নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম\nআমি আপনাদের সান ড্যান্স aka স্যাম রহমান :)

সানড্যান্স

এই যে ব্যাস্ততা বাড়ছে, এই যে নিকোটিন!জ্বালিয়ে দেয়া সিগারেটে ধোয়াচ্ছন্ন বেডরুমপ্রতিদিন ভাল্লাগেনার ছাই জমে এস্ট্রেতেব্যাস্ততার কালচে লাইটার, এই যে অলস ঘুম!এক কপি স্বপ্ন আসে সৌজন্য কপি হয়েসারারাত ঘুমিয়ে থাকি প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে।কাশাফাদৌজা নোমান

সানড্যান্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

নানা রঙের স্মৃতির পালক, যখন আমি ছোট্ট বালক-০৬

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৮

ফ্রেন্ড লিস্টের সবাই কম বেশী বাবার পকেট মেরেছেন। এদিক দিয়ে আমি টোটালি ব্যতিক্রম, এই মাঝ বয়সে আমার এখনো দৃষ্টি যায় আমার মা-বোনের ব্যাগের/পার্সের দিকে। পাইলেই ফকফকা করে দিই। আমার বাবা বরাবর আমাদের থেকে দূরে থাকায় তেমন বাবার কাছে সুবিধা করতে পারিনি। অভ্যাস গড়ে ওঠার সময় ছিল যখন আমরা আজিজ মহল্লায় থাকতাম। মৌমাছি সুজের পাশের বিল্ডিং এ চারতলায় থাকতাম, বাসা থেকে নামলেই ভিডিও গেমসের দোকান। আমাদের সময় মোস্তফা/কফ এগুলো ছিল এক টাকা কয়েন। পাচঁ টাকায় গেম ওভার, আর কারেন্ট গেলে আপনার লস! জীবনের প্রথম বদভ্যাস শুরু হল আমার। ক্লাসের আগে ও পরে, সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাসি পেটে, মাগরিবের আজানের আগ পর্যন্ত সারাদিনমান, এমনকি রাতে ঘুমের মাঝে রবার্টের কিক দিই, এ খ্যাক খ্যাক ক্লু জ্যাক! পকেটে পাচঁ-দশ টাকা যা থাকে তাই দিয়ে খেলতাম, টাকা শেষ হয়ে গেলে দাঁড়ায় থাকতাম, অন্যদের সুপারভাইয করতাম, যেমন ধরেন মোস্তফাকে ডাইনোসর পার করে দিয়েছি, হোন্ডা বস পার করে দিয়েছি, কত হাজারো পোলাপান কে!


নেশা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। জীবনের একমাত্র লক্ষ হয়ে দাড়াল যেভাবেই হোক মোস্তফা কে টেনে নিয়ে দাড়াতে হবে, সবাই যেন আমার খেলা দেখে বাহবা দেয়। আর যারা চিট কোড দিয়ে টমি গান দেয়া মোস্তফা খেলত, তাদের কে করুণার চোখে দেখতাম! চুলোয় যাক পড়াশুনা, হান্নার উত্তল যৌবন, আইওরির চিতকার আমার কানের মাঝে ঘুরে সারাদিন, মাথায় পোকা হয়ে উঠল। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাড়াল বাসা থেকে চানাচুর কিনতে পাঠালে আমি এক কয়েন খেলে চানাচুর নিয়ে ফিরি। কি আছে জীবনে? আম্মি শুরুতে গুরুত্ব দিলেন না, তার বেক্কল ছেলে এরকম গেমসে ডুবে যাবেন তার মাথায় আসে নাই! অচীরেই নিজেকে একজন সিনিয়র প্লেয়ারের মত সম্মান আদায় করে ফেললাম, সুপার না মেরেও যে আউনফ কে রাউন্ড পার করা যায় সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়ে দিলাম। বলতে দ্বিধা নেই, আমি এখনো কফ এর মাস্টার!


বাসা পাল্টালাম, গেলাম আজিজ মহল্লায়, এবার যেন স্বয়ং ঈশ্বর আমাকে স্বররগে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। রাস্তার দুই পাশে দুটো দোকানে কমসে কম ৩০ টি স্টেশন। আমার সব কিছু মাথায় উঠল। মেটাল স্লাগে কোন চিপায় লাইফ আছে, কোন চিপায় ‘’ম্যাশিন গান’’ আছে, এটা নিজে আবিষ্কার করে অন্যকে বলার সৌভাগ্য অর্জন করতে টাকা শেষ হয়ে গেলে দাড়ায়ে থাকতাম! নতুন প্লেয়ারদের শিখাতাম কিভাবে একের পর এক মিশন শেষ করা যায়। জহুরী মহল্লায় গেমসের দোকানের পাশে ছিল মসলা ভাঙ্গানোর দোকান, আমি এখনো কোথাও মসলার গন্ধ পেলে আমার চোখে মোস্তফার ছবি ভাসে গরুর মাংসের বদলে!


অবস্থা এত তুঙ্গে উঠলে বাসায় একটু আধটু খোজ শুরু হল! ঝামেলা আরো বাড়ল, যখন প্রায়ি বাজার শেষে পাচঁ দশ টাকার হিসেব মিলত না! আম্মা গুরুত্ব দিতেন না, আমিও তো ছোট মানুষ নাকি? দিন যায়, টাকার পরিমান দশ থেকে বিশে উঠতে থাকে। কিছু গেমসে আবার কয়েন ফেললে খেলা শুরু হত, তো ছোটবোন মাটির ব্যাঙ্কের আদলে প্লাস্টিকের একটা ব্যাঙ্ক কিনেছিল। আমি তেমন কিছুই করলাম না, খালি স্টীলের চামচ গলিয়ে, ব্যাঙ্কের ফুটো টা একটু বড় করে নিলাম! আম্মা হঠাত টের পেলেন, তার বাবু ঘুমের মাঝে চিৎকার দেয়-ওই, ওমনে মারিস না, এমনে মার! আম্মির চোখ বড় হয়, আব্বার ভ্রু কুচকায়। আমি মাথা নীচু করে থাকি, কোন জবাব দিই না


ভয়াবহতম ব্যাপার ঘটল একদিন, বাসায় মেঝো মামা এসেছেন, বাসায় বিরিয়ানী রান্না হয়েছে, আমাকে কোক আনতে পাঠানো হয়েছে। আমি সেদিন নতুন আসা ‘’পেলেন গেম’’ খেলতেসি, বি ৫২ বোমারু বিমান নিয়ে জার্মানীর বিমান ধংস করে চলেছি একের পর এক। বের হয়েছিলাম ১২টার সময় কোক আনতে, কানে টান পড়ায় দুইবার হাত সরায়ে দিলাম, বেশিক্ষণ তো হয়নি এসছি, একটু আগেই তো আসলাম! আবার দেখি কান ধরে টান দিচ্ছে কে জানি, কিন্তু স্ক্রীন থেকে কি চোখ উঠে? আমার ‘’পেলেন’’’ যে বোম খাবে! টের পেলাম কানের নিচে চরাত করে চড় পড়াতে, তাকায়ে দেখি আম্মি! আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু দিলাম ভয়ে...একের পর এক চড় খাচ্ছি, এদিকে আবার কান ধরা, ছুটে পালাব সেই চান্স ও নাই!


লাল হাফ প্যান্ট পরা, বি ওয়াইল্ড লেখা গেঞ্জি পড়া, টেরি ছাটের হাস মার্কা তেল দিয়ে চুল আচড়ানো ভদ্র ছেলেটাকে আম্মি কান ধরে সোজা টেনে হিচরে বাসায় নিয়ে ফুল ঝাড়ু দিয়ে আরো কয়েকদফা দিলেন! আচ্ছা, মায়েরা একটা বয়সের পর বাউন্ডুলে ছেলে গুলোকে আর মারে না, কেন?


নানা রঙের স্মৃতির পালক, যখন আমি ছোট্ট বালক-০৫

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৮

কলাবাগান১ বলেছেন: "আমি এখনো কোথাও মসলার গন্ধ পেলে আমার চোখে মোস্তফার ছবি ভাসে গরুর মাংসের বদলে!"

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৩

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ। ধন্যবাদ

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫২

দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স বলেছেন: ১ কয়েনে ব্লেড বসকে শুইয়ে দিতাম, ইতিহাস!



কেবলই ইতিহাস!

৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২১

সুমন কর বলেছেন: আচ্ছা, মায়েরা একটা বয়সের পর বাউন্ডুলে ছেলে গুলোকে আর মারে না, কেন? --- দিলেন তো, সব মনে করে !!

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৪

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: অসাধারণ আপনার স্মৃতিচারণ। শেষ বাক্যে চোখ ভিজে গেল।

৬| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০০

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভাল লেগেছে আপনার স্মৃতির পালক।

বড় হয়ে গেলে হয়ত আর মারার দরকার হয়না।

৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬

চাষাভুষার কাব্য বলেছেন: পিঠটা চুল্কাচ্ছে!! সাথে কানটাও!!!

৮| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: স্মৃতিচারনে ভাললাগা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.