নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোনাক জ্বলা গাঁ

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২২

এবার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে রাইসুল। তাদের গাঁয়ের নাম মজলিশপুর। আঁকাবাঁকা মেঠোপথে সবুজ নিকুঞ্জের মাঝে ছোটছোট ঘর। এ যে ছায়াঢাকা মায়াঘেরা পল্লী মায়েরই কোল। এক কথায় ছবির মতই তাদের গ্রামখানি। একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। দোলা দিয়ে ওঠে প্রাণ। তখন ছিল বর্ষার মৌসুম। বর্ষার বৃষ্টি আর কাদাপানিতে একাকার ছিল পথঘাট। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। খাল-বিল পানিতে টইটুম্বুর। যেখানে টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির শব্দ হয়। গাছের ডালে নানান রকম পাখি গান করে। সন্ধ্যা হলেই কুনোব্যঙের গ্যঙর গ্যঙর ডাক। রাতে জোনাক পোকাদের আলোর পিদিম জ্বালানো। পাটিপাতার বনে ডাহুক পাখির (কোয়াক কোয়াক) ডাক। এসব দৃশ্য একাকার হয়ে মিশে আছে তাদের মজলিশপুর গ্রামে।
দাদীকে সালাম করে ঘর থেকে বের হলো রাইসুল। চলে গেল তাদের পুকুরঘাটে। সেখানে দেখল, পুকুরভরা লাল-সাদা শাপলা ফুল। নীল রঙের শালুক। টলমল পুকুরের জল। কদম গাছে থোকা থোকা ফুল। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সুন্দর আর সুন্দর! এ যে সবুজের গলাগলি। সুন্দরের ছড়াছড়ি। এমন মনোরম দৃশ্য দেখে রাইসুলের দুই চোখ খুশিতে ভরে গেল। আনন্দে নেচে উঠল মন।
রাইসুল দেখল, একটু দূরে হিজল গাছের ডালে বসে একটি মাছরাঙা পাখি ঝিমাচ্ছে। পাখিটি মুহূর্তের মধ্যে একটি মাছ শিকার করে গাছের ডালে গিয়ে বসল। মাছরাঙার সুঁচালো চঞ্চুর ভেতর পুঁটি মাছটির সাদা পিঠ ঝলক দিয়ে উঠল। সাথে সাথে রাইসুলের বুকও কেঁপে উঠল। কেঁদে উঠল মন। সে মনে মনে বলল-“নির্দয় পাখি তোর মনে কি দয়া মায়া বলতে কিছুই নেই, নিরীহ মাছটিকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস? যা দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে।” এই বলে পাখিটির দিকে একটি ঢিল ছুঁড়ে মারল। ঢিল গিয়ে পড়ল পাখিটির ঠোঁট বরাবর। ঢিলের আঘাতে পাখিটি মাছটিকে ফেলে দিল। দূরের একটা গাছের ডালে গিয়ে বসল পাখিটি। মাছটিকে প্রাণে বাঁচাতে পেরে রাইসুলের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। তার শরীর জুড়ে আলাদা এক শিহরণ খেলা করল। অন্যের উপকার করার ভেতর যে বিপুল আনন্দ আছে তা সকলে বুঝতে পারে না। রাইসুল তার কিছুটা অনুভব করতে পেরেছে বোধহয় তাকে দেখে তাই মনে হলো।
রাইসুল ছবি তুলতে ভালোবাসে। তাই ক্যামেরাওয়ালা একটা মোবাইল সব সময় সঙ্গে রাখে। কৃষকরা জমিতে কাজ করছে। তাদের কেউ মাটিকাটার কাজ আবার কেউবা লাঙল দিয়ে জমিতে নিড়ানি দিচ্ছে। কোনো জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করা হচ্ছে। জমির মালিক ট্রাক্টরের পিছু পিছু হাঁটছে। ভালো মত জমি চাষ করতে দেখিয়ে দিচ্ছে গৃহস্থেরা। ছোট ছেলে-মেয়েরা মাছ ধরছে। এর মধ্যে একটি ছেলেকে গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করতে দেখা গেল। ছেলেটি শুধু দৌড়াতেই থাকে। পাখি শিকার করতে পারে না। গুলতির আওয়াজ শুনে পাখিগুলো উড়ে চলে যায় অন্য দিকে। দৃশ্যটি দেখতে রাইসুলের কাছে ভালোই লাগল। ছেলেটির জন্য তার মায়া হলো। তাই দেরি না করে দৃশ্যটিকে সে ক্যামেরা বন্দি করল। বাহিরে তখন তুমুল বৃষ্টি। ভিডিওটি প্লে করে দেখল ভালই লাগল। এক সময় বৃষ্টি থামল। দোকানের পাশে এক বিরাট মাছের প্রজেক্ট। সেখানে একদল পাখি কলরব করছে। পাখির ডাক শুনে রাইসুল ওইদিকে এগিয়ে গেল। কলরবের দৃশ্যটি ভিডিও করল। মনে মনে বলল, ইস! এমন মনোরম দৃশ্য! মামুন দেখলে সত্যিই অবাক না হয়ে পারবে না। মামুন তার ক্লাশফ্রেন্ড। সে ঢাকায় মা-বাবার সাথে বনানীতে থাকে। মামুনের আম্মা রাইসুলকে খুব ভালোবাসে। তাদের বাসায় কত গিয়েছে তার হিসাব নাই। সামনে কোনো এক ছুটিতে মামুনকে আমাদের এখানে নিয়ে আসব। তাকে নিয়ে কলার ভেলায় চড়ব। নদীতে মাছ ধরব। পাখি শিকারে বের হব। সাইকেল চালিয়ে স্লুইসগেট দেখতে যাব। ঢাকায় গিয়ে সে পুরো স্কুল জুড়ে শুধু আমাদের গ্রামের গল্প বলবে। আমি পাশে বসে শুনব আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলব। সামনেই কতগুলো মানুষ মাটি কাটার কাজ করছে। সেদিকে এগিয়ে দেখল রাইসুল । এ যে, তাদের পাশের বাড়ির মিজান ভাইয়া! সাথে আরো লোকজনও আছে। সকলকে সে চিনল না। এ যে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা। রাইসুল কাছে গিয়ে সালাম বিনিময় করল। তাদের খোঁজখবর নিল। মনে মনে বলল, কৃষকরা কত কষ্ট করে মাটি কাটে। বীজ বুনে, ফসল ফলায় আর আমরা ঢাকায় বসে মজা করে খাই। একটুও তাদের কথা চিন্তা করি না। সে ভাবল, এদেরকে বিনামূল্যে সার বীজ সরবরাহ করলে কেমন হয়। চিন্তা করল, আমি যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হই তাহলে এদেশের কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ করব। আর মিজান ভাইয়াকে জাতীয় কৃষক হিসেবে ঘোষণা করব। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাইসুল নদীর তীরে এসে পড়েছে বলতেই পারবে না। নদীর তীরে বিশাল এক কাশবন। ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর বাতাসের সাথে কাশবনের ফুলগুলো অবিরাম দুলছে। ছোট-বড় অনেক রঙের পাখি কিচিরমিচির ডাকাডাকি শুরু করল।
আজ মঙ্গলবার। রাইসুল ভাবল, আজকে ফাজিলের ঘাট বাজারে গেলে কেমন হয় অনেকদিন বাজারে যাওয়া হয় না। যে ভাবা সে কাজ। সাথে সাথে মনির কাকাকে ফোন দিল। ‘হ্যালো আংকেল, আজকে বিকালে ফাজিলের ঘাট বাজারে যাব। গাছ কিনব আর মকুর (মকবুলের) বুট খাব।’ ও পাশ থেকে রাইসুলের আংকেল সম্মতি জানাল। দুপুরে ভাত খেয়ে তারা বাজারে রওয়ানা করল। বাজারে যেতে হলে নদী পার হতে হয়। সে নদীর নাম ছোট ফেনী নদী। এ নদীর সাথে রাইসুলের শত রকমের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। গ্রামে থাকতে এ নদীতে কত গোসল করেছে। সাঁতার কেটে ওপারে গিয়েছে। নদীর ওপারে গিয়ে তারা কিছু ছবি তুলে নিল। বাজারে গিয়ে গাছের চারা কিনল। প্রতিবার গ্রামে এলে রাইসুল কোনো না কোনো গাছ রোপন করে। গাছ লাগানো তার এক ধরণের নেশা। তা ছাড়া বাবার মুখে শুনেছে - গাছ লাগানো হলো সদকায়ে জারিয়া। গাছটি যতদিন বাঁচে ততদিন আল্লাহর জিকির করতে থাকে। আর এই জিকিরের সওয়াব পায় যিনি গাছ লাগান তিনি। এছাড়া আমাদের মহানবী (সাঃ) আরো বলেছেন কিয়ামত খুব নিকটবর্তী কেউ যদি একটু অবসর পায় সে যেনো অন্তত একটি গাছের ছারা রোপন করে। এভাবে ইসলাম আমাদেরকে গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে।
রাইসুল পরদিন গাছ লাগানোসহ যাবতীয় কাজ শেষ করল। রাইসুলের হাতে সময় খুব কম। কারণ, আর একদিন পর তাদের স্কুল খোলা। তাই কালকেই তাকে ঢাকায় চলে যেতে হবে। পরদিনই সে ঢাকায় চলে গেল। রাইসুল বন্ধুদেরকে ছবি আর ভিডিওগুলো দেখাল। গ্রামের ছবি আর ভিডিও দেখে বন্ধুরা খুউব খুশি হল। অনেকে অবাক হয়ে বলাবলি করল ‘দোস্ত, এমন সুন্দর দৃশ্য কি তোদের গ্রামের নাকি কাশ্মীরের!?’ ইতিমধ্যে আন্ত-স্কুল গ্রামীণ প্রামাণ্যচিত্র প্রতিযোগিতা শুরু হল। আন্ত-স্কুল গ্রামীণ প্রামাণ্যচিত্র প্রতিযোগিতায় রাইসুল তার তোলা ছবি আর ভিডিওগুলো জমা দিল। রাইসুল ‘জোনাক জ্বলা গাঁ’ বলে ছবি আর ভিডিওগুলোর নাম দিল। প্রতিযোগিতায় রাইসুলের ‘জোনাক জ্বলা গাঁ’ প্রথম স্থান অধিকার করল। পরদিন পত্রিকাগুলোতে রাইসুলের ‘জোনাক জ্বলা গাঁ’ শিরোণামে কভার নিউজ ছাপা হল। রাইসুলের গ্রামে যাওয়ার জন্য মামুন, রতন, সুজন বায়না ধরল। রাইসুল তাদেরকে কথা দিল আগামী ছুটিতে তাদেরকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে। রাইসুলের এমন ঘোষণায় বন্ধুরা দেখতে যাব ‘জোনাক জ্বলা গাঁ’ বলে আনন্দে চিৎকার করে উঠল।

সংবাদকর্মী, কবি ও কথাসাহিত্যিক
ফোন:০১৮২০১৪৭৬৫৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১২

মিমমা সুলতানা মিতা বলেছেন: আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক?

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

সুহৃদ আকবর বলেছেন: janatarnews24.com
পত্রিকার সাব এডিটর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.