নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন ভেজাতে এলো বর্ষা

০২ রা জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৫৩

‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি আজ আমাদের ছুটিও ভাই আজ আমাদের ছুটি’ এটা হল বর্ষার অন্যতম সেরা কবিতা। কবিতাটিতে বর্ষায় মেঘ আর রৌদ্দুরের লুকোচুরি খেলার অপূর্ব চিত্র উঠে এসেছে। নান্দনিক শব্দ গঠনে কবিতাটি সত্যিই অনন্য। কবি দক্ষ লেখনির মাধ্যমে তা তুলে ধরেছেন। কবিতাটি বর্ষার অন্যতম অনুষঙ্গও বটে।

সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পেলাম। বৃষ্টির নিক্বণ ধ্বনিতে আমি জেগে উঠলাম। আমার খুব ভাল লাগল। এই পৃথিবীতে কত শব্দইতো আছে। তার মধ্যে বৃষ্টির মনকাড়া শব্দ অন্যতম। বৃষ্টির শব্দ আমাদেরকে আনমনা করে দেয়। এমন শ্রুতিমধুর ধ্বনি আর কী আছে! বৃষ্টির নিক্বন ধ্বনি আমার বুকে মাতম তুলল। হৃদয় আমার নেচে উঠল। মন যেন ময়ূরের পেখম তুলে নাচতে চাইছে। প্রতি বছর বর্ষা আমাদের কাছে এসে হাজির হয়। আপন ঢালি হাতে সে এসেছে। সে এসেছে হাসিমাখা মুখে। সে আসে আমাদের প্রকৃতিতে, আমাদের ফুল বাগানে। আমাদের মন পবনে গান গাইতে আসে বর্ষা। বর্ষা ছাড়া আর কোনো ঋতু কি এমন সাড়া জাগাতে পারে প্রকৃতিকে। বর্ষা ছাড়া অন্য কোনো ঋতু কি আমাদের চারপাশকে এমন করে সাজাতে পারে। আমাদের মনকে এমন করে কী রাঙাতে পারে?

বর্ষার পানিতে গাছপালা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়। মনে হয় কোনো নববধূ বুঝি এইমাত্র গোসল সেরে উঠেছে। তার চোখে-মুখে খুশির ঝলক। মায়াবি মুখে শ্রাবস্তীর কারুকার্য। পরনে লাল পাড়ের নতুন শাড়ি। বধূর চুলের বেণী বেয়ে টপটপ পানি ঝরছে ঠিক যে রকমভাবে সবুজ পাতা বেয়ে পানি পড়তে থাকে সেরকমই। বর্ষা হল নববধূর প্রথম হাসি। সবুজ পাতা যেন যুবতী মেয়ের নীল ওড়না। কিশোরী মেয়েটি বর্ষার পানি ভিজতে পছন্দ করে। জানালা দিয়ে হাত ভেজাতে ভালোবাসে ছোট্ট শিশুরা। মা শুধু ডাক দেন, ‘এই বাহিরে যাবে না খবরদার! চুপচাপ কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে থাক।’ ছেলেমেয়েরা কি মায়ের কথা শুনে। সে দৌড়ে উঠানে চলে যায়। ভিজে চুপচুপ হয়ে তবেই ঘরে ফেরে। কিশোরী মেয়েটি এক লাফে উঠে যায় ছাদে। সেখানে উঠে নেচে গেয়ে ভিজে একাকার হয়। মেয়েটির বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যটি পাশের ফ্ল্যাটের ছেলেটি মুগ্ধ নয়নে দেখে। ছেলেটির চোখে চোখ পড়লেই মেয়েটি লজ্জায় লাল হয়। ছেলেটি তবুও চেয়ে থাকে মেয়েটি আর আসে না। এ হল বর্ষার অন্যতম এক সৌন্দর্য। বর্ষা ছাড়া অন্য কোনো সময় এমন সুন্দর দৃশ্য কী চোখে পড়ে!

গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যখন ওষ্ঠাগত। তখন বাতাসে উড়ে কেবল ধুলিবালি। বাংলার মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যায়। ধানি জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে যায়। প্রকৃতি তখন পানির জন্য হাহাকার করতে থাকে। ঠিক তখনই বর্ষার আগম ঘটে বাংলার বুকে। আপান ঢালি হাতে সে এসে হাজির হয় আমাদের মাঝে। সে এলে প্রকৃতির মুখে হাসি ফুটে। ফুল বাগানে ফুল ফোটে। পুকুরপাড়ে কদমগাছটি ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে। প্রথম বর্ষার বৃষ্টিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মানুষ। গাছপালা পানিতে ভিজে সুন্দর হয়ে উঠে। প্রকৃতি তখন গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করে। গাছের ডালে বসে নানান জাতের পাখি ডাকাডাকি করে। পাখির শব্দে আমাদের হৃদয় দুলে উঠে। পাখির অবিরাম গান শুনতে মোটেও রিকক্ত লাগে না বরং পাখির গান শুনতে আমাদের ভালই লাগে। আমরা তাকিয়ে দেখি পাখিটিকে। মানুষের সাড়া পেয়ে পাখিটি উড়ে চলে যায়। ওই দূরের গাছটিতে গিয়ে বসে। সেখানে গিয়ে সে গান ধরে আপনমনে।

এক সময় বর্ষার অবিরাম বর্ষণে পথ-ঘাট পানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন চারিদিকে শুধু বর্ষা আর বর্ষা। পানি আর পানি। বর্ষা মানেতো অবারিত জলের ধারা। পুকুর, ডোবা, খালবিল কেবলই পানিতে থই থই করতে থাকে। গাছের ডালে বসে কোকিল ডাকে। মাছরাঙাটা বর্ষাকালেও পুকুর পাড়ে বসে থাকে। পুকুরের পানি বেড়ে যাওয়াতে তার বাসাটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই সে পুকুর পাড়ের ঝোপে আশ্রয় নিয়েছে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে। বর্ষার কদম নিয়ে কবি লিখেছেন কবিতা-“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছি দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান/ মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে/ এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান/ আজ এনে দিলে, হয়তো দিবে না ক্লান্ত/ রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল।”

বর্ষা এলে প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠে। পানিতে ভাসতে থাকে রাজহাঁস। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা শাপলা শালুক তোলো। কদম নিয়ে কাড়াকাড়ি করে কিশোরী মেয়েরা। ছেলেরা কলার ভেলায় চড়ে বহু দূর চলে যায়। জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। মাঝি নৌকা বায় আর গান গায়- ‘ওরে নীল দরিয়া আমায় দেরে দে ছাড়িয়া, বন্দি হইয়া মন বধূয়া কান্দে রইয়া রইয়া।’

বর্ষার বর্ষণে সবকিছু ভিজে একাকার হয়ে যায়। বর্ষার পানিতে পাহাড়ের লাল মাটি ভিজে নরম হয়। উঠানো শুকাতে দেওয়া আমার মায়ের নীল শাড়িটি ভিজে একাকার হয়ে যায়। পাহাড়ি বোনটির নকসিকাঁথাটি চুপচুপ হয়ে যায় পানিতে। এসব দৃশ্য দেখতে আমাদের খুবই ভাল লাগে। এসব বর্ষারই দৃশ্য। এ হল বর্ষারই সৌন্দর্য। বর্ষা ছাড়া অন্য কোনো সময় এরকম দৃশ্য আমাদের চোখে পড়ে না। রুক্ষ প্রকৃতির শরীর ভেজাতে পারে একমাত্র বর্ষাই। বর্ষা এলে আমাদের হৃদয় সিক্ত হয়। তইতো মন ভেজাতে এলো বর্ষা।


শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল-০১৭৬৬১০৭০৮৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.