নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ত্রিদিব রায় : পাকিস্তানি রাজার চিহ্ন মুছে যাক

২৮ শে মে, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

ভেবেছিলাম ভাস্কর্য সরানো নিয়ে লিখব। মন সায় দিল না। এ বিষয়টা এমন- একে মনে হচ্ছে কফিনে পেরেক ঠোকা। তাই পরে লিখব এ নিয়ে। এমন এক রাজাকে নিয়ে লিখছি যার চেয়ে বড় রাজাকার ও দালালরা এখন বহাল তবিয়তে। তবু লিখব।
রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম-নিশানা মুছে ফেলার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজকের প্রজন্ম এই চাকমা রাজা সম্পর্কে কিছু জানে বলে মনে হয় না। শুধু তারা কেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুখে ফেনা তোলেন তারাও জানেন বলে মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার মৃত্যুর পর এ দেশের ইতিহাস এত ঘোলাটে আর এত বিকৃতির কবলে পড়েছিল যে এসব বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় ছিল না কারো। আসল-নকলে একাকার রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে উঠেছিল এক অন্য ধরনের গল্প। জাতির জীবনে এত এত ঘটনার চাপে ত্রিদিব রায়ের প্রসঙ্গ ছিল না জরুরি না জানার মতো। অথচ আজ এত বছর পর আদালতে দায়ের করা এক মামলার রায়ে এই রাজার নাম-নিশানা মোছার রায় এসেছে অনিবার্যভাবে।
বলে রাখি শুধু তাকে টার্গেট করলে লাভ হবে না। বদলে যাওয়া বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দেশ শাসনে না আসলে বা আওয়ামী লীগ পরপর দুইবার শাসনে না থাকলে ত্রিদিব রায়কে রাষ্ট্রমর্যাদার আসনে রাখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। তিনি একা রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না। তার চেয়ে বড় ও বাঘা বাঘা রাজাকাররা এ দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। এক সময় মনে হতো তারাই ছিল ঠিক, মুক্তিযুদ্ধের কাণ্ডারিরা ছিলেন ভুল। কিন্তু ইতিহাসের এক নির্মম দিক হচ্ছে সময়ের বিচার। তার বিচারে আজ নাই হয়ে যাওয়া সাকা চৌধুরী বা নিজামীরা ছিল ত্রিদিব রায়ের চাইতেও ভয়ঙ্কর।
ত্রিদিব রায়ের চরিত্রের একটা অদ্ভুত দিক হচ্ছে লয়েলিটি বা আনুগত্য। তিনি যে কারণে পাকিস্তান সমর্থন করেছিলেন বা কি কারণে তার সেই দুর্মতি হয়েছিল তার চেয়ে বড় ব্যাপার এই লোকের পাকিস্তান প্রেম ছিল একতরফা। যে কারণে তিনি তার স্বদেশ জন্মভূমি ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আমরা যে বলি ধর্ম সম্প্রদায় বা জাতিগত পরিচয় আসলে বড় বিষয় না এটা তার ব্যাপারে একশ পার্সেন্ট সত্য। নিজেকে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং সেটা মুখের কথা ছিল না। পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর সে দেশের রাজদূত হিসেবে সাউথ আমেরিকার আর্জেন্টিনা, পেরু, চিলিসহ নানা দেশে কাজ করেছেন তিনি। শুধু কি তাই? পাকিস্তানের শাসনভার পাওয়ার পর ভুট্টো তার এই মিত্রকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদ অফার করেছিলেন। ত্রিদিব রায়ের সুযোগ ছিল দালালির এই তোহফা গ্রহণের। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তিনি তা নিতে পারেননি। পাকিস্তানের সংবিধানে আছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারবেন কেবল সংখ্যাগুরু পাকিস্তানিদের ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্মের কেউ। ভুট্টো হয়তো ভেবেছিলেন তার এই দালাল বন্ধুটি পদের লোভে ধর্ম বিসর্জন দিয়ে সে দেশের রাষ্ট্রপতির পদ লুফে নেবে। কিন্তু ত্রিদিব রায় নিজের ধর্মমত থেকে সরে আসতে রাজি না থাকায় তার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। পরবর্তীকালে ত্রিদিব রায় জিয়াউল হকের আমলে রাষ্ট্রদূতের পদসহ আজীবন মন্ত্রী পদমর্যাদায় থেকে তার পেয়ারের দেশ পাকিস্তানেই পরলোকগমন করেন।
সম্প্রতি তার জীবন নিয়ে একটি বইও বেরিয়েছে বিলেত থেকে। পাকিস্তানের শেষ রাজা নামের এই বইটিতে ত্রিদিব রায় বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার মনে হয় সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে আমাদের প্রচলিত ও প্রথাগত ধারণার বাইরে ত্রিদিব রায় এক সংখ্যালঘু রাজাকার। সাধারণত দালাল বা রাজাকার বলতে আমরা মনে করি দাড়ি টুপিওয়ালা সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায়ের কেউ। অথচ ইতিহাস বলে ত্রিদিব রায়ের মতো চাকমা রাজাও ছিল পাকিস্তানের অনুগত এক বড় দালাল। আমাদের জানা উচিত পাহাড়ে এমন আরো দু’চারজন নেতা ছিলেন যারা একাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের পথ পছন্দ করেনি। এই অপছন্দের জের হিসেবে তারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করতেও দ্বিধা করেননি। রাজা ত্রিদিব রায় রাজা বলে আমাদের নজর কেড়েছিল। বাকিরা তলিয়ে গেছে ইতিহাসের অতল তলে।
বাংলাদেশ একটি চিরন্তন সত্তা। এই দেশ এই মাটি এই পতাকা এই সঙ্গীতকে যারা ঠুনকো মনে করে তারা জানে না তারা ভুলে যায় কিছু রক্ত মাটিকে শুদ্ধ করে। পবিত্র করে দিয়ে যায় কিছু আত্মত্যাগ। যে দেশের মাটিতে লাখো মানুষের রক্ত, নারীদের দীর্ঘ নিঃশ্বাস থাকে, যে মাটি আপন শক্তিতে তার বিজয় ছিনিয়ে আনে তার বুকে ত্রিদিব রায়ের মতো দালাল পাকিস্তানি রাজার নাম-নিশানা থাকার আসলেই কোনো দরকার নেই। এই অপচ্ছায়া এই অপনাম রাজাকারী চরিত্র যত দ্রুত অপসারিত হয় ততই মঙ্গল।
জানি না কারা এই উদ্যোগ নিয়েছে। তারা আর যাই করুক নতুন প্রজন্মের কাছে তারুণ্যের কাছে মানুষের কাছে ঘৃণিত এক সংখ্যালঘু দালালের চিহ্ন মুছে দিয়ে ইতিহাসকে করেছেন উজ্জ্বল আর ভবিষ্যৎকে করেছেন নির্মল ও বিপদমুক্ত। আমাদের এই দেশে এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। বিতর্কের শেষ নেই। সেখানে রাজা ত্রিদিব রায়কে বাঁচিয়ে রাখার মানে কোনো এককালে আর একটি সমস্যার বীজ জিইয়ে রাখা।
দালাল দালালই। সে হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, চাকমা হোক আর রাজা হোক রাজাকার দালালের নিশানা মোছাই পবিত্র দায়িত্ব। সেটাই করার আদেশ দিয়েছেন মাননীয় আদালত। যার মনে এ দেশের জন্য কোনো মায়া ছিল না। যে পাকিস্তানে গিয়ে বাকি জীবন আয়েশে কাটিয়েছে যার দিলে ছিল পাকিদের জন্য প্রেম তাকে আমরা মনে রাখব কোন দুঃখে? দূর হোক রাজা ত্রিদিব রায়ের স্মৃতি।
সুত্র

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আজগুবি

২| ২৮ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চাকমাদের এই রাজ সংস্কৃতি এ যুগে প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের ভেতর আর এক দেশের অস্তিত্ব। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ।

৩| ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৪৮

জগতারন বলেছেন:
দূর হোক রাজা ত্রিদিব রায়ের স্মৃতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.