নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলা না বলা কথা

নীলপরি

গল্পের বই পড়তে , গান শুনতে , ব্লগ লিখতে ও পড়তে ভালবাসি

নীলপরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অলীক বৈরিতা

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১২




ন তৎ স্বাভাসং দৃশ্য --

যা দৃশ্য , যা দেখা যায় , যা জানা যায় তা স্বপ্রকাশ নয় । সন্ধ্যাস্তব সাঙ্গ করে গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে একথাটা ভাবছিলেন রাজপুরোহিত আয়ুষ্মান । এখানে উচ্ছলা কিশোরীর চাপল্য সংহত করে ভরা যৌবন রমনীর মতো বয়ে চলেছে গঙ্গা ।এটা হিমালয়ের পাদদেশ । পাহাড় আর সমতলের সন্ধিস্থল বলে এখানে খোলা তটের প্রাধান্য বেশী ।আর চারপাশের পাহাড়গুলো ঘন সবুজ । এক একটা গাছ যেন পাহাড়গুলোকেও ছাড়িয়ে যেতে চায় ।আবার ইতস্তত ঝোপঝাড় , সরু সরু বাঁশঝাড় পেরিয়ে যেতে যেতে পাহাড়গুলি একেবারে তুলনাহীন হয়ে পড়ে । প্রকৃতি এখানে ততটাই ভীষণ । একই কথা প্রযোজ্য এখানকার মানুষদের ক্ষেত্রেও ।

রাজপুরোহিত আয়ুষ্মানের রাজা সুবাহুর সাথে যুদ্ধ চলছে এই উপত্যকারই আর এক রাজা কর্ণিকের । বেশ কয়েক বছর ধরে । কখনো থামে । কখনো নতুন উদ্যমে আবার শুরু হয় । ঠিক কেনো যে যুদ্ধ চলছে তা কেউ জানে না ।শোনা যায় ,কর্ণিকের ভাই চিত্রসেন ছিলেন নেশাগ্রস্থ , অকর্মন্য , কুটিল স্বভাবের । জাদুবিদ্যার অপপ্রয়োগ করতে তিনি ভালোবাসতেন ।রাজা সুবাহুর রাজ্যের জাদুকর শলকের সাথে তার ছিল সখ্যতা । একদিন গঙ্গার তীরে চিত্রসেনের মৃতদেহ পাওয়া যায় ।লোকে বলে শলকই তাকে খুন করেছে । তারপর থেকে শলকে আর কেউ দেখেনি ।এরপরেই যুদ্ধ শুরু হয় দুই রাজার মধ্যে ।


আজ কর্ণিকের একমাত্র পুত্র ঋতবাণ আহত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে । যদিও তাকে বন্দী করা যায়নি ।তবুও রাজা সুবাহুর প্রাসাদে খুশির রঙ লেগেছে ।এদিকে রাজকুমারী ইরাবতীও যে বহুক্ষণ নিখোঁজ , সেকথা কেউ খেয়াল করেনি ।

রাজপুত্র ঋতবাণ শুয়ে আছে আয়ুষ্মানের কুটীরে ।তীর বিঁধেছে তার হাতে । নারাচে বিষ মাখানো ছিল ।বিষের প্রভাবে গৌরবর্ণ ক্রমশ নীল হয়ে যাচ্ছে । বলিষ্ঠ শরীর হওয়ায় এখনো পুরোপুরি কাবু হয়ে যায়নি ।কিন্তু দূর্বল হয়ে পড়ছে । বিষ তার চেতনা হরণ করছে বারংবার ।
আয়ুষ্মান ঘরে ঢুকতেই রাজকুমারী ইরাবতী বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায় তাঁর দিকে । তারপর ছুটে এসে তাঁর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে বলে ' গুরুদেব , কিছু একটা করুন । ' আয়ুষ্মান শান্তকন্ঠে উত্তর দেন ' দেখ ইরা ,তুমি আর ঋতবাণ দুজনেই আমার খুব স্নেহের । দুজনেই আমার শিক্ষার্থী । তুমি চিন্তা কোরো না । রাজপুত্র ভালো হয়ে উঠবে । '

ছোটোবেলায় ইরাবতী আর ঋতবাণ দুজনেই আয়ুষ্মানের কাছে আয়ুর্বেদ বিদ্যা শিখত । তখনও তাদের পিতাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধেনি । তার কিছুকাল পরেই শুরু হয় এই যুদ্ধ । ঋতবাণের শিক্ষায় যবনিকা নেমে আসলেও ,তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল । আজ ঋতবাণ আহত হওয়ার পরেই তার কয়েকজন বিশ্বাসী অনুচর সেই সংবাদ রাজকুমারীকে পৌঁছে দেয় । তারপর সবাইমিলে নিয়ে আসে আয়ুষ্মানের কাছে ।

আয়ুষ্মানের তৈরী ভেষজ প্রলেপ ইরাবতী নিজের হাতে লাগিয়ে দিচ্ছে ঋতবাণের ক্ষতে । হঠাৎ ঋতবাণের সম্বিত ফিরল । সে নীচুস্বরে বলে উঠল ' জানিস ইরা , আমার মাঝে মাঝে খুব ভয় করত । মনে হত , এই যুদ্ধে হঠাৎ যদি মরে যাই ? যদি তোর সাথে আর দেখা না হয় ? আজ , তুই যখন এতো কাছে আছিস , তবু কেনো সেই ভয় করছে ? '
রাজপুত্রের নীলাভ চোখের মনিতে , গোটা নীল আকাশটাই যেনো নেমে এসেছে । সেই আকাশে ইরাবতী উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে । তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ' আমাদের সেনাপতি তোকে পিছন থেকে তীর ছুঁড়েছিল । তোর খুব ঘৃণা হয়েছিল না , আমাদের উপর ? '
ক্ষীন একটা হাসির রেখা ফুটে ওঠে ঋতবাণের অবয়বে । সে ধীরে ধীরে বলে ' না । আমি রাজপুত্র । যুদ্ধবিদ্যা আমার রক্তে প্রবাহিত হচ্ছে । যুদ্ধক্ষেত্রে আমি কাউকে আলাদা করে ভয় বা ঘৃণা করি না । ভালো প্রতিপক্ষ পেলে লড়াই করতেও ভালো লাগে । কিন্তু আজ , পিছন থেকে তীর লাগার মুহূর্তে মনে হয়েছিল , এতো নিষ্ঠুরতা ! ইরা আমাদের গাত্রবর্ণ এক , ভাষাও একই । আর মনে মনে এতো ঘৃণা ! আমি যদি জিততাম , তবুও প্রতিপক্ষের সাথে অসঙ্গত আচরন করতাম না । '
ইরাবতী আস্তে আস্তে ঋতবাণের কপালে হাত বুলিয়ে দিল । তখন সে আবার বলে উঠল ' আচ্ছা , তোদের সেনাপতির সাথে আমার যদি অন্য কোনো স্থানে দেখা হতো , তবে কি আমরা বন্ধু হতাম ? ' সেইক্ষণে তার নীল চোখে আশ্চর্য একটা রঙ করছিল । এরপরেই সে চলে গেলো অবচেতনের অন্ধকারে ।

মধ্যরাতের গোল চাঁদটাকে আরো বেশী রূপবান মনে হচ্ছে ।আয়ুষ্মান আর ইরাবতী দুজনে মিলে সেবা করে যাচ্ছে ঋতবাণের । আয়ুষ্মানের সযত্ন চেষ্টা সত্ত্বেও রাজপুত্রের জ্বর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । হঠাৎ সে ঈষৎ উঁচু স্বরে বলে ওঠে ' ঐ যে ঝোড়ো হাওয়ার সাথে
রক্তবর্ণ মেঘ উড়ে আসছে । সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে । ' ধীরে ধীরে তার স্বর স্তিমিত হয়ে আসে ।

চাঁদ রোহিণীর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যত । আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে তারারা । সূর্য প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে ।
পুরোরাতের অসম যুদ্ধের পর আয়ুষ্মানের আয়ুর্বেদ অস্ত্র ব্যর্থ হয়েছে ।ঋতবাণের জ্বরের তীব্রতা কমেনি এতোটুকু । হঠাৎ আয়ুষ্মান আর ইরাবতী শুনতে পেলো রাজপুত্রের স্বর । সে বলছে ' ইরা , একটা নতুন দেশ দেখতে পাচ্ছি । কি সুন্দর খোলামেলা .....। ঐ দেখ তুই আর আমি একসাথে ..........।' কথা শেষ হওয়ার আগেই সে স্তব্ধ হয়ে যায় ।

ইরাবতীর দীর্ঘশ্বসে বাতাসও তার বহমানতা ভুলে থমকে দাঁড়ায় । ইরাবতীর চোখে অব্যক্ত প্রশ্নবাণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে - ' এবার কি জিতেছে তার পিতা সুবাহু ? এবার কি চিরতরে থামবে , এই আত্মঘাতী যুদ্ধ ? '
আকাশ , বাতাস , পৃথিবী আর উদীয়মান সূর্য সবাই মিলে উত্তর খুঁজতে থাকে । অথবা উত্তরটা সবাই জানে !

আসলে যুদ্ধে শেষপর্যন্ত কেউ জেতে না । শুধু বিপুল মানুষ মারা যায় । নেমে আসে নৈরাশ্য , সামাজিক বিপর্যয় । তবুও যুদ্ধ হয় এবং হবে ।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭

মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: আসলে যুদ্ধে শেষপর্যন্ত কেউ জেতে না । শুধু বিপুল মানুষ মারা যায় । নেমে আসে নৈরাশ্য , সামাজিক বিপর্যয়।

এই কথাগুলো অনেক ভালো লেগেছে।

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৫

নীলপরি বলেছেন: আর আপনার এই কথাগুলো অনেক ভালো লেগেছে জেনে আমার খুব ভালো লাগছে । খুশি হলাম ।
অনেক ধন্যবাদ ।
শুভকামনা ।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৪

বিজন রয় বলেছেন: যুদ্ধ অনেক সময় ভাল দিক নিয়ে আসে, তবে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে।

আপনি সুলেখক তাতো আগেই জেনেছি।
++++

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

নীলপরি বলেছেন: হুম । হয়তো তাই ।
আর আমি তো হাবিজাবি লিখি । তবু আপনি সুলেখক বলে যে সম্মান দিলেন তার যোগ্য হয়ত আমি নই । উৎসাহিত করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো থকবেন ।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
বাহ্।
দুরত্ব বাড়ুক তবু একজায়গায় মিলে যায় সবকিছু।

সেই প্রান্তের পথে আসা কষ্টগুলো ভুলে যাওয়া উচিত শেষের আনন্দে।
যদিও পরিশেষ বলেও কিছু আছে।

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯

নীলপরি বলেছেন: দুরত্ব বাড়ুক তবু একজায়গায় মিলে যায় সবকিছু
হয়ত বা তাই । আর না গেলেও মনে মনে এটাই চায় সবাই । যাক লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম ।

আসলে গল্পটা খুব বেশী কিছু ভেবে লিখিনি । লতা মঙ্গেশকরের একটা গানের মেল ভার্সন শুনছিলাম । পুরুষ কন্ঠে এতো ভালো লাগতে পারে ভাবিনি । তাও গেয়েছেন এক ব্রিটিশ শিল্পী । লেখাটা হাবিজাবি কি হয়েছে জানিনা । তবে এককণাও যদি ভালো লেগে থাকে তবে ঐ গানের জন্যে । লিঙ্ক দিলাম । পারলে শুনে নেবেন ।

https://www.youtube.com/watch?v=zV2_2Urf808&feature=youtu.be

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০

নীলপরি বলেছেন: Click This Link

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মুগ্ধতা!!

যা দৃশ্য , যা দেখা যায় , যা জানা যায় তা স্বপ্রকাশ নয় ।

শুভকামনা। এবং শুভকামনা।

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৪

নীলপরি বলেছেন: আপনার মতো লেখকের কাছ থেকে এরকম মন্তব্য পেয়ে আমি আপ্লুত ।
উৎসাহিত করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো থকবেন ।
আপনাকেও শুভকামনা ।

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩৩

উল্টা দূরবীন বলেছেন: বেশ ভালো লিখেছেন। মুগ্ধ।

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০৪

নীলপরি বলেছেন: আর আপনার মন্তব্যে আপ্লুত ।
ভালো থকবেন ।
শুভকামনা ।

৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩

কাবিল বলেছেন: ভাল লিখেছেন, ভাল লাগলো।

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২৮

নীলপরি বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার খুব ভালো লাগছে । খুশি হলাম ।
অনেক ধন্যবাদ ।
শুভকামনা ।

৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১১

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: :)

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

নীলপরি বলেছেন: আমার উত্তরটা কোনখানে হাস্যকর লাগলো ? :(
সময় পেলে বলবেন । না হলে হাসতে থাকুন । শরীর ভালো থাকবে । সেটাই চাই ।




৮| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২২

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
:||
ভালো লেগেছিল। উত্তরটা গানটা তাই হেসেছিলাম। :(

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩২

নীলপরি বলেছেন: ও শুনেছেন ? আগে বললেই হতো ! আমি কি করে বুঝবো ?

ইমোটা এরকম কেনো ?
আমি কি হাসতে বারন করেছি নাকি ?

৯| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪

এহসান সাবির বলেছেন: যুদ্ধ ভালো লাগে না। চারিদিকে শান্তি থাকবে।

শুভেচ্ছা।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

নীলপরি বলেছেন: হুম , সেই তো চাই । কিন্তু মানুষের মনে কেনো এতো বৈরিতা কে জানে !
ধন্যবাদ মতামতের জন্য ।
আপনাকেও শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.