নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফরহাদ মজহার ডেকে নিয়েছিলেন, তারপর খুন হয়েছিলেন কবি হুমায়ুন কবির

০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:২৮



১৯৭২ সালের ৬ জুন যেদিন ‘কুসুমিত ইস্পাত’ এর কবি হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করা হয় সেদিন তাকে ডেকে নিয়েছিলেন ফরহাদ মজহার।
তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাসার অদূরে মাঠের মধ্যে পাওয়া যায়। কবি হুমায়ুন কবির নিহত হয়েছিলেন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নির্দেশে।

তার হত্যাকাণ্ডের পরে ফরহাদ মজহার কাব্য ছাপিয়েছিলেন:
“আমি তোকে ডেকে বলতে পারতুম হুমায়ুন অতো দ্রুত নয়, আরো আস্তে যা।”
সে সময় পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, তার পর পর ফরহাদ মজহার আমেরিকা চলে যান।

আহমদ ছফা তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন:
“ভাত খেলাম। কাপড় ধুয়ে দিলাম। ঘুমোলাম। মনওয়ার এবং মসি এসে জাগালো। মসি ছেলেটাকে আমি ভয়ঙ্কর অপছন্দ করি। মনে হয় ছেলেটা কি একটা মতলবে ঘুরছে। আমার ধারণা হুমায়ুনের মৃত্যুরহস্যটা সে জানে। দিনে দিনে এ ধারণাটা আমার মনে পরিষ্কার রূপ লাভ করছে। কেমন জানি মনে হয়, ছেলেটার হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ধরনের ছেলেদের কি করে এড়িয়ে চলবো সেটা একটা সমস্যা। রেবুদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে সম্ভবত। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করতে পারিনি। আশা করছি এরই মধ্যে নতুন কোনো তথ্য জেনে যাবো। ফরহাদ মজহারের আমেরিকা পলায়ন, সালেহার সঙ্গে স্বামীর পুনর্মিলন এসবের সঙ্গে বোধহয় হুমায়ুনের মৃত্যুর একটা সম্পর্ক জড়িত রয়েছে।”
‘মসি’ মানে ফরহাদ মজহার।

কবি হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করেছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। এর আগে ৩ জুন খতম করা হয়েছিল সেলিম শাহনেওয়াজ ওরফে ফজলুকে। সেলিম শাহনেওয়াজ ও হুমায়ুন কবির হত্যা ওতপ্রতভাবে জড়িত। সেলিম শাহনেওয়াজ সিরাজ সিকাদারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উপদল গঠন করেছিলেন। তার স্ত্রী মিনুকেও বহিস্কার করা হয়েছিল, যে ছিল হুমায়ুন কবিরের বোন। বোনকে আশ্রয় ও সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। হুমায়ুন কবিরের বাসায় সাইক্লোস্টাইল মেশিনে টাইপ করে ছাপানো হয় সিরাজ সিকদার বিরোধী লিফলেট। সে লিফলেটটির শিরোনাম ছিল: ‘পার্টির লাইন সঠিক, কিন্তু সিরাজ সিকদার প্রতিক্রিয়াশীল’।

হুমায়ুন কবিরের ভাই পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সক্রিয় সদস্য ফিরোজ কবিরের সঙ্গে বিরোধ দানা বেঁধেছিল বিপ্লবী নেতা সিরাজ সিকদারের সঙ্গে। ফিরোজ কবিরকে একজন “কমরেড” হত্যার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই বহিস্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন কবি হুমায়ুন কবির।

খুলনার তুতপাড়ায় সস্ত্রীক পালিয়ে ছিল সেলিম শাহনেওয়াজ। তার মৃত্যুদণ্ড জারির খবর তিনি জেনে গেছেন। তখন তার কাছে বরিশালের রেজভী বার্তা নিয়ে আসে, সে বার্তা মত ঝালকাঠি যাবার কথা ছিল তার। পরদিন তার লাশ ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে পাওয়া যায়। তাকে হত্যা করে পার্টির কর্মী খসরু ৩ জুন। পার্টির নির্দেশ মত সে পৌঁছে যায় ঢাকায়। ৬ জুন কবি হুমায়ুন কবিরকে সে হত্যা করে।

১৯৭২ সালের ১০ জুন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি হুমায়ুন কবির হত্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে।
সেখানে বলা হয়:
‘‘সাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ, নাম-যশ করার পুরোপুরি বুর্জোয়া দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন হওয়ায় স্বভাবতই হুমায়ুন কবিরের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য ছিল। তাঁর ইচ্ছা ছিল আর.এস.পি-এর নির্মল সেন ও প্রফেসর সিদ্দিকের মতো চাকুরী ও বুর্জোয়া জীবনযাপন করে সর্বহারা পার্টির নেতা হওয়া এবং লেখক হিসাবে নিজেকে জাহির করা। তার এই মনোভাব এবং তার ভাই ফিরোজ কবির সংক্রান্ত পার্টির সিদ্ধান্ত তাকে প্ররোচিত করে ফজলু-সুলতান চক্রের সঙ্গে যুক্ত হতে। …একদিকে সে এ ধরনের কথা বলেছে আর অন্যদিকে ফজলু চক্র ও নিজের বোনকে আশ্রয় দিয়েছে। পার্টি ও নেতৃত্ববিরোধী অপপ্রচার ও জঘন্য ব্যক্তিগত কৃৎসা সম্বলিত দলিলাদি লিখেছে, ছাপিয়েছে এবং বিতরণ করেছে, চক্রের প্রধান প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী হিসাবে কাজ করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল চক্রান্তকারীদের চর হিসাবে গোপনে পার্টির মাঝে অবস্থান করা যাতে ফজলু চক্রের পতন হলেও সে পার্টির মাঝে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং পার্টির বিরাটাকার ক্ষতিসাধন করতে পারে… প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে যেয়ে হুমায়ুন কবির পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির গেরিলাদের হাতে খতম হয়। হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তা পাক ফ্যাসিস্টদের হাতে নিহত কোনো বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে নেয়নি। তার প্রতি সরকারের বিশেষ প্রীতি কি প্রমাণ করে না যে, সে সরকারের উঁচু দরের গোপন তাবেদার ছিল?”

সেলিম শাহনেওয়াজকে ডেকে নেয়া বরিশালের রিজভি এর কিছুদিন পরে আরেক উপদলের হাতে বরিশাল শহরের তৎকালীন ডগলাস বোর্ডিং-এর সামনে নিহত হয়। আর সেলিম শাহনেওয়াজকে হত্যাকারী এই খসরু ছিল কাজী জাফর গ্রুপের ক্যাডার। ১৯৭৪ সালে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায় রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প দখল করতে গিয়ে খসরু নিহত হয়। প্রথমে কবি হুমায়ুন কবির খতম মিশনে অংশ নেওয়া গেরিলাদের পুরস্কৃত করা হলেও পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি পরবর্তীকালে হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে পুর্নমূল্যায়ন করে ও হুমায়ুন কবিরের অপরাধ থেকে তাকে দায়মুক্তি দেয়।

পার্টির এক সময়ের সম্পাদক রইসউদ্দিন আরিফ লিখেছেন:
’‘বিপ্লবী পার্টিতে মতবিরোধ থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মতবিরোধকে কেন্দ্র করে পার্টি কমরেডদেরকে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই ধরে জবাই করার উদ্ভট লাইন সর্বহারা পার্টিতে যেভাবে শেকড় গেড়ে বসেছিলো পৃথিবীর আর কোন বিপ্লবী পার্টির ইতিহাসে তার কোন নজির খুঁজে পাওয়া দুস্কর।’’

তথ্যঋণ:
(১) পূর্ব বাংলার গোপন রাজনীতি-এস.এম তুষার, বরিশাল।
(২) কবি হুমায়ুন কবির: বিপ্লবের ভেতর-বাহির, শওকত মাসুম, আরক, তৃতীয় সংখ্যা, ২০১৬, বরিশাল।
সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মনে হয় ফরহাদ মাজহার জড়িত নয়।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

কাউয়ার জাত বলেছেন: পেমেন্ট?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.