নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখনই সময় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের

২৯ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:২৯



দিনে দিনে বাংলাদেশে পর্যটনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দারুণ সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। গত বছর অর্থাত্ ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৯৮ লাখ মানুষ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি সব ধরনের পর্যটক রয়েছেন। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করে প্রতিটি স্তরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ হাতছানি দেয় বিদেশি পর্যটকদের। কিন্তু বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প এখনো অবকাঠামোগতভাবে অনেকটা পিছিয়ে আছে আমাদের প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের চেয়ে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের পর পর্যটন শিল্প হতে পারে রাজস্ব আদায়ের বিরাট সম্ভাবনাময় খাত। আর সেই সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সরকার পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১৬-২০১৮ পর্যন্ত তিন বছরকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে নানা উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এ উদ্যোগে এগিয়ে আসবেন, আমরা প্রত্যাশা করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাত জিডিপিতে ২ দশমিক ১ শতাংশ অবদান রাখছে। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে এদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। অনেক প্রতিকূলতা, সীমাবদ্ধতা, সমস্যা, সংকট, ত্রুটি-বিচ্যুতি, পশ্চাত্পদতা সত্ত্বেও পর্যটন খাত থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে বাংলাদেশ।

নেপাল এবং ভারতের মতো বাংলাদেশে পৃথক কোনো পর্যটন ব্যাংক চালু না করেও প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমাদের ব্যাংকগুলো নতুন বিনিয়োগ করতে পারে। পর্যটনে যাওয়ার জন্য আগ্রহীদের বিশেষ সঞ্চয় স্কিম, এ ব্যবসায় নিয়োজিতদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় প্রকল্প চালু থেকে শুরু করে এ খাতে উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণের মতো আলাদা ঋণদান কর্মসূচি প্রচলন করা যায়। দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ও স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিশেষ ট্যুরিজম ব্যাংকিং উইন্ডো চালু করা যেতে পারে। নতুন নতুন হোটেল, মোটেল নির্মাণ, কটেজ, রিসোর্ট এবং অ্যামিউজমেন্ট পার্ক প্রতিষ্ঠা, পর্যটন স্পটগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ উপযোগী মনে হলে ট্যুরিজম ব্যাংকিং উইন্ডো চালু করার মাধ্যমে ঋণ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। আগ্রহী উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে ব্যাংক প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে পর্যটন শিল্পে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে পারেন। দেশের অভ্যন্তরে পর্যটকদের চলাচলে সুবিধার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে নানা ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া যায়, যাতে করে তারা তাদের সেবার পরিধি ও মান বৃদ্ধি করতে পারে। বিলাসবহুল বাস, ট্যুরিস্ট কোচ ও জাহাজ আমদানির লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো যথাসম্ভব জটিলতা পরিহার করে সহজ শর্তে ট্যুরিস্ট অপারেটরদের পর্যাপ্ত ঋণ প্রদান করতে পারে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মুদ্রা বিনিময়ের জন্য সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ব্যবস্থা, যথেষ্ট সংখ্যক এটিএম বুথ স্থাপন এবং এগুলো সার্বক্ষণিক চালু থাকা নিশ্চিতকরণ, ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সুবিধা বৃদ্ধি করাসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ হেল্প ডেস্ক চালুকরণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো পর্যটন খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। পর্যটন খাতকে ঝুঁকিবহুল খাত মনে না করে এটাকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনায় এনে আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে উদ্যোগী হলে পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিতরা বিশেষ প্রণোদনা লাভ করবেন, নিঃসন্দেহে বলা যায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটন খাতের সম্ভাবনাময়, লাভজনক প্রকল্প খুঁজে বের করে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য বিনিয়োগ প্যাকেজের সুযোগ সৃষ্টি করলে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের চেহারাই অনেকটা বদলে যেতে পারে। যথেষ্ট পরিমাণ পুঁজির অভাবে দেশের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে উঠতে পারছে না আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিনোদন কেন্দ্র। অনেক উদ্যোক্তা এ ধরনের প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ প্রত্যাশা করলেও নানা ধরনের আইনগত জটিলতা, ঋণ নীতিমালার দোহাই দিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা এবং আন্তরিকতার অভাব সুস্পষ্ট প্রকাশ লক্ষ করা যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে। অথচ সম্ভাব্যতা যাচাই করে পর্যটন শিল্পে নানামুখী উদ্যোগে প্রয়োজনীয় আর্থিক বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো যথেষ্ট পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। এর ফলে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রা সংযোজনের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পে বিপুল সংখ্যায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যে অর্থ ব্যয় করে তার একটি অংশ এখন থেকে দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে—এই মর্মে সিএসআর ব্যয় নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের সিএসআরে পর্যটনের অর্থ ব্যয় করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এতে করে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাংকগুলো কাজ করতে পারবে, তাদের প্রচারণাও ভালো হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনকার বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ীই ব্যাংকগুলো পর্যটন খাতে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সিএসআর খাতে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫৯৬ কোটি টাকা খরচ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী একটি ব্যাংকের মোট বার্ষিক মুনাফার আড়াই শতাংশ সিএসআরে খরচ করতে হয়। এসএমই খাতের মতো ব্যাংকগুলো পর্যটন খাতে বিশেষ ব্যাংকিং সেবা পণ্য চালুর মাধ্যমে আগ্রহী উদ্যোক্তা গ্রাহকদের সহযোগিতা করতে পারে।

বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যটন শিল্পের জন্য বিশেষ ব্যাংকিং সেবা চালুকরণের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যদি আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে তাহলে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ ও উন্নতকরণের মাধ্যমে জিডিপিতে এর বিপুল পরিমাণ অবদান বাড়ানো সম্ভব। পর্যটন খাতকে চাঙ্গা ও উন্নত করতে স্পেশাল ট্যুরিজম ব্যাংকিং কর্মসূচি চালুর ব্যাপারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে জাতীয় অর্থনীতিতে শুভ ফলাফল বয়ে আনতে পারে।
সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.