নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্মই আমার আজন্ম বৃথা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩২

আমার এ লেখাটা ত্রিশতম জন্মদিন উপলক্ষে লেখা। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে, আমার জীবন থেকে ত্রিশটি বছর চলে গেল! আমি একে একে ত্রিশটি বসন্ত পার করলাম। সকালে অফিসে গিয়ে দেখি, অনেকে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তাও আবার এসএমএস কিংবা কার্ড বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নয়। ফেসবুকের মাধ্যমে তারা আমাকে উইশ করেছে। যাক তাও আবার কম কীসের। তাদের কেউ আমার দৃশ্য বন্ধু, কেউ অদৃশ্য বন্ধু। দৃশ্য বন্ধু, মানে যারা আমার বাস্তব বন্ধু। খুব কাছের মানুষ। এক সময় যাদের সাথে আমি একসাথে থেকেছি, ঘুরেছি, চা পান করেছি, রাতের ঢাকায় হেঁটেছি। অলস সময় পার করেছি। জম্পেশ আড্ডায় মেতে উঠেছি। এ সকল বন্ধু আমার প্রতি আসলেই আন্তরিক। তাদের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। তাদেরকে আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি। সত্যি কথা বলতে কি তাদের ভালোবাসার জন্য আমি মুখিয়ে থাকি। তারা কখন বলবে ভাই আসেন একটু চা খাই, চলেন একটু ঘুরে আসি। এ ডাক শোনার জন্য আমি অপোয় থাকি। আর অদৃশ্য বন্ধু হলো, তারা যারা আমার ফেসবুক বন্ধু। যাদেরকে আমি কখনো দেখিনি। মানে সরাসরি,দেখা হয়নি। একসাথে ঘোরাঘুরি আর চা, নাস্তা করার তো প্রশ্নই আসে না। তারাও আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এর নাম হলো সামাজিকতা। এক বন্ধু আরেকজন বন্ধুর সাথে একাত্নতা প্রকাশ করা। এটা বলা যে, বন্ধু তুমি একা নও আমরাও আছি তোমার সাথে। তুমি এগিয়ে চলো সম্মুখ পানে। সকালের নতুন সূর্যের মতো আলোকিত হোক তোমার জীবন।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, জন্মই আমার আজন্ম বৃথা। সৃষ্টিকর্তা কেন যে আমাকে পয়দা করেছেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমার ভেতর তো কোনো যোগ্যতা নেই। আমি তো তাঁর কোনো হক আদায় করতে পারছি না। না মা-বাবার হক না ভাই-বোনের হক। না সমাজ এবং দেশের মানুষের সেবা করতে পারছি। আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমি হলাম পৃথিবীর এক বোঝা। শুধু শুধু এ পৃথিবীর আলো বাতাস অপচয় করছি মাত্র। আবার ভাবি, আল্লাহ যদি আমাকে সৃষ্টিই না করতেন তাহলে কতইনা ভালো হতো। পরকালে তাঁর সামনে জবাবদিহি করার ভয় থাকত না। জানিনা কবর কতইনা অন্ধকার। কিয়ামত কতইনা ভয়ংকর। জাহান্নাম কতইনা ভয়াবহ স্থান! জাহান্নামের এক মুহূর্তের শাস্তি সহ্য করার শক্তি আমার নেই। হে আল্লাহ, জাহান্নামের আগুন আমার জন্য হারাম করে দাও। জান্নাতে একটি মাত্র ঘর বানিয়ে দিও।
আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি। সেটা ছিল রক্ষণশীল একটা পরিবার। তবে আমাদের বংশ ছিল উন্নত। আমার বাবাকে দেখেছি, প্রচন্ড আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। আমাদের বাড়ির অনেক নামডাক ছিল। ছোটবেলায় শুনতাম, আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে লোকজন চলাচল করার সময় জুতা হাতে নিয়ে হাঁটত। এটা বাস্তব কাহিনী নাকি রূপকথার গল্প তা ভাবতাম আর হাসতাম। তবে আমার বাবা চাচাদের মুখে এ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি।
অভাবের তাড়নায় দিন কেটেছে আমাদের। সে পরিবার থেকে বড় হয়েছি সেখানে শুধু বেঁচে থাকার বাসনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তবে একটা কিছু হবার কৌতূহল ছিল সব সময়। আপসোস ছিল এ আহ! যদি এমন একজন মানুষ হতে পারতাম। হয়তো সেটা কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার হবে। আমার এক চাচা ছিল ফরেস্ট অফিসার। তিনি তার পরিবার নিয়ে খুলনায় থাকতেন। বছরে একবার কি দুইবার আসতেন। তিনি এলে তাদের দরজার সামনে আমরা ছোট ছেলে মেয়েরা জড়ো হতাম। চাচী আমাদেরকে একটা করে চকলেট কিংবা বিস্কুট দিতেন। সেই থেকে ফরেস্ট অফিসার হবার একটা ইচ্ছা কাজ করত সব সময়।
অযথা বাক্য ব্যয় আর মিথ্যা সান্তনা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। মানে আমি কাউকে মিথ্যা সান্তবাও দিতে পারি না চাপাবাজিও করতে পারি না। সে জন্য আমার বন্ধুর সংখ্যা নিতান্তই কম। আমার মনটা হলো মোমবাতির মতো। আগুনের ছোঁয়া পেলে মোমবাতি যেমন গলে যায়। আমার মনটাও একটু কষ্টে খারাপ হয়ে যায়। ত্রিশতম জন্মদিনে একটি কথাই বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, ‘জন্মই আমার অজন্ম বৃথা’।
একথা সত্য এ জীবনে অসংখ্য প্রিয় মুখ আমাকে শান্তি দিয়েছে। তখন জীবনকে অনেক বর্ণিল আর সুখের মনে হয়েছে। আবার কিছু প্রিয় মানুষের বিচ্ছেদ আমাকে কাঁদিয়েছে। তারা অযথা আমাকে ভুল বুঝেছে। আমার সাথে এমন অপ্রত্যাশিত আচরণ করেছে যা আমি ভাবতে পারিনি কোনোদিন। অনেকদিন তাদের অনেকের সাথে আমার আর দেখাই হয় না। আগে একটু আধটু রাগ অভিমান ছিলো যা ছিলো এখন আর তাও নেই। আমি তাদেরকে মা করে দিয়েছি। যদি কখনো দেখা হয় বলব, তুমি এমন আচরণ করলে কেন? আমি কি কখনো তোমাকে পর ভেবেছি। বন্ধুটি কি উত্তর দেয় তার অপোয় বসে আছি। যদি কখনো দেখা হয়। তবে এ কথা সত্য, দু’হাত তুলে আমি তাদের জন্য আমার প্রভুর নিকট দোয়া করি।
এত কিছুর পরও জীবন সম্পর্কে আমার কোনো অভিযোগ নেই। এ জীবনে আমি অনেক পেয়েছি। আমার প্রভু আমাকে অনেক দিয়েছেন। যেখানে যে অবস্থায় রেখেছেন ভালো রেখেছেন। সম্মানের সহিত জীবন যাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন। জীবনে আর চাই কি? তার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারব না। সকল প্রশংসা আমার প্রভু রাব্বুল আলামীনের জন্য। জীবন নামের খেয়াতরী কোন ঘাটে গিয়ে নোঙ্গর ফেলে তা একমাত্র তিনিই জানেন।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪০

কল্লোল পথিক বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.