নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা

০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৩৪


ফসিল ফুয়েল ও পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার কমিয়ে কিংবা ক্রমান্বয়ে বাদ দিতে হলে আমাদের হাতে থাকে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও সাম্প্রতিককালে জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনা মানুষের মনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এ কারণে ফসিল ফুয়েল ও পারমাণবিক শক্তিকে বাদ দিয়ে বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি, বায়ু প্রবাহ, জলবিদ্যুৎ, জোয়ার বা টাইডাল পাওয়ার, ঢেউ বা ওয়েভ পাওয়ার, বায়োগ্যাস, ভূগর্ভস্থ তাপশক্তি ইত্যাদি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও নবায়নযোগ্য এ সব শক্তির ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলছে, বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এ বিষয়ে গবেষণা, বিনিয়োগ এবং রাষ্ট্রসহ সাধারণ মানুষের আগ্রহ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১১ সালে সারাবিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুৎশক্তির ২০ ভাগ এসেছে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে। যা একই বছরে পারমাণবিক শক্তি (১৩ ভাগ) এবং তেল থেকে আসা বিদ্যুতের (৪ ভাগ) সম্মিলিত পরিমাণের চেয়ে বেশি। আমাদের এবারের আলোচনার বিষয় হলো সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা।
সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
সাধারণত বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবনমান পরিবর্তন করার মতো যে কোনো প্রযুক্তি উন্নত দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেটা কম বা বেশি দামী হোক। যা সৌরশক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু যদি সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ সামাজিকভাবে নেওয়া হতো তাহলে অনেক দক্ষভাবে বিস্তৃত এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা যেত। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই। তাই লোকজন শুধু ব্যক্তিগতভাবে সোলার প্যানেল কিনতে উৎসাহী হয়। ছোট ছোট উদাহরণ দিয়ে দেখা যাক এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন।
শহর এলাকার বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় থাকা ১৩২ বর্গ কিলোমিটার জায়গার কংক্রিটের দালানগুলোর অব্যবহৃত ছাদের পরিমাণ যদি ১.৩২ বর্গ কিলোমিটারও হয় (প্রকৃত পরিমাণ অনেক বেশি), তাহলে আগামী ২০১৪ সালে উৎপাদনের ঘোষণা দেওয়া ২১% যান্ত্রিক দক্ষতার সোলার প্যানেল ব্যবহার করে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। একইভাবে প্রত্যেক জেলা শহরের বিদ্যুৎ নিজ অঞ্চলেই উৎপাদন করা যাবে।
সরকার স্বল্পমেয়াদে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের জন্য রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, পিকিং পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে ১৫০০ থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়তি উৎপাদন করছে। যাতে বিপুল পরিমাণ (বিপিডিবি ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, পেট্রোবাংলা ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি- এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা) ভর্তুকি দিতে হয়। এ টাকা নানান উপায়ে জনগণের পকেট থেকেই যায়। দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে ভর্তুকির চাপ সামলানোর চেষ্টা করা হয়। যার প্রভাবে সব ধরনের উৎপাদন ও ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে মাত্র ১ হাজার থেকে ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করে পুরনো অচল হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত করে নিলেই ১৫০০ থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এ ছাড়াও, যে টাকা ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে তা দিয়ে ৬০০০ মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেত। তা না করে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টকে আইনের উর্ধ্বে নেওয়া হয়েছে, কর রেয়াতের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে এবং আরও বহু বছর চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের কৃষি ব্যবস্থার সম্পূর্ণ সেচ সৌরশক্তির সাহায্যে করা হয়, তবে কৃষিতে ব্যবহৃত ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হতো না। শুষ্ক মৌসুমে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাপ কমে যেত, লোডশেডিংও থাকত না। বিদ্যুৎ, কেরোসিন, ডিজেল ব্যবহার করে সেচের ঝামেলা না থাকায় উৎপাদন ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন চলে আসত। প্রভাব পড়ত পুরো কৃষি ব্যবস্থা ও বাজারে। ফলে ভোক্তা অনেক কম দামে কৃষি পণ্য ক্রয় করতে পারত। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমগ্র কৃষি ব্যবস্থা সোলার পাওয়ারের আওতায় আনতে খুচরা মূল্য ধরেও, কুইক রেন্টাল যে টাকা জনগণের পকেট থেকে গেছে সরকারের ওই একই (১৮০ টাকা প্রতি ওয়াট) খরচ হত। রেন্টালের ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যেক বছরই দিতে হচ্ছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য শক্তিতে চলে গেলে অবকাঠামোগত খরচ বেশি হলেও, এটি এককালীন। পরবর্তী বছরগুলোতে এ খরচ কমে আসে। অর্থাৎ, প্রাথমিক খরচ বেশি কিন্তু সুফল দীর্ঘমেয়াদী। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতি ও পরিবেশে।
উদাহরণস্বরূপ কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৭৭৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মাত্র দশভাগ জমিতে সোলার প্যানেল বসালে বর্তমান হিসেবে ৬৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এবার সৌরশক্তির অন্য কিছু ব্যবহার দেখা যাক-
পরিবহন ব্যবস্থায় সৌরশক্তির কিছু ব্যবহার
সোলার জাহাজ : ২০১২ সালের ৪ মে সৌরশক্তি চালিত একটি জাহাজ মোনাকোতে আসে। তারপর মোনাকো থেকে সারা পৃথিবী সফর করে। শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভারত ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে আবার মোনাকোতে ফিরে যায়।
সোলার উড়োজাহাজ : সোলার ইম্পালস নামের উড়োজাহাজ ২০১২ সালের ৬ জুন প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ভ্রমণ শেষ করে। স্পেন থেকে মরক্কো পর্যন্ত ৫১৫ মাইল দূরত্ব ১৯ ঘণ্টায় অতিক্রম করে। যা ২৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ঘণ্টায় ৭৫ মাইল বেগে চলতে সক্ষম। ৬৩ মিটার লম্বা ডানায় ১০ হাজার ৫০০টি সোলার প্যানেল বসানো আছে, যা থেকে প্লেনটি প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করে। ব্যবহৃত সোলার প্যানেলগুলোতে প্রতি বর্গমিটারে ১ কিলোওয়াটের মত শক্তি উৎপাদন হয়।
ছবির এই উদাহরণগুলো আমাদের আশ্বস্ত করে যে প্রযুক্তির আরও উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অচিরেই সমগ্র পরিবহন ব্যবস্থা অথবা বেশিরভাগটাই সৌরশক্তির সাহায্যে পরিচালনা করা সম্ভব। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বা পরিবেশ দূষণ কমাবার প্রয়োজনেই তা করতে হবে।
বিপিডিবি’র দেখানো এ পরিসংখ্যানে ২০ লাখ সোলার হোম সিস্টেমের সেঙ্গে সৌরচালিত বেশকিছু সেচ প্রকল্পের তথ্য দেখানো হয়নি। যেখানে প্রায় ৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
সারাদেশের বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা
* সৌর ৫০,০০০ মেগাওয়াটের বেশি
* বাতাস ১০০০ মেগাওয়াট
* বর্জ্য ২০০০ থেকে ৫০০০ মেগাওয়াট
মোট ৫৩,০০০ মেগাওয়াট, অথচ এই মুহূর্তে ১১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেই পুরো বাংলাদেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
জার্মানি এবং বাংলাদেশের সৌরশক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় জার্মানির যে কোনো জায়গায় সূর্য থেকে আসা সর্বোচ্চ সৌরশক্তিও বাংলাদেশের চেয়ে কম বা অর্ধেক। আমাদের দেশে অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎসের সম্ভাবনাও ব্যাপক। জার্মানি কয়লা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিয়ে প্রতিদিন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তিসহ বিভিন্ন নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করছে। সেখানে বাংলাদেশ কেন অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও তার প্রয়োজনীয় ১০ থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তিসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করতে পারবে না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৫৯

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভাই, অটোরিফ্রেস এড-অনটা কাজ করতিসে না মনে হয় । :P

২| ০৬ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৩৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সৌর বিদ্যুতই আগামী বিশ্বের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের তো বটেই।

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪

Al Rajbari বলেছেন: আহা-!!
দিলটা জুড়িয়ে যায়-!! :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.