নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

চতুস্কোণ

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৪



জড়িয়েছে জটিল এক সম্পর্কের জালে। পরস্পরকে সঁপেছে নির্ঝাঞ্ঝাটে। কাছাকাছি হওয়ার পর নিজেরাই আবিস্কার করে, এ এক অন্য রকম ভাল লাগা। ঘুরে ফিরে কেবলই সঙ্গ প্রত্যাশা। পরিবেশ পেলে লুকায়িত ইচ্ছেগুলো ডানা মেলে। পরস্পরের সাথে মিশে যায় উদ্দাম । আবার এটিও উপলব্দি আসে যে, ধর্মীয় দৃষ্টিতে শুধু নয়, সামাজিক ভাবেও হচ্ছে নিন্দনীয় কাজ। তারপরও অনুমোদিত স্পর্শের দিকে ধাবিত হতে থাকে দেহ-মন। স্বস্তিময় অনুভুতিগুলো ঘোরাচ্ছন্ন করে তোলে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন ওরা হয়ে দাড়ালেন তিনজন।

দুই দম্পত্তি। বাসা ঢাকার স্কাটন। রেলভ্রমণে পরিচয়। একই এসি বাথে ঢাকা টু খুুলনা। সারা রাত কেবিনে ওরা চারজন। আলাপ পরিচয়ের পর হাসি-তামাশা করে কেটেছে সময়। ভাগাভাগি করে খেয়েছেন খাবার। যেন অনেক দিনের চেনা। তিশা ও সৌরভ নেমে যায় চুয়াডাঙ্গা। আবিদ ও শোভা পৌছায় খুলনায়। এরপর অনেকদিন যোগাযোগ নেই। যদিও সেদিন সৌরভের মোবাইল নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলেন আবিদ। কিন্তু পরে আর খোঁজ খবর নেয়া হয়নি।

চলার পথে পরিচয় হওয়া সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটি হয়। প্রথম প্রথম যোগাযোগ থাকে। পরে তা কমে আসে। ভুলেও যায় অধিকাংশজন। আবার সবক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নাও হতে পারে। দূরপাল্লার যাত্রা পথে পাশাপাশি সিটের অপরিচিত নারী-পুরুষ আলাপচারিতায় এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় যে অনেক দূর গড়ায় সম্পর্কের গভীরতা। এদের ক্ষেত্রেও তেমনই ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এতটাই গভীরে পৌছায় সম্পর্ক, যা একটি বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করে নিদারুণ জটিলতা।

আবিদ পেশায় একজন প্রোকৌশলী। একটি আর্কিটেক ফার্মে কাজ করে। ভীষণ রকমের কাজ পাগল মানুষ। বছর তিন আগে বাবা-মায়ের দেখে দেয়া মেয়ে শোভাকে বিয়ে করেন। এখনও ছেলে-পুলে হয়নি। দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছে। যদিও আবিদ একটু কুঞ্জুস টাইপের, কিন্তু সংসারে কোন অপূর্ণতা রাখেননি। কিন্তু তার পরেও কেমন যেন একটা অপূর্ণতা বোধ করে শোভা। রোজ রান্না করা আর ঘর-বাড়ি গুছিয়ে রাখা গৃহিনী জীবন একঘেয়েমি মনে হতে লাগে তার। সারাদিন বাড়িতে একা একা কাটে সময়। ছোট কাজের মেয়ে একজন আছে বাসায়। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা। কিন্তু ওর সাথে আর কতই বা কথা বলা যায়!

বিয়ের আগে কখনও ঢাকায় আসা হয়নি শোভার। প্রথমে ঢাকার প্রতি আকর্ষণ থাকলেও অল্পদিনে তা ম্লান হয়ে যায়। কেননা ঢাকার মানুষদের তার কাছে আত্নকেন্দ্রিক বলে মনে হয়েছে। মানুষগুলো যেন যে যার নিজেদের মত থাকতে পছন্দ করে। কেউ কারোর খোঁজ রাখেনা। সত্যি তো, পাশের এ্যপার্টমেন্টে যারা থাকেন, তাদের কেবল মুখ চেনে শোভা। আলাপ পরিচয় নেই। তারা হাসবেন্ড-ওয়াইফ দুজনে চাকরি করেন। সকালে একসাথে বেরিয়ে যান। সারাদিন বাড়ি তালা দেয়া থাকে। ছুটির দিনগুলোতে উনারা ঘুমিয়ে কাটান। কখনও বেড়াতেও যান। আবিদ সপ্তায় ছুটি পায় একদিন। সেও যেন সারা সপ্তাহর ক্লান্তি ভাঙে ওই ছুটিরদিনে। জুম্মার নামাজও পড়তে যায়না। শেষ রাতে গিয়ে ঘুমায়, সারাদিন পর বিকেলে ওঠে। শোভা চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে। কোন ঝামেলা করেনা। আব্দার করেনা। তার কেবলই মনে হয় , ঢাকার গৃহিনী জীবন এমনই বৈচিত্র্যহীন বন্দিময়!

দাম্পত্য জীবন নিয়ে দু:খবোধ থাকলেও এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তির প্রত্যাশা করেনা শোভা। সেতো অসুখী নয়। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। গোছানো সংসার। কিন্তু তারপরও কোথায় যেন একটু কমতি আছে। আর সেটি হলো বন্ধুত্ব। আবিদ ও শোভার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ওদের বয়সের ব্যবধান প্রায় ১২-১৩ বছর। বিয়ের সময় আবিদের বয়স ছিল ৩৮। শোভার তখন ২৫। মফস্বলের একটি ডিগ্রি কলেজ থেকে পাশ করার বছরখানেক পর শোভার বিয়ে হয়।

আবিদ-শোভা দম্পত্তির পরিচয় আপাতোত এটুকু। গল্পের অপর দম্পত্তি সৌরভ ও তিশার দাম্পত্য জীবন অল্পদিনের। দুজনার বয়সও কাছাকাছি। একটি ঠিকাদারী ফার্মের স্বত্বাধিকারী সৌরভ পয়শাওয়ালা। স্ত্রী তিশা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিচার। কোন কিছুর কমতি নেই। কিন্তু ওরা স্বামী-স্ত্রী সুখী দম্পতির অভিনয় করে যাচ্ছেন, ভিতরে সম্পর্ক কিস্যু নেই।

ট্রেনে পরিচয়ের বহুদিন পর একটি অনুষ্ঠানে আবারও দেখা হয়ে যায় দুই দম্পত্তির। সেখানে দীর্ঘ সময় এক সাথে কাটান তারা। এরপর থেকে সৌরভের সাথে শোভার মোবাইলে অল্প-স্বল্প যোগাযোগ শুরু হয়। সৌরভ নিজে ব্যবসায়ী, তাই প্রয়োজন মত সময় বের করতে পারেন, ফোনে কথা বলতে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এভাবেই একপর্যায় শুরু হয় একে অপরের বাসায় যাওয়া-আসা। পক্ষান্তরে আবিদের সাথে তিশারও যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। তিশা চঞ্চল মেয়ে, শান্ত-শিষ্ট টাইপের ছেলে তার পছন্দ। আবিদের ভেতরে সেটি খুজেঁ পেয়ে নিজের অজান্তে দূর্বল হয়ে হয়ে যায় তিশা।

দুই পরিবার আর্থিক ভাবে যথেষ্ঠ স্বচ্ছল। পরিচয় হওয়ার পর তারা বেশ কয়েকবার একসাথে ঘুরেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পর হোটেলে দুই দম্পত্তি আলাদা আলাদা রুমে থাকলেও আড্ডার ছলে একে অপরের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করতো। তবে বিষয়টি এমনও নয় যে ওদের চারজনের কাছে ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি এমন যে, কোথাও যাওয়ার জন্য হোটেল রুমে ওরা গোছগাছ শুরু করলো, এমন সময় তিশা বললো আমার শরীর ভাল লাগছেনা, আমি হোটেলে থাকি তোমরা ঘুরে আসো। এতে কেউ কোন দ্বিমত করতো না। স্ত্রীকে হোটেলে রেখেই সৌরভ আবিদ ও শোভার সাথে ঘুরতে চলে যেতো। সে তো শোভার সান্নিধ্য চায়ছে। স্বামী সাথে আছে তাতে কী! পক্ষান্তরে শোভার স্বামী আবিদের তো মন পড়ে আছে হোটেলে তিশার কাছে ফেরার বাসনায়। আর তাই সুযোগ বুঝে ব্যক্তিগত কাজের কথা বলে আবিদ চলে যেতো। এতে স্ত্রী শোভা কোন কথা বলতো না। কারণ সে তো মনে মনে সৌরভের সঙ্গ চাইছে।

আউটডোরে সৌরভ-শোভা এবং হোটেলে আবিদ-তিশা। কখনও ঘটছে এর বিপরিত। প্রয়োজন ও পরিবেশ মত একটি অলিখিত এগ্রিমেন্ট রচনা হয়ে যাচ্ছে ওদের ভেতর। ছলচাতুরি করে দুই দম্পত্তির ভালবাসার চতুস্কোণে আবদ্ধ হতে থাকার বিষয়টি চলতে থাকে দুই বছরেরও বেশি সময়। সামনা-সামনি এ নিয়ে কোন দম্পত্যি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেনা। কারোর কোন অভিযোগ নেই। অপূর্ণতাও নেই। তাই বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করার কথা ভাবেননি ওরা চারজন। "স্যাক্রিফাইজ মাইন্ড" যেন তাদের দাম্পত্য জীবনকে আরও প্রশান্তিময় করে তোলে। কিন্তু হঠাৎ করে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ভেঙে যায় ভালবাসার চতুস্কোণ। রোড এ্যকসিডেন্টে মারা যান শোভার স্বামী আর্কিটেক আবিদ।

নিজের স্বামীর মৃত্যুর দু মাস পর সৌরভের কাছে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করে বসেন শোভা। শুরু করেন চাপ প্রয়োগ। সৌরভ ভুগতে থাকেন সিদ্ধান্তহীনতায়। এদিকে তিশা হয়ে ওঠেন কঠোর। কোন ভাবেই তিনি তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে রাজি হননা। ক্রমান্নয়ে জটিল হতে থাকে তিশা,শোভা ও সৌরভের সম্পর্ক। শেষে আদালতের সরাণাপন্ন হন শোভা।

ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। পত্রিকাওয়ালারা রস-রঙ মিশিয়ে করতে থাকে ফলোআপ রিপোর্ট। আদালত থেকে থেকে শুনানির তারিখ পরিবর্তন করে। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তির পথে আগায় না।

এভাবেই কেটে যায় আরও ছয় মাস। শোভাকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে তিশা। সৌরভও তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন শোভা। মামলাটির রায় প্রদান নিয়ে বিব্রতবোধ করতে থাকেন বিচারক।

মামলার কোন এক হাজিরার দিনে শোভা, সৌরভ ও তিশার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচারক বললেন, শুরু থেকেই একটি অনৈতিক মেলামেশা বা সম্পর্ককে স্বজ্ঞানে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন আপনার। একটি মৃত্যু আপনাদের এই মেলামেশার কুফল দিক উপলব্দির পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন, এই জটিলতা থেকে কিভাবে পরিত্রাণের পথ বের করবেন।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
সময় করিয়া পড়িতে হইবে____ ড্রাফটে রাখিলেম।
এমন ভাল লেখা জমিয়ে পড়িতে হয়।
বৈঠকখানায় বসিলে কফি পান করিতে করিতে পড়িব।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৪

শামীম সুজায়েত বলেছেন: পড়ার খেয়ালে গল্পে ঢুকিয়া,
কফিখানা ঠান্ডা করিয়েন না!!

অনেক ধন্যবাদ। সময় করে পড়বেন প্লিজ।

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৭

মামুন রশিদ বলেছেন: জটিল চতুষ্কোন! ভালো লেগেছে গল্প ।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আরও ভাল লাগলো, ভাল লাগাতে পেরেছি বলে। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

জলমেঘ বলেছেন: গল্পটা কি শেষ হয়ে গেলো?? থিমটা বেশ ছিলো

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬

শামীম সুজায়েত বলেছেন: শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ................... এমন একটা অবস্থায় রেখে দিলাম।

আমি নিজেও আাইডিয়া করতে পারছিনা, এমন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্তে পৌছাবেন সৌরভ।

ভাল থাকবেন।

৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: গল্পে চতুষ্কোণ !

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১

শামীম সুজায়েত বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪০

ডি মুন বলেছেন: চলার পথে পরিচয় হওয়া সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটি হয়। প্রথম প্রথম যোগাযোগ থাকে। পরে তা কমে আসে। ভুলেও যায় অধিকাংশজন।

--- হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।


গল্প ভালো লেগেছে। তবে মনে হল শেষের দিকে এসে একটু তড়িঘড়ি সমাপ্তি টেনে দিলেন। শুরুটা খুবই চমৎকার হয়েছে।

++++

ভালো থাকা হোক।
শুভকামনা রইলো।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো আপনার মন্তব্যে। একটুও বাড়িয়ে বলেননি, কমও বলেননি। ঠিকই বলেছেন, শেষের দিকে একটু তাড়াহুড়া হয়ে গেছে।

ভাল থাকবেন।

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৭

নীল মনি বলেছেন: ভালো লাগল চতুষ্কোণ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.