নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষার মানুষ

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৯

‘আমার ভালোবেসে দিলি এতই জ্বালা নিঠুর কালা রে, ভালোবেসে দিলি এতই জ্বালা।
আমি সব দিয়াছি তোমায় কালা যায়কি এখন ভোলা নিঠুর কালা রে, ভালোবেসে দিলি এতই জ্বালা।’( মুস্তাফা জামান আব্বাসী)।
-কি শাকিল, হঠাৎ করে মনে এত রং লাগছে কেন?
-রং তো হঠাৎ করেই লাগে। শোনেন প্রীতম ভাই।
আমার একজন অপেক্ষা করার মানুষ প্রয়োজন। যে আমার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনবে। আমার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকবে। জানালার পাশে বসে আমার কথা ভাববে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে আমার ছবি আঁকবে। তারাদের সাথে আমার গল্প বলবে। পরীদের সাথে আমার গল্প করবে। বৃষ্টির জলের কনাদের সাথে আমার ভালবাসার নুপূর বাজাবে। ভোরের পাখিদের সাথে গলা মিলিয়ে আমার ভালবাসার গান গাইবে। রঙধনুর দীঘির পাশে আমার ভালবাসার প্রাসাদ গড়ে তুলবে।
এ জীবনে তো অনেক মানুষ দেখেছি। অনেক মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। অনেক মানুষকে ভালোবেসেছি। মনে করেছিলাম এই বুঝি আমার ভালবাসা সার্থক হল। না তারা একে একে সবাই আমাকে রেখে চলে গেছে। তাদের জন্য আমার চোখের জল ঝরেছে। তারা আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি। আমি কেবল তাদের পথের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলাম। তাদের জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষার প্রহর গুনলাম। কিন্তু কই তারাতো কেউ আমার কথা ভাবেনি। কেউ আমার জীবনে ফিরে আসেনি। তারা তাদের বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বান্ধবীদেরকে নিয়ে মেতে উঠেছে। আমাকে সময় দেয়নি। প্রথম প্রথম সময় দিলেও যত সময় যেতে লাগল; তত যেন ধীরে ধীরে তারা আমার থেকে দূরে সরে যেতে লাগল। আমার কাজের সময় কেন জানি তাদের কোনো না কোনো জরুরী কাজ পড়ে যায়। তাদের কাছে আমার ছোটখাট কাজের কোনোই গুরুত্ব নেই। এটা কি আমার প্রতি তাদের কম গুরুত্ব দেয়ার ফল নাকি এটা আমার নিয়তি। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অমোঘ বিধান। তা ভেবে আমি কোনো কুল কিনারা করতে পারি। এ বিষয়টি রীতিমত আমার কাছে রহস্যের মত লাগে। অথচ আমার বুকের মাঝে তাদের জন্য সব সময় ভালবাসা জমা (ফিক্সড ডিপোজিট) করে রেখেছি। তাদের বিচ্ছেদে আমার বুকের পাঁজর ছিনছিন করে ব্যথা করে। আমার হৃদয়ের সকল আবেগ ভালবাসা স্বপ্ন যেন তাদেরকেই ঘিরে। এ বন্ধুদের কেউ আমার বয়সে বড় কেউবা ছোট।
মাঝে মাঝে ভাবি, সত্যি আমি যেন বড় একা আর এক ঘরে হয়ে গেছি। আমি শুধুই একা। নিঃসঙ্গ আমার জীবনচলা। উত্তাল সমুদ্রের জীবন তরী আমি একাই বাইছি। মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে ভাটিয়ালী, পল্লীগীতি, মুর্শিদী গান গেয়ে উঠি- ‘আমার সোনার চান পাখি, আমার রূপার চান পাখি, আমি তোরে ডাকি পাখিরে, তুমি ঘুমাইছাও নাকি’। জীবন তরীতে আমি কেবলই একা। এখন একজন মানবীর ভালবাসা আমার খুব প্রয়োজন। যে জোছনা রাতে জানালার পাশে বসে চাঁদের বুড়ির গল্প বলবে। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় তৈরী করেছেন। সে জোড়া ছাড়া কি আর জীবন চলে। জীবনের আসল উদ্দেশ্যে কি সফল হয়। নারী বিষয়টি আমার কাছে এখনো রহস্যের মত লাগে। একজন নারীর মন আমার কাছে আজো দুর্জেয়।
জানালার পাশে বসে প্রীতম ভাইয়ের সাথে যখন এসব বলছি ঠিক তখনই গ্রাম থেকে বড় ভাইয়ার ফোন-‘শাকিল, তোর জন্য একটা পাত্রী দেখেছি। তুই আগামী বৃহস্পতিবার বাড়ি আয়। শুক্রবার বিকেলে আমরা পাত্রী দেখব। পাত্রী এবার ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।’
আমি কিছুই বললাম না। ভাইয়া ফোন রেখে দিলেন। আমি নিজে নিজে বলি, হায়রে আমার অপেক্ষার মানুষ!
যথা সময়ে বাড়িতে গিয়ে শুক্রবার পাত্রী দেখতে গেলাম। একটা চেয়ারে পাত্রীকে বসানো হয়েছে। আমি রুমে প্রবেশ করতেই সে আমাকে সালাম দিল। দেখলাম তার পরনে খয়েরি রঙের সেলোয়ার কামিজ। মাথায় নীল টিপ। চোখে নীল কাজল। ঠোঁটে নীল লিপিস্টিক। হাতের তালু আর পিঠে নঁকশা করা মেহেদীর কাজ। দোহারা গড়নের নিখুঁত শরীর। টানাটানা চোখ। সুশ্রী মুখে মায়াবী ছোঁয়া। প্রথম দেখাতেই আমার পছন্দ হয়ে গেল। মানুষ নয় যেন ডানাকাটা এক পরী। অমরাবতীর হুরপরী যেন নেমে এসেছে এই মর্ত্যলোকে। ঠিক আমি যে রকম চেয়েছি। মনে মনে বললাম, এমন দেবীতুল্য রূপশ্রী মায়াবিনীর ভার আমি সইতে পারব তো। পরিচিত হবার জন্য বললাম।
-আমি শাকিল।
-আপনার নাম?
-আমার নাম আকলিমা।
-আমি হেসে বললাম-আপনি বোধহয় কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
-ও হেসে দিল। হ্যাঁ করছি।
-কার জন্য?
-আমার অপেক্ষার মানুষের জন্য। যে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ভাবি, এমন সরল বিশ্বাসের মূল্য আমি কি দিতে পারব। নাকি...

লেখক:
গল্পকার ও সংবাদকর্মী
০১৮২০১৪৭৬৫৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.