নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিনতি লতা (শেষ পর্ব)

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪১



নিয়ম অনুযায়ী এখন কারাগারে ফেরত যাবে লতা। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর মিলবে মুক্তি। তাকে যে সরাসরি আমার হাতে তুলে দেয়া হবে, তা নয়। ওরা লতাকে আমাদের দেশের বর্ডার গার্ডের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্ত করবে। এ নিয়ে অবশ্য রুনা আপা ছুটাছুটি করছেন। গত পরশু কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে তিনি কাটিয়েছেন সারদিন। এ সংক্রান্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে আসা চিঠিসহ যাবতীয় কাগজপত্র সেখানে জমা দেয়া হয়েছে। দূতাবাস থেকে এগুলো গতকালই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। লতার মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টিকে হাইলাইট করে তা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে দূতাবাস।

সব কাজই হচ্ছে। তবে তা সম্ভুক গতিতে। ভারতীয়রা সবকিছু বোধ হয় খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। যাচাই-বাছাই না করে তাদের বড় কর্তারা কোথাও স্বাক্ষর করতে চাননা । অবশ্য লতার ব্যাপারটা দিল্লিতে নিযুক্ত আমাদের হাইকমিশনার অবগত আছেন। সম্ভবাবত হাইকমিশনার ওভার টেলিফোনে ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিবের সাথে কথা বলেছেন। রুনা আপা না হলে এ কাজগুলো আমার একার পক্ষে করা সম্ভব হতোনা। তাঁর ছোট ভাই আমাদের দেশের বহুল প্রচারিত একটি দৈনিকের কূটনৈতিক প্রতিবেদক। তার রেফারেন্সে কাজগুলো করা সহজ হচ্ছে। ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের বাংলাদেশী দূতাবাসে কর্মরত আছেন তার পরিচিত লোকজন। তাছাড়া রুনা আপা নিজেও একজন বড় মাপের এনজিও কর্মকর্তা। ভারতের একটি মানবাধিকার সংস্থার সাথে আছে ঘনিষ্ট যোগাযোগ । ওই সংস্থার দুই সদস্য আমাদেরকে রিসিভ করতে বর্ডারে এসেছিলেন। তারাই আমাদেরকে নিয়ে যান শিলিগুড়ি সরকারি হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে। দিন কয়েক আগে লতাকে মানসিক বিভাগ থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়েছে। লতা তখন বালিশে গা এলিয়ে দাঁত দিয়ে কাটছিল হাতের নোখ। উস্কখুস্ক চুল দেখে বোঝা যাচ্ছিল তেল, শেম্পু লাগেনি তার চুলে বহুকাল। চোখের নিচে মোটা কালো দাগ জানান দিচ্ছে দীর্ঘ অশান্তির প্রতিচ্ছবি। কেমন একটা মন মরা ভাব। দীর্ঘ অসুখে ভোগা চেহারা। কিন্তু তার শরীরটা বেশ মোটাতাজা লাগছে। নাদুস-নুদুস গরন।

এত মোটা তো ও ছিলনা ?

কয়েক মাসের ব্যবধানে মোটা হয়ে গেলো মেয়েটি !

আমি তার সামনে এগিয়ে গেলাম। তখনও চোখ তুলে তাকায়নি লতা। মাথা নিচু করে আছে। আমি তার বিছানার সামনে দাড়াতেই সে গায়ের চাঁদর বুক পর্যন্ত টেনে তুলতে তুলতে মাথা উঁচু করলো।

দুজনের চোখাচোখি হতেই অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এলো লতার মুখে। মুহূর্তেই যেন মুছে গেলো তার চাহনিতে লেপ্টে থাকা অসহায়ত্ব। চকচক করে উঠলো ফেকাসে দু'চোঁখ।

সে বিছানায় দু'হাতে ভর দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে এলো। আমার বুকে মাথা এলিয়ে দিতেই গোটা শরীরের ওজন টের পেলাম। এ সময় লতার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকা চাদর মেঝেতে পড়ে গেলে তার শরীরের আকৃতি স্পষ্ট হলো দু'চোঁখে। আমার বুকের ভেতর তখন হিমশীতল একটা বাতাস নাড়িয়ে দিলো সমস্ত শরীর। মা্ইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষ যেমন ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যায়, ঠিক তেমনই একটা অনুভূতি টের পেলাম। হাত-পা নাড়ানো যাচ্ছে না কিছুতেই। ঠান্ডা গ্যাসিয় কণাগুলো বুকের পাজড়ে গুতো মারতে থাকলো অবিরত।

লতা পেগনেন্ট!



আমার চোঁখের মনি দুটো স্থির হয়ে আছে। লতা শব্দ করে কাদঁতে শুরু করলো। তার চোঁখের জলে আর আমার শরীরের ঘাম মিলে মিশে একাকার হয়ে বয়তে থাকলো বুকের লোমের অলিগলি পথ মাড়িয়ে। আমি চোঁখ বন্ধ করে কল্পনায় মাপতে থাকি লতার পেটের আকৃতি। তার গর্ভকালীন সময়ের বয়স হিসাব করার চেষ্টা করি। আমার অনুমান যদি সঠিক হয়, তাহলে ওর গর্ভে থাকা সন্তানের বয়স চার-পাঁচ মাস এর বেশি নয়।

অনুমান ভুল হলেই ভাল। লতা আমার কাছ থেকে নিখোঁজ হয় ২৮ এপ্রিল। আজ অক্টবর মাসের ২৩ তারিখ। তারামনে প্রায় ছ' মাস। বিষয়টি অন্য ধরণের যাতনা দিতে লাগলো। লতাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে উৎফুল্ল না হয়ে বরং আরও বেশি গুটিয়ে গেলাম। কাগজেই তো পড়েছি, লতাকে একটি পরিত্যক্ত স্টেশনের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়, যেখানে দিন দুপুরে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় একশ্রেনীর মানুষ। সেখানে রিক্সাওয়ালা, ড্রাইভারসহ নিম্ম আয়ের মানুষরা অল্প টাকায় ভ্রাম্যমান পতিতাদের নিয়ে ফূর্তি করে। সেখানে কুন্ডুলি পাকায় গাজার ধোয়া। হেরোইনের লিকলিকে ধোয়াও নল বেয়ে পৌছে যায় যবুথবু মেরে থাকা হেরোইন আসক্ত লোকগুলোর ফুসফুসে। এরপর শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগে মরিয়া হয়ে ওঠা লোকগুলো ঠিকানাহীন রাস্তার মেয়েদের নিয়ে টানাহেচড়া শুরু করে পরিত্যক্ত স্টেশনের নির্জনে।

কলকাতার বাংলা পত্রিকায় সলসলাবাড়ি পরিত্যক্ত রেলস্টেশন সম্পর্কে দুই তিন লাইনে এমনই পরিবেশের বর্ণনা দিয়েছিল। অবচেতন মনেই সেই নোংড়া দৃশ্যগুলো আর কতক্ষণ স্থির হয়ে থাকতো জানিনা। একজন সিস্টার এগিয়ে এসে আমার দিকে চোঁখ মোটা করে তাকালে আমি বাস্তবে ফিরে আসি। আমি লতাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। সে শক্ত করে আকড়ে থাকলো আমাকে।



এরপর লতাকে একটি ইনজেকশন পুশ করে ঘুম পারিয়ে দেয়া হলো। সাধারণত বাংলা সিনেমায় যেমন দেখানো হয়। তেমনই হলো ব্যাপারটা। সিস্টার বললেন, পেশেন্টকে কোন ভাবেই উত্তেজিত হতে দেয়া যাবেনা। তাহলে সমস্যাটা আবার ফিরে আসবে। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। হঠাৎ করেই শরীরের যেকোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্যারালাইসড হয়ে যেতে পারে।



আমি সেখানে আর কোন কথা বাড়ায় না। চুপচাপ সরে এলাম। বিছানা থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে থাকলাম। আমার পায়ের পাশ দিয়ে লেজ নাড়াতে নাড়াতে একটা বিড়াল চলে গেলো। আমি সেদিকে দৃষ্টি ফেরায়। লম্বা বারান্দা দিয়ে চলে যাচ্ছে কালো রঙের বিড়াল। আমি হাটতে শুরু করি। লম্বা বারান্দা ধরে উদাসীন। দেখলাম একজন মহিলা সুইপার কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে বারান্দা মুছে চলেছে। সে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমিও তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাকে অতিক্রম করলাম। হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে বললো, "এ্যা বাবু, তেরি দেমাক ঠিক নেহি হে। বুড়া লাগা। দেখছিস না মুছামুছি কুরছি। তু নোংরা করলি!



আমি কোন উত্তর দিতে পারিনা। এ মুহূর্ত থেকে আমার জীবনের সমস্ত অতীতকে মুছে দিতে ইচ্ছে করছে। কিছুই মনে রাখবো না আর।

সিফট চেপে ডিলিট বটমে চাপার মত করে সমস্ত ঘটনা, সমস্ত ভাবনা, যাতনা, কৌতুহল, জিজ্ঞাসাকে যদি ডিলিট করে দেয়া যেতো।



ভগবান, তুমি কি আমার মস্তিস্ক থেকে সব তথ্য-উপাত্ত মুছে দিতে পারোনা। আমি নতুন করে শুরু করি।

মিনতি লতা আমার স্ত্রী।

তার গর্ভ সঞ্চারিত হয়েছে আমার শুক্রানুতেই।

এটাই সত্য। বাকি সব মিথ্যে।

অংক কষে সব হিসাব মেলানো যাই না।

অনাগত সন্তানের পিতা আমি সেই দু:খবন্ধু।



মনে প্রাণে বিশ্বাস করি কিছু কিছু সম্পর্ক আছে, কিছু কিছু ভালবাসা আছে, যা মানুষের উদারতাকে জাগ্রত করে। বাস্তবতাকে মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ হয়না।

-----------------------------------------------------

আগের পর্ব

১০

০৯

০৮



মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এবার বই আকারে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকছি। অনেক ভালো একটি সিরিজ শেষ হয়ে গেলো।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২০

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ইচ্ছে তো আছে ভাই।
আর একটু সংযোজন-বিয়োজন করে নিতে হবে।
বানানের ক্ষেত্রেও থেকে গেছে দূর্বলতা।

ভাল লাগলো আপনি পড়েছেন বলে।

শুভ কামনা রইলো।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪১

স্বপনচারিণী বলেছেন: কী জটিল! ভাল লেগেছে। কিন্তু সমাধান দর্শকের কাছে ছেড়ে দিলেন! পরবর্তী গল্পের প্রত্যাশায় রইলাম।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ। প্রথম থেকে আপনাকে পেয়েছি।

প্রত্যাশা রইলো সবসময়ই কাছে পাওয়ার।

ভাল থাকবেন।

৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯

সোহানী বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লিখাগুলো.....++++

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৪৩

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ফোর প্লাসে (++++)
মুগ্ধ হলাম।
ভাল থাকা হোক সবসময়।

৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

কামরাজ বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৬

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অপনাকে।
সময় সুযোগ হলে আগের পর্বগুলো পড়ে দেখতে পারেন।

৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:
..... মিনতি লতা আমার স্ত্রী।
তার গর্ভ সঞ্চারিত হয়েছে আমার শুক্রানুতেই।
এটাই সত্য।
অংক কষে সব হিসাব মেলানো যাই না।
অনাগত সন্তানের পিতা আমি সেই দু:খবন্ধু ..... "

নেক্সট বইমেলায় ....... বই আকারে ..... আপনার অটোগ্রাফসহ।ওকে? :)

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৫

শামীম সুজায়েত বলেছেন: দারুণ বলেছেন।
আমি অভিভূত। অনুপ্রাণিত।
মুগ্ধতায় বুকের ছাতি আমার
হয়ে গেলো হাতির মত!


শুভ কামনা রইলো আপনার প্রতি। ভাল থাকবেন অস্পিসাস প্রেইস।

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৯

ঘাসফুল বলেছেন: এন্ডিংটা সুপার হইছে... :)

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩০

শামীম সুজায়েত বলেছেন: এ ধরণের পরিস্থিতিতে সন্দেহ আসাটা স্বাভাবিক। স্বামী দু:খবন্ধু সন্দিহান অনাগত সন্তানকে নিয়ে। কিন্তু কিছু কিছু ভালবাসা থাকে, যা সবকিছুকে ছাপিয়ে চলে যায়। বাস্তবতাকে মেনে নিতে হয়।

ভাল থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে নিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.