নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বলার কিছু কিছু কি আছে ?

এম সহিদুজ্জামান

নাম : মো: সহিদুজ্জামান সুমন । অন্যদাতা : মো: ছাব্দার আলী বিশ্বাস । আব্দার রক্ষাকারী : মিসেস শাহিদা পারভীন । থাম : সুন্দরপুর , পান্নাতলা বাজার , কালীগঞ্জ ,ঝিনাইদহ । প্রিয় রং : নীল ( কোন কারন ছাড়াই ।) । প্রিয় খাবার : ভুনা খিচুড়ী আর মুরগীর ঝোল (যদিও খেতে পায় মাঝে মাঝে । প্রিয় পোশাক : কোর্ট প্যান্ট টাই ( টাই পরার যোগ্যতা এখনো হয় নি ,ডেসটিনি করি না তো ! ) । প্রিয় কবি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( যদিও বুঝি খুবই কম ) । প্রিয় বই : শেষের কবিতা (পড়েছি কয়েক’শ বার বুঝেছি কম) । প্রিয় খেলা : ক্রিকেট ও ফুটবল ( সব ছেলেদের এটা পছন্দ করা বাভ্যতামুলক -আমার বোন বলে ) । প্রিয় খেলোয়াড় : সাকিব আল হাসান ,লিওনেল মেসি (দুজন’ আমার অসম্ভব প্রিয় ) । সখ : কবিতা লেখা , কবিতা পড়া ,কবিতা আবিৃতি করা ( কোনটায় ঠিকমত পারি না ) । অবসর : এত কাজের ফাকে আবার অবসর........!

এম সহিদুজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলাই দিদিমনি

০৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৩৫


২ (দুই )

আঁকাবাকা রাস্তাটা গ্রামের একপাশ দিয়ে চলে গেছে । রাস্তাটা কাঁচা ,বর্ষা মৌসুমে কাঁদা-পানিতে একাকার ।এখনও বর্ষা মৌসুম আসতে দেরি তারপরও গত কয়েক দিনের হালকা বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্তা বেহাল । গ্রামের রাস্তা , মোটর চালিত গাড়ি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই ,বড়জোর দুএকটা ভ্যান গাড়ি পাওয়া যেতে পারে । না হলে হেঁটে চলাই নিয়ম এই রাস্তার । সবাই হেঁটেই চলে ।যারা একটু সৌখিন প্রকৃতির বা পকেট ভারি তারা ভ্যান গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে । কালে ভদ্রে যা দুএকটা পাওয়া যায় তা ঐসব সৌখিন আর পকেট ভারি লোকদের জন্য বরাদ্ধ থাকে ।
শেফালি সৗখিন বা পকেট ভারি লোকদের মধ্যে পড়ে না । ছেলেকে দেখার জন্য সিমার থেকে টাকা ধার নিয়ে এসেছে । তারপরও আজ ও ভ্যানগাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে ,হাঁটতে আর ভালো লাগছে না । অনেকটা পথ জার্নি করে ক্লান্ত লাগছে ।

-বেলা প্রায় পড়ন্ত , এখন আর ভ্যান পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই -একজন বললো ।
পাশের জন বললো –
-তারপরও রাস্তা ভালো না । তাই হেটেই চইলা যান আফা , অহন আর গাড়ি পাইবেন না । সবাই চইলা গ্যাছে ।

শরীরের শক্তি লোকটার কথা শুনতে মোটেও সাড়া দিচ্ছিল না । মনে একটু ক্ষিন আশা নিয়ে তারপরও বসে থাকলো । ওদিকে পোলাটাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । পথে কিছুই খাইনি ,যদি দুটো টাকা বাঁচানো যায় তবে সেটা পোলার ওষুধ কেনা যাবে । কিন্তু সেটা বাচিয়ে এখন নিজের শরীরে শক্তি অপচয় করে নিজেই অসুস্থ হয়ে না পড়ে ! পাশের টোঙ দোকান থেকে একটা পাউরুটি কিনে পানি দিয়ে ভিজিয়ে খেয়ে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করলো শেফালি ।ছেলের কথা মনে করে আর অপেক্ষা করতে পারলো না । প্রায় দুই মাইল পথ । হেটে গেলে প্রায় ১ ঘন্টা লেগে যাবে ,শরীরের যা অবস্থা তাতে বেশিও লাগতে পারে ।
হন্তদন্ত হয়ে রমিজ উদ্দিন কোথায় যেন যাচ্ছিল । শেফালিকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল ।
-এখন আইলেন আফা ? পোলাডাই তো শুদু মা মা করে । শইল্লে ভিষন জ্বর । যান যান আর দেরি কইরেন না ।
- তুই কই যাস ? শেফালি জিজ্ঞাসা করলো ।
- আমি আর কই যামু , বরুন কবিরাজের থ্বন পানি পড়া আনতে অয়বো । নাইলে তো আর পোলারে বাচান যায়বো না ।
- কবিরাজের থ্বন যাওন লাগবো না । তুই মোড়ের ডাক্তারের কাছে যা ।তেনারে ডাইকে লই আয় ।
- তেনারে ডাকবো , টাকা তো নাই ।
-টাকা মোর লগে আছে তুই ডাইকে লই আয় ।
-আচ্ছা , আপনে বাড়িত যানগা ।আমি আইতাছি ।
বলেই আবার দৌড় লাগালো রমিজ উদ্দিন । শেফালি কি মনে করে ডাকলো সেটা আর শুনতে পেল না রমিজ । শেফালি আবার হাটতে লাগলো । রমিজ শেফালির চাচাতো ভাই । আপন বলতে ঐ রমিজ আর মা ছাড়া কেউ নেই ।শেফালির বাপ –চাচারা দুই ভাই ছিল । শেফালির বাপ ছিল বড় আর রমিজের বাপ ছোট ।শেফালির বাপ মারা গেছে ক্যান্সার হয়ে । বয়স বেশি ছিল না । কিন্তু ক্যান্সার রোগের কারনে তাকে পরপারে চলে যেতে হয় সময়ের অনেক আগেই । শেফালির বয়স তখন ১৫/১৬ হবে । বিয়ে হয়নি ।বাবা-মার একই মেয়ে শেফালি । আর্থিক অবস্থা সঙিন ।তাই লেখাপড়া হয়নি মোটেও । তাছাড়া গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিলনা ।মেয়ে মানুষের আবার লেখাপড়ার দরকার কি ? বলতো শেফালির বাবা । সবথেকে কাছের স্কুলটা ছিল প্রায় দুই মাইল দুরে । কি দরকার মেয়ে মানুষের এতদুর গিয়ে পড়ালেখা করার ? এই মনোভাব থাকার কারনে শিমুলতলি গ্রামের অধিকাংশ মেয়ের লেখাপড়া হয়নি । শেফালিরও হয়নি।বাবা যখন মারা যায় কোন ডাক্তার তাকে চিকিৎসা করেনি । করেনি বললে ভুল হবে ,করতে পারেনি । কোন ঔষধেই কাজ হয়নি । বড় ডাক্তার দেখানোর ক্ষমতা শেফালিদের ছিল না ।তাই বলা যায় প্রায় বিনা চিকিৎসায় শেফালির বাবা মারা যায় । শেফালির চাচা মারা যায় গাছের নিচে চাপা পড়ে । শেফালির চাচা আব্দুল কুদ্দুস দিন মজুরের কাজ করতো । সেদিনও কাজ করে ঘরে ফিরেছিল ফুরফুরে মেজাজে । মহাজনের থেকে টাকা নিয়ে অল্প বয়েসি সুন্দরী আর তিন মাসের পোয়াতি বউযের জন্য লাল ফিতা আর লাল চুড়ি কিনে এনেছিল ,পরেরদিন ছুটি, কোন কাজ নেই তাই বউকে নিয়ে পাশের গ্রামের মেলা দেখতে যাবে , ফুরফুরে মেজাজটা সে কারনেই । বাজার থেকে পুটি মাছ নিয়ে এসছিল , রাতে সেই পুটিমাছের চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খেয়ে অনেক তৃপ্তি পেযেছিল সেদিন । বউয়ের সাথে মৌজ মাস্তি করতে করতে ঘুমিয়েছিল অনেক রাত্রে । রাতে ঝড় উঠেছিল এটুকুই শুধু মনে আছে কুদ্দুসের বউয়ের ।তার পর সব অন্ধকার কিছুই মনে নেই । সকালে উঠতে গিয়ে দেখে পয়ে টানটান ব্যথা আর যন্ত্রনা । কোন রকমে খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠে দেখে উঠানে অনেক লোক । তার প্রান প্রিয় স্বামীর নিথর দেহটা পড়ে আছে সবার মাঝখানে । ঘরের পেছনে যে শিলকড়ই গাছটা আছে সেটা ঘরের মাঝ বরাবর পড়ে ঘরটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে । আর তারই নিচে চাপা পড়ে আব্দুল কুদ্দস না ফেরার দেশে চলে গেছে ।সেই সাথে চাপা পড়েছে আব্দুল কুদ্দুসের বউকে নিয়ে মেলায় যাওয়ার স্বপ্ন ।পোয়তি বউটা কিছু জমানো টাকা আর গহনা বিক্রি করে ,পরের বাড়ি কাজ করে কোন রকমে রমিজকে পৃথিবিতে এনেছিল । মানুষ করতে না পারলেও স্বামীর ভিটে মাটি কামড়ে আরো তিন-চার বছর ছিল এখানে । এরপর অভাবের তাড়নায় আর নিজে ভবিষ্যত ভেবে তিন বছরের রমিজকে ফেলে পাশের গ্রামের সোলেমানের হাত ধরে রাতের আধারে পালিয়ে যায় , এখন কোথায় আছে সেটা কেউ জানে না ।সেই থেকে রমিজ তার বড় চাচি অর্থ্যাৎ শেফালির মার কাছে থাকে । শেফালির বয়স তখন ২০/২২ হবে হয়তো ।
শেফালির মনে সেই শঙ্কা জেগে ওঠে ।বাপের মত ওরও……….. আবার মনে মনে ভাবে আমার পোলার লগে এমনটা অয়বো না । ওতো ছোট , নিশ্পাপ শিশু ।আল্লায় ওরে মোর হইতে নিবো না । ভাবতে ভাবতে বাড়ির দরজায় এসে পৌছায় শেফালি । বাড়ি বলতে শুধু একখানা ঘর ,খড়ের চাল দেওয়া ১০/১২ ফুট লম্বা আর ৭/৮ ফুট চওড়া একখানা ঘর । এখানেই শেফালির বৃদ্ধ মা আর ছেলেটা থাকে । ঘরের যে ছোট্ট বারান্দা সেটাতে থাকে রমিজ উদ্দিন । এখনও বিয়েথা করেনি রমিজ ।শেফালির মাকে মা বলেই ডাকে । নিজের মায়ের অভাব কোনদিন বুঝতে দেয়নি শেফালির মা । তাই এদের সব সুখ দুঃখের অংশিদার রমিজ ।
মানুষের আসার আওয়াজ পেয়ে ভাঙাচোরা ঘরের মধ্য থেকেই শেফালির মা বলে উঠলো –
- কে ? রমিজ আইলি ?
- না মা ; আমি শেফালি । আমার পোলাই কই ?
- তুই আইছস মা ,আয় আয় । তোর পোলা তো শুধু মা মা করে ।এইবার তুই সেবা কর ;
- হ মা ,আমি আইছি । তয় আয়তে দেরি হইয়া গেল ।গাড়ির পথ ; এটা তো আর নিজের হাতে না । শেফালির মা শেফালির ছেলে তমিজকে লক্ষ করে বললো এবার তোর মা এসেগেছে ;তুই এবার ভালা ওইয়া যাবি ।
শেফালি আর নিজেকে আবেগের বাইরে রাখতে পারলো না । দৌড়ে গিয়ে তমিজকে জড়িয়ে ধরে কপালে, চোঁখে নাকে ,মুখে সারা শরীরে মায়ের মমতাসুলভ চুমা খেতে লাগলো । প্রায় এক মিনিট পর থামলো ।এবার একদৃষ্টে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো –
- পোলায় মোর কালা হয়ে গ্যাছে ,কত্ত হুকায় গ্যাছে !
- শুকায়বো না আবার ! সারাদিন শুধু রোইদে রোইদে ঘুইরে বেড়াইবো ;মুই একলা মানুষ ,মুই কি আর ওর লগে পারি ? রমিজ যে দেখবো হের আরো কাম আছে না ; এই রোইদে রোইদে ঘুইরেই তো অসুখ বাদায়ছে ! মুই যদি .......
সব অভিযোগ যেন আজ শেফালির কাছে করা লাগবে । এতদিনের জমানো অভিযোগ সব আজ বলতে পারলে তারপর যেন শেফালির মার শান্তি ! তাই কোদিকে না তাকিয়ে গড়গড় করে সব অভিযোগ বলতে শুরু করে আর থামেই না ……...
- থামো তো মা ! -একটু রাগতো স্বরেই বললো শেফালি ।
মোর পোলার কিচ্ছু হবে না । মুই আইসে গেছি ,সব ঠিক ওইয়া যাইবো ।

ধমক খেয়ে শেফালির মা আর কথা বাড়ালো না । একটু থেমে আবার বললো –
-তুই খাইছোস কিছু ?
-না মা ;কি খাব ; পোলারে রেইখে মুই কেমতে খামু ? তয় একটা পউরুটি খাইছি ।ভাত থাকলে ভাত দেও ।না থাকলে পানি দেও ।
- হ দিতাছি ;ভাত আছে তয় তরকারি নেই ,মইচ দিয়ে খেতি হইবো ।
- তাই দেও ; ঝাল মইচ ই ভালা ! গরিবেরে আবার গোস্তভাত ! গরিবের জন্যে রোজায় ভালা ।
- থাক মুই নিয়ায়তাছি ।
বলে শেফালির মা বাইরে চলে গেল । শেফালি ছেলের কপালে হাত দিয়ে দেখে ছেলের জ্বর এখন অনেক কম । এতক্ষন ছেলে ঘুমিয়ে ছিল । মায়ের আদর পেয়ে জেগে উঠলো ।
- তুমি আইছ মা ! মোর আর ভালা লাগে না ।তুমি ক্যানো চইল্যা যাও ?
- না গ্যালে যে মুখে ভাত জুটবো না বাবা । মুই তো চাকরি করি ।
- মুইও যাব তোমার লগে ।
- যাব ? হ যাবি ; তয় পরে যাবি । আরো বড় হ হের পর তোরে লিয়ে যাব ।
- মুই কবে বড় হর মা । মুই তো বড়ই । নানি কয় মুই বড় হয়ছি অহন একটু কইরে কাম কাজ ধরতে হয়বো ।
- না বাবা ;তুই এখনো বড় হস নাই । আরো বড় হ । আচ্ছা মা ।
ছেলে আর কথা বাড়াই না ।চুপ করে থাকে । বুঝতে পারে না কোনটা ঠিক । নানি বলে বড় হয়েছি আবার মা বলে হইনি । কার কথা সে মানবে ।নাকি দুটোই ঠিক । ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়ে । এরই মধ্যে শেফালির মা একটা প্লেটে একমুঠো ভাত পাশে একটা পেয়াজ আর মরিচ । আর এক হাতে একটা টিনের গ্লাসে পানি ।
- নে ধর ,খাইয়া ল । ..বলতে বলতে প্লেটটি চৌকির উপর রাখলো ।
- হ দেও ; শইল ডা আর চলে না ।
- আচ্ছা তুই ঢাকাত কি কাম করছ ?কিছুই তো কস না কোন দিন ।
-হেইটা জাইন্না তুমি কি করবা ?
- মুই আর কি করুম ? মানসে কয় তুই নাকি বেডা গো লগে রাইতবিরাতে কাম কর ?
- তাইতে কার কি লাগি ?
- মানসে তো ভালো পায় না । আরো কতকথা কয় মানসে !
- কি কয় মানসে ?
- কয় তোর নাকি ইজ্জত বইল্লা কিছু নাই ; বেডা গো লগে ঢলাঢলি করস ? তুই নষ্ট হয়া গ্যাছস ।
- কেডা কয় ?
- বেবাকেই কয় ;কার কথা কমু ?
-মা কেডা কি কইলো হেডা দ্যাইখ্যা আমার কি কাম ? হেরা তো কেউ মোর লাগি ভাববো না ।মোর প্যাটের লাগি ,পোলার লাগি মোরেই ভাববার লাগবো । মুই যহন না খাইয়া ছিলাম তহন তো কেউ মোর খবর লয় নাই । অহন তো মোর খবর সগলে ন্যাই ।ক্যান ?
- আরো কয় …………
- বাদ দেও তো মা ; -কিছুটা রাগের সুরে বলে শেফালি ,হেগোর কতা মোর হুনোনের কাম নাই ।মুই অহন ভালা আছি এডা হেগোরে সহ্য হয় না । তাই হেগুলা বইল্লা বেড়াই । মোর ঘুম আইতাছে ,মুই অহন ঘুমামু ।
ছেলের দিকে তাকিয়ে আদুরে গলাই বলে
- ওমা মোর পোলায় তো দেহি ঘুমাই !
শেফলির মা আর কথা বাড়ায় না । কেরোসিন তেলে জ্বলা ল্যাম্পটা ফু দিয়ে নিভিয়ে শেফালির পাশে শুয়ে পড়ে । রমিজ উদ্দিনের তখনও আসার কোন আলামত নেই । রমিজ এমনই ,যে কাজে যায় সেকাজ সম্পন্ন করা রমিজের হয়ে ওঠে না । সেটা যত গুরুত্বপুর্নই হোক না কেন । আজও তার কোন ব্যাতিক্রম হবে না হয়তো । হয়তো মোড়ের ডাক্তারের কথা রমিজের মনেই নেই ! কোন যাত্রার প্যান্ডেলের সামনে দাড়িয়ে গেছে ,অথবা ফুটপাথের লেকচার শুনছে ।

সকালে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠলো শেফালি । গতকাল সারাদিনের জার্নি আর সকাল সকাল উঠার কোন তাগিদ না থাকায় একটু দেরি হলো বইকি ।আজ ঢাকাতে যাবে না । তিন দিনের একটি অলিখিত ছুটি নিয়ে এসেছে সিমার কাছে । শেফালি সিমার অধিনেই কাজ করে । তাই চিন্তাটা একটু কম । অন্য সুপারভাইজারদের মত সিমা অতটা কেঠোর না । তাছাড়া সিমা-ই শেফালিকে একরকম জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে ।যদিও শেফালির হাজিরা বোনাস পাওয়ার ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারবে না । তবে ছুটি টা হয়তো পাশ করিয়ে দিতে পারবে । তবে শেফালির কপালটা হয়তো কিছুটা হলেও ভালো কারন এমাসের আরো চার দিন বাকি ,তিন দিন ছুটি কাটালেও এমাসের মধ্যেই ছুটি শেষ । পরের মাসের হাজিরা বোনাস টা হয়তো বাচানো যাবে । শেফালির মত অনেকেই হাজিরা বোনাস পাওয়ার জন্য শরীরে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও কাজে আসে । এক মাসের সব দিন যদি উপস্তিত থাকে তবে বেতন বোনাস আর ওভার টাইম এর সাথে ৫০০ টাকা হাজিরা বোনাস পেয়ে থাকে শেফালিরা । এটা ১০০% উপস্থিত হওয়ার পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় ।এমাসে মেফালি সেটা পাবে না ।তাতে অবশ্য শেফালির আর কোন দুঃখ নেই ,ছেলের মুখ তার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয় । শেফালির জীবনে তো এই ছেলেটাই এখন সব । বুড়ো মা আর ছেলে । মা তো আর বেশি দিন বাঁচবে না , ছেলেই তখন সব !
গায়ের উপর থেকে পাতলা কাথাটা সরিয়ে শেফালি আড়ামোড়া ভেঙে যখন ঘর থেকে বের হল সকাল তথন প্রায় ১০ টা বাজে ! এত বেলা করে শেফালি কতদিন পর উঠলো মনে করতে পারে না কারন বাড়িতে বা ছুটিতে থোকলেই কেবল একটু বেশি করে ঘুমানোর সুযোগ থাকে । কিন্তু গত তিনমাস ধরে শেফালিরা সে সুযোগ পায়নি , ফ্যাক্টরির কাজের চাপ অনেক বেশি । তার উপর সরকারি বিধিনিষেধের সাথে মালিকের জোরাজুরি ।শেফালি অতটা না বুঝলেও এটুকু জানে গতবছর রানা প্লাজা ভেঙে পড়ার পর সরকারের উপর বিদেশের অনেক চাপ আসছে ।শেফালি এসব শুনেছে সিমা আপার কাছে ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০১

এম সহিদুজ্জামান বলেছেন: গল্পটি বাস্তবতার নিরিখে লেখা ।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫১

প্রামানিক বলেছেন: খুব ভাল লাগল গল্প। গল্পে বাস্তবতা আছে। সংলাপ গুলোও সুন্দর। ধন্যবাদ

১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:০৭

এম সহিদুজ্জামান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ পড়ার জন্য । এটা আসলে আমার উপন্যাসের কিছু অংশ । পরবর্তিতে আরো আছে । ক্রমশ প্রকাশ্য ।

মাঝে মাঝে আপনাদের মতামত পেলে উৎসাহ পাব । আবার আসবেন আশা করি । শুভ কামনা আপনার জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.