নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বলার কিছু কিছু কি আছে ?

এম সহিদুজ্জামান

নাম : মো: সহিদুজ্জামান সুমন । অন্যদাতা : মো: ছাব্দার আলী বিশ্বাস । আব্দার রক্ষাকারী : মিসেস শাহিদা পারভীন । থাম : সুন্দরপুর , পান্নাতলা বাজার , কালীগঞ্জ ,ঝিনাইদহ । প্রিয় রং : নীল ( কোন কারন ছাড়াই ।) । প্রিয় খাবার : ভুনা খিচুড়ী আর মুরগীর ঝোল (যদিও খেতে পায় মাঝে মাঝে । প্রিয় পোশাক : কোর্ট প্যান্ট টাই ( টাই পরার যোগ্যতা এখনো হয় নি ,ডেসটিনি করি না তো ! ) । প্রিয় কবি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( যদিও বুঝি খুবই কম ) । প্রিয় বই : শেষের কবিতা (পড়েছি কয়েক’শ বার বুঝেছি কম) । প্রিয় খেলা : ক্রিকেট ও ফুটবল ( সব ছেলেদের এটা পছন্দ করা বাভ্যতামুলক -আমার বোন বলে ) । প্রিয় খেলোয়াড় : সাকিব আল হাসান ,লিওনেল মেসি (দুজন’ আমার অসম্ভব প্রিয় ) । সখ : কবিতা লেখা , কবিতা পড়া ,কবিতা আবিৃতি করা ( কোনটায় ঠিকমত পারি না ) । অবসর : এত কাজের ফাকে আবার অবসর........!

এম সহিদুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলাই দিদিমনি

২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১০

১ (এক )

ভাঙাচোরা টয়লেটের সামনে জনা পাচেক মহিলার একটা লাইন ।ওদের মাঝে একটাই প্রতিযোগিতা কে আগে যেতে পারে , কিন্তু সে সুযোগ একজন আরেক জনকে দিচ্ছে না । সময় হাতে মাত্র ৪০/৪৫ মিনিট । নিজের ঘরের আধখোলা দরজার চৌকাঠে বসে দুই পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে সে দৃশ্যই দেখছে সিমা । বয়স বড়জোর ২৫/২৬ হবে । চেহারাটা মোটামুটি পরিস্কার । মুখের আকার চোঁখে পড়ার মত । তবে না খেয়ে খেয়ে শরীরের বারোটা বাজিয়েছে আগেই । শরীরে যেটুকু মাংশ আছে সেটা শুধুমাত্র ঐ হাড়টাকে ঢেকে রাখার জন্য । ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বলল :
- এই তোগের হল ? এবার কিন্তু আমি যামু ।
- জি আপা হয়ছে , আপনে আইতে পারেন । বলল সিমার পাশের ছোট ঘরটার বাসিন্দা পারুল ।

সবাই সিমাকে একটু হলেও সম্মান করে । এখানে চারটা ঘরে মোট আটজন থাকে । সিমা একা থাকে এক ঘরে । সবাই অশিক্ষিত আর এক্কেবারে মূর্খ। সিমা একটু লেখাপড়া করেছে । অষ্টম শ্রেনিতে পড়ার সময় কোন এক অজানা অসুখে বাবা মারা যায় , তারপর রোগা পাতলা মা অসুস্থ শরীর নিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে আরো দুবছর লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে । চালিয়েছে বলতে সরকারী খরচে যে কদিন পেরেছে আরকি ।মেধা ভালো ছিল বলে সবাই মোটামুটি সাহায্য সহযোগিতা করেছে । কিন্তু এ গ্রেড পেয়ে এস এস সি পাশ করার পরও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি ভর্তি খরচ জোগাড় করতে পারেনি বলে । স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে ভর্তি খরচ দিবে বলেও আর দেয়নি । তাই লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সংসারে মন দিতে হয়েছে । লেখাপড়া টা আর হয়নি । তবুও এই চার ঘরে যারা থাকে তাদের মধ্যে ঐ আবার লেখাপড়া জানে । আর সবাই কখনোও স্কুলের বারান্দায় যায়নি । তাই সিমাকে সবাই সমিহ করে কথা বলে ।

- ভাতের হাড়ির ফ্যানটা ফেলে আইতাছি ,- বলল সিমা ।

বলেই ঘরের মধ্যেই গ্যাসের চুলায় ভাতের হাড়ির দিকে নজর দিল । ফ্যান ফেলবে কি ? ফ্যান তো আগেই শুকিয়ে গেছে ! টয়লেটের সামনে ওদের তামাসা দেখতে দেখতে ভাতের কথা আর মনে ছিল না । তার পরও যেটুকু ছিল সেটা নিংড়ানোর একটা চেষ্টা করে দেখলো । এক ফোটা ফ্যানও পড়লো না । ব্যর্থ হয়ে হাড়িটা নামিয়ে রাখলো পাশেই রাখা ছোট্ট পিড়িতে ।

বাইরে এসে দেখে ধুন্দুমার কান্ড ! পারুলের সাথে ঝগড়া লেগে গেছে নয়নের মার । ঝগড়ার কারন টা বড়ই হাস্যকর । নয়নের মা নাকি পারুলকে বলেছে- “ তোর আর সাবান ঘসা লাগবি না । এমনেও তোর ঐ কালো চামড়া কেউ সাদা করতে পারবো না ।” এতেই পারুলের রাগ হয়ে গেছে “ আমি না হয় ইট্টু বেশি কালো তাবলে রোজ রোজ কওনের কি আছে ? তোমার যে সাদা চামড়াতেই ময়লা বোঝাই ।”
সিমা এসে ওদের ঝগড়া থামাতে বলে – এসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে নেই । আল্লায় ওরে কালো বানাইছে ও কি ওর দোষ ? নয়নের মাকে লক্ষ করে বলে – আর তুমি যে অপরিস্কার থাক এটা কিন্তু তোমার দোষ । নয়নের মা এবার কথা বলে – পয় পরিস্কার থাকবো ক্যামনে ? ঠিকমত প্যাটটাই ভরাতে পারি না ! তার উপর নয়নের আবার স্কুলের …………
নয়নের মা কথা শেষ করতে পারে না , সিমা বলে-
- থাক , তোমার আর ফিরিস্তি দেওয়া লাগবে না । তোমার ফিরিস্তি পরে শুনবো । এখন সুমায় নাই । অফিস যাতি হবে , তুমি অফিস যাবা না ?
- হ যামু তো । পারুলই তো সব ঝামেলা বাধায় দিল । ও যদি…………
- আবার শুরু করছো ? যাও তো ! একটু ধমকের সুরে বললো সিমা ।
নয়নের মা আর কথা না বাড়িযে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।

পারুল এতক্ষন কোন কথায় বলেনি । সিমা থাকলে পারুল কোন কথা বলে না । সিমাকে খুব ভয় পায় । যদিও সিমা কখনো পারুলকে একবারের জন্যও জোরে কথা বলেনি । তার পরও সিমাকে পারুল ভয় পায় । হয়তো অনেক সম্মান করে । পারুল কোনদিনও স্কুলে যায়নি । কোন অক্ষরও ঠিকমত চেনে না । নিজের নাম সই করতে পারে না । আর সিমা ম্যাট্টিক পাশ । পারুলের কাছে সিমা অনেক শিক্ষিত । তাইতো এই ভয় বা সম্মান । সিমা এবার পারুলকে বলল -
:– কিরে তোর এখনো হয়নি ? তুই না বললি হয়ে গেছে ?
- হ আপা হয়ছিল তো । ঐ নয়নের মা এসেই তো …………
- হয়ছে ... হয়ছে …..তুই শুধু শুধু ওর সাথে লাগতে যাস কেন ? জানিস না ওর কামকাজ ?
- আমার হয়ে গেছে । আপনি আসেন ।
- আচ্ছা ,যা রেডি হ । সময় নাই ।
পারুল চলে গেলে সিমা গোসলটা সেরে নিল । গোসল করে ঘরে যাবে এমন সময় পাশের ঘরে শেফালির কান্নার শব্দ । শেফালির ঘরে গিয়ে দেখে বালিশে মুখ গুজে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে । কারনটা জানতে চাইলে বলে
– আফা পোলাটা মার কাছে রয়ছে । ওর নাকি ভিষন অসুখ করছে । মায় কয়ছে আইসা দেখে যা ।কিন্তু ক্যমনে যামু ।মোর লগে তো এট্টা টাকা নাই । পোলাটা শুধু মা মা করতাছে । এমাসের আর মাত্র দুই দিন । এখন যদি কামায় করি তয় হাজিরা বোনাস কাটা যাইবো ।
- হজিরা বোনাস আগে না তোর পোলাই আগে ?
- আফা কম বেতনে চাকরি করি । হাজিরা বোনাস পাইলে কাঁচা বাজারের টাকাটা হয়ে যাই । কি যে করি ? বুজবার পারতাছি না ।
- তোর কিছু বোঝা লাগবো না । আজ রাতের লঞ্চে বাড়ি যাবি । আর দাড়া আমি টাকা দিতাছি ।
বলে সিমা ঘরে আসলো । জামা কেনার জন্য যে টাকাটা রেখেছিল তার পুরোটাই শেফালির হাতে দিল আর বললো – আমি এসে যেন তোরে বাড়ি যেতে দেখি ।
- আফা আপনে মানুষ না ………আপনে ……..
- হয়ছে আর গীত গাওয়া লাগবে না । আমি গেলাম ।
বলে দু এক লোকমা ভাত কোন রকমে মুখে পুরেই অফিসের উদ্দেশ্যে ছুটলো ফিরবে আবার রাত ৮ টা বা ৯ টা । এই পারুল হয়ছে তোর ?
- হ চলেন । বলে হাটা লাগালো ।
অন্যেরা ইতিমধ্যে চলে গেছে । পারুল আর সিমা একসাথে যায় । যাওয়ার আগে আরেকবার শেফালিকে তাগাদা দিল । সেই সাথে ঘরে ভালো করে তালা দিতে বলে গেল । এটা সিমার রোজকার অভ্যাস । সব কাজে সবাইকে সবসময় সাবধান করা ।

চলবে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

রং করা পুতুল বলেছেন: লাল টুক টুক সেলাই দিদিমণি ।

২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:০০

এম সহিদুজ্জামান বলেছেন: লাল টুকটুক সেলাই দিদিমনিরা যে সব সময় যে লাল টুক টুক থাকে না কখনোও-সখনোও সেটা বেদনার রঙে নীল হয়ে যায় সেটাই এই কাহিনির বিষয়বস্তু । সেটা পরবর্তিতে পাবেন । নিয়মিত এটা পড়বেন আর আপনার সুচিন্তিত মতামত দিবেন আশা করি ।

আজকের মন্তব্যের জন্য আপনার ধন্যবাদ প্রাপ্য । ধন্যবাদ ।ভালো থাকবেন ।

২| ২৫ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩২

বাকপ্রবাস বলেছেন: ...........................................।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.