নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিহিংসার অস্ত্রে শান বিএনপির

০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ১০:১২


দীর্ঘ একুশ বছর স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। তখন সামাজিকভাবে, হাটবাজারে এবং রাস্তাঘাটে এমন আওয়াজ উঠেনি যে, ‘যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে বিএনপির ওপর চরম প্রতিশোধ নেয়া হবে, বিএনপিকে তৃণমূল থেকেও উচ্ছেদ করা হবে, নির্বংশ করা হবে।’ কিন্তু আজকাল যেখানে সেখানে শোনা যাচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি থেকে উৎখাত করা হবে। বলাবলি করা হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে বাংলাদেশে ওষুধ খাওয়ার জন্য একজন আওয়ামী লীগার থাকবে না। কী হবে? হত্যা করা হবে, না হয় দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে।

আমরা বুঝতে পারছি, বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোট ২০০৫ সাল থেকে ক্ষমতার মসনদে নেই। এ জন্য বিএনপির সমর্থকদের মনে খুব কষ্ট, খুব ক্ষোভ জমা হয়েছে। তাছাড়া বিএনপি এমন একটি দল যারা সহজে পরাজয় বরণ করতে পারে না। আর পরাজয়ই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভূষণ। এই দলটির জন্ম হয়েছিল ১৯৪৯ সালে, ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, দেশ স্বাধীন করে। এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে দীর্ঘ তিন দশক পরে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রক্তে পদ্মা মেঘনা যমুনা ও বুড়িগঙ্গার পানি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এই হত্যার ভেতর দিয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। এটা বানানো কথা নয়, আমাদের চোখের সামনে দেখা ঘটে যাওয়া ইতিহাস। আমরা কারবালার ইতিহাসের সাক্ষী নই কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের দ্বিতীয় কারবালার সাক্ষী। আমরা ১৭৫৭ সালের বিশ্বাসঘাতকতার প্রত্যক্ষদর্শী নই কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিশ্বাসঘাতকতার প্রত্যক্ষদর্শী।

কর্নেল হামিদের ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ বইতে লেখা আছে জিয়াউর রহমান কীভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কীভাবে জেনারেল শফিউল্লাহকে সরিয়ে স্বঘোষিত সেনাপ্রধান হয়েছিলেন, কীভাবে মোশতাক এবং তার পরের রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তারপর ক্ষমতায় বসে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। কর্নেল হামিদ আরো লিখেছেন, জিয়াকে হত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন জেনারেল এরশাদ, যাকে জিয়া অনুগত ভেবে পাকিস্তান থেকে ডেকে এনে সেনাপ্রধান করেছিলেন।

প্রতিহিংসা, ষড়যন্ত্র আর রক্তপাতের ভেতর দিয়ে বিএনপির জন্ম। এভাবে ভারতের কংগ্রেস এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। প্রতিশোধ নেয়ার স্পৃহা বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বুকের ভেতরে থাকা স্বাভাবিক। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর চরম প্রতিশোধে নেমেছিল বিএনপি। ২৬ হাজার নৌকার ভোটার হত্যা করেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাক হানাদারদের দুর্বৃত্তপনার একটা পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। সংখ্যালঘুদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন নেমে এসেছিল। নারী ও কন্যাশিশুদের পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। মেয়ের সামনে মাকে এবং মায়ের সামনে, বাবার সামনে মেয়েকে, কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করেছে। তখনকার পত্রিকার পাতায় পাতায় লেখা আছে লোমহর্ষক অত্যাচারের কাহিনী। চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মহুরীকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা তখনকার পত্রিকায় লেখা আছে। ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, ড. মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির ও বাহাউদ্দীন নাছিমকে কারাগারে ঢুকিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছিল। অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। শাহরিয়ার কবীরকে তো মেরেই ফেলা হতো, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলন না হলে। সারা বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা শাহরিয়ার কবিরের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিল, তাকে ‘বন্দিবিবেক’ উপাধি দেয়া হয়েছিল। এরপর শুরু হলো আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয়দের হত্যার উৎসব। ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল শুধু আওয়ামী লীগকে খতম করার জন্য। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার নকশা আঁকা হয়েছিল হওরা ভবন থেকে। এই হামলার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। যিনি ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে গুরুচণ্ডালি ভাষায় কথা বলতেন। তখন বাংলা ভাই, শায়খ রহমান ও মুফতি হান্নানরা রাষ্ট্রের লাইসেন্স পেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগারদের হত্যা করার। তারা উত্তরবঙ্গে আলাদা প্রশাসন কায়েম করেছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলে তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার সুযোগ পায়।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার দিকে পা বাড়ায়নি। বরং উল্টো আমরা খবর পাচ্ছি যে, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সরকারি দলের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। এই বসন্তের কোকিলদেরই কি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘কাউয়া’ বলেছেন? অথচ বিএনপির সমর্থকরা রাস্তাঘাটে এই আলোচনা করে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের নাম গন্ধ থাকবে না। অবশ্য প্রথম আঘাতটা আসবে বঙ্গবন্ধুর ওপরে, তাঁর মর্যাদা থেকে তাঁকে ধুলায় নামানো হবে। জিয়াউর রহমানকে আগে স্বাধীনতার ঘোষক বানানো হয়েছে, এবার বানানো হবে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। লন্ডনে বসে তারেক জিয়া যা যা ঘোষণা দিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন হবে।

বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে বিএনপির দৌলতে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রতিহিংসার একটা নতুন মাত্রা পাবে তা বোঝা যাচ্ছে দলটির সমর্থকদের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশে। দলটির সমর্থকদের চোখে মুখের দিকে তাকালে মনে হয় তারা অস্ত্রে শান দিচ্ছে। দলটির সমর্থকরা মনে হয় ভুলে গেছে, ক্ষমতায় থাকার চেয়ে আওয়ামী লীগ বিপদ মোকাবেলা করতে পারদর্শী বেশি। বাংলাদেশের কাদামাটিতে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক বেশি গভীরে।
সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৭ রাত ৩:০০

অর্ধ চন্দ্র বলেছেন: ধন্যবাদ দারুন সব মূলবান যুক্তিযুক্ত কথার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.