নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধ্বংসস্তূপ

পূর্ণ হতে চাইনি তাই পূর্ণতার খোঁজ করি, অপূর্ণতাই থেকেছে পাশে তাই অপূর্ণতার কাছে ঋণী।

পেন আর্নার

একটা ইশারা...সৃষ্টি অথবা ধ্বংস।

পেন আর্নার › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপোস্ট - ''ছোট্ট স্বপ্ন'' (আমার লেখা প্রথম গল্প)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪৩



(ছবিঃ গুগোল)



(১)



দু'জন দু'জনকে প্রথম দেখলো ওই লেকটার পাশে। মিথুন ও স্বপ্না। দু'জনেই চুপচাপ বসা। পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা চলছে ওদের। সেই সূত্রেই এই প্রথম দেখা পর্ব। স্বপ্না অনেক কিছু বলবে বলবে করে কী বলবে তাই ভাবছে আর মিথুন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে পানির দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ স্বপ্না হেসে বললো, 'জানেন, আমার একটা উদ্ভট দাবি ছিল!'



মিথুন চমকে উঠে প্রশ্ন করলো, 'কী সেটা?'

স্বপ্না বললো, 'আমি চশমা পড়া ছেলেকে কখনই বিয়ে করবো না!' বলে দু'জনেরই সে কী হাসি।



কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই হাসি থামিয়ে মিথুন আবার প্রশ্ন করলো, 'তাহলে?!...'



প্রশ্ন কেড়ে নিয়ে স্বপ্না উত্তর দিল, 'ভালবাসা যে কাউকেই আপন করে নিতে পারে।' তারপর একটু চুপ হয়ে যায় যেন সবকিছু। মনে মনে ভালবাসার আগমন হলো সেই প্রথম বিকেলে......





(২)



জুলাই মাস। সন্ধ্যা সাতটা। ঝুমঝুমে বৃষ্টি। সানাই বাদক থেকে শুরু করে বরপক্ষের নাচুনি পার্টি আর সবার মধ্যমণি মিথুন কাকভেজা হয়ে গেল। বিয়েটা হচ্ছিল স্বপ্নাদের বাড়িতে, ওর ইচ্ছাতেই এখানে। ওদের বাড়ির একটু কাছে এসেই গাড়ি থেকে বরযাত্রীরা নেমে বরকে নিয়ে নাচতে নাচতে যাচ্ছিল কি, হঠাৎ এই বৃষ্টি। সবাই দৌড়ে স্বপ্নাদের বাড়ির ভেতরে চলে গেল। কনেপক্ষের যারা এসেছিল সবাইকে স্বাগতম জানাতে তারাও ভেতরে গিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে গেল এইরকম একটা অবস্থায় বরপক্ষের জন্য সবরকম সুবিধা করতে, যতটুকু পারা যায়। মিথুনের মন কিন্তু পড়ে রইলো বৃষ্টিতে। আজকের আগে কেউ যেন বলেছিল, "বৃষ্টি আমার খুব ভাল লাগে! এখন প্রায়ই ভেবে ভেবে ব্যাকুল আমি...কেউ আমার জন্য অনেক অনেক বৃষ্টি নিয়ে আসছে।" কথাগুলো বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে শরতের কাশফুলের মত দোল খায় মিথুনের মনে। চশমা পড়া চোখটাকে সহসাই আড়াল করা যায় কিন্তু ভাললাগার এই প্রস্ফুটিত অরুণকে কীভাবে ঢেকে রাখা যায়! মুখে তার আভা পড়বেই। হাসতে চেয়েও পারছে না হাসতে, স্বপ্না সামনে থাকলে হয়ত খুব সহজেই হেসে ফেলা যেত! হঠাৎ করেই ভাবনা এল......তাহলে স্বপ্না কী করছে এখন?!



দোতলায় নিজের ঘরটাতে বসে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছিল স্বপ্না, কী ভেবে উঠে চলে গেল বেলকনিতে। হাত বাড়িয়ে দিল বৃষ্টিতে। স্বপ্নারা দুই বোন, এক ভাই। নিচে ছোট ভাই আকাশ ব্যস্ত হবু দুলাভাইকে নিয়ে। বেচারা মিথুন একদম বেশি ভিজে গেছে। ওর ছোটবোন একটু জোড় করেই টেনে নিয়ে এসেছে ওকে, যেন আসতেই চাইছিল না বৃষ্টি ছেড়ে! স্বপ্নার ছোট বোন মেঘলা উপরে এসে দেখে ঘরে নেই স্বপ্না। 'স্বপ্নাপু?!' ডাকে ও।



বেলকনি থেকে হেসে উঁকি দিয়ে স্বপ্না বলে, 'তাড়াতাড়ি আয়! দেখে যা কী সুন্দর বৃষ্টি!'



'আপু! আজ তোমার বিয়ে আর তুমি বৃষ্টি গুনছো! তোমার বর তো ভিজে লালকাক হয়ে গেছে!'

'লালকাক (হেসে)! লাল তো আমি, সে কেন হবে?'

'আরেহ! তোমার বরকে বড় মামা একা একা হাসতে দেখেছে......এই নিয়ে নিচে কী হয়ে গেল!'

খুব লজ্জা পেয়ে স্বপ্না বললো, 'মা কোথায়?'

'মা, মামী, চাচী সবাই নিচে ব্যস্ত।'

'আর বাবা?' 'বাবা কথা বলছেন তোমার শ্বশুরের সাথে।'

'আকাশকে একটু ডাকবি?'

'কেন? ও তো মনে হয় একটু আগে বেরিয়ে গেল।'

'এই বৃষ্টিতে!'

'চিন্তা করো না, বড় মামার গাড়ি নিয়ে গেছে। যেই কাজী ডাকা হয়েছে, ব্যাটাটা একটা পাজি! কল দিয়েছিল, দুপুর থেকে নাকি তার হাতে ব্যথা।'

'তো!'

'তো আর কি, তোমার ভালোবাসার ভারী কাবিননামা আনতে তার কষ্ট হবে তাই ছোট ভাই......(চাপা হেসে)!'

'যা ভাগ!'

হাসতে হাসতে চলে গেল মেঘলা স্বপ্নাকে অন্য এক জগতে ফেলে।





(৩)



রাত ৯টা। বৃষ্টি থেমে গেছে। বরপক্ষরাও ভাল অবস্থায়। মেয়ে-মহিলা আত্মীয়রা আবার তাদের সাজগোজ ঠিক করে নিয়েছে। দু'পক্ষের পুরুষ আত্মীয়দের মধ্যে বড়জনরা মোটামুটি সবাই স্বপ্নাদের বাড়ির নিচের বড় ড্রইং রুমে বসেছেন। এখন অবশ্য বরপক্ষ-কনেপক্ষ আলাদা করা যায় না। এই দুই ঘণ্টার বৃষ্টি যেন পরমাত্মীয় করে গেছে সবাইকে। সবার সে কী খুশি, কত কথা! মিথুন আর স্বপ্নার এক হয়ে যাওয়াকে ঘিরে মুখরিত ঘর। কাজী এসে গিয়েছিলেন সময়মত। কাবিন হবে এখুনি। তারপর খাবারের আয়োজন। তারপর...





(৪)



বাসর ঘরে বসা স্বপ্না। মিথুনের ঘর এটা। ওদের বাড়িটা এখনো শোরগোলে ভরপুর। নানান কথার আওয়াজ আসছে। আত্মীয়রা অনেকেই আজ থেকে যাবে এখানে। স্বপ্নাকে ভেতরে বসিয়ে গেছে মিথুনের মেজ চাচী, ছোট খালা ও ছোট বোন। ছোট-বড় সাঙ্গ-পাঙ্গরা জোঁকের মত এতক্ষণ লেগেছিল নতুন বধূর সাথে। ধমক দিয়ে ওদেরকে বিদায় করেছেন মেজ চাচী। ঘরটা খালি হয়ে গেল কিছুপর। স্বপ্না বসে বসে বাবা-মা, ছোট ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে বিদায় দেবার সময়টা মনে করছে। মনটা খুব খারাপ লাগছে। বাবাকে কীভাবে ধরেছিল ও! কী করছে ওরা এখন? মা কি ওর রুমটাতে গিয়ে কাঁদছেন?! মায়ের কথা মনে পড়তেই নিজের শাশুড়ি মায়ের কথা মনে হলো। তিনি খুব অসুস্থ। তাই আজ এমন একটা দিনেও বড় ছেলের বিয়েতে থাকার ভাগ্য হয়নি তার। এটা ভাবতেই আরও কেমন মন খারাপ হয়ে গেল। তারপর হঠাৎ ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। মিথুনের ছোট বোন শাওন অসুস্থ মাকে নিয়ে এসেছে। খুব ব্যস্ত হয়ে উঠে গিয়ে স্বপ্না মাকে ধরলো। তারপর দু'জন বিছানায় বসলো।



শাওন 'আসছি' বলে চলে যাবে এই সময় মা বললেন (ধীর কণ্ঠে), 'শানু, আলমারি থেকে বাক্সটা নিয়ে আয়।' চলে গেল শাওন সেটা আনতে।



'মা?...' বলে কী একটা বলতে যাবে স্বপ্না, তারপর তাড়াতাড়ি পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেল। তার আগেই বাঁধা দিলেন তিনি এবং শান্তভাবে হেসে বললেন, 'থাক আম্মু।'



শাওন ফিরে এলো, বাক্সটা মায়ের হাতে দিল। বাক্স থেকে একজোড়া সোনার বালা বের করলেন মা। সোনার ওপরে কুন্দনের কাজ করা, নীল-সবুজ রঙের কুন্দন পাথরে। সেগুলো স্বপ্নার দু'হাতে পড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, 'যখন প্রথম এ বাড়িতে এলাম, আমার শাশুড়ি মা আমাকে এগুলো দিয়েছিলেন। তাকে আমি কখনই শাশুড়ি মা ভাবিনি, ভেবেছি উনিই আমার আপন মা। তারই খুব ইচ্ছে ছিল (মিথুনের জন্ম হবার পর) এগুলো যেন তার নাত-বউকে দেয়া হয়।'



স্বপ্না খুব মায়াভরে বালাগুলো দেখলো, আর তখন মিথুনের ছবি ভেসে উঠলো মনে। আজ ওর জন্যই এই বালাগুলো আবার ঘরময় চমকাবে কারো হাতে, এদের অস্তিত্বের পুনর্জন্ম হল যেন। 'বড় মিষ্টি তোমার হাসি' ...একথা শুনেই স্বপ্না মায়ের দিকে তাকালো লজ্জা পেয়ে।' শাওন মুচকি হাসলো।



মা উঠবেন এবার বুঝতে পেরেই স্বপ্না বলে, 'মা আপনাকে দিয়ে আসি।' কেন জানি, তিনি বারণ করলেন না। মা-বাবার ঘরে এসে মাকে শুইয়ে দিল স্বপ্না ও শাওন। তারপর শাওন চলে গেল বাবাকে ডাকতে। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল স্বপ্না, তখন মা বললেন (ধীরে), 'মিথুন বড় সৌভাগ্যবান!'





(৫)



মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে ও চলে গেল। রাত সাড়ে এগারটা তখন। ঘরে ঢুকে স্বপ্না দেখলো কী যেন খুঁজছে মিথুন। কিছুটা সংশয়, কিছুটা সংকোচ নিয়ে গলা একটু ঝেঁকে বললো, 'কী খুঁজছো?'



চমকে উঠে মিথুন বলে, 'কিছুনা। তুমি কোথায় গিয়েছিলে (ধরা পড়ে গেছে এরকম একটা কণ্ঠে)?'



'মায়ের রুমে।'



কিছুক্ষণ দুজনেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছে দুজনেই কিছু বলতে চায়।



'ঘুম পাচ্ছে?' মিথুন প্রশ্ন করে।

স্বপ্নার 'না' বোধক ইশারা (মাথা নেড়ে)।

'তুমি বসো, ও! ফ্রেশ হবে না?',মিথুন একটু ব্যস্তস্বরে আবার বলে।

'হম....।' মনে হলো রুম থেকে বের হবে সে......স্বপ্না পিছু ডেকে বলে, 'মিথুন, কোথায় যাচ্ছো?!'

'মা'কে আরেকবার একটু দেখে আসছি।'

'আচ্ছা', মাথা নেড়ে সায় দেয় স্বপ্না।



মিথুন চলে গেলে ঘরটার চারদিকে তাকিয়ে দেখলো ও। খুব সুন্দর করে সাজানো! আর মনে করলো প্রথম পদার্পণের সময় শাওন পাশ থেকে ফিসফিস করে বলছিল, ''পুরোটা ভাইয়া সাজিয়েছে!'' বাঁ হাতের বাহুতে হাত রেখে স্বপ্না মুচকি হাসলো (মনে হলো শাওন বাঁ হাতে হালকা চিমটিও বুঝি দিয়েছিল তখন)।





(৬)



ঘণ্টা আধেক পর মিথুন এলো। দেখলো স্বপ্না এখনো ওভাবেই আছে। খাটের মাথার ডান দিকটায় যেখানে জানলা আছে সেদিকটায় বসে বাইরে তাকিয়ে আছে।



স্বপ্না ক্ষণেই তাকালো...'তোমাকে একটা কথা বলবো!', দু'জন একসাথে বলে উঠলো।



'আচ্ছা তুমি বলো।', (ক্ষীণ হেসে) বললো মিথুন।

'না, তুমি বলো । তারপর আমি।', স্বপ্না বললো।

'তোমার মন ভাল তো?' স্বপ্না মাথা নিচু করে। 'তখন আমি চাবি খুঁজছিলাম।'

'কিসের চাবি?'

'ছাদের চাবি। হিমু খুঁজে দিয়েছে (শাওনকে আদর করে এ নামে ডাকে মিথুন), ওর কাছেই ছিল।'...খানিক চুপ থেকে আবার বলে, 'আমার খুব ইচ্ছে তোমাকে আমাদের ছাদে নিয়ে যাবো। যাবে?'



আগ্রহ নিয়ে স্বপ্না কাছে এসে বললো, 'এখুনি যাবে?'

'তুমি চাইলে এখুনি।'





(৭)



ছাদে এলো ওরা। মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে তখনও ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরছে ওদের প্রিয় বৃষ্টি। সুমন্ত বাতাসও সুযোগ ছাড়লোনা এই মুহূর্তটাকে কমনীয় করতে।



মিথুন বলে ওঠে, 'তুমি যখন কাঁদছিলে, আমার মনে হচ্ছিল সবার কাছ থেকে শুধু আমার জন্য আমি তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।'



এই কথার কোন সাড়া না দিয়ে স্বপ্না বলে, 'ওই চাঁদটা এখন আড়ালে, দেখছো? মেঘ তাকে ঢেকে দিয়েছে। কিন্তু জানো, চাঁদটাও অপেক্ষা করে আমাদের মত! কতকাল না জানি একা চাঁদটা ওর কলঙ্কের দাগে অকথিত বিষাদ কাটিয়েছে তাই বিধাতা ওকে এতো সুন্দর জোছনা দিয়েছেন। কী মায়াবী চাঁদটা, কী সুরভি তার! রাতের অমোঘ রহস্যকে ভেদ করে একটা পরিপূর্ণ আকারে ছাপিয়ে যায় তার কলঙ্ক, জন্ম নেয় ওর ভেতরের রূপটা। হয়ত ও জানে না সে জোছনা সাগরে জোয়ার আনবে, অনেক কিছু ডুবিয়ে দেবে তারপরও কী এক অপূর্ণতায় আধো চাঁদ তারায় ক্ষত-বিক্ষত আকাশের জোছনা হতে চায়। হয়ত সেও চায় কেউ তার এই জোছনাকে মনে রাখুক, খুব ভালবাসুক.....আধো চাঁদ পূর্ণ হলেই জোছনা হয়।' কথাগুলো বলতে বলতে কখন যে স্বপ্না মিথুনের হাতটা ধরেছিল। দু'জন দু'জনার দিকে তাকিয়ে। এবার তো চশমাটাও কাজে দিল না চোখের ভাষা লুকোতে। কারো গভীর দু'চোখ স্বপ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে মিথুনের চোখে। কত আশা, ভরসা আর বিশ্বাস সে চোখে! কাছে এগিয়ে আসে স্বপ্না, অনেক কাছে। পারেনা মিথুন আর একটি মুহূর্তও দূরে থাকতে। জড়িয়ে ধরে স্বপ্নাকে।



'আমি তোমাকে ভালবাসি মিথুন...' স্বপ্না যেন আরও কাছে চলে আসে। প্রথম বিকেলের সেই ভালবাসার আগমন আজ দুটি ধারায় পূর্ণ বহতায় বয়ে গেল জোছনার সাক্ষী হয়ে। মেঘ তখন সড়ে সড়ে......





(৮)



দু'বছর চলছে বিয়ের পর। আগস্ট মাস। স্বপ্না আর মিথুনের প্রথম স্বপ্ন আসছে। সাড়ে ন'মাস চলছে। ডাক্তার এই মাসের শেষের দিকে ডেলিভারির তারিখ দিয়েছেন। ওদের খুব আশা, মেয়ে হবে। নাম হবে স্বপ্ন। মিথুন বলে স্বপ্নার মতই হবে ছোট্ট স্বপ্ন। ওকে নিয়ে বাবা মিথুন এঘর-ওঘর করবে, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি চেনাবে, জোছনা চেনাবে......কতকিছু। একদম বুকে বুকে রাখবে মেয়েকে। হাপিয়ে ওঠে স্বপ্না এসব শুনে শুনে, ওর মুখে খুশির সে কী চমক! এখন মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয় স্বপ্নার। ডাক্তার বলেছেন মিথুনকে খুব খেয়াল রাখতে।



'এক,... দুই, তিন...(আঙ্গুলের কর গুনছে স্বপ্না)'

'কী গুনছো?', মিথুন প্রশ্ন করে।

'আমাদের ছোট্ট স্বপ্নটা আসতে আর ক'দিন তাই গুনছি।'

'ব্যাস, আর কিছুদিন (স্বপ্নার হাত ধরে মিথুন)।

তারপর...'

দুষ্টুমীর ভঙ্গিতে সেই প্রথমবারের মত কথা কেড়ে নিয়ে স্বপ্না বলে, '...তারপর তুমি আর আমি আলাদা হয়ে যাবো!'

'মানে?!'



'মানে, আমার পাশে তোমাকে আর ঘুমোতেই দেবে না আমাদের স্বপ্ন!' বলে দুজনেই আবার হাসছে। প্রথম দেখার কথাগুলো দু'জনার মনেই নাড়া দিয়ে যায়। স্বপ্না আদর করে মিথুনের গালে। মিথুন মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে ওকে।





(৯)



আগস্ট মাসের ২২ তারিখ। রাত ৩টা। ভীষণ ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে স্বপ্না। শব্দে ঘুম ভেঙে অবস্থা বুঝতে এক মুহূর্তও সময় নেই না মিথুন। বাড়ির সবাই জেগে যায়। এরপর মুহূর্তেই কল......এ্যাম্বুলেন্স......ডাক্তার। হসপিটালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিথুন। ক্ষণে ক্ষণে চিৎকার, কান্না। মাথা নিচু করে তা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ডাক্তার ভেতরে যেতে দেয়নি। অবস্থা ক্রিটিক্যাল বলছে। মিথুন শুধু দু'হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ অস্থির। দোয়া করছে, কতবার যে বিধাতার নাম নিয়েছে! পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন।





(১০)



ঊষার আকাশজুড়ে স্বপ্নিল এক প্রভাত আসছে। ৪:৪৫ তখন। ভোঁরের আলোর সাথে সাথে জন্ম নিল একটা স্বপ্ন। ছোট্ট স্বপ্ন। নার্স স্বপ্নার বুকে এনে রাখলো নতুন জীবনটাকে। বলা হয়, প্রথমবারের মত সন্তানের মুখ দেখলে মা তার অবর্ণনীয় ব্যথা আর কষ্টটা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যান। ওকে দেখেই স্বপ্না নার্সকে বললো, 'আমার আর বেশি সময় নেই...'



নার্স থামিয়ে দিয়ে বললো, 'আপনি শান্ত হোন, আমি আপনার হাসব্যান্ডকে ডাকছি।'



মিথুন ছুটে আসে। স্বপ্না হেসে বলে, 'আমাদের স্বপ্ন এসে গেছে মিথুন!' আবেগের পানি কেউই ধরে রাখতে পারে না। অঝোরে কাঁদে।



স্বপ্না বলে, 'ওকে তোমার বুকে নাও।'



(হাতে স্বপ্নকে নিয়ে মিথুন ভাবে) শিশুটা কী নিষ্পাপ দেখতে! চোখের পানিতে চশমাটা আরও ঝাপসা করে দিচ্ছে দৃষ্টি। চশমাটা খুলে মিথুন, স্বপ্নাকে দেখে। স্বপ্নার চোখ আরও নীল হয়ে গেছে। পাশে বসে মিথুন। স্বপ্নার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।



'স্বপ্নকে তোমার বুকে বুকে আমি আর দেখতে পারবো না...', বলতে বলতে স্বপ্নার অশ্রুর রেখা দু'চোখ বেয়ে নেমে চলে যায়।



মিথুন বাঁধা দেয় বলতে। স্বপ্না তবুও বলে চলে ধীরে ধীরে, 'আজ রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। ভরা জোছনা আকাশে, তুমি আর আমি ছাদে বসা। হঠাৎ খুব বৃষ্টি আসে! আমাকে এই অবস্থায় ভিজতে দিবে না বলে তুমি উঠে আমার হাত ধরে টান দিলে, আমি চলে এলাম। সিঁড়ি বেয়ে নামবার সময় কে যেন ডাকে পেছন থেকে, 'মা' বলে! আমি ফিরে তাকাই, আর দেখি একটা শিশু খুব কাঁদছে। তারপরই আমার ব্যথা ওঠে, ঘুম ভেঙে যায়।'



মিথুন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। মুখে কোনো কথা নেই। বলার কোনো সাহসও সে পায় না। বাচ্চাটা ঘুমিয়ে গেছে। স্বপ্না একবার ওর মিথুন আর একবার ওর স্বপ্নর দিকে তাকিয়ে বলে, 'আমি অপেক্ষা করবো তোমাদের জন্য। তোমরা সময়মত চলে এসো আমার কাছে। আমি অপেক্ষা করবো.......'



ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে যায় স্বপ্নার, অশ্রুগুলো বিরতি নেয়...।



'স্বপ্না......!', দু'তিনবার ডাকে মিথুন। হৃদয়ের আর্তনাদ ফেটে বেরিয়ে আসতেই শিশুটির কোমল মুখ দেখে মিথুনের কান্নার জল মনে মনেই গড়ে ফেলে একটা বিদীর্ণ কালো সাগর।





(১১)



কতগুলো দীর্ঘ নিঃশ্বাসের দিন। ছোট্ট স্বপ্নটাকে বুকে বুকে করে ঘুরে বেড়ায় বাবা মিথুন। এঘর-ওঘর। স্বপ্ন খুব হাসে! এই হাসিটা দেখলেই মিথুনের মনে হয় যেন স্বপ্না এসে ওর কানে কানে কী বলছে, মা-মেয়ে দু'জনেই রহস্য করে কত কিছু জেনে যাছে! সেই তো! স্বপ্না কি যেতে পারে! নাহ! স্বপ্না আছে। আশেপাশেই আছে। ওর দুটি প্রিয় মানুষকে ছেড়ে ও কখনই যেতে পারে না!



আকাশের দিকে তাকায় মিথুন...একটা পূর্ণ চাঁদ। মনে পড়ে সেই কথাগুলো, ''......আধো চাঁদ পূর্ণ হলেই জোছনা হয়।'' তার মানে স্বপ্না এখানেই! ঠিক ওর পাশে দাঁড়িয়ে.....আর কোলে একটা ভরা হাসির জোছনা - ওদের ছোট্ট স্বপ্ন।





‍- পেন আর্নার

১৮ই আগস্ট, ২০১২



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:২২

ইষ্টিকুটুম বলেছেন: অনেক অনেক অনেক সুন্দর একটা গল্প যার কোন তুলনাই নেই। আমি নিজেই গল্পকার, কিন্তু, আমার সবগুলো গল্পের চেয়ে আপনার লেখা গল্পটা যেন হাজার গুণ সুন্দর। জাস্ট মুগ্ধ আমি!!!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০২

পেন আর্নার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ! আমি আমার গল্প বুঝলেও, মানুষের অভিব্যাক্তি থেকে বুঝি আসলে কী লিখেছি। :-)

আশা করি আপনার গল্পও পড়া হবে। শুভকামনা এবং ঈদ মোবারাক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.