নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ ভরা বাদর মাহ ভাদর ...শূন্য মন্দির মোর

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৪

আকাশে কখনো ঝকঝকে রোদ, কখনো সাদা মেঘের ঘনঘটা। সাদা মেঘ আর কালো মেঘপুঞ্জের এদিক সেদিক ছোটাছুটি। আবার কখনোবা গুমুর গুমুর মেঘের গর্জন। হঠাৎ আঁধারে ছেয়ে যায় চারদিক। এরপর নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি। এরকমই চিত্র দেখা যায় ভাদ্র মাসে। আষাঢ় শ্রাবণ দুইমাস বর্ষাকাল হলেও ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক মাস পর্যন্ত বর্ষা স্থায়িত্ব লাভ করে। বাংলার ষড়ঋতুর অন্যতম এক অনুষঙ্গ হল এই বর্ষা। তবে আশংকার কথা হলো, ইদানিং বর্ষার বর্ষণ তুলনামূলক অনেক কমে গেছে। ছোটবেলায় যে রকম অবিরাম ধারায় বৃষ্টি হতে দেখতাম এখন সে রকম হয়না। আগেকার দিনে দশ-পনের-বিশদিন পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাত হত। বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে মানুষ অতিষ্ট হয়ে যেত। ছেলেমেয়েরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারত না। মা-চাচীর মুখে বৃষ্টির দিনের সেই অলস মুহূর্তগুলোর গল্প শুনেছি। শুনেছি কাঁথা সেলাই করার গল্প। বাখারি চাঁচার গল্প। ধান বানার গল্প। গীত গাওয়ার গল্প। এখনো গল্প করতে করতে মা চাচীরা আপসোস করে বলেন, ‘আহ! সেসব দিনের কথা কী ভোলা যায়!’ ঠিক রবী ঠাকুরের গানের মতোই যেন তাদের সেই আক্ষেপ ‘পুরোনো সেই দিনের কথা বলবি কিরে আর..’
বৃষ্টি কম হওয়ার কারণ হিসেবে পাহাড় কাটা এবং যত্রতত্র গাছ কাটাকেই দায়ী করেছেন পরিবেশবিদরা। আমরা খালি চোখে দেখলে দেখব, যেখানে গাছপালা বেশি থাকে সেখানে বৃষ্টিপাতও বেশি হয় গাছ কম থাকলে বৃষ্টিপাত কম হয়। যেমন, আরব দেশগুলোতে বৃষ্টি খুবই কম হয়। সে কারণে সৌদি আরবে হজের সময় হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটাতে দেখা যায়। এ পানি ছিটানোর ফলে আগত হজ যাত্রীদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমে আসে। বর্তমানে আমাদের দেশে যে হারে গাছ কাটা হচ্ছে এতে পরিবেশ মারাত্নকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বনখেকো আর ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ট আমাদের দেশের বন বনানী আর পাহাড় সমূহ। এভাবে চলতে থাকলে বৃষ্টি আরো কম হবে বলে ধারণা করেছেন আবহাওয়াবিদরা। আমরা হয়ে যেতে পারি মরুভূমির দেশের বাসিন্দা।
মধ্যযুগের কবি চন্ডীদাসের বিখ্যাত উক্তি ‘এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর’। এখানে কবি ভাদ্র মাসের চিরাচরিত রূপ তুলে ধরেছেন। কবির দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় কবিতাটি অসাধারণত্ব লাভ করেছে। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা নর-নারীর অব্যক্ত মনের বেদনার কথাই কবি এখানে বলেছেন। এ রকম কবিতার লাইন বাংলা কবিতায় আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। একটি মাত্র লাইনের যে তাৎপর্য তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কবিতাটি সংক্ষিপ্ত তবে যথার্থ। সংক্ষিপ্ত পরিসরে বললে, বলতে পারি- ভরা বর্ষাকাল। বর্ষার অথৈ পানিতে পথ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল সর্বত্রই ভরে গেছে। পুকুরগুলো পানিতে টইটুম্বুর। কোকিল ডাকছে গাছের ডালে। পাটিপাতার বনে ব্যঙ ডাকে গ্যাঙর গ্যাঙ। এ সময় একলা ঘরে বসে আছে নববধূ। বসে বসে ভাবছে স্বামীর কথা। দূর পরবাসে থাকা তার পতিধনের কথা। স্বামীহীন একটা নারীর জীবন কত যে অসহায় সে কথাই কবি এ লাইনটিতে তুলে ধরেছেন। পতিহীন নারী যেন শুষ্ক মরুভূমির মতই। পতির গুরুত্বের কথা এখানে বলা হয়েছে। স্বামীহীন নারীর মনের আকুতি, অব্যক্ত বেদনা, মনের জ্বালা-আবেগ, দেহের ক্ষুধা মিটাবার আর কেইবা আছে। তাইতো বর্ষা এলে পৃথিবীর সকল নারী তাদের স্বামীর কথা ভাবে। প্রেমিক তার প্রেমিকার কথা ভাবে। মনে মনে তাদের ছায়ামূর্তি অঙ্কণ করে। তাদের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারি হয়। নাড়া দিয়ে উঠে হৃদয়। ধুকপুক করে উঠানামা করে বুক। কবি অন্য জায়গায় বলেছেন-‘এমন দিনে তারে ভোলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়।’ শুধু যে নারীদের কথা বলা হয়েছে এমনটি নয়; পুরুষদের কথাও বলা হয়েছে এখানে। স্বামী দূরবাসে বসে কাজের ফাঁকে স্ত্রীর কথা ভাবে। ভেবে ভেবে সে সারা হয়। ইচ্ছে হয় পাখি হয়ে এখনি দেশে চলে যেতে। স্ত্রীহীন এ জীবন আর ভাল লাগে না। স্বামীর জীবন যেন আর চলে না। পরস্ত্রীর চোখে চোখ পড়তেই তার স্ত্রীর কথা মনে পড়ে। একমাত্র নারীই পারে পুরুষের মনে জোয়ার আনতে, হৃদয়কে ভরিয়ে তুলতে নারীর বিকল্প কিছুই নেই। পুরুষের মরুভূমিময় জীবনকে সজীব করতে নারীর জুড়ি নেই। স্ত্রী ছাড়া একজন নারী যেমন চলতে পারে না; ঠিক তেমনি নারী ছাড়াও একজন পুরুষ অসহায়। পুরুষ যেন সাহারার মরুভূমি, নারী যেন চৈত্রের শুষ্ক জমি। একজন স্বামীর জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে একজন ভালো স্ত্রী। স্ত্রী তার রঙ দিয়ে স্বামীর জীবন রাঙিলে তোলে। নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তাইতো বর্ষা এলে নারী-পুরুষ একে অপরকে কাছে পেতে চায়। প্রিয়মানুষের সঙ্গ প্রত্যাশা করে মানুষ। তাইতো তাদের আকুতি- “এ সখি হামারি দুঃখের নাহি ওর এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.