নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সীমান্তে নিষ্ঠুরতা : নীরব থেকোনা বাংলাদেশ

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪

সীমান্তে একটি শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিএসএফ এর চাপা মারে আহত শিশুটি মারা গেছে নিজ ভুখন্ডে ফিরে। অনলাইন কাগজগুলোতে এসেছে খবরটি।

এই মর্মান্তি, এই নিষ্ঠুরতার জন্য কত বড় পৈশাচিক হৃদয়ের প্রয়োজন?

সীমান্তকে পুঁজি করে যাদের রুটি-রুজি, চলে জীবন-সংসার, তাদের অধিকাংশজনই হত দরিদ্র মানুষ। দিনমুজুর। টাকার বিনিময়ে অবৈধ পথে তারা বাংলাদেশে নিয়ে আসে চোরাচালানপণ্যের বস্তা। তারা জানে, যেকোন মুহূর্তেই বদলে যেতে পারে চেনা মেঠো পথ, খাল-বিল, চেনা কাটাতারের বেড়া। দূর থেকে ছুটে আসা বিএসএফ এর গুলি নোম্যন্স ল্যান্ডে থামিয়ে দিতে পারে জীবন প্রদীপ। তবুও থেমে নেই সীমান্ত এলাকার খেটে খাওয়া নিরক্ষর মানুষগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ জীবন সংগ্রাম।

কেবল কি চোরাকারবারী বা গরু ব্যবসায়ী, সীমান্ত এলাকার সাধারণ কৃষক, রাখাল, গৃহবধূও কখনও কখনও বিএসএফ এর নিষ্ঠুরতার শিকার হন ভাগ্যদোষে। ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স মাঝের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ ভূখন্ডে ঢুকে সাধারণ নাগরিকদের ধরে নিয়ে যায়। কখনও পতাকা বৈঠকের পর অর্ধমৃত মানুষ ফেরত আসে, কখনও বা মেলে শক্তকাঠ হয়ে যাওয়া নিথর দেহ।

৬ নভেম্বর'১৪ দেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় চাপাইনবাবগঞ্জের জহুরপুর সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক লিটন নামে ১৪ বছরের এক কিশোরকে হত্যার খবর বের হয়। দ্যা রিপোর্টে বাংলাদেশী শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বিজিবি ও স্থানীয়রা জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিটনসহ অন্য এক কিশোর জোহুরপুর সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় ঘাস কাটতে গিয়ে ভারতীয় অংশে ঢুকে পড়ে। এ সময় ভারতের ২০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের পিরোজপুর ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে লিটনকে ধরে ফেলে। পরে তাকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে ছেড়ে দিলে সে বাংলাদেশে ফেরার পথে মারা যায়। খবর পেয়ে বিজিবি সীমান্ত এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ বিজিবি’র ৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জাফর শেখ মোহাম্মদ বজলুল হক ওই পত্রিকার প্রতিবেদককে জানান, ‘২০ বিএসএসফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্টকে মৌখিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে বিএসএফকে পত্র দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’

দেশের বিভিন্ন সীমান্তে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে বাংলাদেশী নাগরিকের ওপর বিএসএফ এর নির্মম নির্যাতন । কেবল নিষ্ঠুর নির্যাতন নয়, জীবন্ত মানুষ ধরে নিয়ে গিয়ে ফেরত দেয়া হচ্ছে থেতলে যাওয়া বিকৃত লাশ। প্রতিনিয়ত ঘটছে। সীমান্তলাগোয়া গ্রামগুলোতে বসবাসরত মানুষের জীবনে এ যেন নিত্যদিনের চাপাকান্না।

শিশু লিটনকে পিটিয়ে হত্যার দু'দিন আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের জামালপুর সীমান্ত থেকে ইমন নামে ১২ বছরের এক শিশুকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন জামালপুর গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে ইমন ১৫৩/৪(এস) সীমান্ত পিলার সংলগ্ন এলাকায় ঘাস কাট ছিল। ওই সময় ভারতের নদীয়া জেলার হোগলবাড়িয়া থানার নাসিরাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল তাকে আটক করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এ নিয়ে বিজিবি এবং বিএসএফ এর মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ্কই দিন নওগাঁর পোরশা উপজেলার নীতপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ওমর আলী নামে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। তিনি নীতপুর দিয়াড়াপাড়া গ্রামের নিজামউদ্দীনের ছেলে। ৪ নভেম্বর বিকেল ৩ টায় এ ঘটনা ঘটে।

পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়, দুপুরের পর নীতপুর সীমান্ত সংলগ্ন একটি বিলে মাছ ধরতে যায় ওমর আলী। এরপর ওই অবস্থায় সেখান থেকে বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যায়। একই দিন চুয়াডাঙ্গার দামূরহুদা উপজেলার বারদি সীমান্তে এক গরু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে প্রায় মৃত অবস্থায় তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। আতিয়ার রহমান নামে ওই গরু ব্যবসায়ীকে পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। এ ঘটনার পরের দিন পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার শিংরোড রতনিবাড়ি সীমান্ত এলাকার যমুনা নদী থেকে অপহৃত এক বাংলাদেশী জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার দিন কয়েক আগে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত এলাকা থেকে বিপ্লব (২৮) নামে এক বাংলাদেশী পাথর শ্রমিককে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।

চলতি নভেম্বর মাসের ১ তারিখে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত এলাকায় আব্দুল খালেক নামে এক বাংলাদেশী যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিজেদের সীমানায় নিয়ে যায় কয়েকজন ভারতীয় অস্ত্রধারী। খাসিয়ারা নামে ভারতের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ওই যুবককে গুলিবিদ্ধ করে আহত অবস্থায় ধরে নিয়ে যায়। ঘটনাটির সাথে বিএসএফ এর সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরী কানইঘাট নিউজকে জানান, বিএসএফ’র সদস্যরা আব্দুল খালিক নামে এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে গেছে বলে তিনি শুনেছেন।

অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করে বা পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই আমরা আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে এই নিষ্ঠুরতা পেয়ে আসছি। কিন্তু ইদানিং যেন তাদের নির্মমতা বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে বা দুই দেশের মধ্যবর্তী এলাকা বা স্থানে কোন বাংলাদেশী নাগরিক দেখা মাত্রই পাকড়াও করে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের সীমানায়। পরে মিলছে লাশ।

সেই ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি সীমান্তে কাটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানির লাশের সাথে ঝুলে গেছে আরও কতশত লাশ,আমরা কতটুকুই বা হিসেব রেখেছি। ফেলানির মৃত্যুযন্ত্রণাও খুব বেশি দিন আমাদের স্বার্থপর মনকে ভারাক্রান্ত রাখতে পারেনি। রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় থাকা কর্তাব্যক্তিদের মুখ থেকে আশ্বাসের বাণী শুনে ভেবেছি এই বোধ হয় বন্ধ হলো সীমান্তে নিষ্ঠুরতা।

অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে বাংলাদেশের নাগরিক অবৈধ অনুপ্রবেশ করেনা। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অসংখ্য মানুষ অবৈধ ভাবে এপার-ওপার করছে। ভারতে ঢুকতে গিয়ে যেমন গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, তেমনই হচ্ছে ফেরার পথেও। কিন্তু প্রশ্ন হলো ফেনসিডিলের বস্তা বহনকালে কেউ বিএসএফ এর হাতে ধরা পড়েনা কেনো!

আমি সীমান্তবর্তী জেলা শহরের মানুষ। কখনও শুনিনি বা দেখিনি মাদক ব্যবসায়ী বাংলাদেশী নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি এটি সংবাদকর্মীদের কোন ভুল নয়। তারা সবকিছুতে গরু ব্যবসায়ী, কৃষক বা জেলে বলে চালিয়ে দেন, এমন নয়। বিএসএফ সবসময়ই চেয়ে এসছে বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করুক মাদক।

বাস্তবতা হলো সীমান্ত নিরাপত্তার কথা বলে ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফ) যা করছে তা এক কথায় নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু রাষ্ট্র নীরবতার খোলসে আড়াল করেছে মুখ।

সীমান্তের বর্বরোচিত সকল ঘটনা বিবেচানায় নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে রাষ্ট্রিয় ভাবে ভারতের বিএসএফ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন জরুরি। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে শঙ্কামুক্ত নিরাপদ জীবন যাপনে সর্বাত্মক সহযোগিতার কূটনৈতিক চেষ্টাকে দৃঢ় করতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার বিকল্প কিছু নেই।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

সাবরিন কল্পনা বলেছেন: প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও ঘটছে এমন নিষ্ঠুরতা। কিন্তু আমরা নতুন প্রজম্ম এইসব নিয়ে বিচলিত নই। সত্যি কথা বলতে কি, আমরা অনেক বেশী দূর্বল। আমাদের প্রতিবাদের ভাষাও দূর্বল।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: এর কি কোন সমাধান নাই ! কোন পরিত্রাণ নাই !

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩২

শামীম সুজায়েত বলেছেন: সমাধানের পথে হাটছেনা বাংলাদেশ। অথবা বলা যাই সমাধানের লক্ষে নেয়া পদক্ষেপগুলো হচ্ছেনা দৃঢ়।

ভাল থাকুন সবসময়।

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

খেলাঘর বলেছেন:

এ সমস্যাটা বাংলাদেশ সরকারের ও সীমান্তের এমপি'দের সমস্যা; তাদেরকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি ।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৩

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ঠিকই ধরেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে আন্তরিকতার অভাব। তাছাড়া আমাদের সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা দেশের জন্য কল্যাণকর হচ্ছেনা খুব একটা।

৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৭

খাটাস বলেছেন: ডিম আগে না মুরগি আগে- এ প্রশ্নের মত সীমান্ত অস্থিরতার কিছু ব্যাপার আছে। দেশের মানুষের দোষ দেখা দেশ প্রেম বহির্ভূত অভ্যাসের প্র্যাকটিস, হয়ত অজ্ঞাতেই।
তবে আমাদের অর্থনীতি দাদাদের চেয়ে দুর্বল বলেই মেরে ফেলার সাহস পায়।
এ অধিকার কখনই তাদের নেই। তাই অবশ্যই বিশ্বের সামনে তুল ধরা উচিত।
আমাদের নিজেদের দিকে ও একটু নজর দেয়া উচিত আমাদের সরকারের।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২০

শামীম সুজায়েত বলেছেন: "এ অধিকার কখনই তাদের নেই।
তাই অবশ্যই বিশ্বের সামনে তুল ধরা উচিত।
আমাদের নিজেদের দিকে ও একটু নজর দেয়া উচিত আমাদের সরকারের।"

সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.