নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সব ভাল টিকে থাকুক শেষ দিন পর্যন্ত
আমাদের বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার ব্রাক্ষণডাঙ্গা গ্রামে। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ছোট্ট একটি খাল বয়ে গেছে । খালটি একটি সুইচ গেট দিয়ে আটকানো থাকে। কৃষকদের জমিতে পানি সেচের সুবিধার জন্য খালটি কাটা হয়েছিল । ইছামতীর বিল থেকে শুরু করে আমাদের বাড়ির জমির উপর দিয়ে খালটি নবগঙ্গা নদীতে মিশে গেছে। এই খালটির নাম ব্রাক্ষণডাঙ্গার খাল। আমার আজকের গল্প আমার প্রিয় এই খালকে নিয়ে। যে খালের পানিতে ডুবে আমি একদিন মৃত্যুর ঠিক দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছি ।
ব্রাক্ষণডাঙ্গা গ্রামের এই খালটি দেশী মাছের খনি নামে পরিচিত। প্রতিদিন ঝাকি জাল, সুতে জাল(খালের দুইদিকে বাধ দিয়ে মাঝখানে এই জাল পাতা হয়) বড়শি, এমনকি হাত দিয়ে হাতড়িয়েও এই খালের মাছ ধরা হয় । আমাদের এলাকার কয়েক হাজার পরিবার এই খালের মাছের উপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর এই খালে সুতে জাল পাতার জন্য নিলাম হয়। এলাকার তথাকথিত মাতুব্বরা এই নিলাম ডাকে। বিভিন্ন এলাকার জেলেরা এই নিলামে অংশ নেয়। সর্বোচ্চ বিডার খালে সুতে জাল পাতার অধিকার পায়। গোনের সময়( বেশি মাছ ধরা পড়ার সময়) পুটি, টেংরা, বাইম,চান্দা, শৈল, গজার,কৈ,শিংসহ অন্যান্য দেশি প্রজাতি টন টন মাছ ধরা পড়ে এই খাল থেকে। এই খাল যেমন অনেক মানুষের জীবিকার উৎস, আবার খালে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এলাকাতে খুনোখুনি পর্যন্ত হয়েছে।
খালের সুইচগেট খুলে দিলে তীব্র স্রোত হয়, তখনি দুদিকে বাধ দিয়ে মাঝখানে সুতে জাল পাতা হয়। এই জালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ছোট বড় সবধরনের মাছই আটকে যায়। সাধারণত আমাদের বাড়ির পাশেই বাধদিয়ে একটি সুতে জাল পাতা হয়। একবার আমাদের বাড়ি থেকে বেশখানিকটা দূরে সুতেজাল পাতা হয়েছিল। একদিন খুব ভোরে আমার চাচাতো ভাই লিপুর সাথে সুতে জালের মাছ কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যেখানে মাছ বিক্রি হয় সেটা খালের অন্য পাড়ে। তাই খাল পার হতে হবে,খালে প্রচণ্ড স্রোত, কোথাও ব্রিজ নেই। আছে দুতিনটি বাশ একসাথে বেধে তৈরি করা একটি সাকো। যা পার হওয়া আমার মত ছয় বছরের শিশুর পক্ষে সম্ভব ছিল না।তাই লিপু ভাই আমাকে কাধে নিয়ে সাকোতে উঠলো খাল পার করার জন্য।খালের ঠিক মাঝখানে গিয়ে আমাকেসহ পানিতে পড়ে গেল লিপু ভাই । খালে তখন ভয়াবহ স্রোত আমি সাতার জানি না। লিপু ভাই সাঁতরে তীরে উঠে গেল। আর আমি ভয়াবহ স্রোতের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খেতে লাগলাম। পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি আর আল্লাহকে ডাকছি । তখন আল্লাহ আমার রক্ষাকর্তা হিসাবে আমার এক চাচাকে পাঠালেন। উনি ওখান দিয়েই যাচ্ছিলেন, আমাকে হাবুডুবু খেতে দেখে উনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং আমাকে রক্ষা করলেন। নামটা বলতে চাই উনি আমার মশিয়ার কাকা।
আমার এই জীবনটাকে আমি বোনাস মনে করি। আজ অল্পস্বল্প কিছু পড়াশুনা শিখেছি, দুই বাচ্চার বাবা হয়েছি, এর কোন কিছুই সম্ভব হতো না,যদি সেদিন কাকা আমাকে না বাঁচাতেন। পৃথিবীর রুপ রস গন্ধ কোন কিছুই উপভোগ করা হতো না। আমার বয়স সেই ছয় বছরেই আটকে থাকতো। জীবন বড়ই সুন্দর, পৃথিবী বড়ই সুন্দর।
বি:দ্র: পোষ্টটি মশিয়ার কাকাকে সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৪
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: পুরোপুরি বাস্তব একফোঁটাও কল্পনা মেশানো নেই।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৫
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: পুরাপুরি বাস্তব ঘটনা আটলান্টিক ভাইয়া।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েও একটি খাল বয়ে গেছে। বর্তমানে তার একাংশ ভরাট হয়ে গেছে।
দুঃখজনক ঘটনা পড়লাম।
আপনার সেই চাচাকে স্যালুট।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাই,এই লেখাটি আমার চাচাকে ফেসবুকে ট্যাগ করে দিয়েছিলাম, উনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঘটনাটি মনে রাখার জন্য।
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৭
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এখনকার সময় মনে হয় দেশি মাছ কম পাওয়া যায়।
নড়াইলে বছরে কয়বার আসেন?
আমি মাঝে মাঝে নড়াইল দিয়ে বাড়িতে যায়।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সোহেল ভাই আপনার বাড়ি কোন জেলায়?
আমি ছুটি পেলেই বাড়ি যাই, আমার আব্বা আম্মা বাড়িতেই থাকেন। আমাদের খালে এখনো প্রচুর পরিমানে দেশী মাছ পাওয়া যায়।
৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: জীবন দানের মালিক আল্লাহ। আপনার চাচা মাত্র উসিলা। গল্প পড়ে মনে হলো আপনার সাথে সেই খালে মাছ ধরছি। মাছ ধরার নেশা আমার এখনো যায়নি। এখনো প্রায় শুক্র বারে রাতে পুরো রাত সাগর তীরে বসে বর্ষি দেয়ে মাছ ধরি।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সুজন ভাই,
জীবন দানের মালিক অবশ্যই আল্লাহ, আল্লাহ ই চাচাকে সেদিন পাঠিয়েছিলেন। চাচাকে পোষ্টটি ফেসবুকে ট্যাগ করে দিয়েছি উনি খুশি হয়েছেন।
আমাদের এই খালে এখনো প্রচুর মাছ দেশি মাছ পাওয়া যায়। ঝাকি জাল ফেলতে পারলে মাছের অভাব নেই। আমি ঝাকি জাল ফেলতে পারি না,বাড়ি গেলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরি। নিচে আরো দুই একটি ছবি দিচ্ছি মাছ ধরার।
৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭
তারেক_মাহমুদ বলেছেন:
৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভয়ংকর ও সৌভাগ্যের কাহিনী।
এখনো খালে মাছ আছে?
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: এখনো প্রচুর মাছ পাওয়া যায় গাজী ভাই। আমি সবসময় আপনার কমেন্ট এর প্রত্যাশায় থাকি। আবারো আমাকে ধন্য করলেন।
৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭
আবু তালেব শেখ বলেছেন: মনে হয় অনেক আগের কথা?
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০০
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: জি ভাইয়া ত্রিশ বছর আগের ঘটনা।
৮| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০২
আরাফআহনাফ বলেছেন: সৌভাগ্য আপনার - ছয় বছর বয়সে আটকে থাকেননি - বড় হয়েছেন, সংসার পেতেছেন, বাবা হয়েছেন - আরো দীর্ঘজীবি হোন।
কাহিনী পড়েই একটা কথা মনে আসলো - আপনার উদ্ধারকারী সেই চাচা কী এখনো জীবিত আছেন?
ভালো থাকুন সবসময়।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: জি ভাইয়া, আমার সেই চাচাকে ফেসবুকে পোষ্টটি ট্যাগ করে দিয়েছি, উনি খুব খুশি হয়েছেন। আল্লাহই হায়াত মউতের মালিক।
৯| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫১
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমার বাড়ি যশোরে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৪
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বাহ, একদম কাছেই আমাদের বাড়ি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
আটলান্টিক বলেছেন: গল্প না বাস্তব ভাইয়া?