নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মজনু প্যান্টের পকেট থেকে বের করে জিনিসটা আমাকে দেখাল। এক পলক দেখিয়েই ওটা আবার প্যান্টের পকেটেই চালান করে দিল। আমি জানি ওটা কী কাজে ব্যবহৃত হয়, তবু জিজ্ঞেস করে ফেললাম-
-ওটা দিয়ে কী হবে?
বলে নিজেই বোকা বনে গেলাম। ফের মুখ দিয়ে কিছু একটা বের করার আগেই সে আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-শালা নেকু।
তার ঠোঁটের কোনে কৌতুকের হাসি। আমি নিজের দোষ কাটানোর চেষ্টা করলাম-
-না মানে, মেয়েটা কে সেটা তো বলবি। রেখা নাকি?
-রেখা? হেহ!
-হেহ কেন?
-আরেহ, অরে বলি দেয়ার ভয় দেখাইলেও ঐসব করবে না। কঠিন মেয়ে। কোনদিন কিস পর্যন্ত করতে দিল না।
-তাই নাকি!
-হু। তাছাড়া অর বিয়া। শুনছি জামাই বিরাট ব্যবসায়ী।
-বলিস নি তো আগে!
-আরেহ, আমিই তো শালা কালকে জানলাম। তোরে জানামু কখন।
-ওহ।
মজনু একটা ঘাস ছিঁড়ে নিয়ে চিবাতে শুরু করল। রেখার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে- এই খবরে ওর মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কপালে চিন্তার ভাঁজ নেই, চোখে দুঃখবোধ নেই। মন দিয়ে ঘাস চিবুচ্ছে। উল্টো আমারই যেন একটু দুঃখ হচ্ছে। আমি বললাম,
-ওকে উঠিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা যায় না?
-লাভ নাই।
-লাভ নাই কেন?
-সে নিজের ইচ্ছায় বিয়েতে রাজি হইছে। আমার নাই চাকরি। অরে খাওয়ামু কী? ভাল হইছে। অপেক্ষা কইরা কইরা বুড়ি হইব নাকি?
মজনু মনে হয় আগের ঘাসটা খেয়েই ফেলেছে। নতুন আরেকটা তুলে চিবুতে শুরু করেছে এখন। আমি আবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ছেলেটা অদ্ভুত। অনেক সাধারন বিষয়েও খুব সিরিয়াসনেস দেখায়, আবার অনেক সিরিয়াস বিষয়েও কেমন ভাবলেশহীন থাকতে পারে। আমি বললাম,
-তা, মেয়েটা কে বললি না তো। আর হঠাত এমন খেয়াল কেন?
-মেয়ে কে এখনো জানি না। ওইখানে যাওয়ার পর দেখা যাইব। খালার পছন্দে একজনরে বাইছা নিমু।
-মানে! তুই কি অল্প দামে সুখ কিনতে যাচ্ছিস?
-হুম।
-কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
-ঠিক-বেঠিক আমি বুঝি না। তোরা শালা সাধু পুরুষ। ওইসব চিন্তা তোগো।
মজনুর মুখে বার বার শালা শব্দটা শুনতে আমার বিরক্তই লাগে। কিন্তু এটা তার কু অভ্যাস। কিছু বলে ফল পাওয়া যাবে না। একদিন বলেছিলাম, ‘আমাকে আর শালা বলবি না। আমার একটাই বোন। তার ভরা সংসার।’ মজনু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলেছিল, ‘ঠিক আছে শালা, আর বলব না। আমি শালা প্রমিস করতেছি।’ প্রমিসের দৌড় কতটুকু সেটা বুঝতে পেরে আর কিছু বলিনি। আমার ধারণা, ফেরেশতা এসেও যদি বলে, ‘এই মজনু, আমার সাথে সাবধানে কথা বলবা। আম কিন্তু ফেরেশতা’; মজনু প্রথমেই বলবে, ‘তুই শালা কোন ফেরেশতা? আগে পরিচয় দে।’
মজনু বলল,
-আমার লগে যাইবি? ওই জায়গাটা কেমন দেইখা আসলি।
-না। আমি যাব না। বিভা কোন ভাবে জানতে পারলে খবর আছে। বিয়েটাই ভেঙে দিবে।
-হুম। তাইলে থাক।
আকাশে মেঘ করেছে। নিশ্চিত বৃষ্টি আসবে। কিন্তু আমি বাসায় যাওয়ার তাড়া অনুভব করছি না। মজনুর পাশে এভাবেই বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। মজনু মাথার নিচে একটা ইট দিয়ে ঘাসের উপর ল্যাচকা মেরে শুয়ে পড়েছে। আমার গায়ে দামী শার্ট-প্যান্ট, বিভার দেয়া উপহার। শোব কিনা চিন্তা করছি, আবার ইচ্ছেও করছে। মজনু বলল,
-বৃষ্টি আসতাছে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিইরা যাও, মনু।
-যেতে ইচ্ছে করছে না। বাপিকে বলে দিই গাড়ি যেন না পাঠায়।
-ওকে। আমার পাশে শুইয়া পড়। ঘুমায়া ঘুমায়া বৃষ্টিতে ভিজমু দুই জনে। কানে পানি ঢুইকা যাওয়া পর্যন্ত ভিজমু।
আমি দ্বিধা ছেড়ে মজনুর পাশে সটান শুয়ে পড়লাম। বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। আকাশে অনেক মেঘ। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। মজনুও। বৃষ্টির ফোঁটা বড় বড় আর ঘন ঘন হয়ে পড়তেই মজনু তড়াক করে উঠে হাঁটতে শুরু করল। সে হয়ত প্ল্যান বদলে ফেলেছে। আমিও মোহগ্রস্তের মত তার পাশে পাশে হাঁটছি। আমারও এক দিনের জন্য মজনু হতে ইচ্ছে করছে। আমি বললাম,
-ওই জায়গাটায় আমিও যাব তোর সাথে।
মজনু কিছু বলল না। হাঁটা থামিয়ে কনডমের ছোট্ট প্যাকেটটা একটা ঝোপের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিল। এখন সে হনহন করে হাঁটছে। আমার এত হেঁটে অভ্যেস নেই, তাই তাল মেলাতে একটু কষ্ট হচ্ছে। মজনু মাঝে মাঝে ধীর করছে হাঁটা। আমি তখন তার পাশাপাশি আসছি। পাশাপাশি আসতেই সে হাঁটার গতি আবার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি আবার পেছনে পড়ে যাচ্ছি। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমরা পার্ক ছেড়ে মূল রাস্তায় চলে এলাম।
মজনু একটা রিক্সা ঠিক করেছে। কিন্তু কোথায় যাবে কিছু না বলেই রিক্সায় উঠে পড়েছে। আমিও উঠে পড়েছি। রিক্সাওয়ালাটাও অদ্ভুত। কোথায় যাব জানতে চাচ্ছে না। নিজের ইচ্ছে মত চালাচ্ছে। মজনুর মতে, এই পৃথিবীতে সবচে ত্যাড়া প্রাণি নাকি ঢাকা শহরের রিক্সাওয়ালারা। কিন্তু এই রিক্সাওয়ালা এমন কেন! বৃষ্টির বেগ বেড়েছে। আমরা ভিজতে ভিজতে চলেছি। রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোর কেউ কেউ, আবার ফুটপাত দিয়ে ছাতা মাথায় হাঁটতে থাকা পথচারীদের কেউ কেউ, আমাদের দেখছে। কাছ থেকে যাদের দেখছি তারা কেউ তেমন অবাক হচ্ছে না। এই শহরের খামখেয়ালী যুবকদের সবাই মেনে নিয়েছে হয়ত। মজনু হঠাত কথা বলে উঠল-
-আমার একটা সিক্রেট আছে। শুনবি?
-তুই বললে অবশ্যই শুনব। কিন্তু বলে ফেললে তো আর সিক্রেট থাকবে না।
-না থাকুক। কাউকে বলতে ইচ্ছা হয়।
আমি মজনুর সিক্রেট শোনার অপেক্ষায় আছি। কিন্তু এখন সে চুপ করে আছে। হয়ত মত বদলে ফেলেছে, বলবে না। কিংবা ভাবছে কিভাবে শুরু করবে। আমিও চুপ করে আছি। মজনু এক সময় দুম করেই বলে ফেলল কথাটা-
-সবাই জানে, আমার বাপ-মা মইরা গেছে। এইটা সত্য না। আমি চাচা নামের যে লোকটার কাছে বড় হইছি সে আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ না।
আমি ভ্রূ কুঁচকে ফেলেছি। মজনু সেদিকে না তাকিয়ে বলে যেতে লাগল-
-আমার মা একটা অচেনা ঘরের সামনে আমারে ফেলাই গেল জন্মের পর। একটা লোক সকালবেলা দরজা খুইলা আমারে পাইল। আমারে সে পালল। বড় করল। আমি জানলাম, আমার বাপ-মা বাঁইচা নাই। আমি আমার চাচার কাছে বড় হইতেছি। কিন্তু সেই চাচা কোনদিন আমারে আমার বাপ-মায়ের ব্যাপারে কিছুই কইল না। আমি নিজেই তাগো খুঁইজা বাইর করলাম। আমার বাপ একটা প্রতারক। সে আমার মায়েরে বিয়া করার স্বপ্ন দেখায়ে...।এখন সে বহাল তবিয়তেই আছে।
এই পর্যন্ত বলে মজনু থামল। তার চোখ দুটো জবা ফুলের মত লাল হয়ে উঠেছে। ঠোঁট কাঁপছে অল্প অল্প। আমার মনে হল ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মজনু বলল-
-আমি ঐ লোকটারে খুন করব। পরিকল্পনা কমপ্লিট।
-তুই এত কিছু কিভাবে জানলি? ভুল হচ্ছে না তো কোথাও?
-মজনু শিউর না হইয়া কোন সিদ্ধান্ত নেয় না। কিভাবে জানছি সেটা লম্বা ইতিহাস। কিন্তু ঘটনা অসত্য না।
আমি বুঝলাম, ঘটনা অসত্য না এবং খুনের পরিকল্পনাও তার আছে। তার চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে সিরিয়াস। আমি বললাম,
-খালাম্মা কোথায় আছে?
-সেইটা সিক্রেট থাক।
কথাটা বলেই সে হো হো করে হাসতে শুরু করল, যেন খুব মজার একটা কথা। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম-
-তুই কি উনাকে ঘৃণা করিস?
-না। ঘৃণা করব ক্যান? আমারে ওইভাবে ফেইলা যাওয়া ছাড়া তার অন্য উপায় ছিল না হয়ত। আমি তারে চার বার দেখতে গেছি। খুব ইচ্ছা হইছিল মা বইলা ডাকার।
-ডাকিস নাই কেন?
-সেইটাও সিক্রেট থাক। তবে তারে দেখতে আর যামু না। জায়গাটা ভাল না। তাছাড়া বিনা কর্মে ওইখানে যাওয়াও ঠিক নাহ।
-মানে!
-হা হা হা...সিক্রেট।
বৃষ্টিতে চোখের জল মোছার দরকার হয় না। কিন্তু মজনু সেটা ভুলে গেছে। সে বাচ্চা ছেলের মত বার বার চোখ মুছছে। আমি রিক্সার চাকার ঘূর্ণন দেখছি। সব কান্না দেখতে হয় না, তাই।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৮
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, সুপ্রিয়। আপনার জন্যেও শুভকামনা।
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫২
কিছুটা অসামাজিক বলেছেন: লেখা টা পড়ে লগিন করতে বাধ্য হইলাম,খুব ভালো হইছে ভাই।
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৩
কিছুটা অসামাজিক বলেছেন: সরি, ভাই না, আপু
৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৩৮
অপু তানভীর বলেছেন: চমৎকার একটা গল্প !! আসলেই চমৎকার হয়েছে ।
মজনু প্রথমেই বলবে, ‘তুই শালা কোন ফেরেশতা? আগে পরিচয় দে।’
এই লাইন টা পড়ে হাসলাম কিছুক্ষন !
তবে শেষে এসে খানিকটা মন খারাপ হল !
৬| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৯
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই। @ কিছুটা অসামাজিক
৭| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২০
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, অপু তানভীর ভাই। আসলেই ধন্যবাদ। হেহেহে।
৮| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯
নীল ফিউজিটিভ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে...
৯| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ। @ নীল ফিউজিটিভ
১০| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৩
তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো হয়েছে...
১১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩২
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, তুষার।
১২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২০
ফয়সাল খালাসী বলেছেন: ট্রয় এর পোস্টটা ভালো লাগছিলো, মন্তব্য লিখতে গিয়া এই লেখাটা পাইলাম।
এইটাও ভালো লাগলো।
১৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮
তাশমিন নূর বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। ট্রয় এর পোস্টটা আবার পোস্ট করা হবে। একটু সমস্যা হয়েছিল, তাই মুছে ফেলেছি। সাথে থাকুন এবং ভালো থাকুন।
১৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৮
নীল আতঙ্ক বলেছেন: আপনার ব্লগ এ প্রথম এসে খালি কবিতাই চোখে পড়ছিল...... গল্প দেখে ডু মারলাম......... আর মুগ্ধ হলাম।
ভালো লাগা রইলো আপু আপনার জন্য।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:০৪
তাশমিন নূর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, নীল। সাথেই থাকুন। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা।
১৫| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: ভালো লাগা রইল গল্পে
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৫
সকাল হাসান বলেছেন: শেষ দিকটায় এসে কিছুটা খারাপ লাগল!
গল্পটা ভালই লিখেছেন!
তবে আরেকটু ভাল মনে হয় লিখা যেতে! লেগে থাকুন!
শুভকামনা রইল!