নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৩ মিনিটের অপারেশন \'থান্ডারবোল্ট\'

০৩ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৪৬



"বিমানবাহিনীর সি-১৩১ বিমান। রাত ৪টা ১০ মিনিটে সিলেট থেকে এসে বিমান নামে কুর্মিটোলায়। সরাসরি গেলাম ঢাকা সেনানিবাসের ৪৬ ব্রিগেডে। সেখানে কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ওই সেন্টার থেকে গুলশানে হলি আর্টিসানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সার্বিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল। সেনাপ্রধান ব্রিফ করলেন। জানালেন, অভিযানের ট্যাকটিক্যাল কমান্ডার হিসেবে আমার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর পরই গেলাম গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁর সামনে। সেখানে পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার যারা প্রথম থেকে উপস্থিত ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা হলো। হলি আর্টিসানের মালিকের সঙ্গে কথা বলে পুরো ভবনের ব্যাপারে একটা ধারণা নিলাম। তৈরি করে ফেললাম অভিযানের ছক। এর পর কমান্ড সেন্টারে গিয়ে দেখা করলাম সেনাপ্রধানের সঙ্গে। তখন তার হাত আমার কাঁধের ওপর। স্যার বললেন, 'বেস্ট অব লাক।' সাভার সেনানিবাস থেকে এলো আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি)। চূড়ান্ত অভিযানের জন্য যখন হলি আর্টিসানের সামনে আমরা, তখন সকাল ৭টা ৩৮ মিনিট। দেখি, একটি পরিবার হলি আর্টিসান থেকে বের হয়ে আসছে। পরে জানতে পারলাম, সেটি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাতের ফ্যামিলি। তখনই চিন্তা করলাম, আর একমুহূর্ত দেরি নয়। এখন যদি জঙ্গিরা বেরিয়ে সামনের হাসপাতাল বা কোনো বাসায় ঢুকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, তাহলে নতুন সংকট তৈরি হবে। এরপরই শুরু হয় 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট'।"


২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশ ও দুনিয়া স্তম্ভিত করে দেওয়া হলি আর্টিসান হামলার পর সেই অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ড ব্যাটালিয়ন। ওই অপারেশনের কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল এম এম ইমরুল হাসান। গতকাল রোববার তিনি শোনালেন অপারেশন থান্ডারবোল্টের সেই ১৩ মিনিটের অনেক নেপথ্য কথা, যার প্রতিটি সেকেন্ড ছিল উত্তেজনার বারুদে ঠাসা। গত বছরের ২ জুলাই। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে অভিযানের সমাপ্তি। কমান্ডো অভিযানে অংশ নেওয়া কেউ আহত হননি। আর সফলতার সঙ্গে উদ্ধার করা হয় জীবিত জিম্মিদেরও।


প্যারা-কমান্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরুল জানান, যে কোনো অপারেশনে কমান্ডার শেষ ধাপে থাকেন। তার আগের ধাপে থাকে একাধিক স্তর। যে কোনো যুদ্ধ বা অপারেশনের এটাই নিয়ম। ব্যত্যয় হয়নি অপারেশন থান্ডারবোল্টে। অপারেশনের আগে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে বলা হয়_ এক, হলি আর্টিসানের আশপাশ এলাকা থেকে সব ধরনের যানবাহন সরিয়ে দেওয়া; দুই, প্রয়োজনীয় কমান্ড সিগন্যাল ছাড়া মূল অপারেশন শুরুর পর অন্য কোনো বাহিনীর গোলাগুলি না করা এবং তিন, সংবাদকর্মীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া। এই তিনটি বিষয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খুব চমৎকারভাবে পালন করেন। এরই মধ্যে ট্রুপসের ব্রিফ করা হয়। কোথায় স্নাইপার বসানো হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটে চারটি এপিসি নিয়ে কমান্ডোরা হলি আর্টিসানের মূল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তা দেখে অভিযানে অংশ নেওয়া সদস্যসংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। হলি আর্টিসানের সামনে একটি হাসপাতাল। ঘটনার রাতেও সেখানে আট নবজাতক ছিল। আশঙ্কা ছিল, জঙ্গিরা হাসপাতালে না ঢুকে পড়ে।


পরে হাসপাতাল পেরিয়ে কমান্ডোদের বহনকারী একটি এপিসি হলি আর্টিসানের মূল ভবনের দিকে এগোতে থাকে। সেখানে আগেই বেশ কিছু ইমপ্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বসিয়ে রাখে জঙ্গিরা। হঠাৎ দেখা যায়, রেস্তোরাঁয় লুকিয়ে থাকা কেউ বলছেন 'হেল্প হেল্প'। দেখা গেল, তারা জিম্মি। প্রথমে তিন বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করে আনা হয়। এর পরই একজন দৌড়ে হলি আর্টিসান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। তার হাতে অস্ত্র। কমান্ডোদের লক্ষ্য করে গুলি করার চেষ্টা করছিল। ওই জঙ্গিকে গুলি করা হয়। এরপর একইভাবে আরও এক জঙ্গিকে গুলি করেন কমান্ডোরা। এর পরই আরও চারজন কমান্ডোদের গুলিতে মারা যায়। এরই মধ্যে কমান্ডোদের একটি দল হলি আর্টিসানের দোতলায় উঠে যায়। সেখান থেকে জিম্মি আরও আটজনকে উদ্ধার করা হয়। হলি আর্টিসানের দোতলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ছাদে চলে যায় কমান্ডোদের একটি দল। জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়া সবাইকে বাইরে এনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে দেওয়া হয়। ১৩ মিনিটের মূল অপারেশন শেষে আবার যখন হলি আর্টিসানের ভেতরে কমান্ডোরা ঢুকছিলেন, তখন চোখে পড়ে জঙ্গিদের নৃশংস ও বীভৎসতার দৃশ্য। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লাশ। কুপিয়ে ও গুলিতে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এরপর হলি আর্টিসানের ভেতরটা ঘুরে দেখেন সেনাপ্রধান। ধীরে ধীরে অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সেখানে হাজির হন।


লে. কর্নেল ইমরুল হাসান বলেন, 'তখনও আমার ডেঙ্গু জ্বর পুরোপুরি সারেনি। সেদিন ছিলাম ছুটিতে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হবিগঞ্জে যাই। গুলশানে রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার খবরটি আমার একজন কমান্ডো সহকর্মী প্রথম দেন। এর পরই ফোন করেন র‌্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ভাই। টেলিভিশনে চোখ রাখছিলাম। পরিস্থিতি বিবেচনায় হবিগঞ্জ থেকে রাতেই সিলেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বন বিভাগে কর্মরত চাচাকে ফোন করে গাড়ির ব্যবস্থা করি। হবিগঞ্জ-সিলেট সড়কের শেরপুর এলাকায় পেঁৗছার পর দুর্ঘটনার শিকার হয় গাড়ি। ট্রাকের চাপায় গাড়িতে থাকা একজন গুরুতর আহত হন। আমি সামান্য আহত হই। পরে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে কোনোমতে সিলেটে পেঁৗছাই। সামনে ঈদ থাকায় প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অনেকে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। তবে তাদের অধিকাংশের বাসা সিলেট সেনানিবাসের আশপাশে। সবাইকে খবর দেওয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে বিমানবন্দরে হাজির হন তারা। বিমানে আসেন ঢাকায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। এটাই কমান্ডো-জীবন। তবে আমরা চাই না, এ ধরনের কার্যক্রম দেশে আরও হোক। কমান্ডোরা যে কোনো সফল অভিযানের পর তা তাদের 'সাকসেস স্টোরি' হিসেবে নয়, অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেন। হলি আর্টিসানের ক্ষেত্রেও তাই। এ অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে সিলেটে আতিয়া মহলে অভিযানের সময়।


লে. কর্নেল ইমরুল আরও বলেন, পুলিশ-র‌্যাবসহ সব সংস্থার প্রতিনিধিদের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের অভিযান সফল করা কঠিন।


সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশ-বিদেশে যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রশিক্ষণ রয়েছে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের। শান্তিরক্ষা মিশনেও অনেক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব তারা পালন করেন। যে কোনো বড় ধরনের জিম্মি সংকট কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়, দেশ-বিদেশি প্যারা-কমান্ড ব্যাটালিয়নের সেই প্রশিক্ষণ রয়েছে। ১৯৯২ সালের ৩০ জুন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ড ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেটে তাদের প্রধান কার্যালয়। বর্তমানে এই ব্যাটালিয়ন ব্রিগেড কমান্ডের আওতাধীন। দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গি-সংক্রান্ত বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনীর কী ধরনের সক্ষমতা রয়েছে, তা নিয়ে ২০১৫ সালে তা যাচাই করে দেখা হয়। জঙ্গি-সংক্রান্ত যে কোনো ঘটনা মোকাবেলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। হলি আর্টিসানের সময় তা কাজে লেগেছে। এ ছাড়া সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় প্যারা-কমান্ড ব্যাটালিয়ন থেকে অন্য বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণ নেন।
সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:০২

রাজীব নুর বলেছেন: জঙ্গি সমস্যার সমাধান হোক এই কামনা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.