নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুজায়েত শামীম

শামীম সুজায়েত

ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।শুরু করা শখের বসে। একসময় তা নেশা থেকে পেশা।ব্যবস্থাপনায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে পছন্দের এ পেশায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা পড়েছে পেশাগত জীবনে চলার পথে পাওয়া নানা অসঙ্গতির চিত্র।এখন লেখালেখি করি নিজের আনন্দে, ক্লান্তিহীন ভাবে যা ভালো লাগে।আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যশোর উপশহর আবাসিক এলাকায়। আমার শৈশব ও কলেজ জীবন কেটেছে এখানেই।জীবন জীবিকার তাগিদে এখন গঙ্গাবুড়ির আলোঝলমল শহরে্ কাটছে সারাবেলা। যোগাযোগ:ই মেইল : [email protected]হটলাইন : +ফেসবুক : https://www.facebook.com/sumon.sujayet জন্মদিন : 02.02.1977

শামীম সুজায়েত › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাড়িতে আগুন মিছিলে গুলি : বন্ধ হোক মানুষ মরার রাজনীতি

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে আজকের বাংলাদেশ। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বদলে গেছে রাজনীতির মাঠে-ময়দানের চিত্র। সময়ের ব্যবধানে একদিকে যেমন বদল হয়েছে আন্দোলনের ভাষা ও কৌশল, তেমনই বিরোধী দমনে ক্ষমতাসীনদের আচরণে এসেছে পরিবর্তন, যা রাজনীতিতে বাড়িয়ে তুলেছে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুঝুঁকি। ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতা আরোহনে তাই মানবিকতাকে বিসর্জন দিতে শুরু করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিকরা। এতে করে রাজনীতি করতে আসা নানা পেশা ও বয়সের মানুষের জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠছেনা, আমজনতার লাশ বাড়ছে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর মিছিলে।

রাজধানী ঢাকার গত কয়েকদিনের চিত্র বিশ্লষণ করে দেখা গেছে, শঙ্কিত হওয়ার মত পর্যায়ে পৌছে গেছে নাগরিক জীবন। কবিতার ভাষায় বলা যায়:

পুড়ে কিংবা গুলিতে অনিবার্য্য মৃত্যু ছুটছে দেশময়!

কর্মস্থলের পথে ঘর ছাড়া মানুষগুলো প্রতিদিন

ফেরা-না ফেরার শংকায়,

জানা নেই কখন কার লাশ,

হয়ে উঠবে মিছিলের খোরাক,

নিষ্ঠুর হয়ে ওঠা নগরী আজ "লাশের হাট-বাজার।"


বিরোধ দমনে আন্দোলনকারীদের মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা বিশ্লেষণের আগে দেখে নেয়া যাক আন্দোলনকারীদের নৃশংসতায় কি ভাবে মরছেন সাধারণ মানুষ, যাদের নূন্যতম সর্ম্পৃক্ততা নেই ক্ষমতার পালাবদলের নিষ্ঠুর আয়োজনে।

বাদাম বিক্রেতা রহিম বাদশা (৪৫) রংপুর মিঠাপুকুরের উলিপুর থেকে ১৩ জানুয়ারী মধ্যরাতে ছেড়ে যাওয়া খলিল স্পেশাল নাইট কোচে মাকে সাথে নিয়ে আসছিলেন ঢাকা। অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় জ্বলন্ত আগুনে বাসের ভেতরেই পুড়ে মারা যান মা রহিমা, রহিম বাদশা ও এক শিশুসহ ৪ জন। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের দরিচর গ্রামে। এরও আগে গত ৯ জানুয়ারি ঢাকার মগবাজারে দুবৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় প্রাইভেটকার চালক আবুল কালাম নিহত হন। অপরদিকে চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মো. এনাম হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। মারা যান মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে দিন কয়েক পর। অপরদিকে ১৭ জানুয়ারী ঢাকা যাত্রাবাড়িতে জগন্ণাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুলতানা ইসলাম অগ্নিদগ্ধ হন। দেশের নিরিহ সাধারণ জনগণের এই আগুনে পুড়ে মরার ঘটনা ক্রমান্নয়ে বেড়ে চলেছে। এখন প্রশ্ন হলো আন্দলোন করতে মাঠে নেমেই কি ধ্বংসাত্নক কর্মকান্ড চালাতে হবে?

কোন ভাবেই এই অমানবিকতাকে সমর্থন করতে পারিনা আমরা। এ্কই সাথে জান-মালের নিরাপত্তার কথা বলে বিরোধীদলের মিছিলে-সমাবেশে সরাসরি গুলি চালানো কোন গণতন্ত্র? বাস্তবতা হলো,গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে যখন বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরাসরি গুলিবর্ষণ করার মত ন্যাক্কাজনক ভুমিকায় অবতীর্ণ হয় সরকার, তখনই যেন টিকে থাকার লড়াই-সংগ্রামে সাধারণ মানুষকে পুজিঁ করে চলতে থাকে বিরোধীদের ধ্বংসাত্নক কর্মকান্ড। দেশের চলমান রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিরোধী দমনে বর্তমান সরকার যা করছে, তা বিগত সব সরকারের স্বৈরাচারী মনোবৃত্তিকে হার মানিয়েছে।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সময়ে আন্দোলন দমনের নানা চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঝুঁকি পূর্বের তুলনাই বেড়ে গেছে বহুগুণ। বিশেষ করে মিছিলে সরাসরি গুলি করে ছত্রভঙ্গ করার প্রবণতা এত বেশী ছিলনা প্রশাসনে। এতে করে জাগ্রত হচ্ছে মৃত্যু ভয়। বিশ্বের দরবারে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র।

এই বঙ্গভুমিতে বসবাসরত মানুষের যেকোন আন্দোলন দমনে পুলিশের গুলি চালানোর নানা ঘটনার সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে, কোন আমলেই চরম স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কোন ফলাফল বয়ে আনেনি। তাছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচন করে যে ক্ষমতাসীন হয়েছে, তা দিবালোকের মত পরিস্কার। আসুন দেখে নেয়া যাক বিভিন্ন সময়ে চলা আন্দোলনে পুলিশের গুলির নানা চিত্র

ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলি:

১৯৪৭ এ ভারত বিভাগের আগে থেকেই পূর্ব পাকিস্থানের প্রাদেশিক ভাষা বাংলা করার প্রস্তাবনা আসলেও ভাষা আন্দোলন শুরুর প্রায় দশ বছর পর ১৯৫৬ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় পাকিস্থান। এই দীর্ঘ আন্দোলনরত সময়ে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার মিছিলে তৎকালীন আইয়ুব সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন রফিক উদ্দিন, আব্দুস সালাম, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও শফিউর রহমান। আন্তর্জাতিক মার্তভাষা ইন্সটিটিউটের তথ্য মতে ওই সময় পুলিশের গুলিতে আব্দুল আওয়াল (২৬) নামে একজন রিক্সাচালক এবং ওহিউল্লাহ নামে আট বছরের এক কিশোর নিহত হয়। ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ সময়ের নানা তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা গেছে পুলিশের গুলিতে ৭জন মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে।

৬২ র শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলি:স্বৈরশাসক আইয়ুব খান, ক্ষমতা দখলের মাত্র ২ মাস পর ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ১৯৫৯ সালে আগস্ট মাসে একটি শিক্ষা রিপোর্ট প্রণয়ন করে, যা ৬২ সালে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করে পাকিস্তান সরকার। এর প্রতিবাদে ওই বছর ১৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ছাত্রদের সাথে সাধারণ মানুষও পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ করে। সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হন। সারাদেশে পাকিস্থানের শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে ফুসে ওঠে মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ শেষে মিছিল বের করে ছাত্রজনতা। জগন্নাথ কলেজে গুলি হয়েছে এ গুজব শুনে মিছিল দ্রুত নবাবপুরের দিকে ধাবিত হয়। হাইকোর্টে পুলিশের সাথে সংঘাতে না গিয়ে মিছিল আব্দুল গনি রোড ধরে যেতে থাকে। পুলিশ তখন পিছন থেকে মিছিলে হামলা চালায়। লাঠি চার্য, কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি চালায়। পুলিশের সাথে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ বাঁধে ঢাকা কোর্টের সামনে। এখানেও পুলিশ ও ইপিয়ার গুলি চালায়। এতে বাবুল, গোলাম মোস্তফা ও ওয়াজিউল্লাহ নামে ৩জন শহীদ হন। ওই দিন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে মিছিলের উপর পুলিশ হামলা চালায়। টঙ্গিতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিককে।



স্বাধীনতার পর মিছিলে পুলিশের গুলির চালানোর প্রথম ঘটনা:

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের এক বছরের মাথায় স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র মিছিলে প্রথম পুলিশি গুলিবষর্ণ ও ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটে ১৯৭৩ সালের ১ লা জানুয়ারি। সেদিন শহীদ হয়েছিলেন জহুরুল হক হলের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মতিউল ইসলাম এবং ঢাকা কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মীর্জা কাদেরুল ইসলাম। মিছিলটি ছিল ডাকসু ও ছাত্র ইউনিয়নের ঘোষিত ‘ভিয়েতনাম দিবসের’ সংহতি মিছিল।

সিপিবির কেন্দ্রিয় সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের এক সময়কার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর পুলিশের প্রথম গুলি বর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তাঁর একটি লেখায় উল্লেখ করেন, সেদিন বটতলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বক্তৃতা শেষে মিছিল রওনা হয় মতিঝিলের আদমজী কোর্টস্থ আমেরিকান দূতাবাস অভিমুখে। দোয়েল চত্বর, শিক্ষা ভবন, হাইকোর্ট মোড়, কদম ফোয়ারা পার হয়ে মিছিল ডানদিকে মোড় নেয়। সেসময় দেখা গেল ইউএসআইএস- এর বিল্ডিংয়ের সামনে (বর্তমানে প্রেসক্লাবের ঠিক উল্টো দিকের ভবনটি) বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন হয়ে আছে। ওদের হাতে হাতে রাইফেল, এলএমজি, স্টেনগান। পুলিশ দেখে মিছিলের শ্লোগান আরো উচ্চকিত হল। মিছিল এগিয়ে যেতে থাকল সামনের দিকে। পুলিশ তাদের জায়গা থেকে নড়চড় করল না। মিছিলের অগ্রভাগ তখনো ইউএসআইএস-এর রাস্তার মুখ অতিক্রম করে নি। এমন সময়ই অতর্কিতে শুরু হয়ে গেল পুলিশের গুলি বর্ষণ। এর আগে মিছিল থেকে একটা ঢিলও পড়ে নি। উচ্চ-শ্লোগান দিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল এগিয়ে যাচ্ছিল। কোথাও ১৪৪ ধারা জারি নেই, কোনো সতর্কবাণী নেই, কোনো লাঠিচার্জ নেই, কোনো টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ নেই। একেবারে শুরু থেকেই গুলিবর্ষণ। শত শত রাউন্ড গুলি। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। কেউ কেউ দৌড়ে প্রেসক্লাবের ভিতরে ঢুকে যায়। অন্যরা বর্তমান কদম ফোয়ারার চত্বরের দিকে, সচিবালয় সহ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। খই ফোটার মতো মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজে সবাই বিস্মিত, আতঙ্কিত। কি হয়েছে জানার জন্য সবাই তখন উদগ্রীব। ইতোমধ্যে গুলিবর্ষণ শেষ হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকা অবশিষ্ট নেতাকর্মীদের উপর রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে তাদেরকেও সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। আমার কাঁধেও রাইফেলের আঘাত লেগেছিল। তার দাগ এখনো আছে। কিন্তু পুলিশের আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েই হাজার কণ্ঠে শ্লোগান উঠলো, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই। খুনিদের ক্ষমা নাই’।

পরিস্থিতি একটু স্থিত হলে দেখা গেল রাস্তায় লুটিয়ে আছে আট/দশ জন ছাত্র। পুলিশ ইউএসআইএস-এর গেইটে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমরা এগিয়ে গেলাম পড়ে থাকা ছাত্রদের দ্রুত উদ্ধার করতে। আহত দশ/বার জনকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনাস্থলেই দু’জন মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর ডাক্তার দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করলেন। এরা হলেন জহুরুল হক হলের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মতিউল ইসলাম এবং ঢাকা কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মীর্জা কাদেরুল ইসলাম।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে চলা পুলিশের গুলির উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বের করেন বিক্ষোভ মিছিল। এরপর প্রায় এক বছর ধরে বিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকে আন্দোলন। ১৯৮২ সালে শিক্ষা দিবস (১৭ সেপ্টেম্বর) সামনে রেখে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৬ সেপ্টেম্বর মৌন মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব), বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্র ঐক্য ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন। ওই বছর সামরিক শাসক এরশাদের পুলিশ বাহিনী ছাত্রদের মিছিলে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করলেও গুলি চালানোর মত ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পরের বছর থেকেই শুরু হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে পুলিশের হামলা ও গুলি বর্ষণ।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মতে, ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এরশাদের উপদেষ্টা মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। এ কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সকাল ১১টায় শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, জাফর, ফারুক, কাঞ্চন, দিপালী সাহা সহ ১০ জন। পরের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল নিহত হন পুলিশের গুলিতে। ওই দিন বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। ছাত্রহত্যা এবং পুলিশি হামলার প্রদিবাদে পরদিন এ আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাবালনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরদিন সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।

এরশাদের শাসন আমলে পুলিশের গুলিতে কেবল নূর হোসেন বা ডা. মিলনের প্রাণহানী ঘটেছিল, তা নয়। স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে প্রতি বছরে পুলিশের গুলিতে প্রাণহানী ঘটেছে আন্দোলনরত অসংখ্য মানুষের। ওই সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল চলাকালে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিম সেলিম। ১ মার্চ সেলিম ও ইব্রাহিম হত্যার প্রতিবাদে ৭ দল ও ১৫ দল হরতাল আহবান করে। ওই হরতালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শ্রমিক তাজুল ইসলাম। একই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর হরতালে ঢাকার কালিগঞ্জে নিহত হন রাজনৈতিক নেতা ময়েজ উদ্দিন। একই দিন নেত্রকোনায় তিতাস নামে একজন মারা যান পুলিশের গুলিতে। ২৪ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গায় ফজলুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মারা যাওয়ার খবর বের হয়। ২২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বাবুর্চি আশরাফ, ছাত্র শাজাহান সিরাজ ও পত্রিকার হকার আব্দুল আজিজ।

পরের বছর ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া। ১৯ মার্চ হরতাল চলাকালে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ২২ এপ্রিল মিছিলে বোমা হামলায় একজন, ৯ অক্টোবর তেজগাঁও পলিটেকনিকে চারজন, ৩০ অক্টোবর ছাত্রনেতা তিতাস, ৩১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে বিডিআরের গুলিতে ছাত্র স্বপন ও রমিজ নিহত হন। ৭ নভেম্বর আদমজী জুট মিলে ধর্মঘটে হামলায় ১৭ শ্রমিক এবং বিডিআরের গুলিতে তিন শ্রমিক নিহত হন।

সংবাদ পত্রিকায় ৮ নভেম্বর "এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের তালিকা (১৯৮২-১৯৯০)" শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া। তিনি ছিলেন সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৮৫ সালের এই দিনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি যখন সূর্য সেন হল ও মুহসীন হল পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল রাস্তায় ওঠে, ঠিক তখন এফ রহমান হল থেকে সামরিক স্বৈরাচারের ছাত্রসমাজের সন্ত্রাসীরা মিছিলে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হলেও পরোক্ষ ভাবে পুলিশের মদদে ঘটে মিছিলের ওপর হামলা।

১৯ মার্চ হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ২২ এপ্রিল মিছিলে বোমা হামলায় একজন, ৯ অক্টোবর তেজগাঁও পলিটেকনিকে ৪ জন এবং ৩০ অক্টোবর ছাত্রনেতা তিতাস, ৩১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে বিডিআরের গুলিতে ছাত্র স্বপন ও রমিজ নিহত হন। ৭ নভেম্বর আদমজী জুট মিলে ধর্মঘটে পুলিশ ও এরশাদপক্ষের সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৭ জন শ্রমিক এবং বিডিআরের গুলিতে ৩ শ্রমিক নিহত হন।

১৯৮৬ সালে ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫জন, ১৪ মে হরতালে ৮জন এবং ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনে ১১ জন, ১০ নভেম্বর হরতাল চলাকালে ঢাকার কাঁটাবন এলাকায় সাহাদত নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনার অধিকাংশর ক্ষেত্রে ছিল পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ।

১৯৮৭ সালের ৯ মার্চ এরশাদবিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক বাবলু নিহত হন পুলিশের গুলিতে। ২২ জুলাই জেলা পরিষদ বিল প্রতিরোধ ও স্কপের হরতালে ৩জন, ২৪ অক্টোবর শ্রমিক নেতা শামসুল আলম, ২৬ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কৃষক জয়নাল, ১ নভেম্বর কৃষক নেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা, ১১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর মধ্যে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবুল ফাত্তাহ, ছাত্র বাবলু, যুবনেতা টিটো নিহত হন। এই সময়ের মধ্যে শেরপুরের আমিন বাজারে পুলিশের গুলিতে উমেছা খাতুন, গোলাম মোহাম্মদ আসলাম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোকন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩জন ও ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকোরিয়ায় ছাত্রনেতা দৌলত খান নিহত হন। , হোটেল কর্মচারী জি কে চৌধুরী, ছাত্র মহিউদ্দিন শামীম, বদরুল, শেখ মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন ও আলবার্ট গোমেজ, আবদুল মান্নান, কাশেম, ডি কে দাস, কুদ্দুস, পংকজ বৈদ্য, চান মিঞা, হাসান, সমর দত্ত, পলাশ, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, সাহাদাত হোসেন। ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়।

১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর সচিবালয়ে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের গুলিতে ছাত্র জেহাদ ও মনোয়ার, হকার জাকির, ভিক্ষুক দুলাল, ১৩ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র মনিরুজ্জামান ও সাধন চন্দ্র শীল, ১৪ নভেম্বর আদমজীতে ১১ জন, ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের দোকানদার নিমাই, ২৭ নভেম্বর ডা. শামসুল আলম মিলন, ৩০ নভেম্বর রামপুরায় বিডিআরের গুলিতে ১জন একজন, আট মাসের শিশু ইমন, খুলনার খালিশপুরে মহাব্রজ, নারায়ণগঞ্জের মণ্ডলপাড়ায় এক কিশোর, ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হন।



বিএনপির শাসনামলে পুলিশের গুলি:

স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে পুলিশের গুলিতে যে পরিমাণ প্রাণহানী ঘটেছিল, সেটির তুলনায় বিএনপির আমলে চিত্রটি ছিল অতি নগণ্য। এরশাদের পতনের পর তত্ববধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্টিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয় বিএনপি। ওই আমলে বিএনপি সরকার রাজনৈতিক দলের মিছিলে সরাসরি গুলি চালানোর নজির না রাখলেও গুপ্ত হত্যার সংস্কৃতি শুরু হয়। পরবর্তিতে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতাসীন হয়ে শুরু করে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড। ওই শাসনামলে আন্দোলনরত মানুষের মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালে কানসাটে। বিদ্যুতের প্রকট সমস্যা, সেই সঙ্গে মিটার ভাড়া ও কৃষকদের জরিমানা আদায়সহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে সমিতির সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় স্থানীয় সাধারণ মানুষের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে 'পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ'-এর ব্যানারে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে কানসাট সোলায়মান মিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে সমাবেশ করে স্থানীয় কৃষকরা। ওই সমাবেশে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ। ঘোষণা করা হয় ৫ দফা। সরকার দাবি না মানায় ২০০৬ সালের ৪ জানুয়ারি বিক্ষোভের জন্য হাজার হাজার কৃষক-জনতা একত্রিত হয় কানসাটে। আর এ কর্মসূচি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস চত্বরে মোতায়েন করা হয় শত শত পুলিশ ও বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য। বিক্ষুব্ধ কৃষকদের মিছিল সমিতির দিকে এগিয়ে গেলে সংঘর্ষ বাধে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের। একপর্যায়ে পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলি করে বিক্ষোভকারীদের। ঘটনাস্থলেই মারা যান শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তির বিশ্বনাথ কর্মকারের ছেলে নয়ন কর্মকার (২৪) ও কানসাট আব্বাস বাজার গ্রামের ওসমান আলীর ছেলে আবুল কাশেম কাজল (৩৫)। আর গুলিবিদ্ধ হন ৫০ জন।

২২ জানুয়ারি রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কানসাট পুকুরিয়ার বাসভবন থেকে আটক করে গোলাম রাব্বানীকে। একই রাতে আটক করা হয় সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জহির চৌধুরী ও মনিরুল ইসলাম মান্নাকে। সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে কানসাটসহ সংলগ্ন চার-পাঁচটি ইউনিয়ন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। ২৩ জানুয়ারি খুব ভোরে রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়ক, ভোলাহাট সড়ক, কানসাট-গোমস্তাপুর সড়কে বিদ্যুতের পোল, সড়কের ধারের গাছ কেটে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। দুপুরের দিকে পুলিশ কানসাট গোপালনগর মোড়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে লাঠিপেটা শুরু করলে ফুঁসে ওঠে জনতা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ। লাঠিসোঁটা, ইট-পাটকেল নিয়ে জনতা হামলা করে পুলিশের ওপর। পুলিশও টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ লাঠিপেটা করতে থাকে সাধারণ মানুষকে।স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে মহিলা-শিশুসহ যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই পিটিয়েছে। পুলিশি নির্যাতনে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মানুষ। গোপালনগর মোড় থেকে পুলিশ চককীর্তি সড়কের দিকে এগিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেলের পাশাপাশি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এই রণক্ষেত্রে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান কানসাটের আনোয়ার, নাসির উদ্দীন, দিনমজুর মান্নান, গরিব উল্লাহ, কৃষ্ণচন্দপুর গ্রামের চৌধুরী ও আবদুর রশিদ। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার হোসেন বাবু।

কানসাটের ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে ঘটে বিক্ষুব্দ মানুষের ওপর পুলিশের গুলি।

ফুলবাড়ি উপজেলায় কয়লার খনি প্রকল্প বাতিল এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক কোম্পানী এশিয়া এনার্জিকে প্রত্যাহারের দাবীতে বিক্ষোভরত মানুষের ওপর পুলিশ ও তৎকালীন বিডিআর নির্বিচারে গুলিবর্ষন করলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ৩জন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় ২ শতাধিক মানুষ।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দমন ও পুলিশের গুলি

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শাসনামলে অব্যাহত থাকে বিগত বিএনপি সরকারের আমলে শুরু হওয়া বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড। তবে গত দুই বছরে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের মিছিলে সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে ন্যাক্কাজনক ভাবে । প্রথম দিকে জামাত-শিবিরের মিছিলে গুলি চালানো শুরু হলেও এখন বিএনপির মিছিলেও চালানো হচ্ছে গুলি। যদিও প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে জনগণের জান-মাল রক্ষার স্বার্থে কোথাও কোথাও পুলিশ রবার বুলেট মারছে। গত দুদিনের হরতালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর খবর মিললেও কোথাও নিহত হওয়ার খবর মেলেনি। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে ১৬১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৪৮ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছয় হাজার ৪০৫ জনকে।

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুনরায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পূর্ণ ৫ বছর মেয়াদ শেষ করার আগে বিরোধীদলের কোন আন্দোলন বা বিশৃঙ্খলা বরদস্ত করবেনা বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে। দলের দায়িত্বশীল পদ থেকে বলা হয়েছে আর কোন মধ্যবর্তী নির্বাচনের সুযোগ নেই। এমন কি পরিস্থিতি উত্তরণে সংলাপেও যেতে চাননা তারা। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহমেদ, মো. নাসিম পরিস্কার বলেছেন ১৯ সালের আগে কোন সংলাপ নয়। অপরদিকে এখনও দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া। একই সাথে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। কিন্তু রাজপথে সোডাউন করছে ক্ষমাসীনরা।

আমরা সাধারণ মানুষ, যারা সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত না, যারা কেবল পাঁচ বছর পর পর ভোটের মাঠে যাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে,যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, অমানবিকতার বিরুদ্ধে দাড়ায়, যারা কেবল স্বার্থহীন ভাবে ব্লগে লেখালেখি করি, আজ তাদের সম্মিলিত আহব্বান হোক:

আর নয় গাড়িতে আগুন মিছিলে গুলি,

বন্ধ হোক মানুষ মরার রাজনীতি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৫

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: একদল জনগনের ভালোর জন্য বোমাবাজি, জ্বালাও পোড়াও করছে, মানুষ মারছে। আর একদল জনগনকে রক্ষা করার জন্য গুলি চালাচ্ছে, সেখানেও মানুষ মরছে। মরছে সাধারণ জনগন কিন্তু দিন শেষে দুই দলই নাকি মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। কিন্তু তারা যে জনগনের জন্য রাজনীতি করেন সেই জনগন যে কারা আজও বুঝতে পারলাম না।

বিরোধী দলের কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করার ঘোষণা আসে প্রতিটি সরকারী দলের কাছ থেকেই। সেই প্রতিহত করার দায়িত্ব আসে, সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন কিংবা তাদের অঙ্গ সগঠনের উপর। হরতাল আহ্বানকারী দলের চেয়ে অধিকাংশ সময় হরতাল প্রতিহতকারিরা ক্ষতি করেন বেশি। পুলিশ বিরোধী দলের মিছিল দেখলেই গুলি করছে কিন্তু সরকার সমর্থিতদের মিছিল পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন সরকার সমর্থকদের মিছিল কি জনগনের চলাচলে বাঁধা দিচ্ছে না।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৯

শামীম সুজায়েত বলেছেন: সবচেয়ে বড় কথা হলো, ক্ষমতাসীন এই রাজনৈতিক দলটি আপনার-আমার-সবার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণের নূন্যতম মূল্য নেই।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩৫

আজকের বাকের ভাই বলেছেন: ধন্যবাদ এমন একটি তথ্যবহুল পোস্টের জন্য।
প্রিয়তে রাখলাম

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভাল এবং মন্দের পার্থক্য সাদা-কালোর মাঝে বিন্দুমাত্র।। ইতিহাস শিক্ষা দেয় প্রাথমিক পর্যায়ে যেোন আন্দোলনই সরকার বিরোধী।। তারপর পতনের পর...............।।
কিন্তু এরজন্য কোন নেতা বা তাদের সন্তানদের আত্মাহুতির খবর পাওয়া যায় না।। আমাদর জনসাধারনের রক্তেই সুগম হয় তাদেয় ক্ষমতা।।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৩

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার পোস্ট !

তবে এর প্রতিকার কি ???? X(( X((

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৬

সাবরিন কল্পনা বলেছেন:

পোস্টটি স্টিকি করা হোক।

তথ্যবহুল এই পোস্টে কেবল চলমান পরিস্থিতি নয়, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালি জাতির ওপর চলা পুলিশের নির্যাতন ও গোলাগুলির দৃষ্টান্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

আমরা কেউই এই পরিস্থিতি প্রত্যাশা করিনা।

আমরা চাইনা পুলিশের গুলিতে মানুষ মরুক।
আমরা চাইনা আন্দোলনের নামে দুবৃত্তায়ন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.