নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইয়ের প্রেমে, বন্ধুর টানে, জম্পেশ আড্ডায়, বইমেলায়

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮

কতদিন পর তার সাথে দেখা! এক সময় খুবই ঘনিষ্ট একজন ছিল সে আমার। আমি সারা জীবনই মুখ চোরা প্রকৃতির মানুষ। তবে মাঝে মাঝে কেন জানি জ্বলে উঠি। স্পষ্ট উচ্চারণে সত্য বের হয়ে আসে মুখ দিয়ে। সে সারাক্ষণই সবাইকে মাতিয়ে রাখত। তার অনেক গুণ, দোষও আছে ঢের। দোষের কথা এখানে নাইবা বল্লাম। শত হলেও ভাবমূর্তি বলে কথা। ইতোমধ্যে তার একটা পরিচিতি তৈরী হয়েছে। এখন লোকে তাকে কবি বলে সম্বোধন করে। আমি যদি এখন তার দোষের কথা বলতে যাই কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। যাক সে আলাপ। দোষে গুণেই তো মানুষ। চট্টগ্রাম কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হবার সুযোগ লাভ করি। এর এক বছর কি দুই বছর পর ইংরেজীতে ভর্তি হল একজন তরুণ বালক। মাথাভরা চুল, মুখভরা হাসিতে সে সারাক্ষণ মেতে থাকত, সবাইকেও মাতিয়ে রাখত। বলছিলাম, শাহিনের কথা। এ বছর বইমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ত্রিভূজক্ষেত্রের উপনৃত্য’ বই বের হয়েছে। ঝকঝকে মলাটের তরতাজা একখানা বই। কারুকার্যময় প্রচ্চদের উপর নারীর প্রতিকৃতি। লেখকের নামের জায়গায় একটু বাড়িয়ে- শাহিন শাঙন রাখা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম শাঙন মানে কি? সে উত্তর দিল- শ্রাবণ মাস।

এ জীবনে কত মানুষের সাথেই তো পরিচয় ঘটে কিন্তু ক’জনইবা হৃদয়ের আসনে জায়গা করে নিতে পারে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই দুর্বল এবং অস্পূর্ণ একটা প্রাণী। সে চলার পথে বারবারই ভুল করে। অনেকের ভুল করে নিজেকে সুধরায় অধিকাংশই ভুল করে নিজেকে সংশোধন করে না। সে ক্রমাগত ভুল পথে চলতে চলতে এক সময় ধ্বংসের অতলে হারিয়ে যায়। সে অতল থেকে নিজেকে আর উঠাতে পারে না। তার তখন আপসোস ছাড়া অন্য কিছু করার থাকে না। তাই জীবন চলার পথে আমাদেরকে খুবই সতর্কভাবে চলতে হয়। একটু এদিক সেদিক পা পিছলে পড়লেই বিপদ। আর একটা সত্য কথা হল, মানুষ মাত্রই একা চলতে পারে না। তাই তাকে বন্ধুর সাথে চলতে হয়। যদি এ বন্ধু নির্বাচনে সে ভুল কওে তাহলে সেও ভুল পথে পরিচালিত হবে। মানুষ যদি ঠিকঠাক মত বন্ধু নির্বাচন করতে পারে তাহলে তার জীবনটা আলোকময়, জ্যোতির্ময়, পূর্ণময় ও সার্থকময় হয়ে ওঠে। হয়তো এ বন্ধুর ছোঁয়ায়ই তার জীবনে সোনা ফলে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই মানুষ বন্ধুত্ব নির্বাচন করতে ভুল করে। ভুল করলে এই বন্ধুত্বই তাকে ভুল পথে পরিচালিত করে। কেননা মানুষ বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। সে কারণে দেখা যায়, মানুষ অনেক সময় মা-বাবা, ভাই-বোনের চেয়ে বন্ধুকেই বেশি আপন মনে করে। বন্ধু, মা-বাবা, ভাই-বোন থেকে কখনো বেশি আপন হতে পারে না। এটা যারা করেন তারা ভুল পথে হাঁটেন। তাদের গন্তব্যও হয় উল্টো দিকে। ভুলের স্বর্গে হয় তাদের বসবাস। এক সময় নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন কিন্তু তখন আর সোধরানোর কোনোই পথ থাকে না। চোখ ধরে কান্না করা ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকে না। জীবন চলার পথে কত মানুষের সাথেই পরিচয় ঘটে নিয়ে লিখতে লিখাটা বড় করে ফেললাম। লিখছিলাম, ‘বইয়ের প্রেমে, বন্ধুর টানে, জন্মেশ আড্ডায়, বইমেলায়’ শিরোণামের লিখা।

শাহিন ঢাকায় এসেছে দুইদিন হলো। প্রথম দিনই আমাকে ফোন করল। ফোন করে বলল, আমার বই প্রকাশ হয়েছে, আমি বইমেলায় থাকব, আজ এবং কাল পারলে এসো। আমি শুনে খুবই খুশি হলাম। বললাম, আমি আসবো। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ সেরে বিকাল সাড়ে তিনটার সময় প্রিয় ভাই মীরনকে নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছলাম। মীরনকে নিয়ে কাকরাইল থেকে মংস্য ভবণ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বইমেলায় আসছিলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষরাজির এমন ধ্বংসাত্বক উচ্ছেদ দেখে দুঃখে মনটা কেঁদে উঠল। মনে মনে বললাম, কি দরকার ছিল এ উদ্যানে স্বাধীনতার স্তম্ভ আর লাল ইটের রাস্তা তৈরী করার। এভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে ধীরে ধীরে। এভাবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সরকারের নতুন নতুন প্রকল্পের শিকার হতে হচ্ছে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। আমাদের শাসকগোষ্ঠীর ঢাকা শহরকে গাছমুক্ত করার এ নিরব যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা কবে বন্ধ হবে কে জানে।

বইমেলায় ঢুকেই নজরুল মঞ্চের ওখানে গিয়ে শাহিনকে ফোন দিলাম। শাহিন তার তিন বন্ধুসহ এসে উপস্থিত। শাহিনকে চিনতে আমার মোটেই কষ্ট হয়নি। সেই আগের চেহারা, আগের সম্বোধন, আগের চুল সবই ঠিক আছে। তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু- তিয়াস, রাব্বি, জ্যোতির সাথে পরিচিতি হলাম। একসাথে ছবি তুললাম। কতদিন পর শাহিনের সাথে দেখা। কমপক্ষে পাঁচ ছয় বছর পর দেখা হয়েছে। কত কথা জমে ছিল কিন্তু তেমন কিছুই বলা হয়নি। তবে কথার ফাঁকে শরিফের কথা বলতে ভুলিনি। শরিফ আমাদের দু’জনেরই খুব প্রিয়। চট্টগ্রাম কলেজে থাকতে আমি শরিফ আর শাহিন একসাথ হলে খুবই মজা করতাম। সে দিনের সোনালি মুহূর্তগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। শরিফ চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়ছে। ভবিষ্যতে দেশের একজন নামকরা ডাক্তার হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা দু’জন যে শরিফকে খুবই জ্বালিয়েছি এতে কোনোই সন্দেহ নেই।

এরপর তিয়াস, জ্যোতি, রাব্বিকে নিয়ে আমরা মেলার বর্ধিত অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক্ষণ হাঁটলাম। বই দেখলাম। মন ভরালাম। আবার হেঁটে হেঁটে বাইরে আসলাম চা খেতে। খুঁজছিলাম চা’য়ের দোকান। কোথায় চায়ের দোকান না পেয়ে অবশেষে আবার বাংলা একাডেমির রাস্তার পাশে গিয়ে চা খেলাম মানে পান করলাম। গল্প করলাম। আড্ডা দিলাম। অবশেষে আবার আমার বর্তমান কর্মস্থল প্রিয় জনতার নিউজ২৪ ডটকম এর অফিসের চেয়ারে এসে বসলাম। এইতো জীবন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.