নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবার আমি বাঁচতে চাই এবং তোমায় সাথে নিয়ে।

মানসী

মানসী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাগরিক রূপকথার গল্প

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৩



সোনা কী করছ? জানি, আমার এই কথাতে তুমি রেগে যাও। না, কথাটাতে অবশ্য রাগের কিছু নেই। তবে আমি তোমাকে কিছুক্ষণ পর পর এই একই কথা জিজ্ঞেস করি বলেই রেগে যাও। তাতে আমি একটুও কষ্ট পাই না, বরং আমি তাতে একটু মজাই পাই। তাওতো আমার পরে রাগ করার কেউ আছে। আর তুমি না থাকলে আমি রাগটাই বা কার উপরে দেখাতাম।

জানো, আমার না তোমার সাথে ফোনে একটুও কথা বলতে ভালো লাগে না। রেগে যাচ্ছ ? পুরোটা তো তুমি শুনলেই না। আমার ইচ্ছে করে তোমার পাশে বসে তোমার সাথে খুনসুটি করতে। সোনা তোমার মনে আছে, তুমি যখন আমার সাথে ফোনে প্রথম প্রথম কথা বলতে, রাত দিন আমাকে জ্বালিয়ে খেয়ে ফেলতে -গল্প বলো, গল্প বলো। আমি ভাবতাম আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে, কত গল্প জানা থাকে একটা মানুষের। তারপর যখন থেকে একটু একটু করে তোমাকে বুঝতে শুরু করলাম। বুঝলাম গল্প শোনাটা তোমার মূল লক্ষ্য নয়, মূল কথা হল আমার গলার আওয়াজ শোনা। আমি কতদিন দেখেছি গল্প শুনতে শুনতে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। আমিও চুপ করে আছি যাতে তোমার ঘুম ভেঙে না যায়। হঠাৎ করে জেগে উঠে তুমি আবার বলে উঠলে –কই গল্প বলো, থামলে কেন?
জানো তোমাকে গল্প বলাটা খুব সোজা। এটা সেটা বকলেই হল। আমার গলা শোনা গেলেই হল। তুমি সত্যিই একটা পাগল।

আমি একটা গল্প বলব? তুমি শুনবে এখন? রূপকথার গল্প বলি , কেমন?

এক রাজা ছিল। রাজত্ব তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু রাজা খুব গুণী ছিলেন। তার গলাতে ছিল অপূর্ব সুর। ঠিক তোমার মতো। কিন্তু তার গান কেউ শুনতে চাইত না। তুমি ভাবছ সুর অপূর্বই যদি হয় তবে কেউ শুনবে না কেন ? আসলে তা নয়। তুমি গ্রিক পুরাণের সেই রাণির গল্প শুনেছ তো? যার গলার গান শুনলে কেউ স্থির থাকতে পারত না। জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দিত। না রাজার গান শুনলে কারো প্রাণ চলে যেত না ঠিকই কিন্তু সেই অপূর্ব সুরে কোনো এক মায়াবী অভিশাপ ছিল। সেই গান যে শুনতো তার জীবনেই নেমে আসত কষ্ট। রাজা তাই কাউকেই শোনাতো না গান। রাজা তার রাণিকে গান শুনিয়েছিল কোন এক গভীর অরণ্যে , সেই থেকে দুজনের আলাপ, তার পর বিয়ে। কিন্তু তার পরে শুরু দুজনের কষ্টের।


দাঁড়াও আমি একটু জল খেয়ে নিই। তুমি কিন্তু ফোনটা কাটবে না সোনা।
.
...
.....
........ জানো কাল গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ের লিগামেন্টে খুব চাপ লেগেছে, পা-টা ফুলে আছে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে কিনা বুঝতে পারছি না। কিন্তু পা টা নাড়তে পারছি না। ভাই বলছিল হয়তো প্লাস্টার করা লাগবে। তুমি একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। জানো আগে তুমি এ ভাবেই যখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, এতটা দূর থেকেও কেমন যেন একটা প্রশান্তি লাভ করতাম। এখন সেটা আর পাই না। তোমার হাতটাই যেন সশরীরে এখন আমার প্রয়োজন হয়।


তুমি যখন গল্প বলার ফাঁকে আধো ঘুমে আধো জেগে চুমুতে চুমুতে ফোনে অতোটা দূর থেকেও আমাকে পাগল করে তুলতে, আমি যেন স্বপ্নময়তার তন্দ্রাচ্ছন্নতায় মগ্ন হতাম। জানো এখন তুমি আমাকে ফোনে আদর করলে আমার রাগে শরীর জ্বলে যায়। আগুন ধরে যায় মনে। সহ্য করতে পারি না একদম তোমাকে। তুমি কেন সশরীরে আমার পাশে নেই। আমাকে এই ভাঙা পা নিয়ে কেন মা কিম্বা ভাইয়ের উপর নির্ভর করতে হবে? কেন আমি তোমার কাঁধে ভর দিয়ে বাথরুমে-টয়লেটে যেতে পারব না। তুমি খুব স্বার্থপর। খুব খুব।

সোনা রেগে যাচ্ছ তাই না? রাগ করো না। আসলে আমি কথাগুলো এভাবে বলতে চাইনি। বোঝোই তো সারাদিন স্কুল করি, তারপর এতোটা পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরি। একটু ঘুম ঘুম এসে গেছিলো, নিজের উপর নিজের আর কন্ট্রোল ছিল না, তাই ব’লে ফেলেছি। সোনা, তুমি রাগ করোনি তো? আমাকে ক্ষমা করে দাও সোনা। আমি ভুল করে ফেলেছি। আমি ভুল করেছি সোনা।


দেখেছো কথা বলতে বলতে গল্পটাই বলতে ভুলে গিয়েছি। তারপর শোনো কী হোলো। সংসারে অশান্তি, রাজ্যে অশান্তি। রাজার মাথার ঠিক নেই। খালি রাণির সাথে অশান্তি হয়, গন্ডগোল বাধে। রাণি স্পষ্ট ভাষায় রাজাকে জানায়-রাজাই তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। অনেক ভালো ভালো রাজা তার পাণিপ্রার্থী ছিল। যারা তাকে সব দিক থেকে খুশি করতে পারতো। কথাটা রাজার আত্মসম্মানে খুব আঘাত করে। রাজা সব কিছু ছেড়ে দিয়ে তার সবচেয়ে প্রিয় ঘোড়াটা নিয়ে বের হয়ে যায় অচিনপুরের দিকে। সে পথে কেউ কখনো যায় নি। কিম্বা যারা গিয়েছে তারা কেউ ফেরেনি। রাজা ভাবে- আমার এ জীবন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। তবু যাই অচিনপুরের দিকে, কেউ যদি বেঁচে থাকার কোনো মানে শোনাতে পারে।

পথে গভীর অরণ্যে রাত নামে। রাজা ঘোড়াটাকে গাছের তলায় বেধে আশ্রয় নেয় সেই গাছের ডালে।
সোনা ফোনটা একটু ধরে রাখবে। একটু বাথরুমে যাবো। জানো পা আটকে থাকা মানে একলা মানুষের ঝামেলা আরো বেড়ে যাওয়া। এই পা নিয়ে বাথরুমে যাবার ঝামেলা যে কী অতোটা দূরে থেকে তুমি বুঝবে না। একটু ধরো ফোনটা।

.
...
......
.........হ্যালো, হ্যালো, ঘুমিয়ে পড়ছ না কি? বাড়ি ফিরে রেস্ট নাও নি মনে হয়। তোমাকে এত বলি তবু তুমি শুনবে না। বলি যে সুগারটা কমাও। প্রেসারটা বাড়তে দিও না। কে শোনে কার কথা। এতো দূর থেকে আমি তোমার কোন সেবাটা করতে পারি? তুমি তো বলো তুমি সব সময়ে চাও যাতে আমি কষ্টের মধ্যে না থাকি। তোমার শরীর খারাপ হলে আমি তোমার পাশে থাকতে পারি না , তখন কতোটা কষ্ট হয় তুমি জানো?


জানো, আজ আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আজ রূপলেখারা সবাই মিলে খুব আমার পিছনে লেগেছিলো। আমার পায়ের মচকা লাগার জন্যে সবাই মিলে জোর করে শহীদুলের মোটর সাইকেলে তুলে দিল। তার পর সারাটা রাস্তা গাড়িতে আমার পিছনে লাগতে লাগতে এসেছে শহীদুলকে নিয়ে। আমার কান্না পাচ্ছিল। আমি এই ধরণের আড্ডা একদম সহ্য করতে পারি না। সাগ্নিকবাবু আমাকে পরে ফোন করেছিল। আমি খুব করে শুনিয়ে দিয়েছি। বলেছি আর যেন আমার পিছনে এই সব বিষয় নিয়ে কেউ না লাগে। যদি লাগে আমি ধরে নেব এর পিছনে আপনার ইন্ধন আছে। সাগ্নিকবাবু বলেছেন এর পর থেকে উনি আমার সাথে আর ঠাট্টা-ইয়ার্কী করবেন না।


সোনা তুমি ঘুমিয়ে পড়ছ? কথা বলছ না যে। ঠিক আছে আমি তোমাকে গল্পটা বলছি। তারপর সেই রাজা গাছের ডালে বসে নিজেকে গাছের সঙ্গে বাঁধলেন। বাঁধলেন বটে কিন্তু মনে মনে বললেন- কি হবে বেঁধে? এই অপমানিত কলঙ্কিত জীবনের কী দাম আছে। তার চেয়ে আজকের রাতটাই জীবনের শেষ রাত হলেই ভালো। এই ভেবে যখন বাঁধন খুলতে যাবেন। তখন কে যেন কথা বলে উঠল-মহারাজ, আপনার নিজেকে বাধার আর প্রয়োজন নেই।
রাজাতো অবাক। কে কথা বলে ? আবার সে মনের কথাও বুঝে নিতে পারছে। ভালো করে লক্ষ করে রাজা দেখতে পেলেন তিনি যে বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন কথাগুলো সেই বৃক্ষই বলছে। রাজা জানতে চাইলেন-তুমি কে?
বৃক্ষ উত্তর দিল –আমি এক অভিশপ্ত রাজকুমারী। আমি আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারিণী। আপনি যেহেতু আমাতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই এখন থেকে আপনি আর কোনো কার্যেই বিফল হবেন না। কিন্তু আমি অভিশাপ-গ্রস্থ। আমার কাছে থাকলে আপনি হবেন জগতের সবচেয়ে সফলকাম ব্যক্তি। কিন্তু আপনাকে বদনামের ভাগীদার হতে হবে। আপনি আমার সাহায্য যদি স্বীকার করেন তবে আমি অর্ধ মানবীতে পরিণত হব। কিন্তু এখনই আমার শাপ সম্পূর্ণ দূরীভূত হবে না।

রাজা জানতে চাইলেন-কেন?
তখন বৃক্ষ রাজকুমারী বলল- যদি আমার পরস্পরকে ভালোবাসতে পারি তবেই আমি পদচারণার শক্তি পাবো। তা না হলে আমার পা দুটো মাটিতে শিকড় গেড়েই থাকবে। রাজা তার সাহায্য স্বীকার করলেন। তখন সেই বৃক্ষ-রাজকুমারী অর্ধ মানবীতে পরিণত হল। কিন্তু ভালোবাসতে বললেই তো আর প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তাই বৃক্ষ রাজকন্যার পা তখনকার মতো শিকড় হয়েই রইল। তারপর সেই রাজা..

হ্যালো সোনা, শুনছ? সোনা, সোনা শুনছ? সোনা তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ? সোনা প্লিজ, প্লিজ সোনা ঘুমিয়ে পড়ো না, গল্পটা পুরো শোনো, তুমি না শুনলে বৃক্ষ-রাজকন্যার পায়ের শিকড় যে মাটি আঁকড়েই বসে থাকবে , সোনা প্লিজ প্লিজ....

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখার চেয়ে ছবিটা ভালো লেগেছে; ছবিটা আপনি এঁকেছেন?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২৮

মানসী বলেছেন:
না। নেট থেকে নেওয়া

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


" আমি একটু আমার মাথায় হাত বলিয়ে দেবে। "

-এগুলো ঠিক করেন, এগুলো লেখাকে দুর্বল করে দেয়।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১

মানসী বলেছেন:
ভীষণ দুঃখিত চাঁদগাজী ভাই। এতোটা অসচেতন হওয়া উচিত হয়নি আমার। এগুলো যে লেখাকে দুর্বল করে দেয় শুধু তাই নয় লেখা পড়তে বিরক্তি লাগে। লেখা ড্রাফটে নিয়ে সাধ্যমতো সংশোধন করেছি।

ভুল গুলো ধরিয়ে দেবার জন্য অনেক শুভেচ্ছা। এরপরেও যদি ভুল থেকে থাকে ধরিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ থাকলো।


ভালো থাকবেন।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৫৮

রাইসুল ইসলাম রাণা বলেছেন: ইমোশনাল কথাবর্তা ভালো লাগছে। ছবি সম্পর্কে আমারও একই বক্তব্য,এগুলা লেখাকে দুর্বল করে দেয় এবং লেখার বিজ্ঞাপন লাগে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

মানসী বলেছেন:
ভুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করেছি। এরপরেও যদি নজর এড়িয়ে গিয়ে থাকে, জানানোর জন্য অনুরোধ থাকলো।


ভালো থাকবেন।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৫৫

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: সোনা কোন কাজের কাজ করল এটা? তার জন্য রুপকথার গল্প শোনা থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা। :(

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

মানসী বলেছেন: :(( :(( :(( :((

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.