নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিউ : কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০২





অন্য সব দিনের চেয়ে আজ যেন শীতটা একটু বেশিই। রাত কত কে জানে। অন্ধকারে দেওয়াল ঘড়িটা দেখাই যাচ্ছেনা। তাড়াতাড়ি রাতটা শেষ হলে যেন বাঁচা যায়। জানালার ভেতর থেকে মোটা কাগজ দেওয়া। বাইরের দিক থেকেও প্লাস্টিক দিয়ে পুরো জানালাটা ঢাকা। ঘরের দরজায় মোটা কম্বল ঝোলানো। এত কিছু সত্বেও একটা কনকনে ঠান্ডা হাওয়া কোথা থেকে যে আসছে, ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। মোটা একটা লেপ গায়ে দিয়েছি। তার ওপর ভেড়ার লোমের গরম কাঁথা চাপিয়েছি। তবুও শীত আজ চেপে ধরেছে। যত ঠান্ডাই লাগুক, মাঝরাতে তো উঠে বসে থাকা যায় না! তাই আপদমস্তক মুড়ি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে আছি। বাইরে বরফ জমছে। গতকাল থেকে টানা তুষারপাত। কখনো থামছে, আবারও কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো তুষার পড়ছে।

ছ’বছর হয়ে গেল, আমি আফগানিস্তানে। এখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। দেশে ফেরার ইচ্ছেটাকে মনের ভেতর দমিয়ে রেখে আছি এই অচেনা, রুক্ষ পাহাড়ি দেশে। কারণ এরা আমাকে বন্দী করেছে। তবে বন্দী করার যে আভিধানিক অর্থ, ঠিক সেই অর্থে এখানে কাউকে বন্দী করার দরকার হয়না। এদেশে মহিলারা একা এক পা-ও, যেতে পারে না। সব জায়গাতেই তালিবান প্রহরীদের কড়া নজর। তাছাড়া, গাড়ি পাবো কোথায়? আর কাবুলে সব আ্যমব্যাসিই তো বন্ধ। কিংবা যদি খোলাও থাকে যুদ্ধের তান্ডব থেকে বেঁচে বর্তে আ্যমব্যাসি পর্যন্ত পৌছানো, আর দুর্গম হিমালয় পেরনো-দুটো একই ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কি, কোনও মহিলা চেষ্টা করলে হয়তো হিমালয় পেরোতে পারবে। কিন্তু এই দেশে কোন মহিলার পক্ষে বাড়ির চৌকাঠ পেরোনও অসম্ভব।

কাবুল শহর থেকে আমার শ্বশুরবাড়ি, পুরো আঠারো ঘন্টার রাস্তা। ১৯৮৮ এর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে, আমি আমার স্বামী জাম্বাজ খানের সঙ্গে কলকাতা থেকে কাবুলের মাটিতে পা রাখি। শ্বশুরবাড়ির সকলকে দেখার প্রবল ইচ্ছেই আমাকে বাধ্য করেছিল পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটাতে আসতে- যেখানে মধ্যযুগীয় গোঁড়ামির অন্ধকার এখনও ঘোচেনি। তখন তো জানতাম না যে, এটা এমনই একটা দেশ, যে দেশে ঢোকার রাস্তা আছে, কিন্তু বেরোবার পথ নেই।




এভাবেই শুরু হয়েছে সুস্মিতা বন্দোপাধ্যায়ের আলোচিত উপন্যাস ”কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ।” ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে কলকাতায় বইটি প্রথম প্রকাশ পেলেও স¤প্রতি আফগানিস্তানে তালেবানদের গুলিতে লেখিকা সুস্মিতা নিহত হওয়ার পর যেন নতুন করে সাড়া ফেলে পাঠক সমাজে। কলকাতার বইয়ের দোকান গুলো থেকে নিমিষেই ফুরিয়ে যাই স্টক।

২০১৩ সালের সেপ্টম্বরে সর্বশেষ মুদ্রিত এ উপন্যাসটির দাম ভারতীয় রুপি ১২৫.০০ হলেও খোদ কলকাতার কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ব জুড়েই বাংলা ভাষাভাষি পাঠকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভাষা ও সাহিত্য প্রকাশনী সেপ্টম্বরেই নতুন সংস্কারের কাজ শুরু করে। যদিও আমাদের ঢাকার বইয়ের বাজারে কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ এর দেখা এখনও মেলেনি।



এ উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে রাব্বানির যুদ্ধকালীন সময়ে ধর্মের নামে কায়েম হওয়া সন্ত্রাসের রাজত্ব, মেয়েদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে অন্ধাকারে পাঠিয়ে দেয়া, কোরআন শরীফের মনগড়া অপবেখ্যা, সংকীর্ণতা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে। বাস্তবতা হলো লেখিকা তাঁর ”কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” উপন্যাসে নিজের জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছেন। যদিও তাঁর বইতে লেখা আছে THE STORY OF AN OPPRESSED WOMAN বা নির্যাতিত নারীর গল্প। আর এই OPPRESSED WOMAN হচ্ছেন উপন্যাসের লেখিকা সুস্মিতা বন্দোপাধ্যায় নিজেই। সবাইকে উপেক্ষা করে তিনি বিয়ে করেছিলেন আফগানিস্তানের এক মুসলিম যুবককে। উপন্যাসে সেই যুবকের নাম জাম্বাজ। বাস্তবে লেখিকার স্বামীর নাম জানবাজ খান।

উপন্যাসের নির্যাতিত সেই নারী বা বাঙালি বউয়ের কোন নাম উল্লেখ করেনি লেখিকা সুস্মিতা। তবে গল্পের ভেতরে বলা হয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে ”সাহেব-কামাল” বলে ডাকতো। কিন্তু কেনো হলো তাঁর নাম সাহেব-কামাল। উপন্যাসে এটিরও ব্যখ্যা দেয়া হয়েছে এই ভাবে, ”এখানে আসার পর জাম্বাজের কাকা আমার নতুন নামকরণ করেছেন সাহেব-কামাল। এই নামের অর্থ আমি জানিনা। তবে আন্দাজে বলতে পারি ”সাহেব কা মাল” অর্থাৎ ”সাহেবের মাল” গোছের আর কি। এখানে সবাই আমাকে এই নামে ডাকে, আমার সত্যিকারের নামটাও আজ অতীতের আ্যলবামে।

”কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” এর কাহিনীর সংক্ষিপ্ত রুপ হচ্ছে, কলকাতার ব্রাক্ষ্মন পরিবারের একটি মেয়ে বিয়ে করে আফগাস্তানের কাবুলের গজনি এলাকার এক মুসলিম যুবককে। স্বামীর সাথেই পাড়ি জমান শ্বশুর বাড়ি আফগানিস্তান। সেখানে যাওয়ার পর ওই বাঙালি বউয়ের উপলব্দিতে হলো এরা শুধু ধর্মান্ধ নয়, এদের মানসিকতাও রুচিহীন। পরদেশী একজন বাঙালি নারীকে ছেলের বউ হিসাবে তারা কিভাবে গ্রহন করলো, তাদের দর্শন, তাদের দেশে নারীর মর্যাদা, পারিবারিক সম্পর্ক, দাম্পত্য জীবনসহ খুটিনাটি নানা বিষয় গল্পে গল্পে তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসে।

তাঁর গল্পের এক পর্যায় দেখা যায় স্বামী জাম্বাজ তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ভারত। এরপর শ্বশুরবাড়ি নামক সেন্ট্রাল জেলে অকথ্য অত্যাচার এবং শাররীক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে তাকে কাটাতে হয় ৮ টি বছর। সেই দিনগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে। একই সাথে উল্লেখ করা হয়েছে কিভাবে শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে পাকিস্তান হয়ে তিনি স্বদেশে ফিরলেন। এর আগে পাকিস্তানে ইন্ডিয়ান আ্যমবাসিতে গিয়ে তাঁর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।

উপন্যাসের দশম অধ্যায়ের ৯৯ পাতায় উল্লেখ করা সেই তিক্ত অংশটি হলো, ” অফিসের দারোয়ানটিকে সেখান থেকে সরে যেতে বলল। তারপর আমাকে বলল আপনার কেসটা খুব জটিল। এখানে এটা নিয়ে আলোচনা করা ঠিক নয়। চলুন আমার কোয়ার্টারে, সেখানে গিয়ে ড্রিংকস করতে করতে বিস্তারিত কথা বলা যাবে। আপনি ড্রিংকস করেন তো? কথাটা শুনে ঘৃণায় রি রি করে উঠলো আমার শরীর। গলার স্বর শক্ত করে বললাম না, আমি ড্রিংকস করি না। আপনার যা বলার আপনি এখানেই বলুন।

লোকটি আমার চোখের দৃষ্টি দেখেই আমার মনোভাব বুঝতে পেরেছিল। একজন বিপদাগ্রস্থ বিপন্না ইন্ডিয়ান মানুষের প্রতি কি এইটুকু কর্তব্য ছিল ইন্ডিয়ান এমব্যাসির কর্ণধারের?
"

এখানে প্রসঙ্গক্রমে লেখিকা উল্লেখ করেন বিনা পাসপোর্টে পাকিস্তানে ঘুরে বেরোবার দায়ে সেখানকার পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে পারতো। তারা আমাকে জেলে আটকে রাখতে পারতো। আমাকে শাস্তি দেবে বা অত্যাচার করবে । বরং ইন্ডিয়ান এমব্যাসি আমাকে রেসকিউ করবে। কিন্তু হলো সেটির উল্টো।

এ উপন্যাসে আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা তুলে ধরেছেন লেখিকা। এক কথায় সুস্মিতা বলেছেন, এখানে মেয়েদের পরিচয় শুধু শয্যাসঙ্গিনী, রাঁধুনি আর সন্তান উৎপাদনের মেশিন হিসাবে। মানে ”থ্রি ইন ওয়ান।” উপন্যাসের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পাতায় নারী প্রসঙ্গে লেখিকা বলেন, সংসারের সবাইকে সেবাযত্ন করার পর প্রতি বছরে একটা করে নতুন কিছু সৃষ্টি তাকে (নারী) করতেই হবে। অর্থাৎ সন্তানের জন্ম দিতে হবে। যদি কোন কারণে বৌ সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হয়, তবে তার ঘরে সতীন আসবে। এই নিয়ম শিথিল হবার নয়।



তবে অন্যান্য দেশের মুসলমানদের মত বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের মতে তালাক দেয়ার প্রবণতা তাদের মাঝে নেই। এদেশের মুসলমানরা তত কঠোর নয়। অন্ধ, কালা, খোড়া, কুরুপা যাই হোক না কেনো তাকে নিয়েই ঘর করতে হবে। স্বামী যখন দ্বিতীয় বিবাহ করে, তখন প্রথম বৌ সবার কাছে আরো বেশি প্রাধান্য পায়।

আফগানিস্তানের পুরুষরা একাধিক স্ত্রী নিয়ে কিভাবে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন, তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে উপন্যাসে উল্লেখ করেছেন লেখিকা। সেখানে দেখানো হয় নবাব নামে এক যুবকও জাম্বাজের মত হিন্দুস্থান থেকে এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে আনে। সেই মেয়ের মুখ থেকে শোনা গল্প উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে।

লেখিকার ভাষায় গল্পটা এমন, দশ বছর আগে বিয়ে হয় নবাবের। সেটি গোপন করে সে হিন্দুস্থানের এক বাঙালি মেয়ের সাথে প্রেম করে এবং তাকে বউ করে নিয়ে আসে আফগানিস্তান। নবাবের দাদা সবার সামনে তার সাথে নবাবের আগের বউ আরানার পরিচয় করিয়ে দেন। রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় সে দেখতে পায় খাটে পরপর তিনটা মাথার বালিশ রাখা। মাঝখানের বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে নবাব। তারপর আরানা ও তাকে বিছানায় ডাক দেয়। মেয়েটি তখন স্বামী নবাবকে প্রশ্ন করে ”ও, আমি আর তুমি একসঙ্গে শোবো?” তখন নবাব জবাব দেয় নিশ্চয়ই। আরানা তো আমার বিবি! এখানে না শুলে সে আর কোথায় যাবে? এরপর তার সামনেই প্রথম স্ত্র্রী আরানার সাথে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় নবাব।"

উপন্যাসের অপর একটি স্থানে নারী প্রসঙ্গে লেখিকা বলেছেন, ”এদেশে কোন বৌ যদি মারা যায় তবে এদের আফসোসের সীমা থাকেনা। কারণ প্রচুর টাকা দিয়ে বৌ কিনতে হয়। সুতরাং কিনে আনা দামি বৌ যদি মারা যায়, তবে আবার তো কিনতে হবে!” লেখিকা এই ”পণপ্রথা” সম্পর্কে তাঁর উপন্যাসে বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষিত বাবা ও মায়েরা মেয়ের বাড়ি থেকে পণ (যৌতুক) নিয়ে ছেলেকে বিক্রি করে। আর কাবুলের অশিক্ষিত বাবা-মায়েরা ছেলের বাড়ি থেকে পণ নিয়ে মেয়েকে বিয়ে করে। বিয়ে-সাদি প্রসঙ্গে লেখিকা বলেছেন, এদেশের অনেক অদ্ভুত নিয়মের মধ্যে আর একটা নিয়ম হলো বিয়ের সব ঠিক হবার পরও মেয়ে তার বাপের বাড়ি থাকবে এক বছর। তারপর হবে বিয়ে। আর বিয়ের আগে জামাই আসবে মেয়ের কাছে। অবিবাহিত মেয়ে জামাই একঘরে শোবে। কিন্তু যদি মেয়ে গর্ভবতী হয়ে যায় তবে সর্বনাশ। জামাইয়ের বাড়ি থেকে জরিমানা আদায় করা হবে।

”কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” উপন্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো লেখিকা এখানে আফগানিস্তানের দীর্ঘ ৩০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস সংক্ষিপ্তকারে তুলে ধরেছেন । সেখানে উল্লেখ করা হয় ”১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সম্ভাবত রাশিয়ান বাহিনী আফগানিস্থানে প্রবেশ করে। যদিও ১৯৭৯-র আগেও এদেশে অনেকে বার যুদ্ধ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে। কত গ্রাম শহর যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। যুদ্ধেও বিভীষিকা এবং ধ্বংসাতœক কার্যাবলি সম্বন্ধে কাবুলের প্রত্যেক মানুষ সচেতন। কিন্তু ৭৯ সালের যুদ্ধে মানুষ দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এর আগে শুধুমাত্র সৈন্যদের মধ্যেই যুদ্ধ সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ নাগরিক ও সুদূর পল্লী গ্রামের মানুষ যুদ্ধ সম্বন্ধে প্রায় উদাসীন ছিল। পরবর্তী সময়ে জাতীয়তাবাদের হিড়িকে দেশের সমস্ত মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।”

এ উপন্যাস থেকে আরও জানা যায়, নুর মহম্মদ তারাকির শাসনামলে কাবুলে প্রবেশাধিকার পায় রাশিয়ানরা। তবে জাহির শা যখন দেশের মন্ত্রী ছিলেন, তখন দেশে শান্তি ছিল। গঠনমুলক কর্মতৎপরতার জন্যে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে। কিন্তু এই সাধারণ মানুষ এক সময় এমন ভুলভ্রান্তি করে বসে যা শোধরানো অসম্ভব। সেই রকমই ভুলের মাসুল হিসেবে গদি ছাড়তে হয় জাহির শা’কে। তিনি চোখ অপারেশনের জন্য আমেরিকা যান এবং কিছূদিনের জন্য ভাইপো দাউদ খানকে গদিতে বসিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখানেই সে বিশ্বাসঘাতকতা করে। দাউদ আর গদি ছাড়লোনা। এরপর ধীরে ধীরে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করলেন নুর মহম্মদ তারাকি। তিনি পীর আজরাতের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর দেশে বিদ্রোহের পদধ্বনি শোনা যায়। তারাকি তার ট্যাঙ্কের পেছনে দাউদকে বেঁধে মাইলের পর মাইল টেনে নিয়ে যায়। তাতেই দাউদের মৃত্যু হয়। এরপর নুর মহম্মদ তারাকি গদিতে বসেন। তারাকির পর গদিতে বসেন পিজলামিন। এরপর আসেন বাবরাক কারমাল। অত:পর গদি দখল করেন ড: নাজিবুল্লা। তবে ৯১ সালের পর মুজাহিদদের হাতে বন্দী হন তিনি। কিন্তু যুদ্ধ বিরতির কোন লক্ষণ দেখা গেলোনা। মানুষ পালিয়ে যেতে লাগলো পাকিস্তানে। ওই সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক আফগান শরণার্থীদের স্বার্থে নিজের দেশে কুঁড়েঘর বানিয়ে বাস করার সুযোগ করে দেন। যেকারণে আফগানবাসীরা জিয়াউল হককে মানবতার প্রতিক হিসাবে মনে করেন বলে কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ উপন্যাসে উল্লেখ করেন লেখিকা।



আফগানিস্তানের দূর জনপদের সামাজিক ছবিসহ পরিবারের খুঁটিনাটি চমৎকার ভাবে উপন্যাসে তুলে ধরেছেন লেখিকা। বিশেষ করে জাম্বাজ তাকে ফেলে চলে যাওয়ার পর তার মনের অবস্থা কেমন থাকতো, সেটি প্রকাশ করতে গিয়ে উপন্যাসের একটি স্থানে লিখেছেন, একটা হিংসা আমার মনে অপ্রত্যক্ষ জায়গা করে নেয়। কাইকে যখন দেখি সে তার স্বামীর সঙ্গে বসে আছে, তখন আমার মনের ভিতরটা সপ্ততন্ত্রীর বীণার ঝঙ্কারের মতো বেজে ওঠে। ভা্বি ও কত সুখী।স্বামী ওর সঙ্গেই আছে।আমার নেই। একটা কষ্ট তখন আমার বুকের ভেতরটা একেবারে ঝাঁঝরা করে দেয়। এমনকি পশুপাখির ক্ষেত্রেও আমার একই হিংসা বা ওই প্রকার বীণা ঝংকৃত হতে থাকে। সবই আছে, অথচ কিছুই নেই। হৃদয় আছে তবে তা উদ্দীপ্ত হয়না।চাওয়া আছে, পাওয়া নেই। আমি এক হারিয়ে যাওয়া নারী। কেবল দু'চোখ ভরে নীড়ের স্বপ্ন আঁকি।



আফগানিস্তানের কাবুল থেকে একসময় ব্যবসা করতে ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে আসতেন যারা, তাদেরকে আমরা কাবুলিওয়ালা হিসাবে জানি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম তাঁর ছোট গল্পে কাবুলিওয়ালা চরিত্রের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। ভিন দেশের মানুষ কাবুলিওয়ালা রহমতের প্রতি ছোট্ট খুকি মিনির অসম্ভব রকমের ভালবাসা জন্মানোর কথা "কাবুলিওয়ালা" গল্প থেকে আমরা জেনেছি। তারপর কাবুলিওয়ালা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আর কেউ লেখেননি । সুস্মিতা তাঁর এই উপন্যাসে কাবুলিওয়ালার সাথে বাঙালি মেয়ের প্রেম ভালবাসার কথা কেবল বলেননি, একই সাথে তুলে ধরেছেন সেদেশর মানুষের অভাব-অনটন, নির্যাতন, হিংস্রতা, মানসিকতাসহ নানা বিষয়।

উপন্যাসটি আফগানিস্তানের তালেবানদের বিরুদ্ধে বাঙালি বউ সুস্মিতার সরব জেহাদ। লেখিকার ভাষায় আফগানিস্তানে যা ঘটতে দেখেছি তা ধর্মের বিকৃত ব্যভিচার। ধর্মের যিকির তুলে যারা মানুষে মানুষে বিভেদের প্রাচীর গড়ে তোলে, ইসলামের পবিত্রতা ও মহত্বকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে তাঁর এই লেখনী।



কাবুলিওয়ারার বাঙালি বউ এখন ইতিহাস। যাদের বিরুদ্ধে তাঁর এই উপন্যাস, শেষ পর্যন্ত সেই ধর্মান্ধ তালেবানদের গুলিতেই নিহত হলেন তিনি। এ হত্যাকান্ডের পরেই যেন পাঠক সমাজে আলোচনায় চলে এলেন কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ সুস্মিতা।



তবে এ উপন্যাসে আফগানিস্তারে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা দিক ফুটে উঠলেও বইটি পড়ার সময় মনে হয়েছে লেখাটি একটু অগোছালো। দূর্বলতা রয়েছে সম্পাদনার ক্ষেত্রেও। লেখিকা নিজেও বানানের ব্যাপারে খুব বেশি যত্নশীল ছিলেন না বলে আমার মনে হয়েছে।



পরিশেষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যশোরে বসবাসরত আমার ব্যবসায়ী বন্ধু নাসিরের প্রতি। তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সরাসরি কলকাতা থেকে উপন্যাসটি কিনে না আনলে এত তাড়াতাড়ি ”কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” এর রিভিউ লেখা বা আলোচনা করা হয়ে উঠতো না।



মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বইটি পড়ার আগ্রহ জন্মেছে। সুযোগ পেলে পড়ব। আফগানিস্তান বিষয়ে অনেক কিছু ই জানা যাবে। :)

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৮

শামীম সুজায়েত বলেছেন: সেলিম ভাই,

সম্ভাবত আজই প্রথম আমার কোন পোস্টে আপনি মন্তব্য করলেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
খুশি হলাম আপনার স্পর্শে।

সুযোগ পেলে পড়ে রাখতে পারেন আলোচিত এ উপন্যাসটি। গল্পের কাহিনী অসাধারণ।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:০০

সদয় খান বলেছেন: পড়ে অনেক ভাল লাগলো । আরো ভাল লাগলো এই জন্য যে এটা ব্লগে অন্য কারো কারো পোস্টে আমার প্রথম কমেন্ট । কিছুদিন আগে একসেস পেলাম । আপনাদের সাথে থাকতে চাই ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:০৫

শামীম সুজায়েত বলেছেন: আমারও জেনে ভাল লাগলো যে প্রথম কমেন্ট পেলাম।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:২১

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: রিভিউ এর কল্যাণে বইটার প্রতি আগ্রহ জন্মাল। আশা করি পড়বো।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:০৬

শামীম সুজায়েত বলেছেন: হ্যা, পড়ে দেখতে পারেন। আপনার প্রতি রইলো অশেষ শুভেচ্ছ।

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৩০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


চমৎকার রিভিউ। বইটি পড়ার আগ্রহ জন্মালো।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫২

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অচিরেই নীলক্ষেতে বাংলাদেশী প্রিন্ট পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। খুঁজলে ইন্ডিয়ান কপিও মিলতে পারে।
শুভ কামনা রইলো। অনেক ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।

৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪

সোহানী বলেছেন: রিভিউ অবশ্যই চমৎকার হয়েছে। বইটা পড়তে চাই। অর্ডার দিয়ে নয় মার্কেটে কবে এভেইলেবল হবে???

তবে সুস্মিতার জন্য আমার ব্যাক্তিগতভাবে অনেক রাগ হয়.. এত অপমানের ও পর কেন আবার ফিরে গেল সে??? আসলে সব মেয়েই এক, সামান্য ভালোবাসো পেলে আগের সব দু:খ ভুলে যায়।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৪:১৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ঠিকই বলেছেন সোহানী।

তালেবানদের হাতে খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বা ভয় পাওয়ার বিষয়টি উপন্যাসে বহু আগেই উল্লেখ করেছেন লেখিকা। তাছাড়া যার জীবনে এমন ঘটনা ঘটে গেছে, সে কেনো আবার যেতে গেলো, এটি আমারও প্রশ্ন।

জীবন তো একটাই। পৃথিবীতে বার বার আসার কোন সুযোগও নেই। সুতরাং বুঝে চলা বুদ্ধিমানের কাজ হতো।

ভাল থেকেন।

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩

রয়েলাবনী বলেছেন: োমার লেখা টা খুব ভালো লাগল। বই টা আমার বাসাতে আশে । আসা করি কাল শুক্র বার বই টা পরবো ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

শামীম সুজায়েত বলেছেন: খুব ভাল লাগলো বন্ধু তোমায় এখানে পেয়ে।
বইটা তো মুক্তা সন্ধ্যায় ফেরত দিলো।
ও কে বলে দেবো আবার নিয়ে যেতে।

৭| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

শহুরে আগন্তুক বলেছেন: তার মৃত্যুর কারণ নাকি পারকিয়া প্রেম । পত্রিকায় পড়েছিলাম । আসলে যে কি আল্লাহ্‌ ভালো জানেন ।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩৪

শামীম সুজায়েত বলেছেন: এ ধরণের অভিযোগের কথা উঠেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায়।
পরকিয়া প্রেমে জড়িত হবার অভিযোগ দুজনার ক্ষেত্রেই রয়েছে।

এমনও অভিযোগের কথা শুনেছি যে লেখিকার স্বামী জানবাজ পরিকল্পিত ভাবে তালেবান লেলিয়ে হত্যা করিয়েছে।

তবে এ হত্যাকান্ডের দায় তালেবানরা ঘটনার তিন-চার দিন পর স্বীকার করে বলে আনন্দবাজার পত্রিকায় নিজেও পড়েছি।

৮| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

বাঙলি বলেছেন: যাদের বইটি পড়ার সুযোগ হচ্ছে না তারা ইউটিউবে গিয়ে মনিষা কৈরালা অভিনীত ‌'তালিবান' ছবিটি দেখে নিতে পারেন। আমার ধারণা এই কাহিনী অবলম্বনেই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ কাহিনী অবলম্বনে ২০০৩ সালে মুক্তি পায় মনীষা কৈরালা অভিনিত "এসকেপ ফ্রম তালেবান" সিনেমাটি।
ওটি দেখলে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে পুরোটাই।

৯| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪

এন এফ এস বলেছেন: আপনি তো কোন রিভিউ দিলেন না বইটা সম্পর্কে যাস্ট কিছু কথা বলে বই হাতে পাওয়ার উপায় বললেন। এটাকে কি রিভিউ বলা যায়?
আর যদি রিভিউ না বলেন তবে বলব লেখাটা ভাল লাগল :)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৪

শামীম সুজায়েত বলেছেন: রিভিউ শব্দের অর্থ সম্পর্কে ধারণা আমার পুরোপুরি নেই। লেখার হেডিং কি হওয়া উচিৎ তা নিয়েও সেভাবে চিন্তা করে দেখা হয়নি।

মূলত চেয়েছি সবাইকে এই উপন্যাস সম্পর্কে জানাতে। নিজের প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি গল্পের অংশ বিশেষ তুলে ধরা এবং সংক্ষিপ্ত আকারে কাহিনীর বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
তাছাড়া কোন উপন্যাস বা গল্পের বই সম্পর্কে আলোচনা বা সমালোচনা করা অথবা গল্পটা নিজের ভাষায় সবার সামনে দৃশ্যমান করে তোলার প্রচেষ্টা এটাই জীবনে প্রথম।

ভুল-ভ্রান্তি মার্জনা করিবেন।

১০| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৬

সায়েম উর রহমান বলেছেন: বইটি পড়ার Interest জাগলো ...

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৯

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।

১১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
পড়ার ইচ্ছে আছে।
দুই সপ্তাহ আগে অর্ডার হলে বেশি দেরী হয়ে যায়।
এখন কি স্টকে আছে?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৪

শামীম সুজায়েত বলেছেন: না ভাই!
কলকাতা থেকে আসলে এক্সট্রা কপি এখনও আনানো হয়নি। যত সহজ মনে করছিলাম, ততটা সহজ আসলে না। বই ব্যবসায়ীরা লাইন ঘাট ভাল বুঝবেন।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

১২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১১

সাদা রং- বলেছেন: বইয়ের যদি পিডিএফ কোন লিংক থাকে দিয়েন।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩৮

শামীম সুজায়েত বলেছেন: পিডিএফ এর কোন লিঙ্ক ঠিক এ মুহূর্তে নেই।

পরিকল্পনা আছে পুরো ১৫২ পাতা স্ক্যান করে পিডিএফ বানিয়ে ছেড়ে দেবো নেটে। সময়-সুযোগ করে শেষ পর্যন্ত করা হবে কি না জানিনা।

১৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৪১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়ে দেখার আগ্রহ জন্মাল। ধন্যবাদ।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:২২

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।

১৪| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:২১

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
খুব্ই মান সম্মত লেখা, তা বলবো না। তবে পড়তে খারাপ লাগবেনা।
আলোচিত একটি উপন্যাস হিসাবে এটি পড়ে রাখা উচিৎ বা যেতে পারে বলে মনে করি।
ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.