নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুমন নিনাদ

বাংলা ও বাংলাদেশ- আমার ভাগফল, আমার ভাগশেষ

সুমন নিনাদ

সুমন নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিমাই এবং তার অলৌকিক পাথর

১৩ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫৩

ছোটবেলায় বাবার কাছে শোনা একটা গল্প আজ আপনাদের বলি। হতদরিদ্র এক বাঙ্গালির নির্মম আত্মহত্যার গল্প। গল্পটি কষ্ট করে পড়ার পর এটার “মোরাল অফ দ্য স্টোরি” লেখার দায়িত্ব আমি আপনাদের দিলাম। আশাকরি সবাই আমাকে সাধ্যমত সাহায্য করবেন। চলুন শুরু করি।



অনেক দিন আগে আমাদের পাশের গ্রামে নিমাই নামের এক দিনমজুর বাস করত। তখন বর্ষাকাল। অনেক দিন ধরে এলাকায় তুমুল বৃষ্টি। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নাই। নিমাইকে কেউ কোন কাজে ডাকেনা। নিমাইয়ের ঘরে চাল নাই। নিমাই, তার স্ত্রী ও এক হালি সন্তান নিয়ে না খেতে পেয়ে দিশেহারা। ধার কর্জ করে আর কতদিন চলে? একসময় ধার দেয়ার মত প্রতিবেশীরাও ধার দেয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। নিমাইয়ের বাড়ির চুলায় হাড়ি চড়া বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে রাগে, দুঃখে, অভিমানে নিমাইয়ের বৌ তাকে ঝাড়ু শাসিয়ে ঘরছাড়া করে।



লজ্জায়, অপমানে আর জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়ার তীব্র ক্ষোভে নিমাই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। সে একটি কলসি নিয়ে নদীর দিকে হাঁটতে শুরু করে। নদীর জলে ডুবে মরবে সে। নদীর ধারে পোঁছানোর পর হঠাৎ তার সাথে এক সাধুবাবার দেখা হয়। সাধু তার গন্তব্য জানতে চাইলে কথায় কথায় নিমাই তাকে সবকিছু খুলে বলে। সাধুর খুব দয়া হয় নিমাইয়ের প্রতি। তিনি নিমাইকে একটি অলৌকিক পাথর দেন। যে পাথরের ছিল যেকোন তিনটি ইচ্ছে পুরনের ক্ষমতা। এই অলৌকিক পাথর নিমাইকে তার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বদলাতে সাহায্য করে। নিমাই কলসি হাতে খুশীমনে উল্টো পথে হাঁটা দেয়। তার বাড়ির দিকে।



বাড়িতে পোঁছালে নিমাইয়ের বৌ আবার ঝাড়ু নিয়ে তার দিকে তেড়ে আসে। নিমাই অনেকক্ষণ কষ্টসাধ্য চেষ্টা করার পর বৌকে অলৌকিক পাথরের বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়। এরপর-

নিমাই - চলো এবার আমরা পাথরের কাছে কিছু চালডাল চাই। আগে তো খেয়ে বাঁচি। পোলাপান গুলো না খেয়ে তো মরলো।

নিমাইয়ের বৌ – না। চালডাল পরে। আগে আমার জন্য গয়না চাও।

নিমাই - পোলাপান না খেয়ে মরছে। আর তোর গয়না বড় হল? আমি আগে চাল চাইব।

নিমাইয়ের বৌ - না, আগে আমার গয়না চাইতে হবে। তা না হলে আমি তোমার পাথর চুলায় দিব।

নিমাই – (অত্যন্ত রেগে গিয়ে চিৎকার করে) কি!!! এত্তবড় কথা। পাথর চুলায় দিবি হারামজাদী?? (পাথরের দিকে তাকিয়ে আরও চিৎকার করে) আমার বৌয়ের এক হাজার মাথা হোক।



সঙ্গে সঙ্গে নিমাইয়ের বৌয়ের একহাজার মাথা হয়ে গেল। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ইতিমধ্যে এলাকার অনেক মানুষ জুটে গেছে । তারা এসে দেখে নিমাইয়ের বৌয়ের এক হাজার মাথা। এক হাজার মাথার একহাজার মুখ দিয়ে এবার নিমাইয়ের বৌ কান্না জুড়ে দিল। একহাজার গলার চিৎকার। বুঝতেই পারছেন তার আওয়াজ। নিমাইয়ের বৌ গালিগালাজ করে নিমাইয়ের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো। একহাজার মাথা তার দরকার নাই। সে স্বাভাবিক মানুষের মত একটা মাথা চায়। বৌয়ের চিৎকার আর এলাকার মানুষের চাপ। অবশেষে নিমাই পাথরের কাছে তার দ্বিতীয় ইচ্ছা পুরনের জন্য অনুরোধ করল। সে চিৎকার করে বলে উঠলো, “ আমার বৌয়ের মাথা চলে যাক” মুহূর্তের মধ্যে নিমাইয়ের বৌয়ের মাথা থেকে এক হাজার মাথা চলে গেল। কিন্তু মুশকিল হল, এখন নিমাইয়ের বৌয়ের আর একটিও মাথা নাই। আসলটিও নাই। মস্তকহীন নিমাইয়ের বৌ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।



এবার মায়ের এই অবস্থা দেখে এক হালি বাচ্চা একসাথে কান্না জুড়ে দিল। তাদের এক দফা এক দাবী। তারা তাদের মাকে আগের মত ফেরত চায়। উৎসুক দর্শনার্থীরাও প্রচণ্ড চাপ দিতে লাগলো নিমাইকে। এদিকে পাথরের আছে আর মাত্র একটা ইচ্ছে পুরনের ক্ষমতা। ইতিমধ্যে দুটো খরচ হয়ে গেছে। নিমাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। বৌয়ের মাথা ফেরত চাইলে সে কি করে চাল ডাল ম্যানেজ করবে? বাচ্চাদের খাওয়াবে কি? তার সিদ্ধান্তহীনতা আর দেরী দেখে উপস্থিত জনতা তাকে মারতে এলো। কি আর করা? পাবলিকের মাইর খাবার চেয়ে না খেয়ে মরে যাওয়াই ভাল। উপায় নাই নিমাইয়ের হাতে।



নিমাই পাথরের দিকে চেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, “আমার বৌয়ের একটা মাথা ফেরত আসুক” সঙ্গে সঙ্গে নিমাইয়ের বৌয়ের একটা মাথা ফেরত এলো আর অলৌকিক পাথর অদৃশ্য হয়ে গেল।



এদিকে জ্ঞান ফিরে আসার সাথে সাথে মাটি থেকে উঠেই নিমাইয়ের বৌ তাকে চাল জোগাড় করতে হাঁক দিল এবং ঝাড়ু নিয়ে তেড়ে আসলো।



নিমাই কোন উত্তর না দিয়ে উঠোনের এক কোণে রাখা কলসি নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলো। নিমাইয়ের গন্তব্য কোথায়? আশাকরি এই প্রশ্নের উত্তর আপনাদেরকে আমার দেবার দরকার নাই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১৬

প্রেমিক চিরন্তন বলেছেন: আহারে নিমাই

২| ১৩ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬

মিনুল বলেছেন: ভালোই গল্প।পাঠক বিপদে!

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫

খাটাস বলেছেন: বেশ মজা পেলাম নিমাই চক্র। তবে দ্বিতীয় বারে প্রথম সিধান্ত কার্যকরের বাধা নেই।

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

সুমন নিনাদ বলেছেন: ধন্যবাদ সকলকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.