নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীন আমাদের ছেলে........

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫



- কি নাম বাবু তোমার?
- স্বাধীন।
- অনেক সুন্দর নাম, আমার ছেলের নামও স্বাধীন রাখার কথা ছিল।
- এই ছেলেটা তরই, শুধু খবর নেসনি বলে চিনতে পারসনি।(পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি তনি, নীল শাড়ি আর খুপায় বেলি ফুল জড়িয়ে কেমন চির চেনা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে)

তনিটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ৪ বছর এই প্রথম দেখা, যদিও ওর সন্তানের কিযেন একটা অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করেছিল কিন্তু যায়নি। তনির সামনে দাড়ানোর মত সাহস আমার ছিলনা, আজও নেই কিন্তু হঠাৎ পিছন থেকে এমনভাবে আচমকা আমার সামনে এসে পরবে ভাবতে পারিনি।
- আরে তনি, তুই?
- কেন, আমার কি এখানে আসা নিষেধ নাকি?
- আমি এমনটা বলছিনা, তারপর কেমন আছিস?
- ভাল, তুই কেমন আছিস?
- এইতো সব মিলিয়ে ভালই আছি। কিন্তু শুরুতেযে বল্লি ছেলেটা আমার, এইটার মানে কি?
- তুই মনে হয় পৃথিবীর প্রথম বাবা যে কিনা নিজের সন্তানকেও চিনতে পারেনা, তর মরে যাওয়া উচিত।
- তনি প্লিজ দুষ্টমি করিসনা, সিরিয়াস কথা বল।
- সিরিয়াসলি বলছি তুই এর বাবা। মনে করে দেখ, সেই ৪ বছর আগের একটা রাতের কথা। তুই আর আমি দুইজন..........
- থাম আর বলতে হবেনা, আমি সব মনে করতে পারছি।

আস্তে আস্তে স্বাধীনের পাশে গিয়ে দাড়ালাম, ছেলেটা কেমন বাবা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল। এ যেন আমার আত্নারই একটা অংশ। কতক্ষন জড়িয়ে রেখেছিলাম জানিনা, যখন বুঝতে পারলাম দুটি চোখে লোনা পানি জমে গেছে তখনি নিজেকে কিছুটা গোছিয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু চোখের পানি শত চেষ্টাতেও লোকানো যায়না।
তনিটা আমার পাশে এসে বসল, কেমন মায়াভরা হাতে চোখের পানি গুলি মুছে দিতে লাগল। আমি ফিরে গেলেম ঠিক ৪ বছর অতীতে।

আমি আর তনি দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসতাম, আজও ভালবাসি হয়তো একটু কমেনি। আমাদের সম্পর্কটা ছিল প্রায় ৬ বছরের, একটা মানুষ আর একটা মানুষের আত্না হয়ে ছিলাম। পাশাপাশি বাসা বলে সারাটা সময় এক সাথে থাকতে পারতাম শুধু অনেক রাত্রে তনি চলে যেত উর বাসায় আর আমি থেকে যেতাম আমার বাসায়।
সেই দিন ছিল ১লা বৈশাখ, আগে থেকেই আমাদের প্লান ছিল সারাটা দিন নিজেদের মত করে বেড়াব। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চল্লাম রমনার দিকে, বলতে গেলে সারাটা দিনই ছিলাম রমনাতে। ছায়ানটের গান থেকে শুরো করে যত গানের আসর জমে ছিল ততগুলিতেই কিছুটা সময় দিলাম, দুপুরের দিকে পান্তা আর ইলিশ খেলাম। একেবারে বাঙ্গালী সাজে দুজন বাহির হয়েছি, কাধে গামছাও ছিল সম্ভবত ৫০ টাকায় কিনে ছিলাম, ঝলমলে আকাশে দুপুরের পর থেকেই কাল হতে থাকল। আনুমানিক ৩টার দিকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হল, আমরা একটা বাসার বেলকুনির নিচে যায়গা করে নিলাম। সেখানেই শুরু হল তনির পাগলামি, বেলকোনির নিচ থেকে বাহির হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করেছে। তনি একা একা বৃষ্টিতে ভিজবে তা কি করে হয়, আমিও নেমে গেলেম। সেই দুপুর থেকে বিকাল, এমন কি বিকাল শেষে সন্ধ্যার পরও ঝুম বৃষ্টি ছিল। আনুমানিক রাত্র ৯টায় আমরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই বাসায় ফিরলাম।
সেই কখন থেকে দরজায় নক করছি দরজা খুলছেনা, তনিদের বাসায় যে চলে যাব তারও কোন উপায় নেই। গত ৩দিন হল তনির বাবা মা গ্রামের বাড়িতে গেছে। কিছুদিন পূর্বেই শুনেছি তনি নাকি জার্মান চলে যাবে, ঐখানে ওর মামা থাকে। কাগজ পত্র সব কিছু উনিই রেডি করছেন, হটাৎ করেই তনির মামা দেশে এসেছেন এই মাসেই নাকি তনিকে নিয়ে জার্মান চলে যাবে। হয়তো আর কোন নববর্ষে দেখা হবেনা বলেই আজকে এমন পাগলামি করল। তনির বাবা মা গ্রামে চলে যওয়াতে তনি আমাদের বাসাতেই থাকে।
আমি আর তনি প্রায় এক ঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পর পাশের ফ্ল্যাটে নক করলাম, রিমি আন্টি দরজা খুলেই কেমন একটা চিৎকার করে উঠলেন - একি তোমরা দুজনতো কাক ভিজা ভিজেছো, তারাতারি রুমে যাও হিটার অন কর.................
উনার কথা শুরু হলে আর বন্ধ হতে চাইনা তাই সাধারনত তেমন একটা কথা বলিনা, কিন্তু আজকের ঝামেলার জন্য কথা না বলে কোন উপায় ছিলনা।
আস্তে করে বল্লাম আন্টি আমাদের বাসায় মনে হয় কেও নেই আব্বু আম্মু কি বাহিরে গেছে?
- ওহহ হ্যা, বিকালে তোমার বড় খালার বাসা থেকে খবর আসল আজ নাকি তোমার বড় খালার মেয়ের বিয়ে, তোমাকে অনেক বার ট্রাই করেছে কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকাতে আর বলে যেতে পারেনি। চাবি আমার কাছে রেখে গেছে।
এই বলেই উনি বাসার চাবিটা দিলেন, আমি এক প্রকার দৌড়ে উনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বাসায় আসতেই অনুভব করলাম আজকে আমার জ্বর আসবে মারাত্বক জ্বর, বৃষ্টির পানিতে আমি ভিজতে পারিনা। অল্পতেই জ্বর উঠে যায়, ভাল জ্বরই উঠে। গত দুই বছর আগে অফিস থেকে ফিরছি রাস্তায় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল, কোন একটা সেল্টার খুজতে গিয়ে এমনিতেই ভিজে গেছি তাই আর কোথাও অপেক্ষা করিনি। সোজা বাসায় চলে আসলাম। তবে এই অল্প একটু বৃষ্টির পানি আমাকে অনেক দিন ভোগিয়ে ছিল, ১০ দিনের মত হসপিটালে ছিলাম। প্রতি দিনই তনি আমাকে দেখতে হসপিটালে যেত.......... আজও মনে হচ্ছে এর চেয়ে বেশি কিছু হবে।

আমি ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসতেই দেখি তনি কিচেনের দিকে যাচ্ছে, যদিও মানা করছি এখন খিদে নেই কোন কিছু খাবনা শুধু শুধু রান্না করার দরকার নেই কিন্তু কে শুনে কার কথা। তনি কিচেনে গেল আমি রুমের হিটারটা অন করে কিছুটা সময় বসলাম আনুমানিক দশ মিনিট পরেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু করছে, তনিকে ডাক দিতে যাব এমন সময় ফ্লোরে পরে গেলাম।

যখন চেতন ফিরে পেলাম তখন প্রায় ৩টা বাজে, কিছুটা হালকা লাগছে। মনেহয় এতটা সময় মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে, এখনো ঠিক জড়িয়ে ধরে রেখেছে আমাকে। এতটুকু বুঝতে পারলাম অচেতন মনেই কিছু একটা হয়েগেছে যা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি, চোখ মেলতেই তনি আমাকে একটা চুমু খেল। যাক বাবা তুই তাখলে চোখ মেলেছিস........

সকাল দশটার দিকে আমার শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল, হসপিটালে ভর্তি করতে হল। টাইফয়েট জাতীয় কিছু একটা হয়েছে, একটু পরপর ইনজেকশন পুশ করছে। বাবাকে জরুরি খবর দেয়া হল উনি বড়খালার বাসা থেকে সরাসরি হসপিটালে চলে এসেছে, দেখতে দেখতে অফিসের বস কলিক সবাই আসল। প্রায় ৭দিন আমি এই একটা রুমে আছি, পৃথিবীর আলো বাতাস যেন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। মনে হচ্ছে বাচবনা কিন্তু ২৪ ঘন্টাই পাশে থাকা তনিটা কেমন সাহস যোগিয়ে যাচ্ছে বেচে থাকার জন্য।
হসপিটালের ১৩তম দিনে তনির মামা আসলেন, সব কাগজ পত্র তনির হাতে দিয়ে বল্লেন আগামীকাল রাতেই চলে যেতে হচ্ছে। উনি আমার পাশে কিছুটা সময় দাড়িয়ে বল্লেন "ইয়াং ম্যান সব ঠিক হয়ে যাবে, আর অফিসের ছুটি পেলে একদিন জার্মানীতে বেড়াতে এস"

শরীরটা যতটুকু খারাপ তারচেয়ে বেশি খারাপ মনটা, এই ১৩দিনে তনিটা আমার পাশ থেকে এক মুহুর্তের জন্যও কোথাও যায়নি। সবাই চলে গেলে আমার বেডেই জড়োসরো হয়ে শুয়ে থাকতো, কিন্তু এখন মেয়েটা চলে গেলে কেমন একা হয়ে যাব, বড্ড একা।

শরীরটা অনেক খারাপ থাকার পরও এয়ারপোর্টে আসলাম, এক এক করে সবাইকে বিদায় দিল শুধু আমার একটা হাত ধরে রাখল। সবাই চলে যাওয়ার পর ৩০০ টাকার একটা টিকেট কিনে আমাকে সাথে নিয়ে ভিতরে আসল, বুকিং শেষ করে পাশের চেয়ার গুলিতে বসল। এই কথা সেই কথা কত কথাযে মেয়েটার জমাছিল আগে জানতাম না, কথার ফাকে মেয়েটা হঠাৎ কেঁধে উঠল সবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। কতক্ষন জড়িয়ে রেখেছিল জানিনা, যখন মামী বল্ল এবারতো চল? তখন দুজন দুজন থেকে বিদায় নিতে হল। শুধু যাবার সময় শেষ বারের মত আমার কানের কাছে এসে বলে গেল "তুই ইচ্ছে করলেও আমাকে ভুলতে পারবিনা, আমি এমন কিছু নিয়ে যাচ্ছি যার মায়ায় তুই আমাকে খুজে ফিরবি"
সেইদিন বুঝতে পারিনি অচেতন মনে এমন একটা কাজ করে বসেছিল যার ফল এমন একটা ফুটফুটে ছেলে।

তনি জার্মান চলে যাওয়ার পর প্রায় ১ বছর কোন যোগাযোগ ছিলনা, ওর মামার সাথে নাকি কি নিয়ে ঝামেলা চলছিল তাই সে নিজেই বাসা নিয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। হঠাৎ একদিন খবর দিল জার্মানীতে যাওয়ার জন্য, ওর সন্তানের কি একটা অনুষ্ঠান করবে। কখন বিয়ে করল কিছুই জানাইনি, তনির প্রতি ভালবাসাটা এক প্রকার রাগে পরিনত হল। ততদিনে তনি জার্মানীর সিটিজেনশীপ পেয়ে গেছে, চিঠির মধ্যে টিকেট এবং একটা স্পন্সর লেটার ছিল যা হাই কমিশনে জমাদিলে ভিসার ব্যবস্থা হয়েযাবে। রাগ থেকে আর যাওয়া হয়নি, যদি জানতাম এই ফুটফুটে ছেলেটা আমার তাখলে সব কিছু ছেড়ে হলেও সেই আমি তনির কাছে চলে যেতাম। এই রাগ থেকেই এতদিন আর যোগাযোগ নেই।

এখনো ছেলেটা আমার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে, এমন পরম মমতা পিতা পুত্রের সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্কে আছে বলে আমার মনে হয়না। আজকেই প্রথম অনুভব করলাম বাবা কেন সব সময় আমাদের পাশে পাশে রাখতে চাইতেন।

তনির কাছ থেকে ওর মোবাইল নাম্বার নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছি এমন সময় বলে উঠল "আমি আগামী পরশু চলে যাচ্ছি, তুই কি কালকে একটু ছেলেটাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবি? ছেলেটা কোন দিন বাবার ভালবাসা পাইনি, যদি একটা দিন ওকে দিস অনেক খুশি হব"
যাব অবশ্যই যাব, কাল ভোরে সূর্য উঠার আগেই তর দরজায় নক করব..................................

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৭

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৬:০৮

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.