতের ট্রেনেই রওনা হবো খুলনার পথে। আমি যে আমার মিনতি লতার খোঁজ পেয়ে গেছি। ও হারিয়ে যায়নি। ভগবান ওকে কেড়ে নেননি। কিভাবে সে ঘর থেকে চলে গেলো, এতদিন কোথায় ছিল, অনেক প্রশ্ন জমা রয়েছে মনে। ওর শয্যার পাশে না যাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবোনা। কিন্তু মুহিতের কি হলো। সেই সকাল থেকেই তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। কতবার চেষ্টা করলাম। ওর সাথে কথা বলা খুব জরুরি ছিল। কেননা সে ডাক্তার মানুষ। খুলনার ওই হাসপাতাল সম্পর্কে নিশ্চয় ধারণা দিতে পারতো। ও ওর চ্যানেল দিয়ে খোঁজ খবর নিতে পারতো লতার ।



ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছি। এখন সময় সন্ধ্যা সাতটা। রাত ন’টায় ট্রেন। এটাই আমার জীবনে প্রথম খুলনা যাত্রা। কিন্তু ম্যানেজার আল আমিন বলছিলেন, টাকা হাতে পেয়ে তিনি আমাকে ফোন করবেন। লতার শরীরের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন। কিন্তু এত দেরি করছে কেনো? আর্জেন্ট হিসাবে তো টাকাটা জমা দিয়েছিলাম। এসএ পরিবহন থেকে তখনই বলেছিল আধা ঘন্টার মধ্যে পেয়ে যাবে। খবর নেয়া দরকার। মোবাইল হাতে নিয়ে রিং লাগালাম আল আমিনের নম্বরে। ওপাশ থেকে ভেসে এলো ” আপনার ডায়ালকৃত নম্বরে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। দয়া করে আবার চেষ্টা করুণ।”

সে কী ! তার মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলো কেনো। আরও কয়েকবার চেষ্টা করলাম। প্রতিবারেই একই কথা বলছে। ওদের আরও একটা নম্বর তো আছে। সেটাতে চেষ্টা করলাম। সে কি, এটাও দেখি বন্ধ! ”নট ইন সার্ভিস” মেসেজ শো করছে স্কিনে। এ সব কী হচ্ছে! দুইটা নম্বরই বন্ধ হয়ে যাবে কেনো? কিছুই বুঝতে পারছি না। কিসের মধ্যে পড়লাম।

নীলফামারি থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ওই দুটি মোবাইলে ট্রাই করতে থাকলাম শতবার। আঙ্গুল ব্যথা হয়ে গেলো। মোবাইল খোলা পেলাম না।



এখন কি করা উচিৎ আমার ? আর কিছুক্ষনের মধ্যে খুলনার পথে যাত্রা শুরু করবে ট্রেন। আমি কি ট্রেনে উঠবো, নাকি বাড়ি ফিরে যাবো?

মোবাইল বাজছে। বন্ধু মুহিতের কল। হ্যালো দোস্ত, সারাদিন মোবাইল বন্ধ রেখেছিলি কেন?

একটা সেমিনারে ছিলাম। মাত্র মোবাইল খুলে দেখি তুই কল দিয়েছিলি।

হ্যা, কমপক্ষে কুড়ি-পঁচিশ বার। খুব জরুরি দরকার ছিল রে!

কি সমস্যা, বৌদির কোন খবর পেলি নাকি।

হ্যা, পেয়েছি।

তাই, কোথায় ? কেমন আছেন বৌদি?

জানিনা রে, একজন আমার নম্বরে মোবাইল করে বললো লতা খুলনার ওম্যানস মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি আছে।

মুহিত অবাক হওয়ার মত ভাব করে বললো, ওম্যানস মেডিকেল কলেজ!

হ্যা, তাইতো বললো আমাকে।

তোর সাথে কি বৌদির কথা হয়েছে?

না, সে খুবই অসুস্থ। হাসপাতালের ম্যানেজার আমাকে জানিয়েছে সে ঘুমাচ্ছে। তুই কি একটু খোঁজ নিতে পারবি।

তা নিচ্ছি। কিন্তু ওম্যানস মেডিকেল কলেজ হসপিটালের নাম তো আগে কখনও শুনিনি।

আমি তো তাই শুনলাম। কিন্তু আরও একটা সমস্যা আছে।

কি?

যে দুটো নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তা বন্ধ পাচ্ছি।

তা কেনো হবে?

জানিনা।

তুই এক কাজ কর। তোর মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন আছে।

আছে। তবে আমি ইউস টু না। শুধু ফেসবুক পারি।

তুই গুগলে ঢুকে খুলনা ওম্যানস কলেজ হসপিটাল লিখে সার্চ দে।

সেখানে সার্চ দিয়ে কি হবে?

আরে বোকা, গুগল হচ্ছে যেকোন জিনিস খুঁজে বের করার একটি মাধ্যম। খুলনা ওম্যানস মেডিকেল কলেজ হসপিটাল নামে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকলে অবশ্যই তা খুঁজে বের করে ফেলবে গুগল।

শোন মুহিত, আর একটা বিষয় তোকে বলা হয়নি।

কি?

ওরা বলছিল চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে। আমি পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি।

কেনো? চিনলি না, বুঝলি না, টাকা পাঠিয়ে দিলি।

হুম। দিলাম।

আগে নিশ্চিত হয়ে নিতিস। তারপর দিতে পারতিস। কিন্তু ওরা তোর নম্বর পেলো কি ভাবে?

লতার কাছ থেকে পেয়েছে বললো।

আমার মনে হচ্ছে তুই প্রতারিত হয়েছিস। দিন দুনিয়া এখন খুব খারাপ। টাউট-বাটপারে ভরে যাচ্ছে দেশ। অল্পতে এভাবে বিশ্বাস করা যায় না। আবার দেখ সত্যি হলেও হতে পারে। সেটাই ভাল। দাড়া, তোকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি। খুলনার সিভিল সার্জন আমার খুব কাছের মানুষ। ওনার কাছে খোঁজ নিয়ে দেখি ওই নামে কোন হসপিটাল খুলনাতে আছে কিনা। যদি থাকে তাহলেই বুঝা যাবে ঘটনা সত্যি। দু:শ্চিন্তা করার দরকার নেই। সঠিক খবর নেওয়া যাচ্ছে।

মুহিত ফোন রেখে দিলো। ট্রেনের হুইসেল বাজঁছে। প্লাটফর্ম ছাড়তে শুরু করেছে ট্রেন। আমি কি ট্রেনে উঠবো, নাকি উঠবো না। ওদের মোবাইল যে এখনও বন্ধ পাচ্ছি।



(চলবে..............)



মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬

স্বপনচারিণী বলেছেন: প্রতারণা, স্রেফ প্রতারণা! পড়ে মনটা ভীষণ খারাপ হোল। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:১৮

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ। শুরু ধেকেই গল্পের সাথে আছেন। পরবর্তী পর্বগুলোতেও আপনার অংশগ্রহন কামনা করছি।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: আগের পর্ব গুলোও পড়তে হয় !

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২১

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল লাগলো জেনে যে আগের পর্বগুলো পড়তে চেয়েছেন।
নিচে বাকি পর্বগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। সময় করে পড়ে নেবেন প্রত্যাশা করছি।

পর্ব - ০১
Click This Link

পর্ব - ০২
Click This Link

পর্ব - ০৩
Click This Link

পর্ব - ০৪
Click This Link

পর্ব - ০৫
Click This Link

পর্ব - ০৬
Click This Link

পর্ব - ০৭
Click This Link

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৯

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৪

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: সুজায়েত ভাই, অসাধারণ!!!

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১০

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক ভাল লাগা রইলো খালিদ ভাই।

৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

সোহানী বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো.............

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ভাল থাকবেন সোহানী।

শুভ কামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.