নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম\nআমি আপনাদের সান ড্যান্স aka স্যাম রহমান :)

সানড্যান্স

এই যে ব্যাস্ততা বাড়ছে, এই যে নিকোটিন!জ্বালিয়ে দেয়া সিগারেটে ধোয়াচ্ছন্ন বেডরুমপ্রতিদিন ভাল্লাগেনার ছাই জমে এস্ট্রেতেব্যাস্ততার কালচে লাইটার, এই যে অলস ঘুম!এক কপি স্বপ্ন আসে সৌজন্য কপি হয়েসারারাত ঘুমিয়ে থাকি প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে।কাশাফাদৌজা নোমান

সানড্যান্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি আর আমার বাবা!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৩

মা বিহীন সংসারে আমি বাবাকে কিভাবে টেক কেয়ার করতে হয় শিখেছিলাম আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু বেবীর কাছ থেকে। বেবীর মা মারা গিয়েছিলেন বেবী যখন মালয়শিয়াতে পড়াশুনা করত, আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন। আমার মা বেচেঁ আছেন এখনো আল্লাহর রহমতে। আমি আর বাবা আরব দেশ ছাড়াও বংগদেশেও একসাথে কিছুদিন থেকেছি। আমার বাবা উগ্রপন্থী মুসলিম একজন মানুষ, আম্মি ঠাট্টা করে বলতেন তালেবান! বাবার দাড়ি বুক পর্যন্ত লম্বা, গায়ের রঙ আমার চাইতে কৃষ্ণ। আমার দাদা ছিলেন নেহায়েত একজন কৃষক। তাই ক্লাস ফোরেই বাবা লজিং থেকে পড়াশুনা করতে ঘর ছাড়া হন।

বাবার সাথে আমি বাসে-প্লেনে-লঞ্চ এ হাজার হাজার মাইল ট্র্যাভেল করেছি, এসময় আমরা বন্ধুর মত হয়ে যাই। আরব দেশে যখন প্লেন মিস করে বাসের টিকেট কেটে বারোশো-ষোলশ মাইল বাসে পাড়ি দিতাম, তখন একঘেয়ে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে হঠাত একজন আরেকজনের পিঠে মাথা দিয়ে ঘুমাতাম। আমি বাবার পিঠে ঘুমাতাম, আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাবা আমার পিঠের উপর মাথা দিয়ে ঘুমুতেন!

বাসের ব্রেক টাইমে নাস্তা করতাম একজনের খাবার দুজনে। আমি বাবাকে ঠেলতাম, বাবা বড় চিকেন ব্রোস্ট টা তুমি নাও, বাবা আমাকে ঠেলতেন, ধুর আমার কি আর এত রুচি আছে?

নাস্তার পরে তো বিড়ি ফুঁকতে হবে, আমি মাথা নীচু করে বলতাম, পপ্স, আমি একটু হেটেঁ আসি, হজম হচ্ছে না, বাবা মুখ চুন করে বলতেন হু, খাওয়ার পর একটু হাঁটা ভাল!

একবার এক রোজার ঈদের দিন সকালে খেয়ে দুজনে ঘুম দিলাম, দুপুরে উঠে দেখি রান্নার কেউ নেই! আব্বা ভাত রাঁধতে জানেন বাট সেই ভাত খেতে তো তরকারী লাগবে? আমি যে কফি ছাড়া কিছুই রাঁধতে জানি নে! আলসেমি করে ঈদের দুপুরে একজন আরেকজন কে বললাম, একেবারে রাতেই খাই, কি বল? বাবাও খুশি মনে রাজি হয়ে গেলেন!

একবার কুরবানীর ঈদে আমি আর বাবা গেলাম ছাগল কিনতে। ৯৫/৯৬ সালের কথা, তখনো আমাদের গরু কুরবানি দেয়ার সামর্থ্য হয়নি। কেনা শেষে বাবা যাবেন হাটের ইজারা দিতে, ছাগলের মালিক বলল, ছোট স্যার রে এখানে রেখে যান, আপনি দিয়ে আসুন। বাবা হেসে বলল, ৪ হাজার টাকার ছাগল হারাইতে আমি পারব, কিন্তু হাজার কোটি টাকা দিলেও তো আমার আব্বা (আমি) রে আমি কি ফেরত পাব?

বাবা সিগারেট তো দূরের কথা, চা-কফি-কোক/পেপসি কিছুই খান না, তো আরব দেশে পেপসির ক্যানের দাম ছিল দেড় রিয়েল। আমার তো প্রতিবেলায় পেপসি লাগবেই! আব্বা মাঝে মাঝে স্প্রাইট/সেভেনাপ দুই এক চুমুক খেতেন, তাই তিন রিয়েল দিয়ে একটা পেপ্সি আরেকটা স্প্রাইট নিতাম! আমার সফট ড্রিনক্স আসক্তি বাবা জানেন। উনি দু' চুমুক খেয়ে বলতেন ধুর-ধুর! এই নে বাকিটা শেষ কর!

বিশ্বাস করবেন, আমার বুড়ো বাবা তার ২৭ বছরের ছেলের আন্ডার ওয়ার-প্যান্ট-শার্ট ধুয়ে দিয়েছেন, ছেলে আলসেমি করে ধোয় না বলে?

আমি-আর বাবা অফিস শেষে গাড়ি দিয়ে টান মেরে একজন আরেকজনের কাছে চলে আসতাম, একশো তিরিশ মেইল যেতে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট ই নাহয় লাগবে! সন্ধ্যাবেলা দুজনে হাঁটতাম আরবের অন্ধকার, বিরল এলাকার রাস্তায়, কত শত গল্প আমাদের! আইসিস থেকে শুরু করে মধ্য যুগে বাংলা মুসলিম সাহিত্য!

একবার এক মামলায় ফেসেঁ গেল দুই পাকিস্তানী আরেক ইন্ডিয়ান ডাক্তার। যতদিন মামলা শেষ না হবে, তারা দেশে যেতে পারবেন না... বলে রাখা ভাল, আরব দের এখনকার সম্প্রদায় একাধিক পিতার পুত্র, এরা নেহায়েত হয়রানি করতে কিংবা উদ্দেশ্যমূলক ক্ষতিপূরণ করতে হামেশা এশিয়ান ডাক্তারদের মামলায় ফাসাঁয়। বাবা মাসুল হলেন ইন্ডিয়ান ডা. নিতাই চন্দ্রের, আর পাকিস্তানী ডাক্তার ইরফানের, আর আমি মাসুল হলাম আরেক পাকিস্তানী ডাক্তার আমজাদের। এরা কেউই দুই বছরের অধিক কাল দেশে যেতে পারছিল না, হারামী সৌদীর মামলার কারণে। মাসুল হওয়া বলতে বোঝায় রেস্পন্সিবিলিটি নেয়া, তার মানে তারা মামলা চলাকালীন সময়ে দেশে যেয়ে ফেরত না আসলে সেই মামলায় যদি আরব জিতে তাহলে ঐ ডাক্তারদের প্রাপ্য শাস্তি (মিনিমাম এক বছরের জেল) আমরা খাটব। আব্বাকে বললাম, আব্বা জেলের ভাত খাওয়াবা নাকি? আব্বা বললেন, আমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে মাসুল হয়েছি, আর জেল খাটলে বাপ-বেটা এক সাথে খাটব, ভয় কিসের? মজা হবে তো! আমার তো এদিকে এক মাস রাতে ঘুম হয় না!!! শালারা কবে আসবে!! ঘটনার সমাপ্তি টা বলি, আমি যখন দেশে আসি তখন ঐ তিন ডাক্তারের গিফটের জন্য নিজের একটা লাগেজ আব্বার কাছে রেখে আসতে হয়েছে!

রাতের বেলা ভাত খাওয়ার পর আমি নিজেই বাপ-বেটার প্লেট ধুয়ে নিতাম। অনভ্যাসে দেখা যেত পরেরবার খাওয়ার সময় প্লেটে আগের খাবারের তেল লেগে আছে... আব্বা চোখ গোল করে আমার দিকে তাকালে আমি বলতাম-আব্বা, তেল তো খাবার ই! আমরাই তো খাইছি, নাকি?

ছয় অঙ্কের স্যালারী পাওয়া আব্বার সম্বল ছিল একটা তোশক, দুটো বালিশ, একটা কম্বল, একটা প্লেট, একটা মগ, দুটো লুঙ্গি। শার্ট কখনওই একবারে দুটোর বেশী তার গায়ে এক মাসের মাঝে চেঞ্জ হতে দেখিনি!

নামায যে কত রকম আছে, আব্বার কাছ থেকে দেখেছি। সারারাত নামাজ পড়তেন আব্বা, আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম! আমি আর আব্বা যেদিন ঢাকা থেকে ফ্লাই করি, সেদিন রোজা ছিল, তিনি সেহেরী করেছিলেন বাংলাদেশ থেকে, প্লেনে সবাই ইফতারী ভাঙ্গলেও, তিনি করেন নি, প্রায় সাড়ে উনিশ ঘন্টা রোজা রেখে আরব দেশের মাগরিবের আজানে তিনি ইফতারী করেন!

নিজে প্রচন্ড উগ্রপন্থী মুসলিম হয়েও তিনি তার বড় মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছেন, যে কিনা বাংলাদেশ আর্মির মেজর এখন। ছোট মেয়েকে ডাক্তারী পড়াচ্ছেন। আমার মত মানুষ কে উনি সাত অঙ্কের লিমিটের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বলেছিলেন, যা শপিং করে আয়! আমার জন্য ওঁনার কেনা প্রথম ল্যাপটপ ছিল সনি ভায়ো। যখন বংগদেশে কালার ফোন আসেনি, তখন আমার মোবাইলের ক্যামেরা ২ মেগা পিক্সেল! আর লিখতে ইচ্ছা করতেছে না, এত টাইপে আঙ্গুল ব্যথা হয়ে যায়। আব্বার একটা কথা দিয়ে শেষ করি, আমাকে উদ্দেশ্য করে উনি বলেছিলেন- দেখ তোর কোন চাওয়া আমি অপূর্ণ রেখেছি? কিন্তু তুই কি আমার জন্য কিছু করেছিস? আমি বলেছিলাম, ক্যান আব্বা, আপনার কথায় ই তো জিডি পাইলট না হয়ে ডাক্তার হইলাম, আব্বা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু তুই নামায পড়িস না ক্যান? আজ বাদে কাল আমি মরে গেলে আমার জন্য কে দোয়া করবে? আমি কবরে গেলে তোর ঐ নামায-রোজা থেকে আমি ভাগ পাব, তোর দোয়াতে আমি কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাব! নামায পড়, নামায পড়!

আব্বা, আমি তোমার সাথে আবার ঘুরতে চাই অনিশ্চিত হাজারো মাইল, বন্ধুর মত শীতের রাতে ক্যাম্প ফায়ার করতে চাই মরুতে, রুটির বদলে ভাতের হোটেল খুজঁতে চাই ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে, পলিথিনে আনা খাবার উষ্ণ মরুর বুকে পলিথিন বিছিয়ে ভাগাভাগি করে খেতে চাই! মাঝ রাতে আপনার হাপাণীর শব্দে নিজের অক্ষমতায় ভেজাতে চাই এই দু চোখ! ইয়া আল্লাহ, আমার বাবা কে তুমি হায়াত ই তাইয়্যেবা দান কর। জিকো ভাই এর আব্বাকে জান্নাত দান কর, তাকে তুমি কবরের আজাব থেকে মুক্ত রাখ! রাব্বীর হাম হুমা কা'মা রাব্বা ইয়ানী'স সগীরা

উতসর্গ : জিকো ভাই, যার বাবা সদ্য প্রয়াত।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫১

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: অনেক ভাল লেগেছে আপনার আব্বা আর আপনার কথা জেনে।

বাবা ছেলের সম্পর্ক এমনি হওয়া উচিত।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০০

পাজল্‌ড ডক বলেছেন: বাবার প্রতি আপনার ভালবাসাা গভীরতা অনুভব করতে পারলাম। আপনাদের জন্য শুভকামনা!

৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

ধমনী বলেছেন: লাইক বাটন কয়েকবার চেপেছি। কিন্তু একবারই লাইক নিল।
বাবা-ছেলের এ ধরণের সম্পর্ক সন্তানকে ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ বানাতে সাহায্য করে। আপনার বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রইলো। আপনার বাবাও কি ডাক্তার?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১১

সানড্যান্স বলেছেন: আমাদের ফ্যামিলিতে আমার মা ছাড়া আমরা তিন ভাই বোন-বাবা সবাই ডাক্তার। আম্মা এসিস্টেন্ট হেড মিস্ট্রেস

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

সোহানী বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগলো সানড্যান্স, বাবাকে নিয়ে লিখাটা। আপনার মজার মজার লিখার মাঝে এ ধরনের লিখা ভালো লাগলো। আপনার অনুকরনে অবশ্যই আমার জমানো কথাগুলো লিখবো.... দেশে থাকতে অতটা মিস করিনি কিন্তু বিদেশের মাটিতে প্রতিটা মুহূর্ত মিস করছি তাদের....... সব বাবাই যে একই রকম।+++++++++

৫| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১১

সৈয়দ সাইকোপ্যাথ তাহসিন বলেছেন: আঙ্কেল কি পাওনা টাকা দিয়ে দিছেন ???

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫৬

সানড্যান্স বলেছেন: পোল্টি দিছে

৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অনেক ভাল লাগা রইল ।

৭| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আব্বার একটা কথা দিয়ে শেষ করি, আমাকে উদ্দেশ্য করে উনি বলেছিলেন- দেখ তোর কোন চাওয়া আমি অপূর্ণ রেখেছি? কিন্তু তুই কি আমার জন্য কিছু করেছিস? আমি বলেছিলাম, ক্যান আব্বা, আপনার কথায় ই তো জিডি পাইলট না হয়ে ডাক্তার হইলাম, আব্বা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু তুই নামায পড়িস না ক্যান? আজ বাদে কাল আমি মরে গেলে আমার জন্য কে দোয়া করবে? আমি কবরে গেলে তোর ঐ নামায-রোজা থেকে আমি ভাগ পাব, তোর দোয়াতে আমি কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাব! নামায পড়, নামায পড়!

আল্লাহ আপনাকে আপনার বাবার উপদেশ মত চলার তৌফিক দান করুন। উগ্রবাদী বাবার যোগ্য সন্তাত হওয়ার যোগ্যতা দিন, আমিন।

৮| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

জহুরুল অপূর্ব বলেছেন: মনমুগ্‌ধকর। দোয়া থাকলো। দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.