নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ: বৈচিত্রময় স্বপ্নের কারিগর

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৯

মানুষ বড় অদ্ভুত জীব। প্রতি মুহূর্তে সে তার রঙ বদলায়। সাপের মত খোলস পাল্টায়। সকল প্রশংসা রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি মানুষকে সৃষ্টির সেরা হিসেবে তৈরী করলেন। সৃজন করলেন এই নিখিল বিশ্ব। বিছিয়ে দিলেন ‘মায়ার চাদর’। সৃষ্টিকূলের মধ্যে মানুষ হল সবচেয় আকর্ষণীয় এবং সুন্দরতম প্রাণী। সে জন্যই মানুষ হল ‘মায়ার প্রতিমা’। তার ভেতর দিলেন বিবেকবোধ। সাথে দিলেন ‘আল-কোরআন’। এরপর স্থান করে দিলেন সবার উপরে। মধ্যযুগের কবি চন্ডীদাসই প্রথম বোধহয় সেকথা বুঝতে পেরেছেন- তাইতো তিনি বলেছেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’ এ কবি জীবন নিয়ে কত গভীরভাবে চিন্তা করেছেন, কত আপন করে মানুষকে তিনি ভালোবেসেছেন! এটা তারই প্রমাণ হয়তোবা। যিনি মানুষকে এত সুন্দর করে, আশ্চর্য রকমভাবে সৃষ্টি করেছেন জানিনা তিনি কতইনা সুন্দর! মানুষ হল অন্য রকম এক রহস্যের আঁধার। তার পরতে পরতে শুধু রহস্য আর রহস্য। আশ্চর্যের থেকে আরও আশ্চর্য এই মানুষের জীবন। সে একদিকে হাসি গান আনন্দের সুর লহরি ছড়ায় অন্যদিকে দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্য জিনিস হচ্ছে মানুষ। মানুষের জীবন নিয়ে ভাবতে গেলে বড় অবাক লাগে। ভেবে ভেবে কোনো কুল কিনারা করতে পারিনা। এ জীবন নিয়ে, মানুষ নিয়ে কত জনইতো ভেবেছেন কিন্তু কেউ কুলিয়ে উঠতে পারেননি কোনোকিছু। এর রহস্যের জট খুলতে পারেননি কেউ। বড় বৈচিত্রময় এ জীবন, রহস্যময় মানুষগুলো। এই জীবনে কত মানুষইতো আমরা দেখি। কত মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটল, ঘটছে, আরো ঘটবে। কত মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠতা হল। ঘনিষ্ঠতা হবার পর কিছু মানুষের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়; মানে ঘনিষ্ট একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। আবার কোনো মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠতা হবার পর শেষমেষ একটা তিক্ত পরিসমাপ্তি ঘটে।
ছোট্ট এই জীবনে কত মানুষইতো আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেল। সে যে গেল আর ফিরে এলো না। হারিয়ে গেল সারাজীবনের তরে। এখনো তাদের কথা মনে হলে বুক ধুকপুক করে উঠে। চোখের কোণায় চিকচিক করে অশ্রুরাশি। কতক মানুষের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়। কারো কারো সাথে সারাজীবনে একবারও দেখা হয় না। কিছু মানুষ এমনও আছে যাদের সাথে সারাজীবনের তরে মাত্র একটি বারের তরে দেখার করার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। কই সে সমস্ত মানুষের সাথে আমাদের আর দেখাই হয় না। এমনওতো হতে পারে অনেককে আমরা দেখি কিন্তু সময় এবং বয়সের হাত ধরে সে মানুষের পুরো অবয়বে এত বেশি পরিবর্তন সূচিত হয়েছে যে তাকে আমরা চিনতেই পারি না। অথচ এক সময় সেই মানুষটিই কতইনা প্রিয় ছিল আমার বা আপনার! তখন একসাথে ঘুরতেন, ফিরতেন, চায়ের কাপ হাতে আড্ডায় মজে যেতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। গল্প করতে করতে কখন যে কাপের চা ঠান্ডা হয়ে যেতো সেদিকে খেয়ালই থাকত না। কখন সময় যেত টেরই পেতেন না। ভাবতেন, সে সময়গুলোকে যদি সোনালি ফ্রেমে করে বেঁধে রাখা যেত। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কত কিছুইতো চিন্তা করতেন, ‘আহ এভাবে যদি সারাজীবন একসাথে থাকা যেত তাহলে কতইনা ভাল হত।’ আবার ভাবতেন, ‘আমরা এক জন বুঝি আরেকজনকে ছাড়া থাকতেই পারব না।’ দেখা গেল এর কিছুদিন পরই হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো প্রিয় মানুষটি আপনাকে রেখে চলে গেল। হারিয়ে গেল অচিনপুরে। কিন্তু বিধাতার অমোঘ বিধান খন্ডানোর সাধ্য তার হয় না মানুষের। সে শুধু আপসোস করতে পারে সে শুধু দুঃখ করতে জানে। আসলে বিধাতার নিয়তির কাছে আমাদের সাধারণ মানুষদের আর কিইবা করার আছে। এমন কি শক্তি আছে যে তাঁর সিদ্ধান্তকে আমরা পাল্টাতে পারি।
মানুষ হল ভালবাসার খনি। সে ভালবাসতে জানে। মানুষের মত কবে কখন আর কোনো প্রাণী এমনভাবে ভালবাসতে পেরেছে কী তা স্পষ্ট করে আমরা কেউ জানি না। আসলে পারেনি। মানুষ যেমন ভালবাসতে জানে সেরকম ভালবাসার জন্য আবার মুখিয়ে থাকে। চিরকালই সে ভালবাসার কাঙাল। তীর্থের কাকের মত সে ভালবাসার জন্যই অপেক্ষা করতে থাকে। অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে অবিরত। একটু ভালবাসা পাবার জন্য সে সারাজীবনও পথ চেয়ে বসে থাকে। আশেপাশের মানুষজন বলে, ‘ও আর আসবে না, এতদিনে সে তোমাকে ভুলেই গেছে।’ সে বলে, ‘না ও এমন হতেই পারে না, সে আমাকে কথা দিয়েছে; সে আসবেই।’ মানুষ বড় আজব প্রাণী। প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে সে তার রূপ বদলায়। এই ভালোতো এই খারাপ। সে অনেকটা বৈশাখের আকাশের মতই। রোদ ঝলমলো উজ্জ্বল আকাশে হঠাৎ যেমন বৃষ্টি নেমে আসে সেও তেমন। তার মনটা হল হেমন্তের নীলাম্বরের মত। কোথাও আকাশের বুকে সাদা মেঘের ওড়াওড়িতো আবার কোথাওবা কালো আর বেগুনি মেঘপুঞ্জের সমারোহ।
মানুষ সৌন্দর্যের আধার। তার মত এমন সুন্দর মনোহর দৃষ্টিনন্দন আর কিইবা আছে। কী তার হাসি। কী তার কথা। তার কথায় যেন অমৃত ঝরে। তার হাসিতে যেন বিদ্যুৎ খেলা করতে থাকে। মনে হয় বুলবুলি পাখি বুঝি গান গাইছে। কী সুন্দর তার গঠনশৈলী। মনে হয় কোন শিল্পীর যুগ যুগান্তরের ফসল সে। সে কারিগর আর কেউ নয় আমার ‘মহান আল্লাহ’ ছাড়া। এমন মানুষও আছে যাদের দিকে একবার তাকালে দৃষ্টি সেখানেই থেমে যায়। চোখ ফেরাতে মন চায় না। শুধুই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। মানুষের সৌন্দর্যে হারাতে চায় এ মন। সৌন্দর্যের সাগরে হারিয়ে যাওয়াতেই যেন তার আনন্দ। সে ভাবে এতেই তার জীবন সার্থক হবে। জীবনতো সৌন্দর্য উপভোগের জন্যই। সৌন্দর্যের আরাদনা আর পুজা অর্চনা করেইতো মানুষের জীবন কাটে।
মানুষ কত কিছুকেইতো ভালবাসে। যেমন দরূণ একটি বাগানে সুন্দর একটি ফুল ফোটে রয়েছে। সকলেই সে ফুলের দিকে তাকিয়ে তার সৌন্দর্য উপভোগ করবে। পাশ দিয়ে যেতে পথিক সে সুন্দর ফুলটির দিকে একটিবারের জন্য হলেও চেয়ে দেখে নেয়। অপলক নেত্রে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে মুহূর্তের তরে হলেও। অনেকে আবার ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায় ভালবাসার মানুষটিকে দিবে বলে। ফুল হাতে পেয়ে প্রিয় মানুষটির মুখে হাসি ফুটে উঠে। ফুলতো চিরন্তর ভালবাসারই প্রতীক। তাইতো মানুষ জন্মদিনে, বিবাহ বার্ষিকীতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে থাকে। অনেকে আবার পশু পাখিকে ভালোবাসে। তবে মজার ব্যাপার হল। যে মানুষটি বিড়াল পোষে সে-ই আবার মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে বসে। মানুষকে সে গালি দেয় অথচ পশুর সাথে বসবাস করে। একদিকে মানুষকে গুলি করে মারে-অন্যদিকে মানবসেবায় সে অন্তপ্রাণ হয়ে উঠে। সমাজসেবক হিসেবে প্রমাণ দিতে তার কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। এ রকম ভালবাসার কোনোই দরকার নেই। এ যেন ফুটে থাকা বাগানের গন্ধহীন ফুলটির মতই। যে ভালবাসা মানুষকে সত্যিকার অর্থে মহৎ মানুষে পরিণত করতে পারেনা সে ভালবাসাতো অর্থহীন। এটি ভালবাসার নামে ফাঁকা বুলি আওড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। ভালবাসা হল শুধুই ভালবাসা। এটি হওয়া উচিত খাদহীন স্বর্ণের মত।
মানুষ ভালবাসতে জানে। ভালবাসার জন্য মানুষের মত আর কে এমন ত্যাগ স্বীকার করতে পেরেছে? ভালোবেসে সে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে পারে। অপরের উপকার করতে গিয়ে নিজের স্বার্থের ক্ষতি করে বসে এমন মানুষও ঢের আছে আমাদের সমাজে। অনেকেতো মানুষকে ভালবাসাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে। মানুষ কত কিছুকেই ভালবাসে। ফুল, ফল, পাখি, নদী, গান। অনেকে আবার দেশ ভ্রমণ করতে ভালবাসে। অনেক মানুষ এমন আছে মানুষকে ভালবাসার কথা বললে তারা নাক সিটকায়। এটা মানুষ সম্পর্কে না জানার কারণ আর একদিকে মানুষকে গুরুত্বহীন ভাবার কারণেও ঘটে থাকে। সে যদি জানত মানুষ সৃষ্টিকর্তার কত আদরের সৃষ্টি; স্বপ্নের সৃষ্টি। মানুষ সৃষ্টি করতে গিয়ে আল্লাহপাক ফেরেশতাদের সাথে আলোচনা করেছেন। বহস করতে হয়েছে। ফেরেশতারা কিছুতেই মানুষ সৃষ্টিকে মেনে নিতে পারেননি। মানুষ সৃষ্টির আগে ফেরেশতার ছিল তার প্রিয়ভাজন। ফেরেশতারাও তাদের চেয়ে অন্য কাউকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে দেখতে চায়না, চায়নি বলেই সে মানুষ সৃষ্টিতে ভেটো দিয়েছিল। আল্লাহপাক তাদের কথা শুনলেন না। তিনি মানুষ সৃষ্টি করলেনই। সাথে পৃথিবীতে চলার জন্য তাকে সকল কৌশল শিখিয়ে দিলেন। মান মর্যাদায় কর্মে সে ফেরেশতাদের চাইতে উপরের আসনে চলে গেল। কেউ চায়না অন্য কেউ তার চেয়ে মান মর্যাদায়, অর্থে, যশে, খ্যাতিতে উপরে চলে যাক। ফেরেশতারাও চাননি। এটা মানুষেরও একটা সহজাত প্রকৃতি।
মানুষের ভেতর কিছু অদ্ভুত স্বভাব রয়েছে, যা একদিকে ভাবনার অন্যদিকে হাস্যকরও বটে। দূরের জিনিসের প্রতি সে প্রচন্ড টান অনুভব করতে থাকে আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি সে অতি মাত্রায় কৌতূহল প্রবণ হয়। এ প্রসঙ্গে এডগার অ্যালান পো তাঁর লস অব ব্রিদ গল্পে বলেছেন, ‘কিন্তু মানুষের একটা অদ্ভুত স্বভাব আছে; যা অবশম্ভাবী আর নাগালের মধ্যেই রয়েছে-সেদিকে না গিয়ে ধেয়ে যায় দূরের দিকে-জানে, তা পেতে গেলে কয়লা হয়ে যাবে-তবুও ছোটে সেইদিকেই।’
প্রত্যেক মানুষই আলাদা প্রকৃতির। আলাদা চেহারার, আলাদা আচরণের, আলাদা বৈশিষ্ট্যের, আলাদা স্বভাবের। রঙে-ঢঙে সে অন্যের চেয়ে ভিন্ন স্বভাবের। একজনের চেহারার সাথে আরেকজনের মিল নেই। একজনের স্বভাবের সাথে অন্যজনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে সামান্য মিল থাকলেও থাকতে পারে পুরোপুরি মিল কিছুতেই পাওয়া যায় না। তাই বলে যে দুইজন মানুষ সমান হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সে নিজে যা নয় তা হতে চায়। অপরকে অনুসরণ করে চলে। এঞ্জেলে পাদ্রি শিশুদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে তোরোখানি বই আর হাজার হাজার সাময়িক খবরের কাগজে প্রবন্ধও লিখেছেন। তাঁর কথা হলঃ ‘যারা অন্যের মত হওয়ার চেষ্টা করে তাদের মত হতভাগ্য আর কেউ নেই। যদি সে নিজে শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে অন্যরকম কিছু হয়। এ পৃথিবীতে আপনারও নতুনত্ব আছে। আজ পর্যন্ত, সময়ের আদিকাল থেকে ঠিক আপনার মত কেউ জন্মায়নি, আর আগামী হাজার হাজার বছরেও ঠিক আপনার মতই আর কেউ কখনই জন্মাবে না। আধুনিক জীবন বিজ্ঞান থেকে জানা যায় আপনি হলেন আপনার বাবা আর মায়ের প্রত্যেকের দেওয়া চব্বিশটি অর্থাৎ আটচল্লিশটি ক্রোমোজমই জানিয়ে দিচ্ছে-আপনি যা তাই! আমরাম শিনফিল্ড বলেছেন, ‘প্রতিটি ক্রোমোজমে কুড়ি থেকে একশটা পর্যন্ত জিন থাকতে পারে-আর একটিমাত্র জিনই কোন কোন ক্ষেত্রে একজনের সারা জীবনধারাই বদলে দিতে পারে-ডেল কার্ণেগী’
মানুষ বড় প্রতিশোধ পরায়ণ। সে প্রতিশোধ নিতে ভালোবাসে। অপরের ক্ষতি করে সে আতœপ্রসাদ লাভ করে। অপরের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করে সে তৃপ্তির হাসি হাসে। সে একথা একবারও ভাবে না যে মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। সে নিজেও তো ভুলের ঊর্ধ্বে নয় তবুও সে অপরেরর ভুলকে কিছুতেই ক্ষমার চোখে দেখে না। সে নিজে খারাপ হয়েও অপরেরর নিকট থেকে ভাল কিছুর আশা করে। এটা মানুষের চিরন্তণ এক স্বভাব। কোনো জুয়াড়ি চায়না যে তার ছোট ভাইটি কিংবা তার ছেলেটি জুয়াড়ি হোক। কোনো গাঁজাখোর চায়না তার ভাইটি কিংবা ছেলেটি জুয়াড়ি হোক। কারণ সে জানে মদ পান, জুয়াখেলা কিংবা গাঁজা সেবন স্বাস্থ্য এবং কর্ম উদ্যমের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর।
এই পৃথিবীতে কত রকমের যে মানুষ আছে আর কত রঙের যে মন তার হিসেব নেই। মানুষের রঙ, গড়ন আর মন নিয়ে চিন্তা করলে বড় অবাক লাগে। কিছু কিছু মানুষের বুকের ভেতর এত বেশি পরিমাণ ভালবাসা আছে যে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। হিসেব করে কুল করতে পারিনা। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াতো পরের কথা। আর কিছু মানুষের মনের ভেতর এত বেশি অভিমান আর ক্ষোভ জমা থাকে যে তা আমাদের ধারণারও অতীত। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে কতটুকুইবা চিন্তা করতে পারি। মানুষের মন নিয়ে গবেষণা শুরু করতে পারি তবে এর শেষ কোথায় তা আমরা কেউ জানি না। মানুষ এতটাই অকৃতজ্ঞ যে সে অপরের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্বার্থ আদায় করে নেয়, ন্যায্য অধিকার দিতে কেউ রাজি হয় না। সবাই শুধু করুণা করতে জানে কেউ তাকে উপযুক্ত স্থানে বসাতে চায় না।
মানুষ এতটাই মুর্খ যে সে নিজে সংশোধন না হয়ে অপরকে সংশোধন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা অপরের পিছনে বদনাম করে তৃপ্তি পায়। সে জানেনা যে ব্যক্তিটির সমালোচনা করছে কিংবা বদনাম করছে সে তার থেকে অনেক গুণ ভালো। ভাল মানুষ চেনার একটা উপায় হল, সে মানুষের সমালোচনা আর বদনাম করে কিনা তা দেখা। খারাপ মানুষরাই মানুষের বেশি সমালোচনা করে থাকে। সমালোচনা করার সময় সে একবারও নিজের কথা ভেবে দেখে না সে আসলে কতটুকু ভাল। খারাপ মানুষ অন্যকে সংশোধন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর ভালো মানুষ নিজেকে সংশোধন করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কাজ বলে মনে করে।
মানুষের ভাবনাগুলে বড়ই অদ্ভূত প্রকৃতির। সুখের মুহূর্তগুলোর কথা স্বরণ করে সে ভাবে, আহ যদি সবকিছু পাল্টে দেয়া যেত। যদি অতীতের সোনালি দিনগুলো আবার ফিরে পাওয়া যেত। কিন্তু সে এ কথা জানে না যে, আসলে সে কিছুই পাল্টাতে পারে না, পাল্টাতে পারবে না। না অতীত না ভবিষ্যৎ। এসব ভাবা আর কল্পনার ফানুস ওড়ানো একই কথা। তবুও সে ভাবে আর হাপিত্যেস করে সময় কাটায়। এটাই তার ভাগ্য এরই নাম নিয়তি যা সে কিছুতেই ওলট পালট করতে পারবে না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে আর বলবে এটা ওভাবে না হয়ে এভাবে হলো ভালো হত। তার কথা শুনে উপরের আকাশে বসে ‘আল্লাহ’ মুচকি হাসেন আর বলেন, ‘হায়রে বোকা মানুষ তোমরা তো আমার হাতের পুতুল ছাড়া আর কিছুই না। তোমাদের কিইবা এমন দাম আছে আর কতটুকুইবা ক্ষমতা আছে। এ মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি এই মাটিতেই তোমরা ফিরে যাবে।’ তবুও মানুষ বারবার সে কথাটিই ভুলে যায়। ভুলের মাঝে সে বসত করে। ভুলকে ভালোবেসে সে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়। ভুল পথে হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে সে আবার তার আসল ঠিকানায় ফিরে আসে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে মানুষের সম্পর্কে আলোচনা করা মোটেই সম্ভব নয়। এতো শুধু কাঁচা হাতে লেখা ভাসা ভাসা একটা চিত্র তুলে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। কিছুটা ‘মরণ বিলাস’ উপন্যাসের ‘মাওলা বক্স’ মানুষ সম্পর্কে যে সংকীর্ণ ধারণা পোষণ করেছিল সেই রকমই হল এই মানুষ আর মানুষের জীবন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.