নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাতিরঝিলের ভূত

১৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৮

ভাদ্র মাসের ঝকঝকে বিকেল। শরতের আকাশে সাদা সাদা মেঘ। জহির সাহেব আনমনে পত্রিকা পড়ছেন। একটা নিউজে তার চোখ আটকে গেল। ‘হাতিরঝিল থেকে এক মেয়ের লাশ উদ্ধার’। জহির সাহেবের হাতে এখন অখন্ড অবসর। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আজ বিকেলে হাঁটতে বের হবেন। তিনি সাধারণত একা একা হাঁটেন না। হাঁটেন না বললে ভুল হবে, বলতে পারেন হাঁটতে তার ভাল লাগে না। বিকেলে ঘুরতে বের হলে কাউকে না কাউকে তার সঙ্গী করা চাই। হোক সেটা বন্ধু কিংবা রুমমেট অথবা জুনিয়রদের মধ্যে কেউ। জহির সাহেবের বাসা লিংক রোড়। আগে থাকতেন ফার্মগেট। লিংক রোডের বাসা থেকে মধ্যবাড্ডার রাস্তা ঘেঁষে হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। জহির সাহেবের পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা। কি খাবেন তাই ভাবছিলেন। কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। অনেক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে ঠিক করলেন- একটা না একটা কিছু তো খাওয়া প্রয়োজন। আরেকটু ভেবে চিন্তে নিজে নিজেই বললেন-আজকে আমার সিংগারা খেতে মন চাইছে। এত কিছু থাকতে সিংগারা খেতে কেন মন চাইছে তা বলা বড় মুস্কিল। তবে যে করেই হোক সিংগারা তাকে খেতেই হবে। ঢাকা শহরে সিংগারা পাওয়া বড় কঠিন না হলেও এই বিকেলে সিংগারা পাওয়া বড় মুস্কিলের ব্যাপার। ফুটপাতের দোকানগুলোতে শুধু চা-বিস্কিট বিক্রি করে। সিংগারা বিক্রি করে না। জহির সাহেব হাঁটেন আর তাঁকিয়ে দেখেন কোথাও হোটেল আছে কিনা। থাকলে সেখানে সিংগারা বিক্রি করে কিনা। কাউকে কিছু বলেন না। হোটেলের সামনে থাকা লোকগুলো ডাক দিয়ে বলে- ‘মামা ভিতরে বসেন, গ্রিল, কাবাব, হালিম, চিকেন ফ্রাই, বসেন বসেন। জহির সাহেব কিচ্ছু বলেন না। শুধু দেখেন। লোকগুলোও জাহির সাহেবকে দেখেন। সিংগারা না পেয়ে নিরবে স্থান ত্যাগ করেন জহির সাহেব। হাঁটতে হাঁটতে একটা দোকানে সিংগারা দেখতে পান। দেখে তিনি কি যে খুশি হলেন তা বলে বুঝানো যাবে না। হোটেলের চেয়ারে গিয়ে আয়েস করে বসলেন জহির সাহেব। বললেন,
-এই মামু এদিকে এসো।
-কি খাবেন মামু- বলল ছেলেটি।
-আমাকে দুইটি সিংগারা দাও।
হোটেল বয়টি জহির সাহেবকে দুটি সিংগারা এনে দিল। তিনি খেতে আরম্ভ করলেন। সিংগারাতে কামড় দিতেই বিচ্ছিরি রকমের একটা গন্ধ নাকে আসল তার। কিছুটা ইঁদুরের পায়খানার গন্ধের মতো। তিনি আর সিংগারা খেতে পারলেন না। সাথে সাথে আবার বললেন। এই মামু, আমাকে এক প্লেট ছোলা দাও। ছেলেটি এবার ছোলা এনে দিল। তিনি মজা করে খেলেন।
হাঁটতে হাঁটতে রামপুরা ব্রিজ পিছনে রেখে হাতিরঝিলে প্রবেশ করলেন জহির সাহেব। একটা পরিস্কার মতো জায়গা দেখে বসলেন তিনি। বসার আগে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয় সবকিছু ভালো করে দেখে নিলেন একবার। দেখে নেয়ার কারণ, অনেক সময় কুকুর, শৃগাল, এবং কি টোকাই ছেলেরা পায়খানা করে ঘাস দিয়ে ঢেকে রাখে। তাই না দেখে বসলে ভারি বিপদের অশংকা; একেবারে ফ্রেসটিস ফাংচার হবার জোগাড়। কিছুক্ষণ ঘাসের উপর বসে থাকলেন জহির সাহেব। জহির সাহেব সিগারেট খান না। তবে মাঝে মাঝে খান। ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে নদীর তীরে কাশবনের আঁড়ালে সিগারেট খেতেন। আজ কেন জানি সিগারেট খেতে মন চাইছে তার। জহির সাহেবের মাঝে মাঝে এমনটি হয়। এই যে কিছুক্ষণ আসে সিংগারা খেতে মন চাইছিল তার। এরপরের ঘটনাতো জানাই আছে সবার- ইন্দুরের পায়খানার গন্ধওয়ালা সিংগারা খেতে পারলেন না তিনি।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন কোনো দোকান পাওয়া যায় কিনা। না পেয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। একটু সামনে গিয়ে দেখলেন কোনো ভ্রাম্যমান চা স্টল আছে কিনা। হ্যাঁ দেখা যাচ্ছে- টুপি পরা একজন চা-সিগারেট বিক্রি করছেন। জহির সাহেব দেখলেন দোকানিটি এদিকেই আসছে। কিছুটা স্বস্তি পেলেন তিনি। আবার বসে পড়লেন জহির সাহেব। এদিকে আসতেই হাতের মোবাইলটি দিয়ে ইশারা করলেন তাকে। দোকানিটি তার পাশে এসে দাঁড়ালো।
-এ মামু পলমাল আছে?
-না মামু নাই
-কি আছে?বেনসন আছে? দেন একটা।
জহির সাহেব গ্যাস লাইট দিয়ে সিগারেটটি ধরালেন। এখন তার কাছে খুব ভাল লাগছে। কেন ভাল লাগছে তা সে জানেনা। তবে ভাল যে লাগছে তা বলা যায়। মোবাইলের ম্যাসেজ অপসনে গিয়ে জহির সাহেব লিখল-‘একাকিত্ব উপভোগ্য হতে পারে যদি সঠিকভাবে একে ব্যবহার করতে পারা যায়।’ মাঝে মাঝে তিনি এমন দার্শনিক উক্তি লিখে রাখেন বইয়ের খাতায় কিংবা মোবাইলে।
মজা করে করে জহির সাহেব সিগারেটটি খেলেন। জীবনে আর কোনোদিন এত মজা করে সিগারেট খেয়েছেন কিনা সন্দেহ। গুনগুন করে দু-একটা গানের প্রথম কলি গাইলে তিনি। আজ তার কাছে খুব ভালো লাগছে। সিগারেটের ধোয়া আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছেন জহির সাহেব। দখিনা বাতাস তার দেহ প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। রাতের আকাশে চাঁদ উঠল। চাঁদের প্রতিচ্ছবি এসে পড়ল লেকের পানিতে। অনেক্ষণ বসে থাকলেন জহির সাহেব। কতক্ষণ বসে থাকলেন তিনি তা জানে না। তার মোবাইলের ঘড়িটি নষ্ট। এবার তিনি উঠে দাঁড়ালেন। এদিক সেদিক তাঁকিয়ে দেখলেন মানুষের আনাগোনা খুব কমে গেছে। পাশে বসা প্রেমিক জুটির সংখ্যাও কমে গেছে। জহির সাহেব আবার হাঁটতে শুরু করলেন। ভাবলেন, আজকে পুরো হাতিরঝিলটি একবার চক্কর দিলে কেমন হবে। ভাবতেই জহির সাহেবের মন আনন্দে নেচে উঠল। যে ভাবা সেই কাজ। জহির সাহেব দক্ষিণ দিক থেকে পুরো হাতিরঝিল হাঁটা শুরু করলেন।
জহির সাহেব একা একা হাঁটছে। তবে তাই বলে তার কাছে মোটেও খারাপ লাগছে না। যত সামনে যাচ্ছেন তত ভালো লাগছে। তিনি যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। আধাঘন্টা হাঁটার পর জহির সাহেবের ঘোর কাটল। তিনি দেখলেন হাতিঝিলের লোক সমাগম হঠাৎ করে কমে গেছে। কয়টা বাজে তা তিনি জানেন না। কেননা তার মোবাইলের ঘড়িটিও নষ্ট।
চারিদিকে গুমোট অন্ধকার। কদম, ঝাউ, বরই, সয়াবিন, মেহগনি গাছের সারি অতিক্রম করে জহির সাহেব হাঁটছেন তো হাঁটছেন। তার হাঁটার কোনো বিরাম নেই। তাকিয়ে ভালো করে একবার চারিদিক দেখে নিলেন তিনি। থমকে দাঁড়ালেন পথিমধ্যে। একটা শৃখালের আওয়াজ কানে আসছে। এখানে শৃখাল আসবে কোত্থেকে তা কাজ করছে না জহির সাহেবের মাথায়। আবার হাঁটা শুরু করলেন তিনি। না কোথাও কেউ নেই। গাছের ঝোপে জোনাকিরা জ্বলছে আর নিভছে। এবার জহির সাহেব কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। চেয়ে দেখলেন পিছনেই ঝিলের পাশে একটা মেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অথচ এ পথ দিয়েই তিনি এইমাত্র এসেছেন। তখন কিছু দেখেনি আর কিনা এখন। ব্যাপারটা অদ্ভূত ঠেকতে লাগল জহির সাহেবের কাছে। ফুটফুটে নয় দশ বছরের একটা মেয়ে। চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
-ও মেয়ে তোমার না কি? এত রাতে এখানে কি করছো?
-আমার নাম নেই। আমার বাবা আমাকে মেরে এখানে ফেলে গেছেন। এ ঝিলের পাড়েই আমি বড় হয়েছি। এখানে আমার নতুন মা-বাবা আছেন। ফুলের বাগানে প্রজাপতি ধরতে গিয়ে এসে দেখি আমার মা-বাবা নেই। আমি মনে হয় হারিয়ে গেছি। মেয়েটির কোনো কথাই জহির সাহেব বুঝতে পারলেন না। ভাবলেন, কিনা কি বলছে ছোট মেয়ে।
মেয়েটিকে দেখে জহির সাহেবের মায়া হল। এ রকম একটা মেয়েকে একা একা কি ঝিলের পাড়ে রেখে যাওয়া মোটেও ঠিক কাজ হবে না। মেয়েটিকে নিয়ে জহির সাহেব হাঁটা শুরু করলেন। জহির সাহেব মেয়েটিকে পেয়ে খুশিই হলেন। ভাবলেন- তার কোনো মেয়ে নেই। একটা মেয়ের হবার জন্য নামকরা কত ডাক্তার-কবিরাজের কাছে গেলেন। মেয়েতো শেষ পর্যন্ত হলই না। উল্টো কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করলেন শুধু শুধু।
জহির সাহেব মেয়েটিকে নিয়ে হাঁটা শরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে পিছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি। কিছুটা বিড়ালের আওয়াজের মতই। জহির সাহেব একটু দাঁড়ালেন। আবার জহির সাহ্বে হাঁটা শুরু করলেন। এবার কুকুরের মত একটা ডাক শুনলেন তিনি। এবার জহির সাহেবের গা চমচম করে উঠল। কিছুটা ভয়ও পেয়েছেন বলে মনে হয়। জহির সাহেব কিছুকেই ভয় পান না। কুকুরের আওয়াজকে গুরুত্ব না দিয়ে জহির সাহেব আবার হাঁটা শুরু করলেন। এবার মানুষের কন্ঠের ডাক শুনলেন তিনি।
-জহির, তুমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছ কোথায়?
মানুষের ডাক শুনে তিনি পিছনে তাকালেন। দেখলেন কোথাও কেউ নেই। আবার হাঁটা শুরু করলেন জহির সাহেব। আবার ডাক দিল। এবার কিছুটা উচ্চস্বরে ডাক দিল। পুরুষ মানুষের কন্ঠস্বর বলে মনে হচ্ছে। এক সময় মেয়েটিকে রেখেই হাঁটা শুরু করলেন জহির সাহেব। রেখে আসার সময় মেয়েটির সেকি কান্না। মেয়েটির কান্না শুনে জহির সাহেবের বুক যেন ছিঁড়ে যাচ্ছিল। কিছুতেই মেয়েটিকে রেখে আসতে মন চাইছিলনা তার। না রেখেও উপায় ছিলনা তার। কিছুদূর এসে জহির সাহেব পিছনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি নেই আছে শুধুই অন্ধকার। তবে লেকের পানিতে ঝুপঝাপ একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি। রাস্তায় উঠে একটা রিকশা করে বাসায় আসলেন জহির সাহেব। সে রাতে ভীষণ জ্বর আসলো তার। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখলেন জহির সাহেব- মেয়েটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে।
-বাবা তুমি আমাকে রেখে চলে এলে কেন? তুমি আমাকে ঝিলের পাড় থেকে নিয়ে এসো বাবা। বাবাতো আমাকে মেরে ফেলেছে। আমি তোমাকেই বাবা ডাকব। আমার আর ভূত হয়ে থাকতে ভাল লাগে না। আমি মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই।

লেখক:
গল্পকার ও সংবাদকর্মী
০১৭৬৬১০৭০৮৮



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

প্রবালাহমেদ বলেছেন: পড়লাম। ভাল লাগেনি

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৫

হাইপারসনিক বলেছেন: ঘোর অন্ধকার! কোয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে...
ধন্যবাদ

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:১৯

জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন: খুব ভাল লাগলো।

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৩০

জাফরুল মবীন বলেছেন: গল্পের পটভূমি খুব সুন্দর।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৩৯

আবু জাকারিয়া বলেছেন: শেষের দিক থেকে বেশি ভাল লাগল।।+++

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:২৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

গল্পে+++

৭| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:২৫

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ++

৮| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫২

সুফিয়া বলেছেন: খুব ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.