নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিরো হবার গল্প

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৭

তখন আমি একটা পত্রিকায় সাব এডিটর হিসেবে কাজ করতাম। অফিসে এতবেশি কাজের ফ্রেসার থাকে যে অন্য কিছু করার সুযোগই আমার হয় না। অন্য একটা কারণ হলো কাজে ফাঁকি দেয়ার বদ অভ্যাসটি আমার এমদমই নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যতটুকু যোগ্যতা দিয়েছেন আমি আমার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করি। একদিন কাজের ফাঁকে ফেসবুকে আমি একটা ছবি পোস্ট করলাম। ছবিটি আমার নিজেরই। ছবিটি হলো এ রকম, বুড়িগঙ্গার তীরে নতুন শার্ট পরে আমি দাঁড়িয়ে আছি। ছবিটি পোস্ট করার সাথে সাথে সাথেই আমার প্রিয় সহকর্মী রাসেল (আইটি) ভাই আমার ছবিতে একটা কমেন্টস করেলেন। উনার কমেন্টসটি ছিল এরকম যে, “হিরো হবা?”। কমেন্টসটি আমার মনে দারুণভাবে দাগ কাটে। রাসেল ভাইয়ের কমেন্টসের জবাবে আমি লিখেছিলাম, “রাসেল ভাই, হিরো হবার জন্য চেহারা লাগেনা। কাজ কর্মই একজন মানুষকে হিরো বানায়।”

সে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটা লেখা লিখব বলে ভাবছিলাম, কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে কুলিয়ে উঠতে পারিনি তাই আজ লিখতে বসলাম। কারণ, কিছুক্ষণের জন্য আমাদের পত্রিকার সার্ভার অপ আছে তাই সময়টা কাজে লাগালাম আরকি। আর একটা অন্যতম কারণ হলো, পবিত্র ধর্মগ্রন্থে পড়েছিলাম, আমাদের এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব একদিন মহান আল্লাহর কাছে পেশ করতে হবে। যে ব্যাক্তি এ পৃথিবীতে অনু পরিমাণ ভালো কাজ করবে সেও তা দেখতে পারবে আর যে ব্যাক্তি অনু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সেও তা দেখতে পারবে।

এবার হিরো হবার গল্প করা যাক। বর্তমানে হিরো সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই চলমান একটা ধারণা আছে যে, যারা নাটক সিনেমায় অভিনয় করে, রঙিণ পর্দা কাঁপায় তারাই আসল হিরো। কিন্তু না আমি সে সকল ভাইদের সাথে একমত পোষণ করতে পারছিনা বলে দুঃখিত।এ ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য অন্যরকম। আমার যুক্তি আলাদা। আমি বলব ভিন্ন কথা। যারা নাটক সিনেমায় অভিনয় করে তারা আসল হিরো নয় বরং তারাই হলেন সত্যিকারের নকল হিরো। কেননা তারা বর্তমান সমাজের হিরোদের চরিত্রকে নকল করেই নাটক ছবিতে অভিনয় করেন। তবে তাদের অভিনয়ের অসাধারণ রচনাশৈলীতে চমকিত না হয়ে পারা যায় না।

আসল হিরো হচ্ছে তারা যাদেরকে আমরা বাস্তবে দেখি। যারা আমাদের চারপাশে বসবাস করে। আমরা কখনো এ সকল হিরোদেরকে অঁজ পাড়া গাঁয়ে, রাজনীতির মঞ্চে, মানুষের সেবায় বন্যা দূর্গতদের মাঝে, প্রাইমারি স্কুলে, কলেজে, ভার্সিটিতে, রেল লাইনের বস্তি ঘরে দেখতে পাই।

সবুজে ঢাকা, পাখি ডাকা গ্রামের পল্লীর ভাটি অঞ্চলে জন্ম নেয়া একজন মানুষের কথা চিন্তা করা যাক, যে মানুষটি সারা জীবন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন আজীবন। এলাকায় মানুষদের মাঝে ন্যায় বিচার করেছেন। এলাকার উন্নয়ণের কথা ভেবেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি বংশীয় আভিজাত্য, দলীয় পরিচয় কিছুকেই প্রাধাণ্য দেননি। তাকে কি আমরা হিরো বলতে পারি না।

এবার আরেকটি লোকের কথা চিন্তা করা যাক, যে লোকটি ফ্ল্যাট বাড়ির জন্য নয়, শেয়ার বাজার থেকে অর্থ লোপাটের জন্য নয়, নিখাদ দেশপ্রেমের জন্যই, নিপীড়িত মানুষের জন্যই রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে কারা বরণ করেছেন, মুক্তি পেয়েছেন। জনগণ ফুলের মালা দিয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিয়েছে। কোন মিথ্যা মামলা, কোনো খোড়া যুক্তি, চারিত্রের উপর কালিমা লেপন কোনো কিছুই তাকে জনগণ থেকে, জনগণের ভালবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। এ রকম একটা ব্যাক্তিকে আমরা হিরো বলব না কোন শর্তে।

এখন আমি আপনাদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই সত্যিকারের হিরো’র চরিত্রের সাথে। স্বরণ করুণ প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার, হাই স্কুলের হৃদয়বান শিক্ষকটির কথা যে শিক্ষকটি দুর্দিনে আপনার বা আমার পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আমি বা আপনি এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না। তাই চোখ ফেরানো যাক কিছু নির্মম বাস্তব চিত্রের দিকে। গ্রামের দরিদ্র সন্তানটি যে কিনা টাকার অভাবে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারছে না। টাকার জন্য এসএসসি পরীক্ষার রেসিস্ট্রেশন করাতে পারছে না। যার ফলে দরিদ্র কৃষক বাবা এক সময় এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে, ছেলেকে আর পড়ালেখা করাবেন না। ছেলেটিও বুঝে নিয়েছে যে দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম নেয়ার ফলে তার পক্ষে আর পড়ালেখা করা সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক সে সময় কনকনে শীতের রাতে কিংবা বাদলা দিনের তুমুল ঝড়ের দুপুরে কিংবা শিশিরভেজা সকালে ঐ ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে হাজির হলেন পিতৃসময় সেই স্কুল শিক্ষক বা হাই স্কুলের সেই শিক্ষকটি বা কলেজের সেই শিক্ষকটি। যার ইচ্ছা যে করেই হোক তার এই মেধাবী ছাত্রটিকে বা ছাত্রীটিকে কিছুতেই স্কুল থেকে ঝরে পড়তে দেবেন না। প্রয়োজনে নিজের পকেটের টাকা খরচ করবেন। বেতনের টাকা দিয়ে হলেও ঐ ছেলেটি বা মেয়েটির পরীক্ষার পিস দিয়ে তার পড়ালেখা অব্যাহত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কেননা এতেই তার পেশা দারিত্বের মহৎ উদ্দেশ্যে নিহিত।

রেল লাইনের বস্তিঘরে জন্ম নেয়া উদ্যমী এক যুবকের কথা চিন্তা করুণ রেল লাইনের বস্তি ঘরে জন্ম নেয়া যে শিশুটি বখে গিয়ে মদ, জুয়ায় আসক্ত হবার কথা ছিল সে ছেলেটিই এক সময় হয়ে গেল দেশের বিখ্যাত এক ডাক্তার বা মস্তবড় এক ডাক সাইটে রাজনীতিবিদ। এরকম মানুষকে কি হিরো ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? এদেরকে হিরো না বললে কাকে আমরা হিরো বলব? যারা ধর্ষনের সেঞ্চুরি উদযাপন করে, ড্রিল মেশিন দিয়ে মানুষ খুন করে তাদেরকে আমরা হিরো বলব! নাকি পেট্রোল দিয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যার নেতৃত্বদানকারীরা হিরো।

শুধুমাত্র কথার ফুলঝুরিতে নয়, চেহারার লাবণ্যতে নয়,কাজে-কর্মে, আচার-আচরণেই মানুষের ভেতর প্রকৃত হিরো হবার পরিচয় পাওয়া যায়।

এক কথায় মানবসেবায় নিবেদিত,আত্নত্যাগী মানুষরাই আমাদের দেশের প্রকৃত হিরো হবার আসল দাবীদার।

তাই আসুন, আমরা সবাই রঙিণ পর্দার হিরো হবার স্বপ্ন না দেখে বাস্তব হিরো হবার স্বপ্ন দেখি। কেবল তাহলেই আমাদের থেকে সমাজ, দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এখানেই আমাদের জীবনের স্বার্থকতা নিহিত আছে বলে আমি মনে করি।



লেখক:

সুহৃদ আকবর

সংবাদকর্মী



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২১

মোমের মানুষ বলেছেন: ভাই আমরাও সেই হিরো হতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করে....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.