নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের লেখকরা লিখছেন এখনকার দুনিয়ার সেরা সব গল্প-উপন্যাস : কথা সাহিত্যিক রবিশংকর বল

১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক রবিশংকর বল ফেব্রুয়ারিতে ‘সার্ক লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল" এ অংশ নিতে এসেছিলেন বাংলাদেশ। খুব কাছ থেকে দেখেছেন এদেশের মানুষের সাহিত্য চর্চ, কল্পনাশক্তি, শব্দচয়ন, মূল কথা গল্পের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের তরুণ লেখকরা চলমান জীবনের যে অসঙ্গতী গুলো তুলে ধরেছে, বিশেষ করে স্বাধীনতার পরে এখনও যে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভে রয়েছে, তা চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে তরুণদের লেখনীতে। পক্ষান্তরে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ লেখকরা টিন-এজ প্রেম আর যৌনতা ছাড়া যেন আর কিছু দিতে পারছেনা। মধ্যবিত্ত আর উচচবিত্তের ড্রইং রুম ও বেডরুমের কাহিনি এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি।



১২ এপিল কলকাতার দৈনিক "সংবাদ প্রতিদিনে" ভারত ও বাংলাদেশের লেখকদের রচনার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় উপন্যাস "দোজখনামা"র রচিয়তা রবিশংকর বল। একুশে বইমেলায় প্রকাশিত দেশের ১২ জন তরুণ লেখকের রচনা ‘দ্বাদশ নভেলা' নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। সামুর পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:



বাংলাদেশের বারোজন লেখকের বারোটি টাটকা আখ্যায়িকা৷ এখানে ‘টাটকা' মানে জীবন ও সাহিত্যে যা চিরকালীন৷ প্রতিটি নভেলা-য় এক স্বাধীন ও অগ্ণিগর্ভ বাংলাদেশ এবং বিস্ময়কর ভাষা-বিস্ফোরণ৷ বইটি পড়ে উত্তেজনা জাগ্রত হয়, বাংলায় এমন ‘সাবভার্সিভ' গদ্য রচিত হচ্ছে৷ আবার বইটি পড়ে লজ্জাও হয়, এই বঙ্গে আমার সমসাময়িক ও তরুণদের লেখার কী চূড়ান্ত অবনমন!



ফেব্রূয়ারির শেষে ঢাকা গিয়েছিলাম ‘সার্ক লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল'-এর আমন্ত্রণে৷ তখন ওখানে রমনার মাঠে আর ‘বাংলা একাডেমী ঢাকা'-র প্রাঙ্গণে একুশের বইমেলা চলছিল৷ তরুণ কবি শামীম রেজা আমার হাতে একটি সুদৃশ্য বই ধরিয়ে দিলেন৷ ‘দ্বাদশ নভেলা'৷ উপস্হাপনা ও ভূমিকা দেবেশ রায়৷ এবারের একুশের বইমেলাতেই প্রকাশিত হয়েছে

এই সংকলন৷

‘নভেলা' কী? ‘অক্সফোর্ড কনসাইজ ডিকশনারি অফ লিটারেরি টার্মস'-এ লিখেছে a fictional tale in prose, intermediate in length and complexity between short story and a novel, and usually concentrating on a single event or chain of events, with surprising turning point. সংকলনের উপস্হাপক দেবেশ রায় একে আদি বাংলায় ‘আখ্যায়িকা' বলতে চান৷ ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘আখ্যায়িকায় এত পুষ্ট আমাদের আখ্যান-সাহিত্য, সাহেবরা ছোট-সিগারকে সিগারেটের মতো ছোট-নভেলকে নভলেট বললে আমরাও তাই বলব?' বটেই তো৷ তবু এ-বইয়ের নাম ‘দ্বাদশ আখ্যায়িকা' না-হয়ে ‘দ্বাদশ নভেলা' কেন?



এ-প্রশ্ন শিকেয় তোলা থাক৷ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বারোজন লেখকের ‘নভেলা' পড়তে-পড়তে জীবন ও রচনার যে-ভুবন আমার কাছে উন্মোচিত হল, তা এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ বারোজন লেখকের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শহীদুল জহির, তাঁর জন্ম ১৯৫৩-তে এবং মৃত্যু ২০০৮-এ৷ সর্বকনিষ্ঠ প্রশান্ত মৃধার জন্ম ১৯৭১-এ৷ প্রতিটি নভেলা-য় এক স্বাধীন ও অগ্ণিগর্ভ বাংলাদেশ এবং ভাষা-বিস্ফোরণ৷ এই নভেলাগুলো পড়তে-পড়তে একই সঙ্গে উত্তেজিত হই ও লজ্জিত হয়ে পড়ি৷ উত্তেজনার কারণ, বাংলা ভাষাতেই এমন ‘সাবভার্সিভ' রচনা লিখিত হচেছ৷ আর লজ্জিত হওয়ার কারণ, পশ্চিমবঙ্গে আমার সমসাময়িক ও তরুণদের লেখার কী চূড়ান্ত অবনমন! টিন-এজ প্রেম আর যৌনতা ছাড়া যেন আর কিছু নেই৷ মধ্যবিত্ত আর উচচবিত্তের ড্রইং রুম ও বেডরুমের কাহিনি এখানে ব্যবহূত হতে-হতে শুয়োরের মাংস হয়ে গেছে৷ দেবেশ রায় এই সংকলনটি উপস্হাপিত করে বস্ত্তত আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করালেন৷ ভূমিকাতে তিনি লিখেছেনও .. "বইটি তৈরি করার পিছনে আমার উদ্দেশ্য ছিল .. পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও পাঠকদের একটু নাড়া দেওয়া, ‘দেখুন দেখুন বাংলাদেশে কীরকম গল্প-উপন্যাস লেখা হচ্ছে, এখনকার দুনিয়ার সেরা সব গল্প-উপন্যাস'৷"



বারোটি নভেলা আন্তর্জাতিক মানের রচনা৷ প্রত্যেকটি লেখার বিষয় ও ভাষা আলাদা৷ কোনও স্টিরিওটাইপ নেই৷ শুধু এই সব রচনার মধ্যে বাংলাদেশের আত্মা ধকধক করছে৷ এই লেখকরা, কেউ নিজের দেশ-কাল-মানুষ থেকে বিচিছন্ন্ নন৷ তবু লেখকের ক্ষমতার কি ভেদাভেদ নেই? যেমন শহীদুল জহির৷ কারও সঙ্গে না-মিশতে পারা, নিঃসঙ্গ এই মৃত লেখকের ছায়া ধীরে-ধীরে বাংলা সাহিত্যকে গ্রাস করছে৷ এই সংকলনে রয়েছে তাঁর ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা' নামের নভেলা৷ শহীদুল জহিরের লেখার একটু উৃতি দিই .. ‘তখন নবাবপুরের মানুষ আর যানবাহনের শব্দ ও চাঞ্চল্যের ভিতর সে আরও অধিক কিছু অনুভব করে৷ মানুষ আর গাড়ি যে শব্দ সৃষ্টি করে, যে শব্দ সম্পর্কে মানুষ সব সময় সচেতন হয় না, তার বাইরে, এক ঝাঁ ঝাঁ শব্দের জগতে ঢুকে পড়ে৷ সে দেখে, নবাবপুরের ওপর অপরাের ম্লান আকাশ উইপোকায় ছেয়ে আছে আর পলায়নপর উইয়ের পিছনে অসংখ্য কাক হুটোপুটি করে৷ তার মনে হয় যেন কাকের চিত্কার এবং উইপোকার নিঃশব্দ পলায়ন প্রচেষ্টার দ্বারা নবাবপুর রোডের ম্রিয়মান বিকেলের ভিতর এক ধরনের নীরব সন্ত্রাসের অনুভব ছড়িয়ে পড়ে৷'



বারোটি নভেলায় কোনও-না-কোনওভাবে ‘নীরব সন্ত্রাসের' অনুভব আছে৷ কেননা এই লেখকরা বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই লেখেন৷ ১৯৭১-এর স্বাধীনতার পরেও বাংলাদেশ এখনও ভিতরে-ভিতরে অগ্ণিগর্ভ৷ সেই সন্ত্রাসের বাতাবরণ ছড়িয়ে আছে জাকির তালুকদারের ‘ছায়াবাস্তব' আখ্যায়িকায়৷ শামীম রেজা-র ‘জীবনানন্দ ও মায়াকো জোছনা দেখতে চেয়েছিলেন' নভেলায় জীবনানন্দ ও মায়াকোভ্স্কিকে আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশের পটভূমিকাতেই৷ মামুন হুসাইন-এর ‘এভরিওয়ান রাইট্স টু কর্নেল', প্রশান্ত মৃধার ‘বুড়ির গাছ', সালমা বাণী-র ‘জলের ওপর টিপসই' বিষয়ের দিক থেকে আলাদা হয়েও কী এক সুড়ঙ্গলালিত সম্পর্ক থেকে যায় এই সব রচনায়৷



‘দ্বাদশ নভেলা'-র লেখকেরা সকলেই ক্ষমতার বিরুদ্ধে৷ শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা নয়, শিল্প-সংস্কৃতি-সহ যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে তাঁরা প্রশ্ন করেন৷ শাহাদুজ্জামানের ‘ইব্রাহিম বক্সের

সার্কাস'-এ ইব্রাহিম বলে, ‘এ কাজটা করার জন্য আমার গ্রামেই থাকা দরকার, গ্রামের গাছ, কাঠবেড়ালি, পাখির কাছাকাছি৷ এছাড়া শহরে সুবিধা বেশি হত আপনার এই ধারণাটা ঠিক না৷ শহরে গেলে হয়তো এইটুকু কাজও আমি করতে পারতাম না৷ যারা কোনো একটা নতুন কথা বলতে চায়, নতুন ধারণা দিতে চায়, কোনো জায়গাই তার জন্য নিরাপদ না৷ আর আমার মতো পরিচয়হীন একজন মানুষ শহরে বসে এসব কাজ কি করতে পারতাম? শহর তো শিক্ষিত, ক্ষমতাবানদের জায়গা৷ আর ক্ষমতাবানরা চোরকেও ক্ষমা করে, আর যে একেবারে নতুন একটা কথা নিয়ে হাজির হয় তাকে ক্ষমা করে না৷'

‘দ্বাদশ নভেলা' সংকলন প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বক্সের কথাগুলো কী আশ্চর্যভাবে মিলে যায়৷ বারোজন লেখক আমাদের জন্য নতুন কথা নিয়ে এসেছেন, নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন৷ ‘নতুন' মানে, জীবন ও সাহিত্যে যা চিরকালীন৷ ‘দ্বাদশ নভেলা'-র অন্যান্য লেখক হলেন .. পারভেজ হোসেন, মনিরা কায়েস, কাজী আনিস আহমেদ, আহমাদ মোস্তাফা কামাল৷ নভেলাগুলোর বিষয় নিয়ে যে কিছু বললাম না, তার কারণ, উপস্হাপক দেবেশ রায়ের চেতাবনি .. ‘গল্পের সারসংক্ষেপ তো দূরের কথা, এ-গল্পের আভাসও দেওয়া সম্ভব না, কারণ সেই আভাসগুলোই গল্প৷ তার বাইরে কোথাও গল্প ঘটছেই না৷'



আমি, একজন পাঠক, ‘দ্বাদশ নভেলা' এখন আমার সবসময়ের সঙ্গী৷ বাংলা ভাষায় এমন জামার কলার-তোলা বারোটি লেখা অনেক দিন পড়িনি৷ এই লেখকরা বঙ্কিমচন্দ্রের সেই অমোঘ প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন .. ‘এই জীবন লইয়া কী করিব? কী করিতে হয়?'



নিজের দেশ ও মানুষের কথা লিখতে হয়৷ আর তখন দেবেশ রায়ের মতো করেই বলা যায়, ‘আমরা তৃতীয় দুনিয়ার লেখক-পাঠক নই৷ আমরাই দুনিয়া৷ আমরা প্রাক্তন-উপনিবেশ নই৷ আমরা বরাবরই সৃষ্টিতে স্বাধীন৷

আমরাই উন্ন্ততম বিশ্ব৷'



সংবাদ প্রতিদিনের লিঙ্ক

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২৬

সাবরিন কল্পনা বলেছেন: হু, আমরা লিখতে পারি ভাল।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৯

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ভালো বলেছেন , বাস্তবতা বটে !

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:৫৯

শামীম সুজায়েত বলেছেন: আমরা ভাল করছি বলেই প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন একজন ভারতীয়।
ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপনার সাথে সহমত।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:৫৬

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ব্লগগুলো আমাদের লেখালেখির ইচ্ছেটাকে দিয়েছে বাস্তবতার ছোয়া।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ব্যাপারটা জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২৯

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভারতের ওই পত্রিকায় পেলাম, ভাবলাম নিজেদের প্রশংসার খবর যেহেতু, শেয়ার করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.