নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রিনির হাতে একটা মেহেদীর টিউব। নিজের মত করে হাতে ফুল আঁকছে সে। রিংকুকে দেখে বলল, 'ভাইয়া, ফুল আঁকবে?'
রিংকু ওকে কিছু বলল না। সে চুপচাপ মন খারাপ করে এক জায়গায় বসে রইল। কাল ঈদ। অথচ এখনো ওর ঈদের জামা কেনা হয় নি। হাবলু, বাবুল, করিম, নিয়াজ, নিশু, রিখা- ওদের সবার জামা কেনা হয়ে গেছে। নতুন জামা না হলে আর ঈদ কীসের?
রিংকু অবশ্য এখনো আশা ছাড়ে নি। হয়তো বাবা এই বেলা গঞ্জ থেকে ফেরার সময় জামা নিয়ে ফিরবেন। সে হয়তো ততোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়বে। বাবা গঞ্জ থেকে ফিরে তাকে জাগাবেন। জামাটি তিনি নিজের পেছনে লুকিয়ে রেখে মন খারাপ করে রিংকুকে বলবেন, 'বাবা, আমি পারলাম না তোমাদের জন্য জামা কিনতে। সরি।' রিংকু অবশ্য বুঝে ফেলবে, তাই মুচকে মুচকে হাসবে। এটুকু কল্পনা করে রিংকু হেসে ফেলল।
সন্ধ্যায় রিংকুর বাবা বাড়ি ফিরলেন। রিংকু খুব আগ্রহভরে হাতের প্যাকেটগুলোর দিকে তাকাল। একটা প্যাকেট থেকে অল্প কিছু সেমাই বের হল। রিংকু ভাবল, পরেরটায় জামা থাকতে পারে। তাই সে আগ্রহ হারাল না। কিন্তু পরের প্যাকেট থেকে চিনি, গুঁড়ো দুধ, এলাচ, দারুচিনি, জিরে ইত্যাদি হাবিজাবি রান্নাঘরের মশলাপাতি বের হল। রিংকু দেখল আর কোন প্যাকেট নেই। বাবার ওপর খুব অভিমান হল তার। সে চোখ মুছতে মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
গ্রামে ঢোকার রাস্তাটির শুরুতে রয়েছে একটি বুড়ো বটগাছ। সেই বটগাছের নিচে একটি বেঞ্চি পাতা। রিংকুর যখন খুব মন খারাপ হয়, এই বট তলায় এসে বসে থাকে সে। বট গাছের ঠান্ডা হাওয়ায় কিছুক্ষন বসে থাকলে মন ভালো হয়ে যায় তার। কিন্তু শীতের এই রাতে এখানে বসে থাকাটা মোটেই আরামের নয়। রিংকুর শীতে কষ্ট হচ্ছে, আসার সময় সে সোয়েটার নিয়ে আসে নি। কিন্তু তার ঘরে যেতে ইচ্ছে করল না। বট গাছের নিচে একটা অন্ধকার জায়গায় জড়সড় হয়ে বসে দুই হাঁটুর উপর মাথা রেখে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল সে। কত লোক রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করল। কেউ রিংকুকে খেয়াল করতে পারল না। রিংকুর একটু ভয় ভয় করতে লাগল। তাই সে বেঞ্চির উপর এসে বসল। কিছুক্ষন পর মোটা একটি গলার আওয়াজে সে চমকে উঠল। লম্বা মতন একটা পটকা শরীরের ছেলে গলা খাঁকাড়ি দিয়ে তার পাশে বসল। রিংকু কোন কথা বলল না। তার তেমন ভয়ও হল না। কারন- সে ভূত বিশ্বাস করে না। স্কুলের বিজ্ঞানের টীচার হারাধন দাশ বলেছেন, ভূত ফূত কিছু নেই। পৃথিবীতে ভূত নেই, কেবল ভূতের ভয় আছে। কারন- ভূত আছে গল্পে। রিংকু সেই কথা অকপটে বিশ্বাস করেছে। তাই পাশে বসে থাকা মানুষটিকে ভূত ভেবে ভয় পেয়ে বসল না। অাঁধার একটু চোখে সয়ে আসতেই রিংকু দেখল ছেলেটার মাথায় ঝাঁকড়া চুল। তবে চেহারা ঠিক বোঝা গেল না। ছেলেটা রিংকুকে জিজ্ঞেস করল,
-ছোডু ভাই, তুমার নাম কী?
-রিংকু।
-এই খানে বইসা আছ ক্যান? ডর করে না?
রিংকু না সূচক মাথা নাড়ল।
- তুমার মন খারাপ?
রিংকু উপর-নিচ মাথা নেড়ে বোঝাল তার মন খারাপ।
- মন খারাপ ক্যান? ঈদের ডেরেস কিনা হয় নাই?
রিংকু খুব অবাক হল। এই অচেনা লোকটি কী করে জানল যে তার ঈদের ড্রেস কেনা হয় নি? ভূত নয়তো? পরে অবশ্য হারাধন স্যারের কথা মনে হতেই ভূতের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিল। ছেলেটিকে সে জিজ্ঞেস করল,
- আপনি ঈদের জামা কিনেছেন?
- না গো ছোডু ভাই।
- কেন?
- ট্যাকা নাই। ডেরেস পিন্দা ঘুরলে খামু কী?
- তার মানে আপনারও ঈদের আনন্দ নেই?
ছেলেটি হেসে উঠে বলল,
- থাকব না ক্যান? বাবা-মা সবাইরে নিয়া ঈদ করমু, এইটাই তো আনন্দ। কত মাইনষের বাপ-মা কেউ নাই। তাদের কত দু:খ ভাইবা দেখ।
রিংকু ভেবে দেখল, এই লোকটি ঠিকই বলেছে। তাদের ক্লাসের রাতুলেরও মা মারা গেছে কয়েক দিন আগে। রাতুলের মনে কি এখন ঈদের আনন্দ আছে?
রিংকু বাড়ি ফিরে এসে চুপিচুপি খাটের এক কোনায় গুটিশুটি মেরে পড়ে রইল।
পাশের ঘরে রিংকুর মা চিৎকার করছে কী নিয়ে যেন। রিংকু শুনল মা কাঁদছেন আর বলছেন,
- তোমার হার্টের অসুখ। ডাক্তার তোমাকে একটি ওষুধও অবহেলা করতে বারন করেছেন। আর তুমি? ওষুধের টাকা খরচ করে ছেলে-মেয়েদের জন্য জামা কিনে এনেছ?
রিংকুর বাবা কোমল কণ্ঠে বললেন,
-রিংকুর মা, আমার ছেলে-মেয়েরা মন খারাপ করে ঘুরে বেড়ালে কি আমি ভালো থাকব?
রিংকু আর কিছু শুনতে চাইল না। তার চোখ ঝাপসা হয়ে এল। তার ইচ্ছে করছে বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে,
'আমার জামা চাই না, বাবা। জামা ফেরত দিয়ে তোমার ওষুধ কিনে আনো। আমি খুশি মনেই ঈদ করব। '
বাবার মুখটি মনে করে চোখ বন্ধ করতে না করতেই রিংকু প্রশান্তির ঘুমে তলিয়ে গেল।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৮
তাশমিন নূর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১৭
শক্তপাল্লা বলেছেন: ভাল লিখেছেন
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৭
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০১
সুমন কর বলেছেন: গোছানো লেখা, ভাল লাগল।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৬
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৪
জাফরুল মবীন বলেছেন: শৈশবের ঈদ নিয়ে নিয়ে বেশ হৈ চৈ ফেলা ইভেন্ট আয়োজন করেছিলাম রোজার ঈদে!আপনার এই অসাধারণ হৃদয়স্পর্শী গল্পটি পড়তে গিয়ে সেখানে লেখা কয়েকজনের কষ্টের ঈদের কথা মনে পড়ে গেল!
গল্পে ভাললাগা ও সেই সাথে অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৬
তাশমিন নূর বলেছেন: হুম। কারো কারো ঈদ তো কষ্টেরই হয়।
ধন্যবাদ।
৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৫
বাঙ্গাল অ্যানোনিমাস বলেছেন:
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৪
তাশমিন নূর বলেছেন:
৬| ৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৬
গেম চেঞ্জার বলেছেন: নিম্নবিত্তের গল্প! খারাপ লাগলো।
০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:৫২
তাশমিন নূর বলেছেন: আমারও খারাপ লাগছে। :-(
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৪৪
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: সুন্দর লেখা ...
লিখে যান ...
ব্লগে নিয়মিত হবার অনুরোধ থাকবে ...
শুভেচ্ছা রইলো ...