নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েন প্রকাশ্য

২৩ শে মে, ২০১৭ সকাল ৮:৩৫


প্রায় ১৮ বছর পর সম্পর্কে বেশ টানাপড়েন শুরু হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ছাড়াও আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে তাতে জোটের অন্যতম ওই শরিকটিকে সঙ্গে রাখার পক্ষে এখন খুব বেশি যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। যে কারণে বিএনপি পারতপক্ষে আর জামায়াতকে কাছে টানছে না। বরং একরকম এড়িয়ে থাকার কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে।

সূত্র মতে, দেশের প্রগতিশীল দলগুলোকে কাছে টানার উদ্যোগও জামায়াতকে এড়িয়ে চলার আরেকটি কারণ। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় বাধা বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

তবে কৌশলগত কারণে জামায়াত খুব শক্তভাবে সঙ্গে আছে এ কথাও যেমন বলতে রাজি নয় বিএনপি; তেমনি আবার তাদের বের করে দিলাম এ কথাও জোর দিয়ে বলতে চাইছে না দলটি। বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাঁদের মতামত জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তারা আছে কী নেই; এ ব্যাপারে আমরা কিছুই বলব না। কারণ জামায়াতের এখন নিবন্ধন নেই। ফলে নির্বাচনে দর-কষাকষির কোনো ক্ষমতাও দলটির নেই বলে আমরা মনে করি। ’

এদিকে বিএনপির ভেতরকার এই পরিবর্তন বা অবস্থানের কথা জেনে জামায়াতও আর দলটির সঙ্গে ‘গাঁটছড়া’ দেখাতে রাজি নয়।

জামায়াত নেতাদের উপলব্ধি, বিএনপিতে এখন আর তাদের আগের সেই মর্যাদা ও গুরুত্ব নেই। যে কারণে দলটি জোটের মূল দলের কর্মসূচিতে পারতপক্ষে আর যেতে চাইছে না। সর্বশেষ গত ১০ মে খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ রূপকল্প উপস্থাপন অনুষ্ঠানে জামায়াত যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হলে ঠিক এর চার দিন পরে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রশ্নে তাঁর দলের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, জামায়াতকে নিয়ে তাদের যে ২০ দলীয় জোট তা ‘আন্দোলনকেন্দ্রিক’ এবং এর সঙ্গে সরকার পরিচালনার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠনের যে ঐকমত্য ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর চারদলীয় জোট গঠনের সময় হয়েছিল সে অবস্থানে বিএনপি এখন আর নেই—এমন বার্তাই দেন তিনি। পর্যবেক্ষকদের মতে, ফখরুল এও জানিয়ে দেন যে, জামায়াতকে নিয়ে তাঁর দল এখন অত বেশি চিন্তিতও নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা আবদুস সামাদ বলেন, ‘টানাপড়েন হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তারা আলাদা ভিশন নিয়ে রাজনীতি করে, আমরাও আমাদেরটা নিয়ে আছি। আর নির্বাচনের সময় তারা (বিএনপি) মোটেও ছাড় দিতে চায় না। তার পরও বিএনপির সঙ্গে আমাদের জোট আছে, থাকবে। ’

এ বিষয়ে বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত সুধীসমাজের প্রবীণ একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দেশি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে মেরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে জামায়াতের কোনো স্থান নেই। ’ ‘সামনের দিনগুলোতে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে দলটির কার্যকর অংশগ্রহণ আরো কমে যাবে। তা ছাড়া সম্ভবত জামায়াত এখন অনুভব করতে শুরু করেছে যে, বিএনপিতে এখন আর তাদের গুরুত্ব নেই। ফলে তারা বিএনপির কর্মসূচিতে আসা ছেড়ে দিয়েছে’, যোগ করেন প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবী।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, নানা বাস্তবতায় বিএনপি-জামায়াতের মধুর সম্পর্ক এখন আর নেই। এর প্রধান কারণ হতে পারে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তবে জামায়াত দলগতভাবে ইচ্ছা করে জোট ভাঙবে বলে মনে হয় না। তারা জোটে থাকবে কিন্তু ঝুঁকি নেবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, আন্তর্জাতিক কাঠামো এবং দেশীয় রাজনীতি দুদিক থেকেই জামায়াত কোণঠাসা হয়ে পড়ায় দলটির এক ধরনের গুরুত্ব কমেছে। পাশাপাশি নিবন্ধন না থাকায় দলটি আরো বেকায়দায় পড়ে গেছে। ফলে বিএনপি এখন একসময়ের প্রধান মিত্র দলটিকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করতে রাজি নয়। তা ছাড়া পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণের যে চেষ্টা বিএনপির মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটিও ওই দলটিকে সঙ্গে রাখার জন্য সহায়ক নয়। ফলে জামায়াতকে সংগত কারণেই বিএনপি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে। তা ছাড়া নিবন্ধন না থাকলে দলটির ভোট এমনতিই জাতীয়তাবাদী দলটি পাবে বলে মনে করছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কার্যকর অংশগ্রহণ কমে গেলেও জামায়াত এখনো ২০ দলীয় জোটে আছে। তবে নির্বাচনের আগে বা ভবিষ্যতে কী হবে সেটি উদ্ভূত পরিস্থিতিই বলে দেবে।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, চারদলীয় জোট গঠনের সময় একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের যে কথা ছিল, সেটি অতীত। ২০ দলীয় জোট কেবল ‘আন্দোলনকেন্দ্রিক’ই গড়ে তোলা হয়েছে। বিএনপির এখনকার অবস্থান এটি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অবশ্য মনে করেন, ভোটের রাজনীতিতে ৫-৬ শতাংশ ভোটের অধিকারী জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির আগ্রহ নেই—এ কথা বলা যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ কাউকে এড়িয়ে যাচ্ছি না। তবে কারো কারো বক্তব্যের কারণে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়াছাড়ির কথা এখনো আসেনি। ’ ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আত্মপ্রকাশ করলেও ওই সময়ের ঘোষণাপত্রে দলগুলোর মধ্যে আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো বিষয় ছিল না। তবে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে ৩১টি আসনে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়।

কিন্তু ২০১৩ সালের ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের এক রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। শুধু তা-ই নয়; সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে বা দিয়ে থাকলে তা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেন। এ জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ফলে নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে যায় দলটি।

বিএনপি নেতাদের মনোভাব হলো—ইসি পুনরায় জামায়াতকে নিবন্ধন না দিলে দলটির সমর্থকরা বিএনপিকে ভোট দেবে। আর নিবন্ধন না থাকলে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে তাদের দর-কষাকষির ক্ষমতাও থাকবে না। সে ক্ষেত্রে কিছু আসনে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলে গুরুত্ব অনুযায়ী সেগুলোতে তাদের ছাড় দেওয়ার চিন্তা আছে বিএনপির। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে আর কোনো শোডাউন করতে তারা রাজি নয়।

তবে এসব চিন্তা আপাতত বাদ দিয়ে প্রধান প্রতিবেশী ভারতসহ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে খুশি করে চলার পক্ষে বিএনপি। সূত্র মতে, রূপকল্পে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তন; সর্বোপরি পররাষ্ট্রনীতিতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং অন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় সমস্যা সৃষ্টি না করার অঙ্গীকার বিএনপি এসব দিকে লক্ষ রেখেই করেছে।

অন্যদিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণার পাশাপাশি দেশের প্রগতিশীল দলগুলোকেও কাছে টানার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বিকল্প ধারা, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট বাঁধার ওই উদ্যোগের সঙ্গে জামায়াতের জোটে থাকার বিষয়টি সাংঘর্ষিক। ফলে তাদের দূরে রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.