নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুমন নিনাদ

বাংলা ও বাংলাদেশ- আমার ভাগফল, আমার ভাগশেষ

সুমন নিনাদ

সুমন নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম সওদাগর

২১ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:২৪

এস এস সি পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করতে অনেকগুলা টাকা লাগতো। হাজার বারশ হবে। আমি যেই আমলে এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি, সেই সময়ে একটা "দিন আনি দিন খাই" পরিবারের জন্য হাজার বারশ অনেক টাকা।

রাজীব নামের আমার একটা ক্লাসমেট ছিল। সচ্ছল পরিবার বলতে যা বুঝায় ওরা ঠিক তেমন ছিল না। ওর বাবার একটা ছোট দোকান ছিল। কোনমতে চলত। কিন্তু প্রায়শই দোকান বন্ধ করে উনি চিল্লায় যেতেন। ধর্ম প্রচারের কাজে। টানাটানির সংসার চালাতে রাজীবের মায়ের নাভিশ্বাস উঠত। এর মাঝে আমাদের এস এস সি পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপের সময় আসে। রাজীবের বাবা তখন চিল্লায়। এতগুলা টাকা রাজীবের মা জোগাড় করতে না পেরে রাজীবকে তিনি তার হাতের সোনার চুরিটা খুলে দেন। সেই চুরি বেচে রাজীব ফর্ম ফিলাপ করে।

পরীক্ষা শেষ হলে রাজীব একদিন ওর একটা ডায়েরি নিয়ে আমার কাছে আসে। রাজীব কবিতা লিখত সেটা আমি জানতাম না। ডায়েরি খুলে সে তার লেখা একটা কবিতা আমায় দেখায়। কবিতাটার নাম ছিল "ধর্ম সওদাগর"। কবিতাটা হুবহু তুলে দিচ্ছি।

"মায়ের গয়না বেচে আমি
পেটেতে বিদ্যা ভরি
বাবা আমার দেশে দেশে
করে ধর্ম সওদাগরি

জিহাদের মন্ত্র জপে তিনি
ভাষণ দেন উচ্চস্বরে
আমার মায়ের ছিন্ন আঁচল
খসে পরে অনাদরে

আমার মায়ের শুন্য হাড়ি
উনুনে জ্বলে না আগুন
ধর্ম বেচে বাবা আমার
নেকী কামায় দ্বিগুণ

তবুও মায়ের ধর্ম এবং
মায়ের পরওয়ার
একজন ধর্ম সওদাগর
এবং তার তলওয়ার"

সত্যি বলতে সেদিন কবিতাটা পড়ার পর আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। রাজীবের কথা ভেবে যে আমাকে আরও অনেক দিন ধরে কাঁদতে হবে তখন সেটা বুঝিনি। আমাদের এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট হয় যথাসময়ে। রাজীব একটা সাবজেক্টে খারাপ করে। রেজাল্টের দিন সন্ধায় ও আমার বাড়িতে এসে ওর সেই ডায়েরিটা আমাকে দিয়ে মন খারাপ করে চলে যায়। যাবার আগে বলে যায় সে দূরে কোথাও চলে যাবে, আর পড়ালেখা করবে না। আমি ভেবেছিলাম, হয়ত কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু রাজীব যে এত দূরে চলে যাবে আমি বুঝিনাই। পরদিন খুব সকালে আমি আরও অনেকের সাথে দৌড়ে গিয়ে রেললাইনের ওপর রাজীবের বিচ্ছিন্ন মস্তক ও ধর আবিস্কার করি।

রাজীব তার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করে যায়নি। শুধু নিজের ব্যর্থতাকে দায়ী করে অভিমানী রাজীব খুব গোপনে হারিয়ে গিয়েছিল। মায়ের গয়না বেচার টাকা যে সে অপচয় করেছিল এটা সে হজম করতে পারেনাই। রেললাইনের ওপর পড়ে থাকা রাজীবের সেই নিথর চোখদুটো আজও আমাকে অনেক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে। যার কোন সদুত্তর আজও আমার কাছে নাই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

রানার ব্লগ বলেছেন: নির্বাক , মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম, তবে আমার এই নিরাবতা কষ্টের নয় ধিক্কারের ।

২১ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

সুমন নিনাদ বলেছেন: আমি শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেই। ধিক্কার আর কাকে দিব বলুন? আমাদের এই সমাজে আরও অনেক রাজীব আছে। রাজীবের বাবাদের সংখ্যাও অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.