নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাচলর লাইফের এক যন্ত্রনার রাত

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫


রাত্র ৩টা বাজে দরজায় কঠিন শব্দ হচ্ছে, মনেহয় কেও রেগে প্রচন্ড আগাত করছে দরজা খুলার জন্য।
আমরা দুইজন খুরমুর করে উঠে গিয়ে দরজা খুললাম, বাড়ির মালিক জমির কাক্কু রাগে ফুস ফুস করছে। আমরা দরজা খুলতেই চিক্কুর দিয়া কইলো তরা সবাই এখন বাসা থেকে বাহির হয়ে যাবি, কই যাবি আমি জানিনা। মাসের যতদিন বাকী আছে ততদিনের ভাড়া আমি ফিরাইয়া দিতাছি, তদের চেহারা আমি দেখতে চাইনা।

এত রাতে কেও যদি ঘুম থেকে উঠাইয়া বাসা ছাড়ার কথা বলে তাখলে মেজার হাজার গুন গরম হওয়ার কথা, আমি যদিও খুটখাট করে রেগে যায় তারপরও এই সময়টা আমি ছিলাম একটু ঠান্ডা কিন্তু সুমন দাদা একেবারে রেগে গিয়ে বাড়ির মালিকের কলার ধরে বসলেন। ছাদের এই বাসাতে আমরা ৫জন ভাড়া থাকি, অন্য তিন জনের রাতের শিপ্টে ইন্টার্নি হওয়াতে এখন উরা হসপিটালে।
অনেক কষ্টে এদের জগড়া থামিয়ে মালিক কে বসার জন্য ভিতরে নিয়ে আসলাম, চেয়ারে বসতে দিয়ে আমরা দুইজন খাটে বসলাম। এখনো দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে ৩য় তলার ভাড়াটে আবির ভাই এবং আরো ৪/৫ লোক, আবির ভাই পেশায় একজন টেক্সি চালক। প্রচুর পরিশ্রম করে মানুষটা, এমনও দিন যায় প্রায় ২০ ঘন্টা টেক্সি চালাই এমন কি মাঝে মাঝে বাসাও আসেনা। গল্পের ছলে একদিন শুনেছিলাম ৫ মাস আগে উনি টেক্সি চালাতেন ভাড়ার কিন্তু এখন এই টেক্সিটা উনার নিজের হয়ে গেছে। অর্থাৎ মালিকের কি যেন একটা সম্যাসার হয়েছে, এই জন্য ৩ লক্ষ টাকায় এইটা বিক্রী করে দিয়েছে যা আবির ভাই কিনে ফেলেছেন।
এখন আয় রোজকারও ভালই হয়, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজারের মত। কিন্তু ঝামেলা হল টেক্সি কেনার সময় বাড়ি থেকে অনেক গুলি টাকা সুদের উপরে নিয়েছেন এখন এই গুলি পরিসুদ করতে বেচারা লাল হয়ে যাচ্ছে, যার জন্য প্রায় অধিক পরিশ্রম করতে হয়। কথায় আছে পরিশ্রম সুভাগ্য বয়ে আনে, এই লোকটাও কয়েক মাসের মধ্যেই সব লোন শেষ করতে পারবে।
প্রথম যে দিন উনি বাসায় উঠেন, বিকাল বেলা আমাদের মেসের সবাই উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ করেই আবির ভাই এসে উপস্থিত, একটা কলসি নিয়ে এসেছে পানি নিতে। বেচারা জানাল ওনাদের ইউনিটে নাকি পানির লাইনের কাজ শেষ হয়নি তাই মালিক বলেছে এই কয়েকটা দিন ছাদের লাইন থেকে পানি নিতে, আর ছাদের লাইন বলতে আমাদের বাসা। আমরাও তেমন কিছু বল্লাম না বরং খুশি মনেই পানি নেওয়ার অনুমতি দিলাম। কলসিতে পানি ভর্তি শেষ না হতেই উনার বউ এসে হাজির একটা বালতি নিয়ে, মেসের সবাই থ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। কেও কেও হয়তো মনে মনে নায়ক ওমর সানির মত চিক্কুর দিয়া কইছে " নাহহহহ এ হতে পারে না, এমন সুন্দর মেয়ে একটা টেক্সি ড্রাইভারের বউ হতে পারেনা" আসলেই মেয়েটা অপূর্ব সুন্দর গল্পের ছলে জানতে পেরেছি ২ মাস হল উনাদের বিয়ে হয়েছে তাও প্রেম করে। ভাবীর পোশাক আর শরীর বিস্তারিত দিলাম না, শুধু এতটুকু বলতে পারি যে কেহই হা করে তাকিয়ে থাকার মত একটা মেয়ে। এর পর থেকে হাই হ্যালু করে ভালই সম্পর্ক হয়ে গেল আমাদের মেসের সাথে আবির ভাই আর ভাবীর।

দরজার ও পাশে আবির ভাইকে দেখে মনে একটু সাহস পেলাম হয়তো উনি আমাদের হয়ে মালিককে কিছু বলে ঠান্ডা করবেন, আর আমরাও এই বাসা ছাড়তে হবেনা। সবচেয়ে বড় কথা এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারলামনা কেন আমাদের বাসা ছেড়ে যেতে হবে।

ভাইয়া সারা দিনই বাহিরে থাকতেন এই দিকে ভাবী বাসায় একা, কোন সন্তানও নেই। আর একা একা বাসায় সময় কাটানো কতটা কষ্টের যারা বাসায় একা থাকে তারা বলতে পারে। প্রায় ভাবী দুপুরের পরে আমাদের বাসায় এসে গল্প করতেন, এই ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগতো কেননা দুপুরে শুধু আমি একাই থাকতাম বাসায় অন্য সবাই ৩টার পরে আসতো। এতে করে ভাবীর সাথে আমি ঝমিয়ে আড্ডা দিতে পারতাম আর অন্যরা আসার আগেই ভাবী চলে যেত, তবে মাঝে মাঝে কেও সময়ের আগে এসে পরলে দেখতো ভাবী আমাদের বাসায় তখন উনিও আড্ডায় লেগে যেতেন।
দেখতে দেখতে ভাবীর সাথে সবাই ভাল অন্তঃরঙ্গ হয়ে গেল, খুব হেসে হেসে গল্প করতো সবাই। কখনো কোন কোন মেম্বার দুপুরে হসসপিটালে না গিয়ে ক্লাশ শেষ করে সুজা ভাবীর বাসায় চলে আসতো গল্প করতো কত সময় তা খুব বেশি একটা নজরে আসতোনা।
আমি ছিলাম এই মেসের সবার ছোট, এবং ক্লাসেরও জুনিয়র। এরা সবাই ফাইনাল ইয়ারের আর আমি মাত্র ১ম বর্ষের।

আজকে ভাবী আমার সাথে বিকালে বেড়াতে গিয়েছিল জিয়া উদ্যানের দিকে, অনেকটা সময় ভাবীর সাথে হাটলাম ৭টার দিকে আবির ভাইও এসে আমাদের সাথে জয়েন করলো। খুব সুন্দর একটা বিকাল থেকে সন্ধ্যা কাটালাম, রাত্র আনুমানিক ৯টার দিকে আবির ভাই আমাদেরকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। তারপর ভাবীর বাসায় বসে ১০/১৫ মিনিট গল্প করে নিজের বাসায় এসে পড়া লেখায় মনযোগ দিলাম।
বাহিরে কেও একজন মোবাইলে কথা বলছেন, শুধু একটা কথা কানে এসে বাধলো "এখানে একটা মেয়েলি ব্যাপারে ঝামেলা লাগছে, শেষ করে আইতাছি"
এবার আমার শরিরে কাপনি শুরু হল, তাখলে কি কেও আমাকে নিয়ে কোন সন্দেহ করছে? মনে এতটুকু সাহস পাচ্ছিলাম আবির ভাই আমাদের সাথে ছিলেন এবং বাসা পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে গেছেন সুতরাং ভাবীর বিষয়ে কোন ঝামেলা হতেই পারেনা, কিন্তু মনে মনে প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে আবির ভাই কোন একটা খেলা সাজানোর জন্য সন্ধ্যায় আমাদের সাথে জয়েন করে নিতো? অনেক বিকালেই ভাবীর সাথে এখানে সেখানে বেড়াতে যেতাম কিন্তু ভাইয়াতো কোনদিন আমাদের সাথে যায়নি বা আসেওনি, তাখলে কি আমি কোন খেলার স্বীকার হতে যাচ্ছি?
মাথাটা একরকমন ঝিমঝিম করে উঠছে, বিপদ মনে হয় একেবারে কাধের কিনারে এসে হাজির। এখন কি হবে বন্ধুদের সাথে কি করে মুখ দেখাব।

এবার জমির চাচা সুমন দার দিকে বলতে শুরু করলেন -
দেখ সুমন আমরা সব স্বাক্ষী প্রমান নিয়েই এসেছি, বাড়ির কেয়ার টেকার দেখেছে আবির বাসা থেকে চলে যাওয়ার পরে ঐ ছেলে বাসায় ডুকতো এবং ভোর ৪/৫টার দিকে চলে যেত, ৩/৪ দিন বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় ওর হাতে ধরাও পরছে প্রতিবারই কিছু টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছে কিন্তু এবার সবার হাতে ধরা পরেছে, আর বচন নাই তার। এখন পুলিশ খবর দিছি ওরে পুলিশের হাতে তুলে দেমু আর অন্য সবাই এই মূহুর্তে বাসা ছেড়ে চলে যাবা, ঐ জানোয়ারের বাচ্চারে একটা শেষ না দেখে ছাড়ছিনা।
বুকের ভিতর কেমন একটা ডেউ খেল, আমি কখন রাত্রে ভাবীর বাসায় যায় তাও আবার ৪/৫টার দিকে বাহির হয়ে আসি?
তারউপর কেয়ার টেকার এর সাথে দেখা খওয়ার প্রশ্নই উঠেনা টাকা দেমু কখন? তাখলে কি মিথ্যা মামলায় আমাকে জেলে যেতে হবে?
নাহ আর কিছুই ভাবতে পারছিনা, বুইড়া চাচারে এইবার রাগান্নিত হয়ে জিজ্ঞাস করতে যামু "কখন আমি এই কাজ করলাম" এমন সময় সুমনদা কঠিন সুরে জিজ্ঞাসা করল - "চাচা কে সে, যাকে আপনারা দরছে"?
তোমাদের কবির, বুইড়া চাচার ডাইরেক্ট কথা।
আমি সাথে সাথেই দাড়িয়ে গেলাম, এটা হতেই পারেনা। কবির ভাই গত ৩ মাস যাবত রাতের সিপ্টে ইন্টার্নি করছেন "শুিশু হসপিটালে" যদি আপনাদের বিশ্বাস না হয় তাখলে উনার এটেন্ডেন্ট গিয়ে দেখে আসতে পারেন। এখনো উনি হসপিটালে প্রয়োজনে চলেন আমার সাথে আপনাদের ভুল ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসছি।

বুইড়া চাচা এবার আমার দিকে রাগান্নিত হয়ে তাকিয়ে বল্ল ঐ ছোকরা তুই কি মনে করিস আমরা সব কিছু না জেনে শুনেই এসেছি? ঐ মমিন হেতেরে ভিতরে আন।

যা দেখলাম কবির ভাইকে পিচ্চা মারা বান দিয়া নিয়া আইছে, কেমন মলিন হয়ে আছে মুখটা। আহারে বেচারা, উনিতো এই ভাবীর সাথে তেমন কথাও বলতো না তাখলে এমন করল কেন। সবার কথার সারমর্ম হল গিয়া ভাবী আর কবির ভাই অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে চলছিল প্রায় ৪ মাস, বেশির ভাগ রাতেই উনারা এক সাথে থাকতেন আর উনার ছিল দিনের ইন্টার্নী কিন্তু রাতের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে চলে যেত।

একটু পরেই পুলিশ এসে হাজির, সাথে সাথেই ভাবীর বাবা মা এসেছে। আবির ভাই ভাবীকে উনার বাবা মায়ের হাতে তুলে দিলেন, আর জমির চাচা কবির ভাইকে পুলিশের হাত তুলে দিলেন। সবাই যার যার মত চলে যেতে শুরু করল, আমরা মালপত্র প্যাকেট করছি নতুন বাসায় চলে যাওয়ার জন্য...............................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.