নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর চেহাড়া মানুষকে মুখোশ দেয় আর সুন্দর মন মানুষকে সুন্দর করে! কুৎসিত মনকে সুন্দর চেহারা দিয়ে স্বল্প সময় আড়াল করা যায় কিন্তু বেশিক্ষন লুকিয়ে রাখা যায় না।

আসিফ ইকবাল তােরক

অনুবাদকঃ আমি ঘৃনার শব্দকে ভালোবাসায় অনুবাদ করি।

আসিফ ইকবাল তােরক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈষম্য এবং একটি রাষ্ট্রযন্ত্রের দূর্বলতা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৩৫

রিসেন্টলি মেয়েদের সিগেরেট খাওয়া নিয়ে বানানো একটি ইউটিউব শর্ট ফিল্ম খুব বিতর্কিত এবং ভাইরাল হয়েছে (শর্ট ফিল্মের নামঃ বৈষম্য/ ডিরেক্টর হায়াত মাহমুদ রাহাত/ প্রধান চরিত্রঃ সাব্বির অর্নব)। বিতর্কিত হওয়ার প্রধান কারন দুটি। এক ভিডিওটিতে শুধুমাত্র মেয়েদের প্রকাশ্যে ধুমপান করবার বিরোধীতা করা এবং ভিডিওয়ের শেষের দিকে প্রকাশ্যে কোনো মেয়ে ধুমপান করলে তার ধুমপান করবার দৃশ্য ক্যামেরায় রেকর্ড করে সেটা ভাইরাল করবার আহবান জানানোর কারনে। এছাড়াও তৃতীয় এবং চতুর্থ যে কারন তা হলো, ইয়াং জেনারেশন এর ক্রেজ সালমান মুক্তাদির এর বিরুদ্ধে কথা বলা এবং শর্টফিল্মটির ডিরেক্টরের প্রতি কিছু লোকের পুরানো শত্রুতা। যাই হোক, এই শর্টফিল্মটি নিয়ে আমার কিছু ব্যাক্তিগত অভিমত ছিলো যা আমি এই লেখার মাধ্যমে কনস্ট্রাকটিভ ওয়েতে তুলে ধরবার চেষ্টা করবো। আমি নিশ্চিত যে কিছু মানুষ হয়ত জেনে মন্তব্য করছে তবে অধিকাংশ মানুষই না জেনে এবং শর্টফিল্মটি পুরা না দেখে কেবল মাত্র অংশ বিশেষ বিবেচনায় এনে নাটকটির ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন



এখানে বলে নেওয়া ভালো যে, এটা একটি নাটক, বাস্তব কোনো ঘটনা না কিংবা নাটকের শুরুতে কোথাও দেখানো হয়নি যে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। নাটক কিংবা সিনেমায় অনেক অবাস্তব জিনিস দেখানো হয় যেটা বাস্তব জীবনে সম্ভব নয়। তবে হা এই নাটক সিনেমা বাস্তব জীবনকে অনেক ভাবেই প্রভাবিত করে। এখন অনেক সিনেমা আছে যেখানে দেখানো হয় নায়ক ব্যাংক লুট করতেছে বা খুনাখুনি হইতেছে বা এরকম আরো অনেক কিছু। কিন্তু এর মানে এই না যে সেটা দেখে কেউ ব্যাংক ডাকাতি বা খুন করতে ইন্সপায়ার্ড হচ্ছে। বা কেউ যদি ব্যাংক ডাকাতি করার পর বলে যে আমি অমুক সিনেমা দেখে ব্যাংক ডাকাতি করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি তবে সেটার দায়ভার কিন্তু সেই ছবির পরিচালক কিংবা অভিনেতাদের উপর বর্তায় না।

প্রথমেই বলে নেই নাটকটির মূল মেসেজ ছিলো, মেয়েদের পাবলিক প্লেসে সিগারেট খেতে দেখলে সেটার প্রতিবাদ করা এবং কোনো মেয়ে যদি পাবলিক প্লেসে সিগারেট খায় তবে সেই দৃশ্য রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেবার আহবান জানানো। (এটা মেইন ফোকাস ছিলো)। কিন্তু যেই মেসেজটা সবাই মিস করছে বা পরিচালক যেটা বুজাতে চেয়েছিল সেটা হচ্ছে কিছু মেয়েদের অতি আধুনিক হওয়ার জন্য কেনো শুধুমাত্র অনৈতিক জিনিসগুলোতেই সমঅধিকারের দোহাই দিতে হবে যেখানে দেশ এবং রাষ্ট্র মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য সকল ক্ষেত্রে অনেক বেশি বেশি সুযোগ দিয়ে রেখেছে। বেশ এইটাই প্রধান কনসেপ্ট ছিলো। এই নাটকটিতে বার বার বলা হয়েছে কিছু কিছু মেয়ে এবং বলা হয়েছে ফলোয়িং দা ট্রেন্ড ডন্ট মেক ইউ স্মার্ট। (এখন অনেকেই বলবে আপনি কি সবার থেকে বেশি বুজেন!)

নাটকের ভুল থাকলে অবশ্যই এর সমালোচনা হওয়া উচিত এবং পাল্টা যুক্তির মাধ্যমে সেটার ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার অধিকার যে কারো রয়েছে। কিন্তু যখন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ভিন্ন মতকে(হোক সেটা ভুল মত) দমিয়ে দেওয়া হয় তখন সেটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়! এজন্য দেখবেন বাইরের দেশে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ট্রল করা হলেও কোনো রাষ্ট্রিয় বাহিনী সেটাতে হস্তক্ষেপ করে না কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সামান্যতম ট্রল করে দেখুন আপনি নিজেকে কারাগারে আবিষ্কার করবেন। কারন যেইটা বাইরের দেশে প্রযোজ্য সেটা বাংলাদেশের জন্য নয়। একই ভাবে বাইরের দেশে মেয়েদের সিগেরেট খাওয়া স্বাভাবিক হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা স্বাভাবিক নয়। তাহলে একটি ক্ষেত্রে আপনি বাইরের দেশের নিয়ম ফলো করছেন কিন্তু আরেকটা ক্ষেত্রে করবেন না এটা কি ধরনের যুক্তি।
এখন আমার মতে নাটকের যেই প্রধান যে ভুলটা ছিলো সেটা হচ্ছে মোবাইলে সিগেরেট খাওয়ার দৃশ্য রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া।(কারো অনুমতি ছারা তার ছবি ভিডিও করা যে কোনো দেশের আইনেই দন্ডনীয় অপরাধ)। কিন্তু এর জন্য রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী এই ধরনের মেসেজ থাকার পরও সরাসরি কাউকে তুলে নিয়ে তার ইন্টারোগেশন করবার ক্ষমতা রাখে না বা থাকা উচিত নয় (যেহেতু এটি একটি নাটক)। প্রথমত কেউ যদি ভুল কিছু করে থাকে (যদি না সেটা খুন, ডাকাতি বা চুরির মত গুরতর অপরাধ না হয়ে থাকে) তার জন্য তার বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত অভিযোগ আনতে হবে, তারপর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আদলতে উভয় পক্ষকে আত্নপক্ষ সমর্থনের (অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত) সুযোগ দিতে হবে। তারপর উভয় পক্ষের কথা শুনার পর আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা উভয় পক্ষকে মেনে নিতে হবে। এটাই হচ্ছে নিয়ম।

একটা উদাহরন দেই। আমাদের পাশের দেশ ভারতে ঢুম নামের একটি সিনেমা বানানো হয় যেখানে দেখানো হয় নায়ক ব্যাংক ডাকাতী করছে এবং ছবির শেষে পার পেয়ে যাচ্ছে। এখন ব্যাংক ডাকাতি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ এবং সেই ছবি দেখে অনেকেই ব্যাংক ডাকাতি করতে উৎসাহীত হতে পারে। এখন এই লজিক ব্যাবহার করে আপনি কি ছবির পরিচালকের বা ছবির নায়কের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতির কেস করবেন কিংবা ভবিষ্যতে সেই দেশে ব্যাংক ডাকাতী হলে সেটার দায়ভার পরিচালক বা সেই ছবির নায়কের উপর বর্তাবে?
আমি যেই মূহুত্বে এই লেখাটি লিখছিলাম সেই মূহুর্তে বৈষম্য শর্টফিল্মের পরিচালক এবং অভিনেতাকে পুলিশের হের্ডকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে সেই নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে ও সবার সামনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে।

কয়েকটা মানবাধিকার সংগঠন এবং নারী অধিকার সংগঠন এই শর্টফিল্মটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এনেছে যে, নাটকটি দেশের প্রচলিত কয়েকটি আইনের বিরুদ্ধচারন করেছে এবং এর দ্বারা নারী অধিকার লন্ঘিত হয়েছে। এই নাটকটি বাংলাদেশের যে সকল আইনের পরিপন্থী তা হচ্ছে ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং পলিসি ২০১৪, ন্যাশনাল ওম্যান ডেভেলপম্যান্ট পলিসি ২০১১, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন এক্ট ২০০৬। এবং ৫৭ ধারায় এই নাটকের পরিচালক এবং নায়কের উপর যথাযোগ্য ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন ৫৭ ধারা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়ে নেই। ৫৭ ধারা অনুযায়ী দেশের আইনসংস্থাকারী যে কাউকে যে কেনো সময় তুলে নিতে পারবে এবং জামিন অযোগ্য অপরাধা হিসেবে গন্য হবে। অর্থাৎ আপনি আপনার আত্নপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ পাবেন না। যা কিনা হিউম্যান রাইটসের সম্পূর্ন পরিপন্থী। এখন এরকম একটা কালো আইনের মাধ্যমে আপনি যখন আরেকটি অপরাধের বিচার করতে চাবেন তখন সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে সেটা আমার প্রশ্ন।

আমি যেহেতু বাইরের দেশে থাকি এবং এই দেশের মানুষের সাথে মিশবার সুযোগ হয়েছে সেই আলোকেই বলি যে সিগেরেট খাওয়া কিংবা ছোটো ছোটো জামাকাপর পরা অনেক মেয়ের সাথে আমার পরিচয় রয়েছে এবং তারা অসম্ভব ভালো মানুষ। তাই এই সব জিনিসগুলো কখনো একটি মেয়েমানুষের ভালো খারাপের মাপকাঠি হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা বাংলাদেশি সংস্কৃতি অনুযায়ী একটি মেয়ে মানুষের সিগেরেট খাওয়াকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখা হয়। ছেলে মানুষদের ক্ষেত্রে যেটা নরমাল চোখে দেখা হয়। যদিও সিগেরেট বা যে কোনো নেশা দ্রব্য নারি পুরুষ নির্বিশেষে সমান ক্ষতি সাধন করে থাকে। যেহেতু নাটকটিতে নারীদের সিগেরেটা খাওয়ার(যে কোনো নেগেটিভ জিনিসের ক্ষেত্রে) জন্য সমঅধিকারের প্রয়োগকে বিরুদ্ধচারন করা হয়েছে সেহেতু বলা যায় নাটকটি মেকিংয়ের পিছনে ভালো কোনো ইনটেনশন কাজ করেছে যদিও সেটা পরিচালকের জন্য ব্যাকফায়ার করেছে। এবার আমাদের নারী অধিকার সংঘঠন গুলোর প্রসন্গে ফিরে আসি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে সর্বমোট ৭৮৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছে যার মধ্যে অধিকাংশ সরকার দলীয় একটি বাহিনীর মাধ্যমে হয়েছে এবং আইসিটি এক্টয়ের মাধ্যমে এরেস্ট হয়েছে মাত্র ৩২ জন। কিন্তু ঐ সকল ক্ষেত্রে এইসব নারী অধিকারকারী সংস্থাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরব ছিলো কিংবা কোনো উচ্চবাচ্য করেননি।

তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই সব সংঘঠনগুলো কেনো সিগেরেট খাওয়া বিরুধী একটি নাটকের বিরুদ্ধে এতটা স্বোচ্চার। নারী অধিকার, মানবাধীকার লংঘন, সমঅধিকারের মত বিষয় টেনে এনেছে। কথায় আছে বাংগালী শক্তের ভক্ত নরমের জম। এবং আমাদের হাই সোসাইটি যেখানে সালমান মুক্তাদির এবং তার মত হাইক্লাস পিপলসরা বিলংস করে তাদের অধিকার আর দশটা সাধারন মানুষের থেকে অনেক বেশি। তারা যখন কোনো কিছু নিয়ে উচ্চকন্ঠ হবে সেটা অন্য যেকোনো বিষয়ের(ধর্ষন/খুন) থেকে বেশি প্রায়রিটি পাবে। এই জন্যই এরকম একটা টপিকের কারনে কারো কারো তড়িৎ শাস্তি হয়ে যাচ্ছে আবার খুন ধর্ষনের ঘটনা ঘটার পরও কেউ কেউ সারাজীবনেও তার বিচার পায় না। এই ক্ষেত্রেও ক্ষমতাবানরা অন্যদের থেকে বেশি সুযোগ পান। খালি চোখেই ধনী গরিবের একটি বিশাল বৈষম্য ধরা পরে। ঢাকায় বসবাস করা এই হাইক্লাস সোসাইটি মানেই বাংলাদেশ সেটা আরো একবার বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাটির মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের দূর্বলতা আরো একবার খুব প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে। এটা থেকে আরো একবার প্রমানিত হলো যে সমাজের উচু মহলের সমস্যা মানেই সারা দেশের সমস্যা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: টেলিফ্লিম টি দেখিনি।
লিংক দেন।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৮

আসিফ ইকবাল তােরক বলেছেন: ভিডিওটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ইস দেখতে পারলাম না

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৫

আসিফ ইকবাল তােরক বলেছেন: আফসোস করবার কিছু নেই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.