নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোথাও শান্তি নাই তবু শান্তিতেই নোবেল দেয়া হচ্ছে প্রতিবছর !!

মোঃ শরিফুজ্জামান সুজন

যা বশে আনা সম্ভব নয় তা ধ্বংস করে দিতে হয়।

মোঃ শরিফুজ্জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাস্তবতার এক জাদুকরী গল্প নিয়ে "লা লা ল্যান্ড"

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৩৫

আশার আলো দেখায় এই ছবি "লা লা ল্যান্ড" শেষের ১৫ মিনিট শেষ হইয়াও হইলনা শেষ।



ড্রামস্টিক এর আঘাত পরছে বারবার ড্রামে। কিন্তু ছেলেটার কোনোদিকেই খেয়াল নেই। তার রগচটা শিক্ষকও এখন তাকে নিয়ে চিন্তিত। আর গতো দশ মিনিট যাবত সেই ড্রামের আওয়াজ এর সাথে আরো বাদ্যযন্ত্রের মিশেলের ‘ক্যারাভান’ শুনতে শুনতে অবাক হয়ে চোখ সরাচ্ছি না আমি। ২০১৪ সালের ‘Whiplash’ সিনেমা দিয়ে এভাবেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন পরিচালক ড্যামিয়েন শ্যাজেল। আর এবার ছড়ালেন ‘La La Land’ এর মাধ্যমে।



‘লা লা ল্যান্ড’ স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প। ‘লা লা ল্যান্ড’ ভালোবাসার গল্প। ‘লা লা ল্যান্ড’ এক কল্পনার জাদুকরী জীবনের গল্প। ‘লা লা ল্যান্ড’ বাস্তবের গল্প। এক ছবির মাঝে পরিচালক শ্যাজেল তার প্রিয় জ্যাজকে তুলে ধরেছেন, তুলে ধরেছেন অদম্য দুই মানুষের নিজেদের স্বপ্নকে কাছে পাবার গল্পকে, তুলে ধরেছেন জীবনের বাস্তবতা, আর দিয়েছেন এক জাদুকরী মাধুর্য্য। গান থেকে নাচ; গল্প থেকে ভিজ্যুয়ালাইজেশন আর স্বপ্ন থেকে বাস্তবতা; কী ছিল না এই ছবিতে! এক ছবির মাঝ অনেক কিছু তুলে ধরেছেন, তাও প্রতিটি ব্যাপারের সমান গুরুত্ব দিয়ে। নিজে মিউজিশিয়ান শ্যাজেল তুলে ধরেছেন এক পিয়ানিস্টের আকাঙ্খাকে, তুলে ধরেছেন এক অভিনেত্রীর নিজেকে খুঁজে পাওয়াকে।



এমা স্টোন আর রায়ান গসলিং। হলিউডে এভাবে আসলে কোনো জুটিকে একে-অপরের সাথে দারুণ সাপোর্টে কাজ করতে দেখা যায় না। ‘ক্রেজি, স্টুপিড লাভ’ কিংবা ‘গ্যাংস্টার স্কোয়াড’; রায়ান গসলিং আর এমা স্টোন দুইজনকেই দারুণভাবে মানিয়ে নেয়ার পরে এবার ‘লা লা ল্যান্ড’- এ দুইজনকে আবারো একসাথে। ছবিটি দেখার আগেই বলে দেয়া যায় যে দুইজনের রোমান্স কতোটা ভালো হবে। আর দুইজনেরই সেরা পারফর্ম্যান্স এবার ‘লা লা ল্যান্ড’-এ।

মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সী রায়ান গসলিং কে দেখলে খুবই এক্সপেরিয়েন্সড অ্যাক্টর মনে হয়। প্রথম থেকেই নিজের প্রতিভা দেখিয়ে আসা রায়ান গসলিং নিজেকে এই ছবির জন্যে উৎসর্গই করে দিয়েছিলেন বলা চলে। অভিনয়টা জন্মগত তার, এবার নাচটা শিখলেন, গানটাও শিখলেন, দুই মাসে ছয় ঘন্টা করে প্রাক্টিস করে শিখলেন এবার পিয়ানোটাও। ছবির একটা পিয়ানোর শটও কোনো ডবল বা এফেক্ট ছাড়া, তার কণ্ঠের প্রতিটা গান তার নিজের করা। আর অভিনয়? তার এক্সপ্রেশন, এনার্জি, হাসি থেকে জ্যাজের প্রতি ডিভোটেড অ্যাংরি লাভার; সবখানেই একদম সবচেয়ে বেস্ট টা করেছেন তা নিজের। কোনোখানে তার খারাপ কিছু বলা চলে না।
আর এমা স্টোন? ক্যারিয়ার তো সামনে পড়েই আছে, কিন্তু এখনই যেভাবে পারফর্ম করছেন, তাকে হয়তো ভবিষ্যতে লিজেন্ড হিসেবে ধরেছে রাখা হয়েছে। এতোদিনের সকল পারফর্ম্যান্স এও তাকে খুব বেশি ভালো লেগেছে। কিন্তু এবার সবগুলোকে ছাড়িয়ে, তার নিজের এবং কয়েক বছরের মাঝেও সেরা একটা পারফর্ম্যান্স দেখলাম। “আহা!” এই একটা শব্দই বলা যায় তাকে নিয়ে। নিজের চেহারা ভেঙেছেন চরিত্রের জন্যে, ব্রডওয়েতে আগেই লিখিয়েছিলেন নাম, সেখান থেকেই ড্যামিয়েন শ্যাজেল তাকে প্রস্তাব দেন এই ছবি করার। ছোটো বেলা থেকেই মিউজিক্যালের প্রতি আগ্রহ থাকায় আর না করেননি। আর করেননি বলেই এতো মাধুর্য্যময় এক অভিনয় দেখলাম।



রায়ান গসলিং আর এমা স্টোন দুইজনেই আমার অনেক পছন্দ দেখে বলছি না। কিন্তু দুইজন যেভাবে একে অন্যকে সাপোর্ট দিয়ে অভিনয় করলো, একদম গল্পের সেবাস্তিয়ান আর মিয়া এর মতো; এটা আসলেই ছবি সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট, ছবির গল্প কিংবা ডিরেকশনের চেয়েও। এই দুইজনের অভিনয়ের কারণেই গল্পের পিয়ানিস্ট সেবাস্তিয়ান আর উঠতি অভিনেত্রী মিয়া একদম প্রাণ পেল, যেমন দুইজন সারাক্ষণই প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন।

একদমই অল্প সময়ের জন্যে ছিলেন ‘Whiplash’ এর সেই জেকে সাইমন্স। অল্প সময়েই তার আগের ধাঁর দেখা গেলেও, তাকে আরো কিছুক্ষণ দেখালে মন্দ হতো না। সংগীতশিল্পী জন লিজেন্ড ছিলেন রায়ান গসলিং এর এর বন্ধুর চরিত্রে।
২০১০ সালে হার্ভাডের ডরমেটরিতে বন্ধু জাস্টিন হ্যারউইটজ কে নিয়ে পঁচিশ বছর বয়সের তরুণ শ্যাজেল যে লিখে রেখেছিলেন এক আলোড়ন সৃষ্টি করা চলচ্চিত্রের গল্প, সে কথা কী তারা নিজেও জানতেন? সেই গল্পকে বাস্তবে পরিণত করতে কতোদিন অপেক্ষা করতে হলো। ‘লা লা ল্যান্ড’ কে বাস্তবে আনতে আগে নিজের পায়ের নিচে শক্ত মাটি আনতে তৈরি করলেন ‘Whiplash’। ভেবেছিলেন কম রিস্কি কোনো প্রোজেক্ট এর মাধ্যমে মেইনস্ট্রিম দর্শকদের কাছে পরিচিতি আসুক। যদিও তার আগে ‘গাই অ্যান্ড ম্যাডেলিন অন আ পার্ক বেঞ্চ’ তৈরি করেছিলেন ছাত্র থাকাবস্থায়, তাও নিজের এক থিসিসকে তুলে ধরার জন্যে, সেটিও ছিল জ্যাজ মিউজিককে কেন্দ্র করে। কিন্তু শুধু পরিচিতি পাওয়ার জন্যে নিজের ড্রামার হয়ে ওঠার গল্পকে ‘Whiplash’ এ আনতে গিয়েই যে একটা ঝর বইয়ে দেবেন, তাও ভাবেননি হয়তোবা। শেষ পাঁচ-ছয় বছরের অন্যতম সেরা ছবিই হয়ে গিয়েছিল ‘Whiplash’। এরপরে আর সমস্যা হলো না। ‘La La Land’ এর প্রোজক্টে বাস্তবে আনতে ‘সামিট এন্টারটেইনমেন্ট’ কিনে নিলো এর সত্ত্ব। আর সবার সামনে এলো এক মোহনীয়-জাদুকরী ছবি।

নিজের প্রিয় অনেক ক্ল্যাসিক ছবি থেকে ইন্সপায়ারেশন নিয়ে আর জ্যাজকে কেন্দ্র করে লেখ এই গল্পকে তিনি প্যারিসে নিয়ে না গেলও, সবসময়ই তার একটা অনুভুতী ঠিকই ছিল, সেটা একসময় গল্পে উল্লেখ করার আগেও। তবে প্যারিসকে উপজীব্য না করে ‘L.A.’ বা লস অ্যাঞ্জেলেস কেই তিনই ফুটিয়ে তুলেছেন বেশি। পুরোটা সময় সেখানকার পরিবেশ, আবহাওয়া, যানজট থেকে হলিউড, সঙ্গীত; আর চমৎকার দৃশ্য। সেবাস্তিয়ান আর মিয়ার সেই নাচ শ্যুট করতে ম্যাজিক আওয়ার মোমেন্টের জন্যে দুইদিন কাজ করতে হয়েছে।
Talking about dance. কোরিওগ্রাফি অসাধারণ সেটা বাদই দিলাম, কিন্তু রায়ান আর এমার এই অনবদ্য পারফর্ম্যান্স এর জন্যেই পুরো ছবি উপভোগের মাঝে আরেকটা উপভোগ্য কিছু পাওয়া গেল। প্রথমের স্ট্রিট ডান্সটাও দারুণ ছিল। মিউজিক্যাল ফিল্ম, তাই নাচ-গান থাকবেই। কিন্তু সবগুলো ডান্স এতো সুন্দর! আর গানগুলো আরো বেশি ভালো। বিশেষ করে সূর্য ডোবার সময়ে রায়ানের কণ্ঠে ‘সিটি অব স্টারস’ অতিরিক্ত অসাধারণ। সাথে কালার কম্বিনেশন, মঞ্চের মতো সেট ডিজাইন, ড্রিম সিক্যুয়েন্স; এসবতো আছেই, সাথে এই যুগের মাঝেই ‘৫০ বা ‘৬০ এর দশকের ক্ল্যাসিক্যাল আমেজ রাখা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।

গল্পে দুই মূল চরিত্রের স্ট্রাগলের জন্যে বাস্তব থেকেই নিয়েছেন উপাদান। নিজের মিউজিক স্কুলের ঘটনা তো ‘Whiplash’ এ শ্যাজেল রেখেছেন আগেই। সেবাস্তিয়ানের মাঝে আবারো সেই স্ট্রাগল দেখালেন। মিয়া চরিত্রের অডিশন এর কয়েকটা অংশই বাস্তব থেকে নেওয়া। যেমন, একটা অংশে অডিশনে কান্নার দৃশ্য করছিলেন, এমন সময় সেখানকার কর্মকর্তাদের একজন তাদের লাঞ্চ নিয়ে কথা তোলায় অডিশন টা দেয়া হয় না। এটা রায়ান গসলিং এর ক্যারিয়ারের প্রথম দিককার অডিশন দেবার একটা সত্য ঘটনা ছিল।



শ্যাজেলের সেই দীর্ঘদিনের বন্ধু জাস্টিন হার্টউইটজ এর মিউজিক আর লাইনাস স্যান্ডগ্রিনের সাবলিল সিনেমাটোগ্রাফি সবসময়ই আটকে রেখেছে। এডিটিং এর কথা একটু বলতেই হয়, সাজানো আর চমৎকার ফাস্ট-পেস এডিটিং এর কারণে গল্প সবসময়ই একটা আলাদা প্রাণ পেয়েছে। আর এতো চমৎকার সাজানো, গল্পের প্রোগ্রেস খুব ভালো লাগছিল দেখতে।

গল্প পুরোটাই অসাধারণ। কিন্তু সব বাদে বেশি যেটা স্পর্শ করতে পেরেছে, সেটা হচ্ছে একদম প্রকৃত কয়েকটা বাস্তবতা তুলে ধরা এতো কিছুর মাঝেও। এখানেই এই ছবির সার্থকতা। অনবদ্য ভাবে একই সাথে স্বপ্ন আর বাস্তবতাটা তুলে ধরা।

গোল্ডেন গ্লোবে রেকর্ড সৃষ্টি করে সেরা চলচ্চিত্র, পরিচালক, চিত্রনাট্য, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী, গান আর মিউজিকের জন্যে সাতটা পুরষ্কার নিয়ে নিয়েছে ‘লা লা ল্যান্ড’। বাফটাতেও নিয়ে গেছে পাঁচটা পুরষ্কার, এগার নমিনেশন থেকে। অস্কারে রেকর্ড সৃষ্টি করে চৌদ্দটা নমিনেশন নিয়ে নাম লিখিয়েছে ১৯৫০ এর ‘অল অ্যাবাউট ইভ’ আর ১৯৯৭ এর ‘টাইটানিক’ এর চৌদ্দটা নমিনেশনের সাথে। ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী’ এর জন্যে ক্যাসি অ্যাফ্লেক না থাকলে হয়তোবা অস্কারেও ‘টপ ফাইভ’ নিয়ে নিতো। কিন্তু তা না হলেও টপ ফোর এর জন্যে জোড়দার সম্ভাবনা রয়েছে।

গল্প থেকে বাস্তব বা বাস্তবতার এক জাদুকরী গল্প; যা-ই বলি না কেন, ছবির এর মাধুর্য্যের কমতি ছিল না কখনোই। আর এই মোহনীয়তা সবাইকেই ছুঁইয়ে দিতে সক্ষম ড্যামিয়েন শ্যাজেলের ‘লা লা ল্যান্ড’।



La La Land
Year: 2016


IMDb Rating: 8.5/10
My Rating: 10/10
Rotten Tomatoes: 93% Fresh
Box office: $296.6 million/$30 million

Written & Directed by: Damien Chazelle
Cast: Emma Stone, Ryan Gosling

Genre: Musical, Romatic, Comedy, Drama

Accolades:

1. 89 Academy Awards: Nomination for Best Picture, Director, Actor, Actress, Original Screenplay, Cinematography, Film Editing, Sound Editing, Sound Mixing, , Original Score, Original Song (“City of Stars” & “Audition (The Fools Who Dream)”), Production Design, Costume Design।

2. 74th Golden Globes: Nominated & Won for Best Motion Picture (Musical or Comedy), Director, Actor, Actress (Comedy or Musical), Screenplay, Original Score, Original Song (“City of Stars”).

3. 70th BAFTA Awards (Pending): Won for Best Film,. Director, Actress, Cinematography, Film Music. Also Nominated for Actor, Original Screenplay, Editing, Production Design, Costume Design, Sound.

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৪৪

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: দারুন রিভিউ, সিনেমাটি দেখিনি, নাম জানতাম। এই রিভিউয়ের পর না দেখাটা অন্যায় হবে

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৩৩

মোঃ শরিফুজ্জামান সুজন বলেছেন: দেখতে পারেন, মনে হয়না সময়টা আপনার বিফলে যাবে, মন্তব্যর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।দেখতে পারেন, মনে হয়না সময়টা আপনার বিফলে যাবে, মন্তব্যর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.