নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ময়ূরাক্ষীকে লেখা বাসন্তী চিঠি

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

হে বসন্ত তুই কি কেমন আছিস? এই চিঠিখানা আমার প্রিয়াকে দিস। কতদিন হল তাকে আমি দেখিনা। তার সাথে ঘুরতে পারি না। তার হাতটি ধরে একসাথে হাঁটিনা। একসাথে ঘোরাঘুরি, নাস্তা করা, রাতে নৌকাতে উঠা, ছাদের উপর উঠে তারা গোনা এসব স্মৃতি আমি ভুলি কেমনে। তার স্পর্শ, গন্ধ, হাসি, ছোঁয়া আমাকে বারবার তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। খুব কম সময়ের ভিতর সে আমাকে এত বেশি ভালবাসা দিয়েছে যে যা মানুষ দশ জীবনেও পাবে না। আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ তার ভালবাসায় সিক্ত। আমার জীবন তার কাছে ঋণী। সারা জীবন তার গোলামী করলেও সে ভালবাসার ঋণ আমি শোধ করতে পারব না বোধহয়। সেটাতো আর সম্ভব নয়। এটা হলো তার ভালবাসার মূল্য বোঝালাপ আরকি। আসল ভালবাসা কাকে বলে সে আমাকে শিখিয়েছে। অপরের সাহায্য করতে সে বলেছে। বিপদে ধৈর্য ধরতে সে শিখিয়েছে। সেই-ই প্রথম আমাকে ভালবাসার স্বাদ দিয়েছে। সে মানুষরূপী হুলপরীকে আমি কি করে ভুলি। তাকে ভুলে থাকাতো ভালবাসাকেই অপমান করা। তাকে ছেড়ে থাকার মানে তো জীবন মূল্যহীন হয়ে যাওয়া। সে আমার গর্বের ধন, চোখের মণি, কলিজার টুকরা। সে আমার আবেগ অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু। তার হরিণ কালো মায়াবী আঁখি আমাকে জাদু করেছে। তার সরলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বলছিলাম আমার প্রিয়তমা ময়ূরাক্ষীর কথা। তার আসল নাম ছিল কলমিলতা। আমিই তার নাম রেখেছি ‘ময়ূরাক্ষী’
বসন্ত তুই কি আমার প্রিয়াকে এই মনের কথাগুলো পৌঁছে দিতে পারবি। সে কেমন আছে? কোথায় আছে? কি করছে? আমি কিছুই জানিনা। আমাকে কি বলবি। সে কি আমাকে ভুলে গেছে নাকি এখনো মনে রেখেছে। নাকি মাঝে মধ্যে আমার কথা মনে করে গাল ফুলিয়ে থাকে। অভিমানী মনে বসে বসে ভাবে।
হে বসন্ত তুমি অনন্ত হও। তোমার অশেষ অফুরন্ত ভালবাসায় সিক্ত করো আমার প্রিয়তমাকে। বর্ষার জলের মত তার মন থেকে সকল কালিমা মুছে দাও। সাগরের মত তার বুকে ভালবাসা তৈরী করে দাও। পাহাড়ের মত দৃঢ় করে দাও তার মন। হে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমার প্রিয়তমার উপর রহম করো। তার মনে আমার জন্য ভালবাসা জমা করো। অনলে প্রজ্জ্বলিত মোমের মত তার রাগকে কমিয়ে দাও। আমাকে ছেড়ে সে চলে গেছে। এক সময় সে আমাকে কতইনা ভালবাসত! সেতো আমার উপর রাগ করে আছে। কিন্তু একটি বারের জন্যও আমি তাকে ভুলতে পারছি না। তাকে যে আমার মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। সে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে-প্রঃশ্বাসে মিশে আছে। প্রতিটি ক্ষণে সে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। দিনে রাতে আমি তার আবক্ষ মূর্তি আঁকি। কিন্তু তাকেতো আমি আর কাছে পাইনা। এক সময় সে আমার খুব কাছে ছিল। কাছের চেয়ে আরো কাছে। আপন থেকে আরো বেশি নিকটে। এক কথায় আমার অস্থি-মজ্জায় সে মিশে থাকত সব সময়। তাকে নিয়ে আমি সাগরের উত্তাল সমুদ্রে স্নান করেছি। উঁচু গিরিপথ মাড়িয়েছি। ঝরণার জলে পা ভিজিয়েছি। কত সকাল, বিকাল আর রাত যে আমরা একসাথে কাটিয়েছি। তখন আমাদেরকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করত। তখন কিছুকেই আমরা কেয়ার করতাম না। কাউকেই আমরা পরোয়া করতাম না। আমরা দু’জন ছিলাম অন্তপ্রাণ। ছিলাম মানিকজোড়। শুধু তুমি আর তুমি। মানে আমি আর আমার ময়ূরাক্ষী। দ্বিতীয় কেউ আর আমাদের মধ্যে ছিল না। কাউকে আর আমাদের প্রয়োজন ছিল না।
ময়ূরাক্ষী, তোমাকে নিয়ে ছিল আামার সব ভাবনা। তুমি ছিলে আমার সীমান্ত এলাকা। তোমার শরীরের অলিগলি আমার খুব চেনা। তোমার ঘামের গন্ধ আমার কাছে মিশকের সুভাসের মত লাগত। তোমার কররেখার স্পর্শে আমার শরীর কেঁপে উঠত। তোমার হাসিতে আমার বুকে তুফান উঠত। তোমার সৌন্দর্য দেখতাম আর খুশিতে আমার দিল সিক্ত হত। তোমার উঁচু নাক, টসটসে অধর, মায়াভরা মুখ, উষ্ণ বুক কেবল আমারই ছিল।
একদিন হঠাৎ তুমি বাসা ছেড়ে দিলে। আমাকে একটি বারের জন্যও বললো না। তখন তুমি মুনীপুরী পাড়ার এক ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে। বিকেল হলে আমি হোস্টেলের সামনে দেখা করতে যেতাম। তোমার সাথে দেখা করতে যেতাম। দুইদিন হল তোমার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। তুমিও ফোন দাওনি আমিও দেইনি। ভাবলাম, ভালবাসা সাময়িক বিরতীতে নাকি ভালবাসা বাড়ে। জানতামনা ভালবাসা বাড়ার বদলে চিরতরে হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে। তোমার বান্ধবীর কাছ থেকে শুনেছি। শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। মনে মনে ভাবলাম, যে কিনা আমার কাছে সব কিছু বলত। সব কিছু শেয়ার করত। বাসা ছেড়ে দিচ্ছে অথচ আমাকে জানাল না। ভাললাম, পৃথিবীটা বড়ই রহস্যময় আর মানুষগুলো বড়ই আজব। পরে শুনলাম তোমার স্কুল পড়–য়া এক বন্ধু নাকি আমেরিকা থেকে এসেছে। তার সাথে তোমার নাকি পাকাপাকি হয়ে গেছে। ভালবাসা হল জমির মত। চাষবাস না থাকলে জমি তার বৈশিষ্ট হারায়, আগাছায় ভরে যায় তার শরীর। যে রকম ভালবাসার জমিও কখনো খালি রাখতে নেই। ভালবাসা ছাড়া যে মানুষ বাঁচতে পারে না। আমিও বেঁচে থেকে তোমাকে ভালবেসে যেতে চাই। এদিকে আমিও তোমার বান্ধবী তমার সাথে জড়িয়ে গেলাম। ঠিক গাছ আর স্বর্ণলতার মতই।
তিন বছর আগে সকালে শাহবাগ মোড়ে পাবলিক লাইব্রেরীর মুখে ঠিকানাবিহীন একটা সবুজ খামে এই চিঠিটা কুড়িয়ে পাই। তখন নিয়মিত লাইব্রেরীতে পড়তাম। জানিনা চিঠিটা তার প্রাপকের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছেছিল কিনা। আমেরিকা ফেরত ছেলেকে বিয়ে করে ময়ূরাক্ষী এখন কেমন আছে। তমাকে কি শেষমেশ বিয়ে করতে পেরেছিল এই চিঠিটার লেখক।

লেখক: কথাশিল্পী ও সাংবাদকর্মী
মোবাইল: ০১৭৬৬১০৭০৮৮

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:

" হে বসন্ত তুই কি কেমন আছিস? "

-এই লাইন নিজেই তো বিরাট কবিতা!

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪

সুহৃদ আকবর বলেছেন: আসলেই তাই। এভাবেতো আগে ভেবে দেখিনি। ধন্যবাদ চাঁদগাজী সাহেব।


২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাক্যটা ভুল

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

সুহৃদ আকবর বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী সাহেব। শুদ্ধ বাক্যটা কি একটু বলবেন প্লিজ!

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:


" হে বসন্ত তুই কি কেমন আছিস? "

" হে বসন্ত তুই (কি) কেমন আছিস? "

(কি) অতিরিক্ত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.