নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডাঃ সিরাজুল কবির

ডাঃ সিরাজুল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

Asthma বা হাঁপানি রোগ ও এর কারণ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

Definition
যাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাদের বলা হয় এজমার রোগী। বাংলায় বলে হাঁপানি। এজমা হলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় নিঃশ্বাস নিতে ও ফেলতে অনেকের কষ্ট হয়, শ্বাসের সঙ্গে একটা টান ও চলে আসে। এ টান্কেই বলা হয় হাঁপানি।-- এম, এ কাশেম ॥
যখন কোন কারনে বায়ুপথগুলো রুদ্ধ হয়ে ওঠে, তখন বায়ু চলাচল হয় খুবই কম। বায়ুপথ হয় সংকুচিত, শ্লেষ্মা জমে পথ হয় রুদ্ধ, প্রদাহ তখন একে আরও জটিল করে তোলে। বিভিন্ন ঝুঁকি-উপাদানের মুখোমুখি রোগ হয়ে ওঠে প্রবল।
অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট এমন একটা রোগ যার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই- এজমা বা হাঁপানি আসলে শ্বাসনালির অসুখ।
দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ এবং তার প্রতি সংবেদনশীলতাই এজমা বা হাঁপানি। এর উপসর্গ হিসাবে দেখা দেয় হাঁচি, কাশি, বুকে চাপা ভাব, শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণে বাধা।
বায়ুবাহী শ্বাসনালীর bronchi ও bronchioles এর বৈশিষ্টপূর্ণ সংকোচন জনিত - বিভিন্ন সময়ের বিরতিতে বা অনবরত বায়ুপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতায় সৃষ্ট লক্ষণসমুহ- শ্বাসকষ্ট, শ্বাস টান, হাঁপানি, wheeze, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি (কফ ও কফহীন) প্রকাশ পায়।
গ্রীক ভাষায় অ্যাজমা শব্দের অর্থ হল হাঁপ ধরা ( হা করে শ্বাস টানা ) । গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যে কোন ধরনের শ্বাসকষ্টকে হাঁপানি নাম দিয়েছিলেন।
এজমার সর্বসম্মত স্বীকৃত কোন সংজ্ঞা নাই। এজমা শ্বাসতন্ত্রের শ্বাসনালীর দীর্ঘকালীন প্রদাহজনিত একটি রোগ। Clinico-pathological মূলীয় মৌলিক বিশেষত্ব · শ্বাসনালীর দীর্ঘকালীন প্রদাহ ও · শ্বাসনালীর অতিসক্রিয়তা/ সংবেদনশীলতা।- Davidson

ভুমিকা
এজমা রোগীদের ১-৩% চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের শরনাপন্ন হন। অন্য যে কোন রোগের তুলনায় হাসপাতালে শিশুরোগীদের ভর্তির প্রধান কারণ ‘এজমা’। আমেরিকায় ২১/২ কোটি লোক এজমায় আক্রান্ত, এর মধ্যে ৭০ লক্ষ ছেলে বয়সের।
বাংলাদেশ
দেশের এক তৃতীয়াংশ রোগী ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত- বিশ্ব এজমা দিবস উপলে এজমা এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত দিয়েছেন।
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে- সম্মেলনে এডুকেশন ফর হেলথ সংস্থার প্রধান নির্বাহী মনিকা ফ্লেচার বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ এজমায় আক্রান্ত রয়েছেন। যার মধ্যে ৪০লাখ শিশু।
এজমা রোগের আর্থ-সামাজিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী ও বহুমাত্রিক। · ব্যক্তিগত ভোগান্তি · স্কুল ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, শ্রমঘন্টার অপচয় · সময়-অসময় চিকিৎসকের সাক্ষাত, জরুরী বিভাগ ও হাসপাতালে ভর্তি · চিকিৎসা ব্যয় · জাতিয় স্বাস্থ্য বাজেটে চাপ। -Davidson
Prevalence
কিন্তু ৬৫% মানুষের এলারজি জনিত কারনেই এজমা/হাঁপানি হয়ে থাকে —- এদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছোট বাচ্চাদের বেশী হয় – এ ছাড়া বয়স্কদের বেলায় ও দেখা যায়-
ছেলেবেলা ও যুবক বয়সে এজমা আক্রান্তের হার ১৫%।
পেশাগত ভাবে ‘potent sensitizer’ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ১৫-২০% এজমায় আক্রান্ত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থানভেদে তারতম্য হয়। দূরপ্রাচ্যে আক্রান্তের হার কম; কিন্তু অস্ত্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে এই হার বেশী।
পাশ্চাত্য জীবনধারা গ্রহণ, নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশে এই হার ক্রমশ বেড়ে চলছে।
বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে ৩০ কোটি লোক এজমায় আক্রান্ত, যা ২০২৫ সাল নাগাদ ৪০ কোটিতে পৌছবে।
Epidemiology
এজমার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও এজমা রোগের উৎপত্তি ও গতি-প্রকৃতি ‘জেনেটিক’, তবুও সাম্প্রতিক এজমা বৃদ্ধি অনেকাংশে পরিবেশগত উপাদানের প্রভাবে হয়।
গত শতাব্দির শেষ দিক থেকে এজমা রোগের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটেছে, প্রথমে উন্নত ও পরে উন্নয়নশীল দেশে। গবেষনায দেখা গেছে, সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
হাঁপানির কারণ 2
কি কি কারণে এজমা হয় ?
এজমার কারণ সঠিক বা যথার্থভাবে জানা নাই। প্রায়শ এজমা চেলেবেলায় ৩-৫ বৎসরে শুরু হয়, যুবক বয়সে ভালো হতে পারে, অথবা ক্রমশ স্থায়ী এজমাতে রুপ নিতে পারে।
এজমার কারণ প্রধানত ২ টি ঃ
১) ‘এটোপি’ ও ‘এলার্জি’ঃ ক) বংশগত (Genetic) ও খ) পরিবেশগত উপাদান।
২) শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা (Bronchial hyper-responsiveness)
গবেষকরা ধারণা করেন বংশগত ও পরিবেশগত উপাদানের আন্তক্রিয়ায় প্রধানত এজমা হয়, অনেক ক্ষেত্রে ছেলেবেলাতেই।
বংশগত (Genetic) Gene এর উপস্থিতি ও প্রভাবে এজমা হয়।
ক) IL-4 gene cluster on chromosome 5q31-33: প্রভাবে IL-3, IL-4, IL-5 IL-9 IL-13, GM-CSF উৎপাদন, যা-
mast ও eosinophil cell এর সংখ্যাবৃদ্ধি ও স্থায়িত্বকাল বাড়ায়।
অধিক পরিমানে IgE তৈরি করে।
IL-4/-13 পথে সঙ্কেতপ্রদান কারী প্রোটিনের আকৃতিগত ভিন্নতা (polymorphic variation) এলারজি ও এজমা সৃষ্টির শক্তিশালী নিয়ামক।
খ) Novel asthma gene at PHF11 locus on chromosome 2 and transcription factors- যা ‘এটোপি’ সংশ্লিষ্ট IgE সংশ্লেষণ করে (এজমা থেকেও বেশী)।
গ) ADAM 33 (a disintegrin & metalloproteinase) on chromosome 20p13 – সম্পৃক্ততায় শ্বাসনালীর অতিসক্রিয়তা ও কোষকলায় পুনর্গঠন (remodelling) ঘটে।
ঘ) সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত এজমা gene
encode neuropeptide S receptor on chromosome 7p15.
encode transmembrane proteins anchored in ER on chromosome 17q21.
‘এটোপি’ ও এলার্জি
বংশগত (Genetic) Gene এর উপস্থিতি ও প্রভাবে এবং পরিবেশগত এলার্জেন উপাদান সম্পৃক্ততায় কিছু রোগের (এজমা, রাইনাইটিস) উৎপত্তিকে atopic disease, এবং এই অবস্থাকে ‘এটোপি’ বলে। যা-
পারিবারিক/বংশগত চলে
পরিবেশগত এলার্জেন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ত্বকীয়-প্রতিক্রিয়া দেখায়
রক্তে এলার্জেন-নির্দিষ্ট sIgE পাওয়া যায়
এলার্জেন সংস্পর্শে atopic রোগীর প্রতিক্রিয়া-
তাৎক্ষনিক এজমা (immediate early reaction): শ্বাসনালী সংকোচন জনিত সীমিত বায়ুপ্রবাহে, এজমা লক্ষণ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়, ১৫-২০ মিনিটে সরবচ্চ মাত্রায় এবং ১ ঘন্টায় স্বাভাবিক হয়ে আসে।
দ্বৈত এবং বিলম্বিত এজমা (dual and late reaction): প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দীর্ঘকালীন রুপ নিতে পারে, অথবা প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া না হয়ে দেরীতে দীর্ঘকালীন স্থায়ী রুপ নিতে পারে। Exposure কালীন ও পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ মধ্যে এজমা দেখা দিতে পারে, বিশেষত পেশাভিত্তিক sensitizer সংস্পর্শে।
পরিবেশীয় উপাদান (environmental factors) Kumar Clarke
ক) নির্দিষ্ট (specific) এজমা উৎপাদক
বায়ুবাহিত এলার্জেন সংস্পর্শ।
মাইট (Dermatophagoide pteronyssinus) , বিশেষত ঘরের ধুলিয় উপাদানে থাকা মাইট নামের ক্ষুদ্র কীট; ধূলাবালি; গাছ, আগাছা ও ফুলের পরাগরেণু; পশুপাখির লোম, পালক, ত্বকীয় তৈলাক্ত পদার্থ; প্রাণীজ পশম ও ত্বক-নিঃসৃত উপাদান (animal dander); ছত্রাক, মল্ট, ইস্ট, তেলাপোকা, ও কীটপতঙ্গ এবং পশুপাখির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ ইত্যাদি।
Common এলার্জেন
ঘরের ধূলীয় উপাদান (house dust), মাইট, তেলাপোকা।
প্রানীজ পশম ও ত্বক-নিঃসৃত উপাদান (animal dander)।
ঋতুভিত্তিক গাছ, আগাছা, ঘাস, ও ফুলের পরাগরেণু।
সাংবাৎসরিক mold spore, ছত্রাক।
কম সংস্পর্শে (exposure) কম উপসর্গ ও লক্ষণ।
পৃথিবীজুড়ে অধিকাংশ এজমার কারণ ‘মাইটে’র মলকণার এলার্জেন।
আমেরিকায় শহরের কেন্দ্রস্থলে তেলাপোকার এলার্জেন ছেলেবেলার এজমার কারণ।
লোমশ পোষা প্রাণী (বিড়াল, কুকুর, ঘোড়া) এবং ইঁদুর, rabbit, guinepig এজমার সাধারন কারণ।
ছত্রাক spore (aspergilous fumagatus) এজমা সহ অনেক শ্বাস তন্ত্রীয় রোগ সৃষ্টি করে।
কীটপতঙ্গ ও তেলাপোকার বহিরাঙ্গে, ফাঙ্গাস ও কৃমির ডিমে chitin থাকে। বায়ুপথে প্রবেশিত হয়ে এজমা করে। এজমায় chitinase-family protein রক্তে বেশী মাত্রায় পাওয়া যায়- রোগের সক্রিয়তা নিরধারন করে।
পরিবেশগত উপাদানে immunological reaction (ইম্মিউন প্রতিক্রিয়া)
পরিবেশগত উপাদানে IgE তৈরি, শিশুকালে এলার্জেন সম্পৃক্ততা ও মাতার ধূমপানের উপর কমবেশি নির্ভর করে। প্রতিরোধ শক্তি গঠনের সময় ছেলেবেলায় ব্যাকটেরিয়া, কৃমি, প্যারাসাইট সংক্রমণ Immune system কে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত ও চালনা করে। অন্যথায় অনিয়ন্ত্রিত TH2 response হতে পারে। - Hygiene hypothesis.
ব্যাকটেরিয়ার LPS endotoxin, CpG, flagella; ভাইরাসের SS-, DS-RNA; এবং ফাঙ্গাসের Chitin প্রভৃতি epithelial ও immune cell এ ১০ এর অধিক TLR (toll-like receptor) প্রকাশ (express) পায়। ফলে immune system স্বাভাবিক TH1 response করে। এলার্জি-প্রবণ ব্যক্তি পরিবেশীয় উপাদানে TH2 response দেখায়। (TH1 response ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এবং regulatory Tcell এলার্জেন সহনীয়)।
আবহাওয়ার পরিবর্তনঃ ঋতু পরিবর্তনে ফুলের পরাগ রেনু, ছত্রাক, mold, বাতাসে আদ্রতা, শুষ্কতা, ঝড়, ধুলাবালি, প্রভৃতির পরিবর্তনে এজমা ও এজমা- প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
এলার্জেন জনিত এজমা (allergen induced asthma)
সুতরাং ছেলেবালায় ব্যাকটেরিয়া, কৃমি, প্যারাসাইট সংক্রমণ এবং কৃষি, মুরগি, গবাদিপশু খামারে নিয়োজিত ব্যক্তির এলার্জি ও এজমা রোগের সম্ভাবনা কম থাকে।
এজমা ও এলার্জিক রাইনাইটিসের এলার্জেন একই রকম হলেও ফুলের রেনু এলার্জিক রাইনাইটিস বেশী করে, এবং এজমা মাইটের কারণে হয়।
এলার্জি উৎপাদক (Factors) গুলো নিম্নরূপ-
Atopy বংশগত এলার্জি প্রবণতা।
মাতাপিতার এজমা।
বায়ুবাহিত এলার্জেন সংস্পর্শ।
বংশগত এজমা ও ‘এটোপি’ থাকলে বেশ কিছু পরিবেশগত উপাদানে এজমা ও এলার্জি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
অন্যান্য কিছু ব্যক্তি নির্দিষ্ট কিছু উপাদানে এজমায় আক্রান্ত হতে পারে।
শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণ অথবা ছেলেবেলায় কতিপয় ভাইরাস আক্রমণ, যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে।
প্রচলিত তত্ত্ব Hygiene hypothesis
সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি পালনে অতি-মনোযোগীতা - পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বাসস্থান, বসবাসের পরিবেশ বদলে যাওয়ায় শিশুকালে জীবাণু সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার ফলে ‘রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা’ যথাযথ ভাবে গড়ে উঠতে পারে না। কার্যত এদের এজমা ও ‘এটোপি’ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হয়।
খ) অনির্দিষ্ট (non-specific) এজমা উত্তেজক/উদ্দিপক NIH. Non-specific precipitating factor
ক) পেশাগত উপাদানে সংবেদনশীলতা (chemical sensitizers)
কর্মস্থলের ২৫০ উপাদান ১৫% এজমার কারণ, যাকে occupational asthma নামে পরিচিত। এটোপিক নয় এমন ব্যক্তিরাও এজমায় আক্রান্ত হয়। পেশা অনুযায়ী এদের সনাক্ত করা হয়। সাধারন উপাদান সমূহ-
High molecule- Flour, বড় প্রোটিন ও জৈব বস্তুকণাঃ IgE mediated asthma.
এলার্জেন- পশু-প্রাণী, কীট-পতঙ্গ- কৃষিকাজ, খামারি, পশু পালন কাজে নয়জিত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়।
রাবার (latex)- রাবার, প্লাস্টিক প্রস্তুতে নিয়োজিত ব্যক্তি।
Acid anhydrous, Polyamine hardening agents- শিল্পে ব্যবহৃত শক্ত-আবরণীর কাজ।
Low molecule প্রোটিন (non-IgE mediated asthma)ঃ ক্রিয়াশীল রাসায়নিক উপাদান chemical bond এর মাধ্যমে epithelial cell এর সাথে যুক্ত হয়ে hapten হিসাবে কাজ করে এবং T cell দ্বারা সনাক্ত হয়ে non-IgE mediated asthma করে।
Isocyanates- পালিশ, রং, স্প্রে পেইন্ট।
Colophony fumes- ওয়েল্ডিং, সোল্ডারিং। রং ও ব্লিচিং।
নিকেল, প্লাটিনাম, ক্রোমিয়াম- পরিশোধন প্রক্রিয়ায় নয়জিত ব্যক্তি।
কাঠ-কণা ও কাঠের কাজে কর্মরত ব্যক্তি।
খ) ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম, বিশেষত শীতকালে ঠাণ্ডা বাতাস। এজমা রোগীর wheeze শুরু হয় ব্যায়াম শেষ হওয়ার পর, ব্যায়ামকালিন নয়। ঠাণ্ডা শুষ্ক বাতাস গ্রহনে শ্বাসনালীর ঝিল্লী ও মিউকাস ঠাণ্ডা ও শুকনো হওয়ায় স্নায়ুবিক (neural) উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং মাস্ট সেল থেকে histamine, protagladin, leukotriene জনিত শ্বাসনালীর সংকোচন ঘটে। provocative test করা যায়।
গ) উত্তেজক (irritant-dust, vapour, fumes): প্রধানত রাস্তার ধূলা, উচ্চমাত্রায় বায়ুবাহিত বস্তুকণা, সিগারেট ধুঁয়া, বায়ু দূষণ- যানবাহন ও কলকারখানার নির্গত ধুঁয়া, শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য ও এর বর্জ্য, বিভিন্ন দ্রাবক, গৃহস্থালি সামগ্রী, প্রসাধনী ও বিভিন্ন স্প্রে।
ঘ) খাবার (diet) ও পানিয়ঃ টাটকা ফলমূল, শাক-সব্জিতে antioxidant, flavanoids বিদ্যমান থাকায়- এজমা প্রতিরোধী।
খাদ্যে antioxidant genetic variation কারণে কারো কারো এজমা বৃদ্ধি পায়।
এস্পিরিন ও হিস্টামিন সম্পৃক্ত খাবার, এজমা প্রকট আকার ধারন করে।
খাবার প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত আকর্ষণীয়, স্বাদবর্ধক, সংরক্ষন,ও জীবাণুরোধী উপাদান (সালফাইট, মেটাসালফাইট, বাইসালফাইট, MSG) এজমা উৎপাদক ও উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে।
কৃত্রিম রং ও সুপারী।
উ) আবেগ (emotion): মানসিক চাপে আবেগ-যেমন: উত্তেজনা, ভয়, রাগ থাকলে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।
আবেগ স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী এজমা প্রভাবিত করে। অপ্রত্যাশিত এজমা রোগীর জন্য আতঙ্কজনক। মাঝে মাঝে মৃত্যু-ঝুঁকি সম্পন্ন আকস্মিক প্রকটিত এজমা -সব সময় রোগীকে অজানা ভীতিতে রাখে। তবে এদের কোন psychological disturbance থাকে না।
চ) ইনফেকশন, সাধারণত ভাইরাস জনিত উপসর্গ-যেমন: RSV, rhinovirus, parainfueza virus, কোল্ড, ফ্লু ইত্যাদি। আনুসাঙ্গিক রোগঃ ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীর প্রদাহ জনিত rhinitis, sinusitis, tonsilitis, laryngitis এজমা বেশী হয়।
ছ) ঔষধ (drugs): এজমা রোগীদের > ৫% ক্ষেত্রে aspirin & NSAID’s এজমা উৎপাদক ও উদ্দীপক। কোনো কোনো ওষুধ, যেমন b-blocker, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
Aspirin, NSAID’s (ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ)। এসপিরিন কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাঁপানির কারণ হতে পারে। এই ঔষধ সেবনে এজমা রোগী PG-E2 হ্রাস পায় এবং বিকল্প পথে Mast, eosinophil, macrophage থেকে অধিক পরিমাণে Leukotriene (LT’s) নিসরনে এজমা লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। একই কারণে অনেকে এই ঔষধ সহ্য করতে পারে না, যাকে intolerance বলে। এজমার সাথে নাকে ‘পলিপ’ ও ‘একজিমা’ থাকে।
b-blocker- শ্বাসনালীর tone নিয়ন্ত্রিত হয় প্রতিদ্বন্দ্বী cholinergic nerve (সংকোচন করে) এবং circulating adrenaline (প্রসারণ করে) দ্বারা। b-blocker, শ্বাসনালীর b-receptor কে block করায় প্রসারনের স্থলে সংকোচন ঘটায়। এজমা রোগীর সংকোচিত শ্বাসনালী আরো সংকোচিত হয়ে এজমা-লক্ষণ তৈরি করে, (স্বাভাবিক লোকের কোন অসুবিধা হয় না)।
জ) বিভিন্ন সুগন্ধি, স্প্রে, মশার কয়েল, ও কীটনাশকের গন্ধ থেকেও কারো কারো শ্বাসকষ্ট বেড়ে হাঁপানি হতে পারে।
ঝ) ধূমপান- হাঁপানি রোগী নিজে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ধূমপান পরিহার করতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান শুধু শ্বাসকষ্টের কারণই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা হাঁপানির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। হাঁপানির ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, কখনো কখনো ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী কার্যক্ষমতাও কমে যায়।
ঞ) বায়ুদূষণ
কিছু উত্তেজক উপাদান অনেক সময় সংবেদনশীল রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু করতে পারে।
এজমা লক্ষণের অবনতি হয় বায়ুদূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত—গ্রীষ্মকালে- ozone, NO2 বস্তুকণা; শীতকালে- SO2, NO2, বস্তুকণা।
আবার পেশাগত কারণেও এ রোগটি হতে পারে।
মোট কথা ধূলাবালি, গাড়ি ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কলকারখানার নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ, বৃষ্টিতে ভেজা, শীতের কুয়াশা, ফুলের রেণু,, কসমেটিকস, স্প্রে ও অগনিত জানা-অজানা জিনিস আমাদের শরীরে কাশি, শ্বাসকষ্ট এলাজি ও এজমার সৃষ্টি করতে পারে।- ডা. এ,কে,এম, মোস্তফা হোসেন
নিউইয়র্কে গবেষকরা বলেছেন, যানবাহন রাজপথে হাঁচি উদ্রেককারী এলার্জেন সৃষ্টি করে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মতে, পাথর, ইট, বালি প্রভৃতি দ্বারা আস্তর করা পথের বিভিন্ন উৎস হতে কমপক্ষে ২০টি এলার্জেন পাওয়া যায়। ফুটপাথের ধূলিকণাকে বর্ণনা করেন এভাবে যে, এগুলো হচ্ছে মৃত্তিকার ধুলা, গাড়ির নির্গত নিঃশোষিত পদার্থ, টায়ারের ধুলা, গাছ-পাতার ভগ্নাংশ এবং অন্যান্য যৌগিক পদার্থের জটিল সংমিশ্রণ। পথের ধুলা শহরবাসী এলার্জি/এজমাতে প্রবলভাবে গ্রহণ করে। কারণ রাজপথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন, লোকজন প্রভৃতির মাধ্যমে এগুলো দ্রুত বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। তাদের মতে, শতকরা ১২ ভাগ শহরবাসী নিঃশ্বাসের সঙ্গে এমন বায়ুবাহিত এলার্জেন শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে। গবেষকদের মতে, রাজপথের খুব নিকটতম বসবাসকারীদের পথের ধুলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এলার্জি ও এজমার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং রাস্তার ১০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে কাশি, হুইজ, রানিংনোজ এবং নির্ণীত এজমার প্রকোপ
২) শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা Bronchial hyper-responsiveness
নির্দিষ্ট এলার্জেন/এন্টিবডি ছাড়াও অন্যবিধ অনির্দিষ্ট উপাদানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শ্বাসনালী অতিসক্রিয়/অতিসংবেদনশীল হতে পারে।
শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা (Bronchial hyper-responsiveness)
পরিবেশীয় inert উপাদানে অতিসহজে ও অতিমাত্রায় শ্বাসনালী সংকোচনের প্রবণতাকে শ্বাসনালীর অতি-সক্রিয়তা (Bronchial hyper-responsiveness) বলে। এসমস্ত trigger উপাদান সুস্থ-স্বাভাবিক লোকের শ্বাসনালীতে ক্রিয়াশীল নয়, কিন্তু এজমা-রোগী এসব উপাদানে অতিশয় অনুভূতিপ্রবণ ও সংবেদনশীল। Trigger উপাদানসমুহ প্রদাহ ও প্রদাহ-ছাড়া সংকোচন করতে পারে, তাছাড়া নার্ভ উত্তেজিত করে (neurogenic) সংকোচন মাত্রা তীব্রতর করতে পারে।
যদিও অতি-সক্রিয়তার মাত্রা এলার্জি দ্বারা প্রভাবিত হয়, অন্যান্য উপাদান– nerve tone ও প্রদাহ অতিসক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।
স্বাভাবিক অবস্থায় শ্বাসনালীর ‘সংকোচন মাত্রা’ (tone) cholinergic nerve দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। দৈনিক চক্রে (circadian rhythm) সংকোচন/প্রসারণ tone সর্বউচ্চ সরবোচ্চ মাত্রায় শেষ রাতে (4 PM) এবং সর্বনিম্ন মাত্রায় অপরাহ্নে থাকে।
স্বাভাবিক অবস্থায় - সিগারেট ধুঁয়া, দ্রাবক, ধুলাবালি, ঠাণ্ডা বাতাস প্রভৃতি কারণে সংকোচন/প্রসারণ tone সাময়িক বৃদ্ধি পায়।
যুগপৎ সংক্রমণে সুস্থ মানুষের শ্বাসনালীও এসমস্ত উপাদানে অতিসক্রিয়তা (hyper-responsiveness) দেখায়।
এজমা রোগীর শ্বাসনালী পূর্বথেকে trigger উপাদানে অতিসক্রিয় ও সংবেদনশীল থাকায় circadian rhythm এর সময় শেষরাত/ভোরবেলা – এজমা লক্ষণ বৃদ্ধি পায়।
একই পরিবেশে একজনের এজমা এটাক হচ্ছে কিন্তু অন্য জনের হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ওই আবহাওয়ায় এমন কিছু জিনিস আছে, যার এজমা এটাক হলো সে ওই জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল। -এম, এ কাশেম
পরিবেশের অনেক উপাদান এজমা সৃষ্টি করতে সক্ষম অথবা এজমা উপসর্গ ও লক্ষণ তৈরি ও এর প্রকোপ বৃদ্ধি করে। এগুলোকে এজমা উদ্দিপক/ উত্তেজক (triggers) বলা হয়।
এজমা ট্রিগার বা উৎপাদকের কারণে হাঁপানির উপসর্গসমূহ সাধারণত: দেখা যায়।
ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম।
শ্বাসতন্ত্রের উপরি অংশে এলার্জি, ঠাণ্ডা, সর্দি, সংক্রমণ- রাইনাইটিস, টন্সিলাইটিস, সাইনোসাইটিস, লেরিঞ্জাইটিস প্রভৃতি।
সর্দি, স্লেস্মা ও অন্যান্য গলাধকরন।
পাকস্থলী থেকে উদবমন (GERD)।
আবহাওয়ার পরিবর্তন
মানসিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, ভয়-ভীতি।
দূষিত বায়ূ সেবন- বাতাসে অতিমাত্রায় ozone, SO2, NO2।।
সিগারেট ধুঁয়া- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।
কোন কোন ঔষধ সেবনেঃ ব্যথানাশক- aspirin, NSAID’s, প্রেসার কমানোর beta-blockers, রঙ tartrazine.
হাঁপানির সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। এ রোগের জন্য কোনো কিছুকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, কারও কারও বংশগত কারণে বা পরিবেশগত কারণেও এ রোগ হতে পারে। মনে রাখবেন হাঁপানি ছোঁয়াচে রোগ নয়। পারিবারিক বা বংশগতভাবে হাঁপানি হতে পারে। তবে শিশুদের মায়ের সংস্পর্শ ও বুকের দুধ খেয়ে এজমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। -হাঁপানি যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে এটি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.