নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গতকাল (১লা জুন) আমার জন্মদিন ছিল

০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

গতকাল আমার সার্টিফিকেটের হিসাবে জন্মদিন ছিল, যেখেতু আসল জন্মদিনটা বাবা মা লিখে রাখেনি এবং জন্মসনদ না থাকায় এটাই আমার কাছে রিয়েল জন্মদিনের জায়গা করে নিয়েছে। যদিও মা মাঝে মাঝে বলে আমার জন্মদিন নাকি ১লা জানুয়ারি, দাদার মৃত্যু বার্ষিকীর তারিখ হিসাবে মা মনে রেখেছে। যে যায় বলুক আমি ১লা জুনকেই জন্মদিন হিসাবে লেখে আসছি এবং মাঝে মাঝে ছোট্ট করে বন্ধুদের সাথে ২/১ পাউন্ড এর কেক কাটি।
৩১শে মে রাতে আমি একটু আগেই শুয়ে পরলাম, কিন্তু আমার জন্যযে কিছু একটা চমক অপেক্ষা করছে বুঝতে পারিনি।
ফ্ল্যাটের সবাই ইন্ডিয়ান এরা আমার জন্মদিনে এমন ভাবে উইস করবে কল্পনাও করিনি, ঠিক ১২টার সময় জন্মদিনের স্পেশাল ক্যান্ডেল জ্বালাল আমি ভাবলাম হয়তো এদের কারো জন্মদিন তাই এমনটা করছে কিন্তু সবাই যখন আমার রুমে আসল তখন কিছুটা বুঝতে পারলাম এরা আমাকে উইস করছে।
শুয়া থেকে উঠে বসালাম, সবাই এক এক করে হেন্ড সেইক করল এবং জন্মদিনের শুভাচ্ছে জানাল। লিভিং রুমে একটা কেক রেখে দিয়েছে, সবাই একপ্রকার তুলে এনে বসাল এবং কেক কাটতে বল্ল। কেমন জানি চোখের কোনে একটু ঝাপসা ঝাপসা হয়ে আসল বুঝতে পারিনি, অন্ন মনস্ক হয়ে কেকটা কাটলাম। খাবার দাবারের পরে কতক্ষন রুমে এসে ঘুমালাম। রাতে অনেকেই আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ম্যাসেজ দিয়েছে কেও কল করেছে, আর ফেইসবুকের টাইম লাইনে অনেক অনেক শুভাচ্ছা লেখে রেখেছে। সত্যি নিজেকে কেমন জানি একটা অন্য জগতের বাসিন্দা মনে হল।
সকাল আনুমানিক ৮টা বসের কলে ঘুম ভাঙ্গল, বসের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেয়ে কেমন জানি গম্ভির হয়ে গেলাম আজো পর্যন্ত বস অফিস ষ্ট্যাফ কাওকেই জন্ম দিনে কোন প্রকার শুভেচ্ছা জানাইনি বলতে গেলে আমি প্রথম।
৩০ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বাসার নিচে আসলাম, এসে দেখি আরো এলাহি কান্ড। বসে পাশে উনার ওয়াইফ দুই ছেলে এবং বড় ছেলের গার্লফ্রেন্ড সাবাই বসে আছে আমার অপেক্ষায়।
পাশে আসতেই ম্যাডাম (বসের ওয়াইফকে আমি ম্যাডাম বলে ডাকি) একটা ফুলের ষ্টিক হাতে দিয়ে বল্ল "শুভ হোক তোমার জন্মদিন" (এই কথাটা বাংলাতেই বল্ল), আস্তে আস্তে সবাই একটা একটা করে ফুল দিল আর উইস করল।
বস তখন বক্স থেকে একটা কেক বের করে ক্যান্ডেল জ্বালাচ্ছে, পাশে নিয়ে বসিয়ে কেকটা কাটতে দিল।
চোখের কোনে অশ্রু বিন্দু গুলি একটু একটু করে জমতে শুরু করল, আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি কেমন জানি মেঘ গুলি তুলার মত উড়ছে। সাদা মেঘ নীল আকাশ, সব মিলিয়ে একটা স্বর্গীয়ে আবয়ের সৃষ্টি করছে। পাখি গুলি আকাশে ডানা মেলছে কোনটা বা আবার উড়ে এসে এক গাছ থেকে অন্য গাছে বসছে, শান্তির প্রতিক দুইটা পাইড়া এসে মাটিতে বসছে। তখনো আমি নির্বাক, কথা বলার সবটুকু শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এইযে আমার জীবনের এক অন্যরকম ভালাবাসা, বেচে থাকার প্রয়োজনিয়তা আজ খুব বেশি করে অনুভব করছি। বুঝতে পারছি মানুষ মৃত্যুর শেষ মুহুর্তেও কেন বাচার জন্য এমন ছটফট ছটফট করে, কেননা স্বর্গ অথবা নরক কোথাও এমন ভালবাসা খুজে পাওয়া যাবেনা এটা নিশ্চিত।
কেক কাটার পর্ব শেষ হলে ম্যাডাম একটা স্বর্নের চেইন গলাই পরিয়ে দিয়ে বল্ল "দুইটা ছেলের জায়গায় আমি কি তিনটা ছেলে লেখতে পারি?" কিছুই বলতে পারলামনা শুধু পাশে রাখা টিস্যু দিয়ে চোখটা ডেকে দিলাম আর অনুভব করতে পারলাম ম্যাডাম এবং বসের পা ছুয়ে ছালাম করছি।
দুপুর ১২টার সময় বাহির হলাম কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা করতে, হার্বারফ্রন্ট এমআরটিতে সবাই অপেক্ষা করছে। শাহিন, ইকবাল, আরিফ ভাই এবং জেমী। দেখা হতেই চির চেনা সেই প্রিয় মানুষটির মত গালমন্ধ শুরু আবদার করে বসে আছে খাবারের সাথে সন্তুসা আইল্যান্ডে বেড়াতে যাবার জন্য।
ছোটলাম সবাইকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের সেই বিহ্যাত আইল্যান্ডের দিকে, যাবার পথে একটা ফুডকোর্টে বসলাম কিছু একটা খেয়ে নিতে এমন সময় আরিফ ভাই আবিষ্কার করলেন পাশের রেষ্টুরেন্টে একটা " লাল পরী"
খাবারের প্রতি কেমন জানি আকর্ষনটা কমে আসল শুধুই চেয়ে থাকি লাল পরীটার দিকে, কেমন জানি মায়াময় দুটি চোখ একেই হয়ত বলে হরিনের চোখ। অপরূপ সুন্দর্যের অধিকারি এই মেয়েটাকেই মানাই লাল পরী নামক কোন নামে।
খাবার পর্ব শেষ করে ছোটলাম সন্তুসার দিকে, দুপুর থেকে সারাটা বিকাল ছোটে চল্লাম বিচ থেকে পাহাড় সী ফর সং থেকে লায়ন। বিকালের ক্লান্তিতে এবার বাসে উঠলাম সিঙ্গাপুরে ফিরে আসার জন্য, সাথে নিয়ে আসলাম অন্য রকমন একটা ভাললাগার অনুভূতি।
হার্বারফ্রন্টে নামতেই ইকবাল মনে করিয়ে দিল লাল পরীটাকে এক নজর দেখে যাওয়ার কথা, আমিও ছোটলাম ঠিক পরীর রেষ্টুরেন্টে। সবাই কিছুক্ষন আড্ডা সাথে খাওয়া দাওয়া বেশ ভাল একটা সময় কাটছে, পরীটা নিজের হাতে এনে আমাদের খাবারগুলি দিচ্ছে আবার টাকা নিয়ে চেইন্জ ফেরত দিচ্ছে। ভাললাগার অনুভূতি গুলি অন্য রকম ভাললাগাতে চলে গেল। এই দিকে আরিফ ভাই আবার মোবাইলের ক্যামেরাতে আমার সাথে পরীটার কয়েকটা ছবি বন্দী করে দিলেন পাওয়ার মাঝে যেন আকাশ পাওয়া হয়ে গেল। ওফফ কি আনন্দ পরীটার সাথে আমার কয়েকটা ছবি।
ওমা একি, পরীটা কাধে ব্যাগ নিচ্ছে কেন? চলে যাবে নাকি?
ঠিক ঠিকই পরীটা চলেযাচ্ছে কি মনে করে আমি খাবার শেষ না করেই ছোটলাম পরীটার পিছু পিছু, এবার পরীটা লাল ড্রেস চেইন্জ করে কাল ড্রেস পরেছে এখন মনে হচ্ছে রাতের পরী। লাল ড্রেসে দেখে ভেবেছিলাম এই ড্রেসেই মনে হয় পরীটাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে অন্য ড্রেসে তেমন মানাবেনা, কিন্তু আমার সব কল্পনা শক্তিকে পরাজিত করে মেয়েটাকে আরো সুন্দর্য করে তুলেছে এই কাল ড্রেসটা।
আমি ছুটছি পারীটার পিছু পিছু, কেন ছুটছি তা জানিনা। তবে শুধু ইচ্ছা করছে পরীটা পাশে কতটা সময় হাটতে তাই পাশাপাশি হেটে চলছি। পাশের বাসষ্টপে এসে থেমে গেল মনে হয় বাসে উঠবে আমিও থেমে গেলাম, কেন থামলাম আমি জানিনা।
২ মিনিট পরেই বাস আসল, এই বাস কোথায় যায় আমি জানিনা কিন্তু পরীটা বাসে উঠাতে আমিও উঠে বসলাম। পাশাপাশি ছিটে বসে দুজন যাচ্ছি মাঝে মাঝে চশমার ফাকদিয়ে পরীটাকে দেখছি, শরীরে কেমন জানি একটা শীতল অনুভূতির শিখরন দিচ্ছে। অনেকটা পথ চলার পর নিরব একটা বাসষ্টপে পরীটা নেমে যাচ্ছে, কি থেকে কি হল বুঝতে পারলামনা আমিও নেমে গেলাম।
ঘা ছমছম করা একটা অন্ধকার, সিঙ্গাপুরেও এমন অন্ধকার আছে আমার কল্পনাতেও ছিলনা। তাখলে কি আমি পরীর রাজ্যে চলে এসেছি।
পরীটা হাটছে একপা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছে আমি পিছনে ছুটছি নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব বজাই রেখে, এই রাস্তাটা দিনের বেলাতেই অনেক অন্ধকার আর এখন বাজে রাত ৮টা কিছুই দেখা যাচ্ছে না তবু আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে একটা পরী হাটছে।
কিছুক্ষন হাটার পর এই অন্ধকার রাস্তাটা শেষ হল, হাফছেড়ে বাচলাম বুকের ভিতরের ভয়টা কিছুটা কমে গেছে।
অন্ধকার রাস্তাটা শেষ হতেই কেমন একটা আলোর জ্বলকানো দেখতে পেলাম, পাশে লেগ দুই পাশে চির সবুজ গাছ একটু পরপর বসার জন্য বেন্চ পাতা আছে। রাতের বেলাতেও কেও কেও বসে আছেন একা আপন মনে, তবে বেশিরভাগ মানুষই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হয়ত আপন মানুষগুলিকে খুজছে।
কিছু কিছু সুন্দর্য আছে যার কাছে নিজেকে হারিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, হয়ত এই সুন্দর্যটা তারই একটা।
পরীটা রাস্তা ক্রস করল, আমি ঠিক আগেকার মত নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে ফলো করছি। যেই পরীটা রাস্তা পারহল এমনি সিগনালে লালবাতি জ্বলে উঠল, আমার রাস্তা পার হওয়ার পথ বন্ধ তবু এক দৃষ্টিতে দেখছি পরীটা কোথায় যায়।
ঠিক ৪০ সেকেন্ড পর সবুজ বাতি জ্বলে উঠল ততক্ষনে আমি হারিয়ে ফেল্লাম আমার পরীকে, চারপাশে খুজে ফিরলাম কিন্তু আর দেখতে পেলাম না। হয়ত এসেছিল পরীর শহর থেকে তাই উরে গেল আকাশে, শুধু রেখে গেল কিছুটা সময়ের ভাললাগার স্মৃতি।
পরীটাকে হারিয়ে আমি ছোটলাম ফেয়ারার পার্ক এমআরটিতে কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা করতে, আড্ডা গান গল্প সব মিলিয়ে ১২.৩০ মিনিটে শেষ ট্রেনে বসে রওয়ানা হলাম বাসার দিকে। শেষ উইসটা পেলাম মামনি কাছ থেকে, হয়ত ভুলে গিয়ে ছিল হঠাৎ করেও চোখে পরল তাই জানাল।
ট্রেনে বসেও শুধু একটাই কল্পনাতে বসে থাকলাম পরীটা আমার পাশে বসে আছে...................................... লাল পরী, রাতের পরী। আচ্ছা আর কত পরী হতে পারে এই মেয়েটির নাম।

অন্যরকম একটা জন্মদিন পারকরলাম, যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। যারা জানানি তাদেরকেও অগ্রীম ধন্যবাদ হয়ত নেষ্ট ইয়ারে শুভেচ্ছাটা পাব।
ভাল থাকবেন সবাই, অনেক ভাল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.