নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুমন নিনাদ

বাংলা ও বাংলাদেশ- আমার ভাগফল, আমার ভাগশেষ

সুমন নিনাদ

সুমন নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি বড় হতে চাইনা বাবা, তুমি আমাকে ছেড়ে কোনদিন যেওনা

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:৪০

ভেবেছিলাম, এইসব লোক দেখানো দিবস পালন করে বাবাকে মনে করার কোন মানে হয়না। আমার বাবা অষ্টপ্রহর আমার ইন্দ্রিয়ে আর আত্মায়, আমার শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে আমার বাবার স্পর্শ আমি সারাক্ষণ অনুভব করি। তাই বাবাকে সম্মান জানাতে, বাবাকে মনে করতে আমার জন্য কোন আলাদা দিবসের দরকার নাই। প্রতিটি দিনই আমার কাছে একেকটা বাবা দিবস। কিন্তু অন্যদের লেখা পড়ে, বাবার প্রতি মানুষের আবেগ আপ্লুত ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে গায়ের লোম কাঁটা দিল, বাবাকে নিয়ে দুই কলম লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।

আমার বাবা আজো জীবিত, শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে আমার চেয়ে হাজার গুনে শক্ত। নিয়তি আমার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে ঠেলে দেয়নি, বয়স আমার বাবাকে ন্যুব্জ করে দেয়নি। আমি হয়ত বাবাকে গর্বিত পিতা করতে পারিনি, কিন্তু আমার বাবা আমাকে গর্বিত সন্তান করেছেন। এই পৃথিবীতে এর চেয়ে খুব বেশী কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই আমার।

ছেলেবেলায় বাবা আমাকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন, আবার ফেরত আনতেন। আমার বাবার সাইকেলের পেছনে কোন ক্যারিয়ার থাকতো না, বাবা মেকারের কাছে গিয়ে ক্যারিয়ার খুলে রাখতেন। কেন জানেন? ক্যারিয়ার থাকলে আমি যদি সাইকেলের পেছনে বসতে চাই, পেছনে বসলে আমি যদি ঘুমিয়ে যাই আর ঘুমিয়ে গেলে আমার পা যদি চাকায় আটকে যায়। সবসময় বাবা আমাকে সাইকেলের সামনে রডের ওপর বসাতেন। রডের ওপর আবার একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে দিতেন যাতে আমি ব্যাথা না পাই। যে শক্তি দিয়ে উনি দুই হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরতেন, তার চেয়ে অনেক বেশী শক্তি দিয়ে আমাকে চেপে ধরতেন। আর একটু পরপর জিজ্ঞাসা করতেন, “সুমন ঘুমাস নাই তো?” আমি মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে বলতাম, “বাবা কেন বারবার এক কথা জিজ্ঞেস করো? আমি বড় হইছি না?” টের পেতাম বাবা হাসছেন। সে হাসি আমাকে বুঝতে না দিয়ে বাবা গম্ভীর সাজার ভান করে বলতেন, “ পা সাবধানে রাখিস”

একবার আমার ভীষণ জ্বর এলো। মনে আছে সেবার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল আমার। বাবা আমার বুকের ওপর হাত রেখে গভীর উৎকণ্ঠায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বাবার মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম, আমার ফুসফুস যদি এক মুহূর্তের জন্য অক্সিজেন না নেয় কিংবা কার্বন ডাই অক্সাইড না ছাড়ে, বাবার অক্সিজেন- কার্বন ডাই অক্সাইড চক্রও ঠিক ততক্ষণ বন্ধ থাকবে। বাবার মুখ দেখে আমার শ্বাসকষ্ট ভাল হয়ে যায়। সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম, বাবার ফুসফুস ঠিকঠাক কাজ করতে শুরু করেছে।

আজ বাবার কাছ থেকে দুরে থাকি। আমার ঘরে বউ আছে, অ্যালসেশিয়ান নাই। ঘরে জায়গাও খুব কম নাই। বাবা মাঝে মাঝে আসেন। দুই একদিন থেকেই বলেন, দম আটকে আসছে। আমি বাবার দমকে বড্ড ভয় পাই। বাবাকে খুব বেশী জোর করিনা থাকার জন্য। বাবাও জানেন, উনাকে জোর করবার মত ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা আজো আমার তৈরি হয় নাই।

বাবার খুব একটা অসুখ হয়না। বাবার সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় বাবা একটু কাশি দিলেও যেন আমার অক্সিজেন-কার্বন ডাই অক্সাইড চক্র বন্ধ হয়ে যেতে চায়। আমার ফুসফুস বিকল হয়ে যায় মুহূর্তের জন্য। আমার চুপ করে থাকা দেখে ওপাশ থেকে বাবা বলেন, “হ্যালো! কি হল রে?” আমি তোতলাতে তোতলাতে বলি, “কিছু না বাবা, তুমি ঠিক আছো?”

বাবা গলাটাকে খাদে নামিয়ে প্রচণ্ড গম্ভীর করে বলেন, “তুই এখনো বড় হস নাই সুমন”। আমার চোখ ততক্ষণে স্যাঁতসেঁতে। গলা ভিজে আসে। অনেক কষ্টে আমি বাবাকে বলতে সক্ষম হই, “আমি বড় হতে চাইনা বাবা, তুমি আমাকে ছেড়ে কোন দিন যেওনা”। বাবা সেই ছেলেবেলার গম্ভীর সাইকেল চালকের মত বলতে থাকেন, “পা সাবধানে রাখিস”

বাবার জন্য চারটে লাইন লিখেছিলাম আজ----

“বাবা আমায় ক্ষমা করো, রাখিনা খোঁজ তোমার বছরের ৩৬৪ দিন
একটা দিন লোক দেখিয়ে বাড়াতে চাইনা তোমার আদরের ঋণ
মিস ইউ বাবা, ভীষণ মিস করি তোমার প্রশস্ত বুকের নরম জমিন
এই জনমে শুধু একটাই চাওয়া, যেওনা ছেড়ে আমায় কোনদিন”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.