নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওরা থাকে লেকের পাড়ে

২৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮

ভূপেন হাজারিকার একটি গান আছে:“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি, মানুষ পেতে পারে না...ও বন্ধু”। যদিও এখন আর আগের মতো আমাদের মন কেঁদে উঠে না। কোনো মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখে আমরা তেমন কষ্ট পাই না। পত্রিকার পাতার হৃদয় বিদারক কোনো খবর পড়েও আমাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে না। খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি দিন চলে যাচ্ছে বেশ। “নো চিন্তা ডু ফূর্তি” সারাণ এই ভোগবাদী চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। টাকা চাই আরো টাকা। ঢাকা শহরে একটা বাড়ি চাই। সুন্দরী একটা বউ চাই। একটার পর অরেকটা চাই। প্রয়োজনে পরকীয়া করে অন্যের বউ বাগিয়ে আনতে চাই। চাহিদার যেন আর শেষ নাই। কাকে ঠকিয়ে কাকে মেরে টাকার মালিক হওয়া যাবে সার্বণিক এই ধান্ধায় কাটে আমাদের জীবন। মানুষের ভেতর থেকে দয়ামায়া যেন সব উবে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, টাকা-পয়সা, যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বটে। তবে মন মানসিকতা আর মানবিকতার দূরত্ব যেন ক্রমে বেড়েই চলছে। লেকের পাড়ে বসবাসকারী সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ নিরীহ মানুষগুলোকে দেখে আমার তাই মনে হলো। এ মানুষগুলোর ভেতর তেমন একটা চাহিদা নাই। তারা দুই বেলা দুই মুঠো (ডাল ভাত) খেতে পারলেই খুশি। না হয় আলকাতরার মতো কালো পানিতে তারা কিভাবে গোসল করে। একে অপরের সাথে হাসিখুশির গল্প করছে। হাট্টা-মশকরা-ইয়ার্কি করছে। দেখে মনে হয় তাদের মনে কোনো দুঃখ নেই। তাই বলে কি এই মানুষগুলোর প্রতি আমাদের কোনোই দায়িত্ববোধ নেই। সরকার কিভাবে তার দায়িত্ববোধকে এড়িয়ে যেতে পারে আমার বুঝে আসে না। এসব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি কি কর্তা ব্যক্তিদের কোনোই দায়িত্ব নেই। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে তো এরকম হওয়ার কথা ছিল না।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সারাদিন বাসায় শুয়ে বসেই ছিলাম। দুপুরে খাওয়ার পর কিছুণ ভাতঘুম দিলাম। একটু পর ঘুম ভাঙল। মনটা কেমন জানি উদাস হয়ে গেল। ভাবলাম বাহির থেকে একটু ঘুরে আসি। হয়তোবা এতে মন ভালো হয়ে যাবে। কতদিন বিকালের প্রকৃতি দেখিনা। অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। একটু জিরিয়ে নিয়ে এরপর এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাই। এই হলো আমার ঘুরাঘুরি। বাহিরে গেলে প্রায় দিনই মেহেদী আমার সঙ্গী হয়। সে আমার রুমমেট। আজ পাঁচ ছয় মাস হলো আমরা একসাথে থাকি। তবুও মনে হয় কতদিনের যেন চেনা পরিচয়। সে বিকালবেলা ঘুমিয়ে রাতে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টাইম টেবিল মেনে চলা লোক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সুচিন্তিত মতামত সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। মেহেদী আজ এলো না। আমি একাই বের হলাম। নামাজ শেষে কিছুণ বসে থাকলাম। একটু পর বের হয়ে কলা, বিস্কুট, চা খেলাম। হাঁটতে হাঁটতে লেকের দিকে গেলাম। মন ভালো করার জন্য লেকের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কথায় আছে না মন ভালো তো সব ভালো। সুস্থ দেহে সুস্থ মন। মন ভালো তো হলোইনা উল্টো খারাপ হয়ে গেল। লেকের পাড়ের মানুষের জীবনাচার, আচার-আচরণ আর চলাফেরা দেখে আমার মন দারুণভাবে ব্যথিত হল। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বিপ্তি বিচ্ছিন্নভাবে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। লেকের দুষিত পানির গন্ধ আমার নাকে এসে লাগছে। পানির গন্ধে আমার মনটাও দূষিত হয়ে গেল। আমি আরো সামনে এগিয়ে গেলাম। লেকের পাড়ে দুই একজন দম্পত্তি হাঁটাহাঁটি করছে। ছুটির দিনে তারাও বুঝি ঘুরতে বের হয়েছে। সাথে তাদের ছোট ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আছে। ঢাকা শহরে ঘুরাঘুরি করার তেমন জায়গা নাই। তাই মানুষ লেকের পাড়ে ঘুরতে আসে। একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য বিকালবেলা হাঁটতে বের হয়। ইট পাথরের মাঝে বসবাস করে মানুষ কেমন হাঁপিয়ে উঠছে। এ সকল মানুষকে ‘খাচা ভাঙা পাখি’ মনে হয়। সামনে এগিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চু চড়ক গাছ। হৃদয় আমার হাহাকার করে উঠল। মনের অজান্তে মুখ দিয়ে রের হল আহা মানুষের জীবন! হায়রে মানবতা। দেখলাম, দুইজন যুবক লেকের পানিতে কাপড়-চোপড় পরিস্কার করছে। তাদের সাথে কয়েজন সমবয়সী এসে গল্প করছে। তার পাশেই ছোট ছেলেরা পানিতে ঝাপাঝাপি করছে।
আমি মনে মনে বললাম, আমি যে পানির গন্ধ পর্যন্ত সহ্য করতে পারছিনাÑ ওরা কিনা সে পানিতেই গোসল করছে। কাপড় পরিস্কার করছে। একে অপরের সাথে গল্প করছে। তাই বলে তাদের মনে কোনো দুঃখ নাই। নেই না পাওয়ার কোনো বেদনা। হয়তো দিনের বেলা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে দুই’শ টাকায় ভাড়া খেটে এসেছে। সরকার দলীয় দলের থেকে বিরোধী দলের ভাড়া খাটলে টাকা বেশি পাওয়া যায়। সরকারী দল যদি দুই’শ টাকা দেয় বিরোধী দল দিবে পাঁচ’শ টাকা। শুধু পেটের দায়ে তারা এসব করে। এভাবে আমাদের ঢাকা শহরেই কত মানুষ যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করছে তার হিসাব নেই। আমরা কয়জনই বা তার খবর রাখি। এসব দৃশ্য দেখলে মনে হয়না যে আমাদের দেশে কোনো সরকার আছে। মনে হয় আমরা আফ্রিকান কোনো দেশে বসবাস করছি।
আজ থেকে দুই বছর আগের কথা। তখন আমি মৌচাকে অফিস করতাম। একটা নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসাবে কাজ করি। নাঈম আর আমি একসাথে অফিস করতাম। আমরা একই বাসায় থাকতাম। আমরা ছিলাম আপন ভাইয়ের মতো। নাঈমের এক চাচাতো ভাই থাকত কামরাঙ্গীর চর। একবার তার চাচাতো (সাইফুল ইসলাম) ভাইয়ের বিবাহ বার্ষিকীতে সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মনে পড়ে সে রাতে অমরা অনেক মজা করেছিলাম। এরপর কোনো এক কারণে টানা পনের দিন সাইফুল ভাইয়ের বাসায় থেকেছি। সাইফুল ভাইয়ের আন্তরিকতা ভোলার মতো নয়। সুজন ভাই আর রাসেল ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। রাত দশটা পর্যন্ত অফিস করে আমরা কামরাঙ্গীরচর যেতাম। সে সময় বিকালে কিংবা সকালে যখনই সুযোগ পেতাম বুড়িগঙ্গার পাড়ে হেঁটে বেড়াতাম। একবার ‘বুড়িগঙ্গার কালো জল’ নিয়ে আমি একটা ফিচারও লিখেছিলাম। বুড়িগঙ্গার পানিতে অনেক মানুষকে গোসল করতে দেখতাম। তখন আশ্চর্য হয়ে ভাবতাম, কিভাবে মানুষ এই পানিতে গোসল করে। অথচ বুড়িগঙ্গার পানি গুলশান-বারিধারা লেকের পানির চেয়ে অনেক পরিস্কার ছিল।
বিশ্বের অন্যন্য দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ আমরা যেন পিছনের দিকে যাচ্ছি। দেশের অবস্থা দেখলে আমার ছাগলের কথা মনে পড়ে যায়। তথ্য প্রয্ুিক্তর েেত্র আমরা এগিয়ে গেছি সত্যÑ তবে এক শ্রেণীর মানুষ এর সুফল পাচ্ছে মাত্র। যাকে বলে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বলা হয়। সকল মানুষকে একীভূত করতে না পারলে দেশ এগিয়ে যাবে কি করে। এভাবে কি কোনো দেশ চলতে পারে। কখন মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে কে জানে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ১৯৭১ সালে। আমাদের দেশের পরে স্বাধীন হয়েও মালয়েশিয়া অনেক বেশি উন্নতি করেছে। আমাদের দেশের শ্রমিরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজ করছে। তাদের অর্জিত টাকায় সচল হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সেই শ্রমিকরাই বিমানবন্দর এসে যা হেনস্তা হয় তা বলতে গেলে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। আমরাও পারতাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরী করতে। তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিকরা আমাদের দেশে আসত চাকরি করতে। মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশের প্রশংসা করা আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। লেখার উদ্দেশ্য হল আমাদের চিন্তার উপর কষাঘাত করা। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারকে বলতে চাই, শুধু ভোট নিয়ে রাষ্ট্র মতায় গেলেই কি সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। এ সব সাধারণ মানুষের প্রতি কি আপনাদের কোনোই দায়িত্ব নাই। এইতো কিছুদিন আগে লিবিয়ার সরকার গাদ্দাফিকে মারা হলো। অথচ গাদ্দাফি সে দেশের সকল যুবকদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। সারা দেশে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছেন। কোনো যুবক যদি বিবাহ করে তাহলে তার হাতে গাড়ি-বাড়ির চাবি তুলে দিয়েছে। মনে হয় যেন রূপকথার গল্প। আমি গাদ্দাফির প্রশংসা করছি না। সে ব্যক্তি হিসাবে কি রকম আমি সেদিকেও যাচ্ছি না। তবে আমার কথা বলার উদ্দেশ্য হলো গাদ্দাফি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। আমাদের দেশের সরকার কি পারে না এভাবে কাজ করতে। মানুষের সেবা করা হলো শ্রেষ্ঠ ধর্ম। একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে পেট পুরে খাওয়ালে আল্লাহ খুশি হন। তাই আসুন, আমরা এ সকল সাধারণ মানুষকে নিয়ে একটু ভাবি। যার যার সামাজিক অবস্থান আর সামর্থ অনুযায়ী কাজ করে যাই। শুধু পড়ালেখা, চাকরিবাকরি, বিয়েশাদী বাড়িগাড়ি অজর্ন এর নাম জীবন নয়। জীবনের অর্থ হলো আরো ব্যাপক। শুধু নিজে নিজে ভালো থাকার নাম ভালো থাকা নয়; পরিবারের, সমাজের, দেশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাই হলো প্রকৃত ভালো থাকা। আসুন, আমরা বিবেকের দুয়ারে কড়া নাড়ি বারবার, প্রতিদিন, প্রতিণ। বাংলাদেশের সকল মানুষ সুখে থাক, নিরাপদে থাক এই কামনাই করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.