নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমের গল্প `মোহ\'

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭


এক. জীবন চলার পথে এমন কিছু মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে যার ফলে পুরো জীবনটাই পাল্টে যায়। জগলু ভাই সে রকমই একজন মানুষ। কথা বলতেন কম। শরীরের গড়ন ছিল হালকা পাতলা। ছিলেন বাস্তববাদী একজন মানুষ। অযথা আড্ডা দিতেন না। ফাও প্যাঁচাল ফাড়া লোকদের একদম পছন্দ করতেন না। তবে মনটা ছিল রজনীগন্ধার মতই সাদা। এসব কারণে আশপাশের মানুষদের কাছে জগলু ভাইয়ের আলাদা একটা ব্যক্তিত্ব আর চরিত্র ফুটে উঠেছিল। জগলু ভাই আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আপন ভাইয়ের মত জানতেন। আমি ওনাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করতাম ভালোবাসতাম। বয়সের ব্যবধান থাকলেও আমরা ছিলাম বন্ধুর মতো। তিনি প্রায়ই এমন সব জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন যার আগাগোড়া কিছুই বুঝতাম না। বিশ্বাসও করতে চাইতাম না। সে সব দিনের কথা ভাবলে বড় অবাক লাগে। কথায় আছে- ‘গরীবের কথা বাসি হলে ফলে।’ যাক এতদিন পর হলেও বুঝতে পেরেছি জগলু ভাইয়ের কথা। জগলু ভাই বলতেন “দোলন, সবেতো ঢাকায় এসেছো। জীবন বড় কঠিন। কাউকে বেশি ভালোবাসতে যেয়ো না। খুব বেশি প্রশ্রয়ও দিবা না। তাহলে তার শূণ্যতা তোমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিবে। তখন পুরো জীবনটাই তোমার রসকষহীন শুষ্ক মরুভূমির মত হয়ে যাবে।” তখন এ কথাগুলোকে আমার কাছে অতি সাধারণ এবং হালকা ধরণের বলেই মনে হত। এ কথা সত্যি যে কখনো কখনো কিছু মানুষ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমন কিছু স্মৃতি থাকে যাকে কখনো ভোলা যায় না; কিছু মানুষ হঠাৎ করে আসে হঠাৎ করেই চলে যায় শুধু রেখে যায় ভুলে না যাওয়ার মত কিছু অনুভূতি, দুষ্টুমি আর খুনসুটির মধুমাখা স্মৃতি। এ জীবনে অনেক কিছু ভুলে গেছি। অনেক প্রিয় মুখ ঝাপসা হয়ে গেছে চোখের সামনে। জগলু ভাইকে আজো আমি ভুলতে পারিনি। জগলু ভাই প্রায়ই আমাকে এসব কথা বলতেন। ইচ্ছে ছিল ঢাকায় যতদিন থাকব জগলু ভাইয়ের সাথেই থাকব। মানুষের সব ইচ্ছা বিধাতা পূরণ করেন না আমারও আর থাকা হল না জগলু ভাইয়ের সাথে। এক বছর জগলু ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। গ্রামে একটা দাতব্য হাসপাতাল করার স্বপ্ন ছিল। সেখানে গরীবদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। এ স্বপ্নের কথা প্রায় আমাকে বলতেন। জগলু ভাই আজ আর আমাদের মাঝে নেই। দূরারোগ্য ক্যান্সার জগলু ভাইকে আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়েছে। জগলু ভাই এখন দূর আকাশের তারা। হয়েছেন মায়াবী জগতের বাসিন্দা। জানিনা এখনো সেই দাতব্য হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন কিনা।
দুই. বাবলু ভাইয়ের মাধ্যমে শাবন্তীর সাথে আমার পরিচয় হয়। কোনো এক কারণে আমাকে পূর্বের বাসা ছেড়ে দিতে হল। এক রাতে পুলিশ এসে বাসায় রেড দেয়। সে রাতে নয়জনকে ধরে নিয়ে গেল। সে এক দুঃসহ কালো রাত্রির গল্প। সকালে উঠেই চাচাতো ভাইয়ের বাসায় চলে গেলাম। প্রথম প্রথম যতœআতিœ ভালই করল। তারপর একদিন চাচাতো ভাই মুখ ফুটে বলেই ফেলল বাসা দেখার জন্য। জীবন কত কঠিন আমি সেদিন বুঝলাম। অনেকে এমন আছে হাসিমুখে কথা বলে বটে তবে দায়িত্ব নিতে কেউ চায় না। এদিকে ভিতরে ভিতরে আমিও বাসা খুঁজতে লাগলাম। বাসা কি আর সহজে পাওয়া যায়। প্রায় পনের দিন ওখানে থাকার পর বাবলু ভাইয়ের বাসায় উঠলাম। সেই থেকে বাবলু ভাইয়ের সাথে আছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে বাবলু ভাইয়ের সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক তৈরী হল। তিনি আমার সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন, গল্প করতেন। তার জীবনের অনেক কথা আমার সাথে শেয়ার করতেন। একদিন বললেন, ‘চল আজ তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব’। হাঁটতে হাঁটতে আমাকে নিয়ে হাতিরঝিলে চলে গেলেন। রামপুরা দিক থেকে হাতিরঝিলের দুই নম্বর ব্রিজে গিয়ে দেখি দুইটি মেয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাবলু ভাই আমাকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পুষ্পিতা, “ও হল আমার ছোট ভাই একসাথে থাকি, আর ও হল শ্রাবন্তী পুষ্পিতার বান্ধবী”। বুঝতে বাকী রইলনা যে পুষ্পিতা নামক মেয়েটির সাথে ভাইয়ার একটা কিছু চলছে। এদিকে শ্রাবন্তী নামক মেয়েটিকে দেখা মাত্রই আমি পছন্দ করে ফেলি। এক কথায় ওর প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। অনেক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। না কোনো খুঁত ধরতে পারলাম না। নিটোল স্বাস্থ্যের অধিকারী ফিটফাট ফিগারের একটা মেয়ে। এক কথায় অল দ্য বেস্ট। কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাইনি। আমার চোখে তাই রাজ্যের তৃষ্ণা। আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। আমি শুধু শ্রাবন্তীর দিকে তাকিয়েই রইলাম। ও বলল আমি ‘ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি’তে বিবিএ পড়ছি। থাকি বনশ্রীতে। দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ। আপনি কি করেন?’ ও এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল। এ পর্যন্ত কোনো মেয়েকেই আমার পছন্দ হয়নি। চেহারা ভালো তো সাইজে ছোট। স্বাস্থ্য ভালো তো দাঁতালো। একেবারে ভূতের মত। দেখতে সুন্দর তো দুর্ভিক্ষপীড়িত শরীর। ভাবলাম, “দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেক বেলা, অনেকদিন পর একটা পারফেক্ট মেয়ে পেয়েছি; এবার শুরু করি প্রেম খেলা”। শ্রাবন্তীর শরীর থেকে এক ধরণের সুভাস বের হল। সে গন্ধে আমি মোহিত হয়ে গেলাম। শরীরের অণুপরমাণুগুলো শ্রাবন্তীর জন্য চটপট করতে লাগল।
তিন. শ্রাবন্তী খুব সুন্দর করে কথা বলত। হাসলে ওর মুখের উপর টোল পড়ত। তখন মনে হত পৃথিবীর সব হিরামুক্তামাণিক্য বুঝি ওর মুখ দিয়ে ঝরে ঝরে পড়ছে। ভাবতাম, কত সরল সোজা এই মেয়েটি। ও মাঝে মাঝে উদ্ভট কিছু প্রশ্ন করত আমাকে। যেমন, ‘আচ্ছা ঘোড়া কি ডিম পাড়ে? ‘হাতি কেন কলাগাছ খায়’? এভাবে ওর সাথে কাটানো সময়গুলো ভালই যাচ্ছিল। সেই বিকেলগুলো ছিল স্বর্ণের মত দামি। মুহূর্তগুলো ছিল ফুলের চেয়ে সুন্দর। আমরা দু’জন দু’জনকে নিয়ে মেতে থাকতাম। বাসায় আসলে শ্রাবন্তী আমার খবর নিত, “ঠিকমত বাসায় পৌঁছেছ? ভাত খেয়েছো? এখন কি করছ সোনা?” আরো কত রাজ্যের কথা যে ও বলত। আছি ছিলাম ওর কথার মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা। ঘুম পাড়ানি গানের মতই ছিল ওর কথাগুলো। কত রাত যে ওকে কথা বলতে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। পরদিন ঠিকই ওর কিল খেতে হয়েছে আমাকে। মেয়েদের কিল খেতে একটু আরামই লাগে। তাই আমি ইচ্ছা করেই এমনটা করতাম।
চার. প্রতিদিন বিকেলে আমরা ঘুরতে বের হতাম। গোটা ঢাকা শহরই আমরা চষে বেড়িয়েছি। আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, জাদুঘর, সামরিক জাদুঘর, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, সোনারগাঁও, ফেন্টাসি কিংডম থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত। হাতিরঝিল ছিল আমাদের পছন্দের একটা জায়গা। এক বিকেলে পুরো হাতিরঝিল এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হেঁটেছি। হাঁটতে হাঁটতে ও আমার কাঁধে ঝুলে পড়ল। আমাকে চিমটি কাটল। আমার সাথে খুনসুটি করল। ভাবতাম, এগুলো করে ও বোধহয় আমার সাথে মজা পায়। ওর সুখই তো আমার সুখ। একবার আমরা সুন্দরবনে গিয়েছিলাম। ওখানকার পরিচিত এক বন্ধু আমাদের জন্য দুইটা রুম ভাড়া নিয়েছিল। রাত একটার সময় ওয়েটারকে মেনেজ করে ও আমার রুমে চলে এল। বলল, “রুমে একা ভয় করছে, তাই তোমার এখানে চলে এলাম।” আমি বললাম “কি লজ্জার কথা! তুমি একটা মেয়ে মানুষ এতরাতে একা আমার রুমে কেউ দেখলে কেলেংকারি ঘটে যাবে।” ও বেশি কথা বলল না। শুধু বলল-“এখন রাখবে কিনা বলো।” দেখলাম ওর শরীর কাঁপছে। চোখের কোণায় পানি চিকচিক করছে। আমি আর না করতে পারলাম না। সে রাতে শ্রাবন্তী খুব সুন্দর করে সেজেছিল। অমার সাথে সারারাত গল্প করল। আমার কোলো শুয়ে, আমার কাঁধে মাথা রেখে আরো কত ছেলেমানুষি করল। আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল। ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করল। অজানা এক পুলকে শরীরের রক্তকণিকাগুলো আগুনের লাভার মত ফুটতে লাগল। আমার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। এক সময় বাঁচার জন্যই আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম অথৈ সাগরে। সমুদ্র মন্থন করে কুলে উঠতেই সকাল হয়ে গেল। এরপর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙল। তখনও অতলান্ত ফেনিল সমুদ্রের চিহ্ন আমার শরীরে লেগে আছে। লজ্জায় আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। পৃথিবীর সকল সুখ আর আনন্দ যেন ওই হোটেল কক্ষে এসে জড়ো হয়েছিল। ও তখনও ঘুমোচ্ছিল। শ্রাবন্তীর ঘুমন্ত মুখখানা দেখে ভারি মায়া লাগল। মানুষের ঘুমন্ত মুখ যে এত নির্মল হয় তা আমি সেদিন আবিষ্কার করলাম। সেই থেকে ওর মায়ার বন্ধনে গেলাম। ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়াতেই চোখ মেলল শ্রাবন্তী। ও একটু করে হাসল। সে হাসি তৃপ্তির নাকি তাচ্ছিল্যের তা আমি বুঝিনি।
পাঁচ. শ্রাবন্তীর সাথে কাটানো এক একটি দিন আমার কাছে স্বপ্নের মতই ছিল। ও ছিল আমার স্বপ্নের রাণী। প্রতিদিন কলেজ থেকে বাসায় গিয়ে আমাকে ফোন দিত। বলত, আমি বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বের হচ্ছি তুমিও বের হও। আজকে তুমি নীল রঙের টি-শার্টটি পরবে কিন্তু। ও আচ্ছা বেল্টের ঘড়িটি পরতে যেন ভুলোনা। তুমিতো আস্ত একটা ভুলো মনা। আমি বললাম আর কি? ও বলল, ‘আর একটা গাধা।’ এ প্রান্ত থেকে আমি শ্রাবন্তীর কথা শুনে হাসি। ভাবি, রমনী তুমি আছো বলেইতো আমি সব কিছু এত সহজে ভুলে যাই। ভাবতাম, মানুষ শুধু শুধু প্রেমকে খারাপ চোখে দেখে। প্রেম করা যে এত মজার জানলে আরো আগে প্রেমের খাতায় নাম লেখাতাম। যারা প্রেমের বিরোধী প্রেমের মজা বুঝলে তারাও এ প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেত। তখন বুঝিনি সুখের পরই আমার জন্য দুঃখের সাগর অপেক্ষা করছে। সহসাই দুঃস্বপ্নের কালোমেঘ সেই রঙিণ দিনগুলোকে আচ্ছন্ন করে ফেলল।
ছয়. সেদিন আমিই ওকে ফোন করলাম। রিসিভ করে বলল, “ও আচ্ছা দোলন, আমি বলতে ভুলেই গেছিলাম আমি একটু ধানমন্ডি লেকে এসেছি। আজকে বোধহয় আমাদের দেখা হচ্ছে না।” আমি বললাম, “ওখানে কে আছে?” “না মানে আমার এক বান্ধবী থাকেতো তার নাকি আমার সাথে একটা প্রাইভেট আলাপ আছে তাই”। এর পরদিন ও শ্রাবন্তী ফোন করলনা। আমিই তাকে ফোন করলাম। ফোন করে জানলাম আজকে ও চন্দ্রিমা উদ্যানে গেছে। বললাম, “তাহলে আমি চলে আসি। তুমি একা একা কিভাবে আসবে এখনতো রাত হয়ে গেছে। না তোমার আসতে হবে না। আমি একাই আসতে পারব।” আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমার মাথা ঘুরতে লাগল। রাতে আর পড়াশোনা হল না। বাহিরে গিয়ে একটা চা আর দুটো সিগারেট খেয়ে আসলাম। বাসায় এসেই শুয়ে পড়লাম। পরদিনও আমি ফোন করলাম। ফোন বিজি দেখায়। অনেক্ষণ পর ফোন রিসিভ করল “হ্যালো, আমি আজ দেখা করতে পারব না। আমার শরীর খারাপ।” “তাহলে আমি তোমাকে দেখতে আসি জান। তুমি কি কোনো কারণে আমার উপর রাগ করে আছ?” “ও না মানে আমি একটু দূরে আছি। গাজীপুরের সাফারি পার্কে আমরা আজকে এখানে থাকব। এখানে আমার এক খালা থাকেন রাতে তার বাসায় থাকব। কালকে আসলে দেখা হবে।” বললাম, “তুমি গাজীপুর যাবে আমাকে বললেই তো হতো। আমিই তোমাকে নিয়ে যেতাম।” “কেন প্রতিদিন আমাকে ফোন করা লাগবে”? বললাম, “কেন আমি কি কখনো তোমাকে ফোন করিনি।” “অনেক করেছ আর না করলেও হবে। আমি আজ রাতের ট্রেণে ময়মনসিংহ চলে যাচ্ছি।” পরে ওর বান্ধবী পুষ্পিতার কাছে জানলাম ও একটা ছেলের সাথে গাজীপুর ঘুরতে গেছে। ও নাকি তার মা-বাবার পছন্দের পাত্র।
সাত. অতিরিক্ত ভালোবাসা মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। আমিও শ্রাবন্তীর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিলাম বোধহয়। ওর সাথে পরিচয় হবার পর অনেক মানুষের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। এখন এটাই আমার নিয়তি। সব সময় আমি ওর কথাই ভাবতাম। কোথাও ঘুরতে গেলে তাকে মিস করতাম। কোনো মার্কেটে সুন্দর কোনো জামা দেখলে কল্পনায় তার গায়ের সাথে মিলিয়ে দেখতাম। ভাবতাম এ জামাটায় ওকে দারুণ মানাবে। ও বলত “তাহলে নিয়ে এসো।” এভাবে আমি ওকে অনেক জামা গিফ্ট করেছি।
আট. দীর্ঘ আট বছর পর স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় এসেছে শ্রাবন্তী। ওর স্বামী ময়মনসিংহ শহরের এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। এসে আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত দিল না। শ্রাবন্তীর বান্ধবী পুষ্পিতাই আমাকে খবর দিয়েছে। হায়রে নারী জাতি! হায়রে নিষ্ঠুর নিয়তি! হায়রে টাকা! এ টাকাই তো তাকে একদিন আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। হায়রে পাষানী নারী হৃদয়! তোমরা সারা জীবন টাকার পিছনেই ছুটলে সুখ খুঁজলে না। মনে পড়ে, এক সময় শ্রাবন্তী আমাকে কত ফোন করত! আমি দুই দিনের জন্য বাড়িতে গেলে ও আমাকে ফোন করে এসএমএস করে পাগল করে দিত। ও বাড়িতে গেলে আমি অস্থির হয়ে পড়তাম। এক সময় যাকে ছাড়া জীবনটাই অচল ভাবতাম আজ তাকে ছাড়াই দিব্যি খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুরে বেড়াচ্ছি। ঘর সংসারও করছি ঠিকঠাক। মানুষ বড় নিষ্ঠুর প্রাণী। পাষাণে গড়া তার হৃদয়। নিজে নিজেই হাসি আর বলি, হায়রে শ্রাবন্তী নামের মোহ। তুমি এসে আমার জীবনটাই পাল্টে দিলে।
নয়. সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলেও ভালোবাসার মানুষের জন্য একটা টান সব সময় থেকেই যায়। তা হতে পারে মৃত্যুর আগদিন পর্যন্ত। জীবিতাবস্থায় কেউ কারো মুখ দেখাদেখি করতে না চাইলেও অন্তত ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাক এটা সবাই চায়; তার করুণ পরিণতি কেউ প্রত্যাশা করে না। শুক্রবার ছুটির দিন। তাই সময় নিয়ে ঘুমোচ্ছিলাম। প্রতি শুক্রবার আনিকা স্পেশাল কিছু রান্না করে। আনিকা আমার ছোট খালার মেয়ে। এখন আমার বউ। যখন ছোট ছিলাম বাতাসী বলে তাকে ক্ষেপিয়ে তুলতাম। কারণ, ছোটবেলায় ও খুব চিকন ছিল। বিয়ের পর স্বাস্থ্য কিছুটা বেড়েছে। সে-ই আনিকা এখন আমার বউ! হঠাৎ আনিকার আঙুলের ছোঁয়ার আমি জেগে উঠলাম। বাহিরে তখন তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়। আমি আনিকাকে বিছানায় টানতে চাইলাম ও এলো না। বলল, আগে নাস্তা খেয়ে আসি, তারপর...। বিয়ের আগে ও আমাকে আপনি বলত এখন তুমি বলে সম্বোধন করছে। আমি আমার ছেলে অনিককে নিয়ে নাস্তার টেবিলে বসলাম। নাস্তা করতে করতে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলাম। একটি নিউজে চোখ আঁটকে গেল ‘ময়মনসিংহ শহরে এক মহিলার আতœহত্যা।’ একটু পর পুষ্পিতার ফোনো পুরো ঘটনা জানতে পারলাম। এক রাতে তার স্বামীর গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিটি ভূমিকম্পে ভেঙে যায়। সে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির গ্রাউন্ড ফ্লোরে নাকি মেয়েদের দিয়ে পতিতা ব্যবসা করত। প্রায় মাতাল অবস্থায় বাসায় ফিরত। শ্রাবন্তী প্রতিবাদ করলে ওর স্বামী তার উপর শারীরিক নির্যাতন করত। এক সময় যাকে ছাড়া জীবনটাই অচল ভাবতাম। এখন তাকে ছাড়া দিন চলছে। যাকে প্রতিদিন একবার না দেখলে রাতে ঠিকমত ঘুম হত না সে শ্রাবন্তীর সাথে আমার আর দেখাই হল না। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি এর নাম কি? ‘ভালোবাসা’ নাকি ‘মোহ’

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬

মিমমা সুলতানা মিতা বলেছেন: কাওকে কষ্ট দিয়ে কেও কখনো সুখী হতে পারেনা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

সুহৃদ আকবর বলেছেন: অনেকে সুখী হওয়ার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকে। আল্লাহ তাদেরকে সুখ দেন না।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

মিমমা সুলতানা মিতা বলেছেন: অর্থ দিয়ে সুখ আসেনা, ২টা ডাল ভাত খেয়েও সুখে থাকা যায়

৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬

সুহৃদ আকবর বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। কেউ অট্টালিকায় বাস করে কারো চোখে ঘুম আসে না আবার কুঁড়েঘরে বাস করে অনেকে নাক ডেকে আরামসে ঘুমায়। ওম শান্তি ওম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.