নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলমান ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন: পুলিশের গুলি ও মুনাফাখোর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫

আমরা হলাম হুজুগে বাঙালী। ধর বললে ধর, মার বললে মার। ধর-মার, কাটকাট অবস্থা থাকে আমাদের সব সময়। সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার মতো লোকের এখানে বড়ই অভাব। কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হলে আগে সে সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জেনে নিতে হয়। অধ্যয়ন করতে হয়। মানুষের মনোভাব জানতে হয়। গভীরভাবে ভাবতে হয় বিষটিকে নিয়ে। তারপর সে বিষয়ের উপর কলম ধরতে হয়। উপরের ঝকঝকে আবরন থেকে ভিতরের রক্তান্ত তের কথা ভুলে থাকলে চলবে না। না হয় পিছলে পড়ার সম্ভাবনা কিংবা ভুল তথ্য পরিবেশন করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কেননা আমরা কে-উ বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত নয়। আর কোনো মানুষই আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমি আমার লেখায় তিনটি বিষয়ের অবতারনা করার চেষ্টা করব। প্রথমত, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও শিকের উপর পুলিশের নির্দয় গুলিবর্ষণ। তৃতীয়ত, অধ্যয়নরত শিার্থীদের থেকে মুনাফাখোর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোটা অংকের সেমিস্টার ফি আদায়।

এক. ছাত্রদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন: জয়বাংলা, ভ্যাট সামলা! দেহ পাবি, মন পাবি, কিন্তু ভ্যাট পাবি না! গুলি কর, নো ভ্যাট, আমার বাবা কৃষক, এটিএম বুথ না। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরকে এভাবে নানান ধরনের কথা আর স্লোগান দিয়ে ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন করতে দেখা গেল। গত ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর একটার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। সেখান থেকে সারাদেশে এর অনল ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পুরো দেশই একরকম আন্দোলনের আগুনে উত্তপ্ত বলা যায়।
বর্তমান বাজেটে সরকার শিাখাতে শতকরা সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে। মূলত তা নিয়েই ছাত্রদের আন্দোলন। তাদের সাফ কথা তারা ভ্যাট দিতে পারবে না। অনেক ছাত্র আগ বাড়িয়ে এও বলেছেন যে আমরা সেমিস্টার ফি বাবদ ৪০/৫০ হাজার টাকা দিতে পারব কিন্তু ভ্যাট বাবদ ৭/৮ হাজার টাকা দিতে পারব না।
আমাদের সকলের মনে একটা বদ্ধমূল ধারনা রয়েছে যে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীই ধনীর ঘরের সন্তান। সে কথাটা একটা প্রচারণা মাত্র। আমার জানা মতে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এমন শিার্থী রয়েছে তারা জমি বিক্রি করে, ধারদেনা করে, প্রাইভেট টিউশনি করে এমনকি চাকরি করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের একটাই আশা একটা সার্টিফিকেট। তাদের একটাই স্বপ্ন পড়ালেখা শেষে একটা ভালো চাকরি। মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানো। ছাত্রদের এ ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে আমি পুরোপুরি একমত। ছাত্ররা ভ্যাট দিয়ে পড়তে যাবে কেন? সরকারের কি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। আমার বলতে হাসি পাচ্ছে যে, আন্দোলনের পরদিন মোবাইল ফোনে একটা মেসেজ আসে, তাতে লেখা ছিল ভ্যাট দিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ ছাত্ররা নয়। আমার প্রশ্ন জাগে-বিশ্ববিদ্যালয়ের কি টাকার গাছ আছে? তারাতো ছাত্রদের থেকেই আদায় করবে। তারা যে রকমভাবে গলায় ছুরি চালানোর মত শিার্থীদের থেকে সেমিস্টার ফি আদায় করছে।

দুই: পুলিশের গুলি: আমাদের পুলিশকে কারণে অকারণে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। তা কিছুটা বাংলা কষ্ট ছবির সোনামিয়া ছরিত্রের মতো। রক্ত না দেখলে সোনামিয়ার ভালো লাগে না। সোনামিয়ার মতো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীরও গুলি করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রক্ত না দেখলে পুলিশ বাহিনীরও ভালো লাগে না। ইস্ট ওয়েস্ট ভার্সিটির ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনরত শিার্থীদেরকে অনেক চেষ্টা করার পর যখন সরাতে পারল না তখন তারা গুলি ছুঁড়ে। ছাত্ররা কি এমন অপরাধ করেছিল তাদের উপর গুলি করতে হবে। তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়েল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। আমার জানা মতে তারা তো কোনো ধরনের গাড়ি ভাংচুর করেনি। গুলিতে ২৫ জন ছাত্র আহত হয়। তদের ভেতর ছয় জনের অবস্থা আশঙ্কাজন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। জানিনা তাদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি আছে। তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে পারবে কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার তাসফিকুল ইসলামের হাতে গুলি লেগে পরনের শার্টটি রক্তাক্ত হয়ে গেছে। ফেসবুকের সুবাধে ছবিটি দেখতে পাই। স্যারের গুলি খাওয়া দেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জোহা স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। জোহা স্যার ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য শহীদ হয়েছিলেন।

তিন. মুনাফাখোর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: ফরহাদ মজহার বলেছেন একটা “এখন সে সব কিছুকে পায়ে মাড়িয়ে মুনাফাখোর বিশ্বব্যাংকের উচ্চশিা সংস্কার নামক গোল্লা গিলতে গিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও হাঁটছে মুনাফাখোর হওয়ার পথে।” উন্নত পড়ালেখা, বিদেশী ডিগ্রীধারী শিক আর সেশনজট মুক্ত শিার জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই। সেখানে অধ্যয়নরত শিার্থীদের কেউ কেউ জোর গলায় এ কথা বলেন। তাই বলে এ অজুহাহে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে হারে সেমিস্টার ফি আদায় করছে তাতে মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থা। তাহলে গরীব ছাত্ররা কিভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করবে? এমন কোনো কথা নেই যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ধনীর ঘরের ছেলেরাই পড়তে পারবে। বাংলাদেশে এখন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায় নামক দুই ধরণের শিা ব্যাবস্থা চালু আছে। অনেকে বলেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা হয় না। সেখানে ডেটিং-ফেটিং ওসব কিছু হয়। আর টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। তবে আমি তা বিশ্বাস করি না। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম তফাৎ হল , উচ্চশিা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পণ্য। শিাকে পণ্য বানাবার উদ্দেশ্য রাস্ট্রের চিন্তার চৌহদ্দির মধ্যেও ছিলনা বলে আমাদের সংবিধান কিংবা '৭৩এর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ইত্যাদি এক একটি ছিল বৈষম্যমুক্ত সার্বজনীন শিাঙ্গন তৈরীর প্রতিা। “মুহিত কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ধরনের আন্তর্জাতিক অর্থ প্রতিষ্ঠানে, যাদের কাজ ছিল তৃতীয় বিশ্বকে আরও গরিব করে রাখা এবং দুনিয়াজুড়ে মুনাফালোভী কর্পোরেট অর্থনীতির পথ সাফ করা। শিাকে প্রাইভেট খাতে তুলে দেয়া নিউ লিবারেল অর্থনৈতিক সংস্কারেরই অংশ। এই নীতির সারকথা হচ্ছে, আপনার জীবন কর্পোরেশনে মুনাফার জন্য বিক্রি করে দিতে হবে। সমাজ বা রাষ্ট্র বা সমাজ থেকে কিছু চাওয়ার নাগরিক অধিকার আপনার নেই। পড়তে চাইলে আপনাকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে উচ্চ হারে শিা খরচ দিতে হবে যাতে ইউনিভার্সিটির মুনাফা হয়। টাকা ব্যক্তির পকেটে যায়।” (ফরহাদ মজহার-গুলি কর, নো ভ্যাট ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দৈনিক দিনকাল)।

এখন ও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদেশের মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তদের উচ্চশিার প্রধান অবলম্বন। ল ল প্রতিযোগীর মধ্য থেকে মেধার পরীায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিবছর অল্প কয়জন শিার্থী পাহাড়সময় স্বপ্ন নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তাদের সে স্বপ্নকে শেষতক এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটুকু শাণিত করতে পারে তা বেশ তর্কসাপে মনে হয় আমাদের কাছে। একবার আইন বিভাগেরই একজন শিক বলেছিলেন , “এখানে শিার্থীরা ঢুকে বাঘ হয়ে আর বের হয় বিড়াল হয়ে।” ফরহাদ মজহার বলেছেন, “ছেলেমেয়েরা সরকারি শিাব্যবস্থা নামক জাহান্নামের ভেতর দিয়ে কিভাবে পাস করে বের হয় তা অবিশ্বাস্যই বলতে হয়।”
“কত খরচ হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে? একটি দৈনিক পত্রিকার খরবে দেখলাম ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক শিার্থী জানিয়েছে, তার বিবিএ কোর্স করতে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ টাকা খরচ হবে। নতুনভাবে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় অতিরিক্ত তাকে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা গুনতে হবে। আরেক শিার্থী জানিয়েছে, ১২ সেমিস্টারে তার খরচ হবে প্রায় ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। নতুন ভ্যাট কার্যকর হলে তাকে আরও ৬৫ হাজার টাকা গুনতে হবে (দেখুন ‘স্তব্ধ ঢাকা’, ‘মানবজমিন’ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। যারার কর্পোরেট বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারা সবাই ধনীর দুলাল-এর চেয়ে মিথ্যা ও বাজে প্রচারণা আর কিছুই হতে পারে না। জমি বেচে ধারদেনা করে অনেকেই পড়ছে। একটি প্ল্যাকার্ডে দেখলাম ছাত্ররা বলছে, ‘আমার বাবা এটিএম বুথ না’। অর্থাৎ টিপলেই পিতার বুথ থেকে টাকা গড়িয়ে পড়বে, অর্থমন্ত্রীর এই অনুমান ঠিক না। এই প্ল্যাকার্ডের মানে হচ্ছে অধিকাংশেরই আয় সীমিত। (ফরহাদ মজহার- গুলি কর, নো ভ্যাট; ১৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক দিনকাল)।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যের মধ্যেই বাস করে। কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের আয়ের উপর দাঁড়াতে হবে ? এদেশে হলমার্ক আর বিসমিল্লা গ্র“প, হলমার্ক কেলেংকারি, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট, রাজনীতির দুবৃত্তায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া বৈধ। কেবল জাতীয় ঠকবাজদের অবলীলায় হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেয় বৈধ হয়ে যায়। কেবল অবৈধ হয়ে যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গরীব শিার্থীদের পেছনে টাকা খরচ করা।
আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের বলব, আপনারা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তা ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন। পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ যে আপনাদেরকে আন্দোলন থেকে হটাতে পারেনি তাতে আমি কিছুটা মুগ্ধ। আপনাদের সম্মিলিত আন্দোলন দেখে ৫২ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ছবি ভেসে উঠে চোখের সামনে। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের সাথে সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালগুলোর মুনাফাখোরীর বিরূদ্ধেও আন্দোলন করার উপযুক্ত সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.