নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিন গ্রহের মেয়েটা যখন সিঙ্গাপুরে

২১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫



ইসমিকা জাহানের কথা নিশ্চয় মনে আছে?
ঐ যে সিঙ্গাপুর আসার পথে ঢাকা এয়ারপোর্টে আমার দেখা ভিন গ্রহের মেয়েটা। যাকে দেখে আমি ফ্লাইট মিস করতে চেয়েছিলাম।

আমি ভেবেছিলাম ঐ দেখাই বুঝি আমাদের প্রথম এবং শেষ দেখা, কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবশান ঘটিয়ে এমন করে দেখা হয়ে যাবে আমি কল্পনাও করিনি। গত দুইমাস যাবত কোম্পানির কাজে এতই ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে বাসা আর অফিস ছাড়া আর কোথাও যেতে পারিনি, হয়তো দুই দিন শুধু ব্যাংকে গিয়েছিলাম দেশে টাকা পাঠাতে। এছাড়া বাসা আর অফিস, এই নিয়মেই চলছিল আমার দুইটা মাস।

গত ১৫ তারিখ কোম্পানির অডিট শেষ হওয়াতে কিছুটা কাজের চাপ কমে আসে তবে কিছু জরুরি পর্যবেক্ষন থাকায় ১৯ তারিখ পর্যন্ত ব্যস্ততা কাজ করছিল। গত শনিবার ৫টায় অফিস শেষ করে বাসায় এসে টুকটাক জরুরি কিছু কাজ করে রাত্র ৮টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পরি, বলতে গেলে গত ৫ বছরের মধ্যে এত তারাতারি এই প্রথম ঘুমাতে গেলাম।
মোবাইলটা সাইল্যান্ড করে রাখলাম যাতে করে কেও বিরক্ত করতে না পারে, মোবাইলটা আজকাল খুব বেশি বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এমনও দিন আসে রাত্রের ২টা বাজে বস ফোন করে অফিসে আসতে বলে, যেহেতু আমাদের কোম্পানির প্রজেক্ট বিভিন্ন দেশে তাই টাইমটা মিলানো একটুা কষ্ট হয়ে যায়।

আমার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ঘড়িতে ঠিক সাড়ে বারটা, বলতে গেলে একেবারে দুপুর।
আজকে অনেক বছর পর অফিসে যাবনা, তাই নিশ্চিন্তে ঘুম দিতে পেরেছি। কিন্তু যেই মোবাইলটা হাতে নিলাম তাতে তনির ৮৩টা মিস কল, আমারতো হার্টফেইল করার অবস্থা। যে তনি জীবনে আমাকে একটা কলও দেইনি আজকে এমন কি জরুরি কাজ যার জন্য ৮৩টা মিস কল দিল?
সাথে সাথে কল ব্যাক করলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ, এমন মরার বন্ধ করছে সারা দিনেও আর খুলেনি। তনিদের আসে পাশের কারো নাম্বারও নেই যে ফোন করে জানতে চাইবো সমস্যা কিনা, তনির মোবাইলে ট্রাই করতে করতে বিকাল ৫টা বেজে গেছে।

এক প্রকার মনটা খারাপ করেই বাসা থেকে বাহির হলাম, কোন উদ্দেশ্য নেই। মাঝে মাঝে রাতের বেলা বাউন্ডলের মত এমন করে চলাফেরা করি কিন্তু দিনার বেলা হয়তো আজকেই প্রথম।

মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে তনিটার সাথে কথা বলতে না পারাতে, তাই চিন্তা করলাম বাসার পাশের বাস ষ্টপ থেকে প্রথম যে বাস পাব তাতেই উঠে যাব। যেই চিন্তা সেই কাজ, প্রথম বাসটাতেই উঠে বসলাম। তবে খারাপ হয়নি এই বাসের লাষ্ট ষ্টপ এয়ারপোর্ট, আমার সিঙ্গাপুরের প্রথম কাজ ছিল এই এয়ারপোর্টে। অনেক পরিচিত লোক আছে কিছুটা সময় গল্প করলে মনটা ভাল হয়ে যাবে, তাছাড়া বাংলাদেশের উদ্দ্যশে যাওয়া ফ্লাইটের পাশে কিছুটা সময় থাকলে দেশে বেড়াতে যাওয়া মানুষ গুলির হাসি দেখলে মনটা এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে। প্রবাস থেকে কিছুটা সময়ের জন্য দেশে যাওয়া প্রতিটা মানুষের হাসি মনে হয় হৃদয় থেকে আসে, কি এক অপূর্ব হাসি হৃদয় জয় করার মত। আপন মানুষগুলিকে কাছে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করে শেষ করার মত না।

টার্মিনাল ওয়ানের ১১ নাম্বার বেল্টে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের কাউন্টার, প্রিয় মানুষ গুলির কাছে ছোটে যেতে চাওয়া মানুষ গুলিকে দেখতে ভালই লাগছিল। কেমন যেন তনিটার ফোনের কথা প্রায় ভুলেই গেলাম। মানুষগুলি কেমন স্কেল মেশিনে দৌড়াচ্ছে, ওজন ৪০ কেজির বেশি খওয়া চলবেনা আবার প্রিয় মানুষের জন্য কেনা কোন কিছু ফেলেও যেতে চাচ্ছেনা। এই প্যাকেট থেকে ঐ প্যাকেট তবুও যেন মিলতে চাচ্ছেনা এয়ারলাইন্সের নিয়মের সাথে।
শেষ পর্যন্ত যারটাই মিলে যাচ্ছে সেই ছুটছে কাউন্টারে বুকিংএর জন্য, কিছু মানুষ বুকিং শেষে প্রিয় বন্ধুটাকে জড়ইয়ে কেদে উঠছে। যেন এই দেশ থেকে যেতেও কষ্ট আবার মাতৃভূমি থেকে আসতেও কষ্ট, প্রবাসীদের এই কষ্টটা দিন দিন বারতেই থাকে। এই দিকে সুখ দুঃখের প্রিয় সব বন্ধু আবার অপর পাশে রক্তের বন্ধনের প্রিয় সব মানুষ, উভয় সংকটে পরে দিন পার করা মানুষই হল এই প্রবাসীরা।
ঘড়িতে সময় সারে ৬টা বাজে, এমন সময় পিছন থেকে মিষ্টি একটা কন্ঠে বলে উঠল -
- কারো দেশে বেড়াতে আসলে, বাসায় নিমন্ত্রন না করলেও অন্তত এক কাপ কফির জন্য নিশ্চয় ইনভাইট করা যায়?
- জ্বী, ইয়ে মানে, আপনি (কেমন যেন একটা তুতলামি শুরু হয়ে গেল)
- চিনতে পারেন নি?
- যদি কিছু মনে না করেন, আসলেই চিনতে পারছিলাম না। তাছাড়া সিঙ্গাপুরে আমার পরিচিত এমন কেও নেই, আর মেয়েতো একেবরেই নাই।
- সিঙ্গাপুর নেই কিন্তু দেশ থেকেতো বেড়াতে আসতেই পারে?
- হ্যা, তাতো অবশ্যয় পারে। কিন্তু..............
- থাক, কফি খাওয়াবেন বলে এমন না চেনার বান করছেন। আমি চল্লাম..........
এই বলে মেয়েটা হাটা শুরু করল, আমি পিছন পিছন দৌড়ে গেলাম।
- আচ্ছা আপনাকে খুব চেনা লাগছে, কিন্তু কেমন জানি মিলাতে পারছিনা। প্লিজ আপনার নামটা একটু বলবেন?
- যাক এখন তাখলে কিছুটা চেনা লাগছে? এতক্ষনতো একেবারে অপরিচিত মানুষের মত তারিয়ে দিচ্ছিলেন। যার জন্য ফ্লাইট পর্যন্ত মিস করতে পারবেন অথচ তাকে চিনতেই পারছেন না?
হঠাৎ করেই মেয়েটার সেই কাল তিলটার দিকে নজর গেল, কন্ঠটা কোথাও যেন হাজার বছের চেনা। খুব কাছের কেও না হলে এতটা অস্থির লাগার কথানা, হঠাৎ মনে পরে গেল এতো সেই ডানা কাটা পরী........
- আপনি ইসমিকা, রিজেন্টের এয়ারের ফ্লাইট এসিসটেন্ট?
- হ্যা, কিন্তু কি করে চিনলেন?
- আপনার তিল আর হাসিটা দেখে। আসলে সেইদিন এয়ারপোর্টে আপনাকে কোম্পানির ইউনিফর্মে দেখেছি তাই আজকে মিলাতে পারছিনা, আজকে আপনাকে সেই ইউনিফর্মের তুলনায় হাজার গুন সুন্দর লাগছে।
- আর প্রশংসা করতে হবেনা, এবার চলুন কোথাও বসে একটা কফির কাপে চুমুক দেয়া যাক।
পাশেই স্টারবাক কফি শপে বসে আড্ডা চল্ল আমাদের, আমি চেয়েছিলাম মুখামুখি হয়ে বসতে কিন্তু মেয়েটা কি মনে করে পাশপাশি বসাল। এই কথা সেই কথা কত কথাযে জমা ছিল আজ মনে হয় শেষ হতেই চাইবেনা।
আজকে মেয়েটা থ্রী-পিস পরে এসেছে, হালকা নীল রং এর। ঠোটে অরেন্জ কালারের লিপষ্টিক, চোখের উপরে সবুজ মেকাপ। সেই চিরচেনা হাসি, ভুবন মাতানো কাল তিল.............
ইস্য, বুকের ব্যাথাটা কেমন যেন আবার বাড়িয়ে দিল। ভুলতে বসতে যাওয়া মেয়েটা আমার কেমন পাশা পাশি বসে গল্প করছে, কিছু কিছু মুহুর্ত কেমন বিশ্বাস হতে চাচ্ছেনা।
আলো আধারের কফি শপের গল্পের মাঝেই হঠাৎ করে বলে উঠলাম
- চলেন কোথাও বেড়াতে যায়।
- কোথায়?
- রাত্রতো অনেক সুতরাং সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার অথবা গার্ডেন বাইদা বে ছাড়াতো দেখার মত তেমন কোন যায়গা খুলা নেই।
- শুনেছি মেরিনাতে রাতের আধারে নাকি আরো সুন্দর লাগে, চলেন ঐখান থেকে বেড়িয়ে আসি। প্রথম না হয় ফ্লাইয়ারে গেলাম পরে মেরিনাতে বসে দুজন গল্প করি।

টার্মিনাল ওয়ানের বেইসমেন্ট থেকে একটা টেক্সি নিলান উদ্দ্যেশ ফ্লাইয়ার যাওয়া, খুব বেশি একটা সময় লাগেনা হয়তো হাতে গুনে ১৫ মিনিটের দুরত্ব। বসতে না বসতেই কেমন ফ্লাইয়ারে এসে হাজির, কতযে দোয়া করলাম বাংলাদেশের মত একটু জ্যাম পরার জন্য কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় একটা লাল সিগনাল পর্যন্ত দেখলাম না।
টেক্সি থেকে নেমে দুইটা টিকেট কিনে ফ্লায়ায়ের জন্য সিরিয়ালে দাড়ালাম, ভেবেছিলাম এত রাত্রে হয়তো লোক জন থাকবেনা কিন্তু আমার সব ভাবনা মিথ্যা প্রমান করে ইয়া বড় একট লম্বা সিরিয়ালে লোক জন দাড়ানো।
যারা সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ারে গিয়েছেন তারা নিশ্চয় একটা বিষয় খেয়াল করেছেন, মেইন এন্ট্রির পর থেকে ফ্লাইয়ারের গেইট পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার একেবারে গিজ গিজ অন্ধকার। তারউপর কিছু উদ্ভট শব্দ যেন ভয়টা আরো বাড়িয়ে দেই।
অন্ধকার জায়গাটাতে আসতেই মেয়েটা কেমন চিৎকার দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল, সত্যি বলতে কি আমারো অনেকটা ভয় লাগছিল কিন্তু মেয়েটর অবস্থা দেখে আমার ভয়গুলি পালিয়ে গেল। ২/৩ মিনিটের মধ্যেই শরু পথ পেরিয়ে আমরা এসে থামলাম ফ্লাইয়ারের গেইটে, অন্ধকারে থাকা সময়ে মনে হচ্ছিল কত দ্রুত এই যায়গাটা পার হওয়া যায় কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইস্য যদি এই পথটা আরো দীর্ঘ হত তাখলে মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখতো.............
এবার আমরা দুইজন ফ্লাইয়ারের একটা বক্স প্রবেশ করলাম, দরজাটা লক করে ফেলতেই ভাবলাম অন্ধকার পথটা শেষ হয়েছে কিন্তু এই নির্জন সময়টা যদি শেষ না হতো।
আস্তে আস্তে আমরা উপরের দিকে উঠতে থাকলাম, চোখের দৃষ্টি সীমা যেন বাড়তেই লাগল। কেমন যেন একটা সময়ে আমাদের চোখের সীমার মধ্যে চলে আসল সিঙ্গাপুরের বিহ্যাত মেরিনা সিটি, এতবড় গার্ডেন বাইদা বে কেমন ছোট্ট খেলনা ঘড়ের মত মনে হচ্ছে।
রাতের সিঙ্গাপুর এত সুন্দর তা কোন দিন কল্পনাও করিনি, ৯ বছরের প্রবাস জীবনের আজকেই প্রথম এই সুন্দর্য দেখলাম। কে জানে হয়তো অন্য দিনের মত আজকেও খারাপ লাগতো, কিন্তু এই মেয়েটা পাশে আছে বলেই এই চিরচেনা সিঙ্গাপুরটা অন্যরকমন সুন্দর লাগছে। সুন্দরি মেয়েদের পাশে সব কিছুই নাকি এমন সুন্দর লাগে...............
ঠিক ৪৫ মিনিট পরে আমরা ল্যান্ড করলাম, কেমন যেন একটা স্বপ্নের মধ্যেই সময়টা কেটে যাচ্ছে বুঝতে পারছিনা। ভাবছি ভালই যখন যাচ্ছে তখন আর চিন্তা করে লাভকি সময়কে তার মত করে কাটতে দেয়াই ভাল।
ফিরতি পথে আবার অন্ধকার শরু পথ দিয়ে যেতে হবে ভাবতেই শরীরে কেমন একট শীতল অনুভূতি ছুয়ে গেল, কিন্তু আমাকে হতাশ করে এক্সিট ভিন্ন রোডে দেখা গেল।

ঘড়িতে ঠিক রাত্র বারটা বেজে ত্রিশ মিনিট চারপাশে কিছুটা নিরব হয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে সিটি হলের এই বিশাল সমুদ্রতীরে আমরা দুইজন হাটছি, গল্পের মাঝে জানতে পারলাম মেয়েটা আরো দুইমাস সিঙ্গাপুরে থাকবে। তারমানে এখন ইচ্ছে করলেই এই ভিন্ন গ্রহের মেয়েটার সাথে দেখা করতে পারব, অনুভূতি গুলি কেমন জানি ভাল থেকে ভালই হচ্ছে। আহ এমন করে যদি প্রতিটা দিন কাটত, চিন্তা করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই দুইটা মাস এমন সুন্দর অসংখ্যা মুহুর্ত আসবে।

প্রায় ১০ মিনিট হেটে এসে আমরা এখন নিওক্লিয়ার ব্রীজে অবস্থান করছি, লাল আর সবুজ বাতি গুলির সাথে নিয়ন লাইটের আলোটা কেমন জানি পরিবেশটা অন্য রকমন করে তুলছে। আমি অপলক নয়নে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে, লাল সবুজ আর নিয়নের আলোতে কি অপুরুপ সুন্দর্যই লাগছে মেয়েটাকে। আচ্ছা এই সুন্দর্যটা কিসের সাথে তুলনা করা যায়...................

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

শরীফ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেছেন: তনিটা কে? যে ৮৩ টা কল করেছিল।

২২ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:২০

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: তনিটার কথা মনে করিয়ে দিলেন, এই মেয়েটা আমার কল্পনার জগতের একটা বিশাল জায়গা দখল করে রাখা একজন প্রেয়সী

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬

আজিজার বলেছেন: অাবার মনে করারে দিলেন ! ভুলেই গেছিলাম।

২২ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:২০

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: সমস্যা নাই, এখন নিয়মিত অনেক দিন মনে করিয়ে দেব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.