নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহযাত্রী

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫

জীবন হল প্রবাহমান নদীর মত। এখানে ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অনেক মানুষের সাথে সাাৎ ঘটে যায়। সাাৎ ঘটবেই। কিছুতেই মানুষ একে আঁটকাতে পারবে না। বাঁধা দিয়ে রাখতে পারবে না। জীবন ঘূর্নিঝড়ের মত। সমুদ্রের মতই উত্তাল। কোনো বাঁধাই সে মানে না। সৃষ্টিকর্তা তার উদ্দেশ্য সম্পন্ন করবেনই। আমরা হলাম উপরওয়ালার খেলার পুতুল। এই যে, কথায় আছে না, মানুষ একা চলতে পারে না। সে সমাজবদ্ধ জীব। জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে কিছু মানুষের সাথে আমাদের সখ্য সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাঝে মধ্যে কিছু অদ্ভুত লোকের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে। সত্যিই তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার বটে। সৃষ্টিকর্তা কেন যে এরকম মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটিয়ে দেন তা তিনিই ভালো জানেন। এর ভেতর নিশ্চয় কোনো রহস্য লুকায়িত আছে। শিনীয় আছে অনেক বিষয়। যার ফলে এ জীবন আর মানুষ সম্পর্কে আমরা নতুনভাবে ভাবতে শিখি। মানুষ প্রাণীটিকে আমি অসম্ভব রকম ভালোবাসি। মাঝে মাঝে মানুষের উপর আমার প্রচন্ড রাগ হয়। মানুষের কটুকথা যেমন আমি মোটেও সহ্য করি না তেমনি কারো দুঃখও আমার সহ্য হয় না। প্রিয়জনের বিচ্ছেদে মন আমার হুহু করে কাঁদে। প্রিয় মানুষের হাসিতে দোলা দেয় প্রাণ। কারো সম্পর্কে না জেনে না বুঝে মন্তব্য করা আমার স্বভাব না। পরণে পরিপাটি পোসাক দেখে কারো সম্পর্কে এটা মন্তব্য করা ঠিক নয় যে, লোকটি ধনী। মুখে ভালো কথা আর সুন্দর চেহারা দেখে এটা বলাও অনুচিত যে, লোকটা ভালো মানুষ। সেদিন অফিসে যাওয়ার পথে আমি এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম যা আমাকে মানুষ সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।
নাস্তা সেরে সকাল সাড়ে দশটায় অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হলাম। গত কয়েক মাস আগে গুলশান এক নম্বরে একটা অফিসে এডিটিং ও কম্পোজিং কাজ করছিলাম। একজন সিনিসরের তত্ত্বাবধানে পার্ট টাইম হিসেবে কাজটি করছি। সেই সিনিয়ব ভদ্রলোকটি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিনের প্রেস সেক্রেটারী ছিলেন। উনার সাথে কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখছি। ওই সিনিয়র ভদ্রলোকটির জন্য অনেক ভালোবাসা আর দোয়া রইল।
শাহজাদপুর ঢাকা ফার্মার সামনে যেতেই বাসের লম্বা লাইন চোখে পড়ল। একথা বুঝতে বাকি রইল না যে আজ আর বাসে যাওয়া হবে না। সারিসারি বাসগুলোকে দেখতে পিঁপড়ার সারির মতো লাগছে। বাসের অবস্থা দেখে মনে হলো গোটা দেশ বুঝি থমকে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের অবস্থা জানার জন্য অর্থনীতি রাজনীতির পাঠ নেওয়ার আগে রাস্তার অবস্থা দেখে নিলেই হয়। আমি বাসের জন্য অপো করতে লাগলাম। কোনো নতুন বাস এলো না। আসবেইবা কোত্থেকে আগের বাসগুলো এখনো যেতে পারছে না। নতুন বাস কিভাবে আসবে? তাই বাধ্য হয়েই রিকশায় যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। এমনিতে রিকশায় যেতে চাই না। শাহজাদপুর থেকে গুলশান এক নম্বর বাসে পাঁচ টাকা আর রিকশায় লাগে ত্রিশ টাকা। বাসা থেকে দশ টাকা নিয়ে বের হলেই অফিসে যাওয়া আসা হয়ে যায়। ঢাকা ফার্মার সামনে রিকশার দামাদামি করছিলাম। এক ভদ্রলোক আমাকে ল্য করছেন। তিনি আমার পাশে এসে যেচে কথা বললেন। আপনি কি গুলশান এক নম্বর যাবেন? আমি বলাম হু। বললেন, চলেন শেয়ার করে যাই। লোকটির প্রস্তাবে আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম।
রিকশাওয়ালা রিকশায় পেডেল মারতে লাগল। আমাদের রিকশাটি লেকের ধার দিয়ে গুলশানে প্রবেশ করল। এমন সময় আমার সহযাত্রীর মোবাইল ফোনটি বেজে উঠল। তিনি কার সাথে এটাসেটা বলছিলেন। আমি সে দিকে মোটেই মনোযোগ দিলাম না। আমার চোখ দেখছে শরতের আকাশ। লেকের ধারে ন্যাংটা ছেলের দল কি নিয়ে যেন ছোটাছুটি করছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। সহযাত্রীটির কথায় হঠাৎ আমার মনোযোগ আকর্ষণ করল। তার মুখেই শোনা যাক গল্পের প্রথম অংশ।
ঋণ নিব আমি। টাক পরিশোধ করব আমি। মাঝখানে উকিল ধরার দরকারটা কি ভাই? আমার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন আমার সহযাত্রী। শাহজাদপুর ঢাকা ফার্মা থেকে একসাথে রিকশায় উঠেছিলাম আমরা। আমি হু বলে মাথা নাড়ালাম। এরপর কোন ব্যাংক থেকে নাকি ঋণ নিয়েছে আমাকে সে গল্প বলতে লাগল। এমনিতেই কোনো মানুষের ফাও প্যঁচাল আমার একদম ভালো লাগে না। লোকটির কথাও আমার কাছে ভালো লাগছে না। আমি সাধারণত চুপচাপ স্বভাবের মানুষ। নীরব থাকতে ভালোবাসি। নিজে চুপচাপ থাকলেও প্রিয় মানুষের কথা আমি মনোযোগ দিয়ে শুনি। এ লোকটি আমার প্রিয় হবার তো প্রশ্নই উঠে না। কারণ, কিছুক্ষণ আগে যে রিকশায় উঠেছিল এত তাড়াতাড়ি কি করে সে আমার প্রিয় মানুষ হতে পারে! না আমার ভালো লাগছিল না। যতই আমি শুনতে চাই না লোকটি ততই আমাকে তার কথা শোনাতে চায়। মনে মনে আমি বিরক্ত হলাম। কেননা আমি যে অফিসে কাজ করছি তা হল একটা প্রজেক্টের কাজ। প্রজেক্টের কাজ যতদিন থাকবে আমার কাজও ততদিন চলছে। কাজ শেষ আমার চাকরিও না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই একটা স্থায়ী চাকরির জন্য আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। মনে মনে ভাবলাম, নিজের চিন্তায় কুল পাইনা অন্য লোকের কথা শুনে মাথা ভারি করার কোনো দরকার নেই। আমার সে ধারণা কিছুণ পরই পরিবর্তন হয়ে গেল। এবার লোকটি অন্য কোনো জায়গায় ফোন কলে কথা বলা শুরু করল। দুই একটি কথা শুনে মনে হল সে তার বোনের সাথে কথা বলছে। এক বোনের কাছে আরেক বোনের কথা বলতে লাগল। আবার লোকটির মুখে শোনা যাক কথা।
বড় ছেলেটা কলেজে পড়ত। গত তিন চারদিন আগে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। প্রতিদিন তাকে ষাট সত্তর টাকা দিতে হয়। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ আমার নেই। গত বছর বাবা মারা গেলেন। মারা যাওয়ার আগে এক বছর অসুখে পড়ে ছিলেন বিছানায়। প্রায় দেড় ল টাকা সেখানে খরচ হয়েছে। এর কিছুদিন পর মা মারা গেলেন। মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা বাবদ বর্তমান আমার ঋণ আড়াই ল টাকা। এত টাকার ঋণ বহন করা আমার পে সম্ভব হচ্ছে না। ছোট ছেলেটা সামান্য পড়ালেখা করছে। বাসায় আর স্কুলে যা পড়ছে তাই। কোচিং আর প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছি। বাড়িতে আমার এক খন্ড জমি আছে সেটা বিক্রি করব চিন্তা করছিলাম। ছোট বোনটাকে বলেছি, বোন তুই জমিটা নিয়ে আমাকে লাখ দুয়েক টাকা দেয়। যাতে আমি ধার দেনা শোধ দিতে পারি। এভাবে আর চলা যাচ্ছে না। দোকানটার অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছে না। এখানে কোনো ছুটিছাটা নেই। বেতন কম হলেও একটা ভালো চাকরি হলে হত যেখানে অন্তত সপ্তাহে একদিন ছুটি পাওয়া যায়। এখানে যে পনের হাজার টাকা পাই তা মাস শেষ হলেই খরচ হয়ে যায়। বড় ছেলেটা সেদিন রাতে বলল, বাবা তুমি যদি আমাকে নাইবা পড়াও তাহলে একটা চাকরিতে লাগাইয়া দাও। শুধু শুধু বাসায় বসে থেকে লাভ কি। ছেলেটির কথা শুনে আমার চোকে পানি চলে এলো। নিজেকে ব্যর্থ পিতা বলে মনে হলো। ছেলেটির জন্য অনেক জায়গায় বলে রেখেছি। ভাবছি, বড় ছেলেটি আট দশ হাজার টাকা মাসে পেলে অন্তত মন্দ কি। এখনো কোনো জায়গায় চাকরির সন্ধান পাইনি। বর্তমানে যে দোকানে আছি তার অবস্থা ভালো নয়। যে কোনো সময় দোকানটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বেচা বিক্রি একেবারে কম। আমিও নতুন অনেক জায়গায় কথা বলে রেখেছি। যদি হয় ওখানে চলে যাব। জীবন অনেক কঠিন রে বোন... জীবন অনেক কঠিন। মানুষ বলে জীবন ছোট - আমার কাছে মনে হয় জীবন এত বড় কেন? এ জীবন আর ভালো লাগে না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

বিজন রয় বলেছেন: মোরা যাত্রী একই তরণীর, সহযাত্রী একই ধরনীর।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেখাতে +++++

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০০

বিজন রয় বলেছেন: ওহো ছবিটিও সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.